ভালোবাসি প্রিয় পর্ব ২৭+২৮

#ভালোবাসি_প্রিয়
#পার্ট_২৭
#সুলতানা_সিমা

স্বামীর সাথে স্ত্রীর সম্পর্ক যেমনই থাকুক, স্বামীর ফোনে তার পাক্তনের কল মানে একটা মেয়ের কলিজা ছুরি চালানো। আজ দুদিন হলো দিহানের ফোনে তন্দ্রা বার বার কল দিচ্ছে। সেদিন তন্দ্রা কল দেওয়ার পরে দিহানের সাথে তন্দ্রার অনেক কথা কাটাকাটি হয়। দিহানকে তন্দ্রা মেয়েবাজ চরিত্রহীন আরও অনেককিছু বলে। এমনি অরিনের নামেও অনেক খারাপ কথা বলে। দিহান সেদিন রাগে তন্দ্রাকে গালাগালি করেছে,তন্দ্রার নাম্বার ব্লক করে দিয়েছে। তন্দ্রার নাম্বার ব্লক করার পরে তন্দ্রা তাঁর মায়ের ফোন থেকে কল দেয়,দিহান সে নাম্বারটিও ব্লক করে দেয়। তন্দ্রা থেমে থাকছে না বার বার নতুন সিম দিয়ে ফোন দিচ্ছে। দিহানও নিজের নাম্বার বন্ধ রাখতে পারছেনা যদি বাসা থেকে কেউ কল দেয় সেইটা ভেবে। যতই রাগ থাকুক মায়া তো আর কেটে যায়নি। বাবা অসুস্থ মা অসুস্থ কখন কী ঘটে যায় কে জানে। কিন্তু অরিন নিজেকে সামলাতে পারেনা। যতবারই দিহানের ফোনে কল আসে ততবারই সে কেঁদে দেয়। কান্নাটা তাঁর নিজের অজান্তেই চলে আসে চাইলেও আঁটকাতে পারেনা। দিহানের সাথে অরিনের এখনো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে উঠেনি,না তন্দ্রার সাথে দিহান কথা বলে, তবুও অরিনের কষ্ট হয়। বুক ফেটে যায় দিহানের ফোনে কল আসলে। দিহানের ফোনের রিংটোনে শব্দ তার কলিজা বিষাক্ত তীরের মতো লাগে। যে কেউ কল দিলেও তার মনে হয় তন্দ্রা কল দিছে। আজ দুপুরে দিহানের ফোনে দিহানের এক টিচার কল দেয়। দিহান ফোন নিয়ে উঠুনে বের হয়ে ফোনে কথা বলে। কথা শেষে যখন ঘরে যায় তখন দেখে অরিন কান্না করছে। কেন কান্না করছে জিজ্ঞেস করতেই অরিন দিহানকে বলে “আপু ফোন দিছিল তাইনা?” টিচারের সাথে কথা বলে দিহানের মেজাজ এমনিতেই খারাপ হয়ে গেছিল, অরিনের কথা শুনে রাগ উঠে যায় আর সে চেঁচিয়ে বলে” এখন কী আমাকে ফোন ইউজ করা ছেড়ে দিতে হবে?” রাগে দিহান ঘর থেকে বেরিয়ে যায় আর আসেনা ঘরে।

অরিনরা যেখানে থাকে সেখানে ছোট ছোট কয়েকটা ঘর একটা ঘরে একজন বৃদ্ধা মহিলা আর উনার স্বামী থাকেন। এর থেকে একটু দূরে আরেকটা ঘরে একজন মধ্যবয়সি মহিলা উনার নাম জেসমিন উনি একা থাকেন। আর একটা ঘরে দিহান আর অরিন থাকে। জেসমিনকে অরিন খালা বলে সম্বোধন করে দিহান উনাকে খালা বলে ডাকে তাই। উনার জন্যই দিহান অরিনকে একা ছেড়ে যাওয়ার সাহস পায়। অরিন রাত আটটা পর্যন্ত উনার সাথেই ছিল কিন্তু কতক্ষণ আর থাকবে এখানকার সবাই এশারের নামাজ পড়েই ঘুমিয়ে যায়। তাই সে আটটা বাজতেই নিজের ঘরে ফিরে আসে কিন্তু দিহানের কোনো খোঁজ নাই। একা ঘরে অরিনের যতটা ভয় করছে ততটা বেশি কষ্ট হচ্ছে দিহানের অনুপস্থিতিতে। রাতের জন্য রান্নাটাও করেনি অরিন কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলছে। বার বার দরজা খুলে উঁকি দিচ্ছে বাইরে কিন্তু না দিহানের দেখা নাই। আচ্ছা দিহান তাঁকে একা ফেলে চলে যায়নি তো? না না দিহান তাঁকে ছেড়ে যাবে কেন দিহানই তো তাঁকে এইখানে নিয়ে এসেছে। আচ্ছা এমন তো নয় দিহান ঠিক নেই ওর কোনো ক্ষতি হয়েছে? ভাবতেই কলিজায় মুছড় দিয়ে উঠে অরিনের। হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না করতে লাগে। অনেকক্ষণ পরে দরজার ওপাশ থেকে দিহানের গলা ভেসে আসে।

_অরি।” দিহানের গলা শুনে অরিন যেন প্রাণ ফিরে পায়। তৎক্ষণাৎ ওঠে দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিহানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়। দিহান কিছুটা ইতস্তত হয়ে যায়। কিন্তু অবাক হয়নি,সেই দুপুর থেকে সে রাগ করে বেরিয়ে গেছে কান্না করাটা স্বাভাবিক। আর তাছাড়া দিহান ফোনটাও সাথে নেয়নি যে অরিন তাঁকে একটা ফোন দিতে পারবে। দিহান অরিনকে কোমল গলায় বলল”

_কেঁদনা কান্না থামাও।” অরিন দিহানকে আরও শক্ত করে ধরে বলে।
_কই গেছিলেন আপনি? জানেন আমার কতটা কষ্ট হইছিল? একা একা কত ভয় হচ্ছিল আমার জানেন?
_এসে গেছি তো এখন আর ভয় কিসের ছাড়ো।

অরিন তৎক্ষণাৎ ছেড়ে দিল। এতক্ষণ সে হুসেই ছিলনা, দিহানকে দেখে আবেগী হয়ে গেছিল। অরিন কিঞ্চিৎ লজ্জায় পড়ে গেল। দিহান অরিনের পাশ কেটে ঘরে ঢুকে গায়ের জামাটা পাল্টে নেয়। অরিন রান্নার ঘরের দিকে যায়, ভাত রান্না হয়নি আজ, এখন যদি দিহান খেতে চায় কী দিবে খেতে? নিজের প্রতি কিছুটা রাগ হল অরিনের, কেন যে সে রান্না করে রাখল না। অরিন ছোট ছোট কয়েকটা লাকড়ি এনে চুলায় রাখে। আগুন জ্বালানোর আগেই দিহানের ডাক আসে উঁচু গলায় অরি অরি বলে ডাকছে। অরিন দ্রুত পা ফেলে ঘরে আসে।

_কিছু লাগবে?
_কই গেছিলা?” অরিন কোনো জবাব দিলনা মাথা নিচু করে আঙুলে ওড়না পেছাতে থাকে। দিহান অরিনকে ডাকছিল ক্ষিধে লাগছে ভাত দিতে তাই। কিন্তু অরিনের ভাব দেখে মনে হচ্ছে রান্না হয়নি। এখন যদি খেতে চায় অরিন কষ্ট পাবে দিহান ওই কথাটা চেপে গিয়ে অরিনকে বলল”
_আব,,,,আমার ফোন খোঁজে পাচ্ছিনা।
_ফোনটা তো আপনার পাশেই আছে। এই যে দেখুন বালিশের পাশে।
_অহ আমি দেখিনি। আসো বসো এসে।
_আমি আসছি আপনি বসুন।
_কই যাবা?” অরিন কিঞ্চিৎ স্বরে বলল
_রান্না ঘরে।
_রান্না হয়নি তাইতো?” অরিন মাথা নিচু করে ফেলল। দিহান অরিনের হাত ধরে তাকে খাটে বসাল তারপর বলল”
_খুব কষ্ট দিয়েছি আজ তাইনা? কী করবো বলো স্যার ফোন দিয়ে বলছে আমি ভার্সিটি যাইনি কেন? লোকের মুখে যা শুনছেন তা কী সত্যি হ্যান ত্যান। উনি বাবার বন্ধু হন উনাকে কীভাবে রাগ দেখাতাম তাই ফোন কেটে দিছিলাম। তারপর ঘরে আসার পরে তোমার ওই কথা, আমি নিজেকে শান্ত রাখতে পারিনি। সরি অরি মাফ করে দাও প্লিজ।” অরিন ছলছল চোখে দিহানের দিকে তাকিয়ে আছে। দিহানকে যতই দেখছে সে ততই অবাক হচ্ছে দিহানের প্রতি দিন দিন ভালোবাসা বেড়েই চলছে। দিহান যে মানুষটাই এমন যার প্রেমে না পড়ে থাকা যাবেনা। অরিনের চোখ থেকে টুপ করে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরল। দিহান বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে জলটা মুছে বলল”

_ আমার ক্ষিধে নেই রান্না করার দরকার নেই শুয়ে পরো।
_উঁহু আমার ক্ষিধে লাগছে।
_ওকে চলো আমি তোমায় হেল্প করবো।
_হুম।” অরিন দিহান দুজন মিলে রান্না ঘরে গেল। অরিন যদিও বলেছে তার ক্ষিধা লাগছে আসলে কিন্তু তার ক্ষিধা লাগেনি, দিহানের জন্যই সে রান্না করতে এসেছে। দিহান যে ক্ষুধার্ত সেটা তাঁর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে। দিহান অরিনকে হেল্প করতে এলেও সব কিছু দিহানই করছে। চুলায় আগুন জ্বালানো। চুলায় ভাত বসানো মার ফেলা সব কিছুই দিহান করছে। অরিন বটি নিয়ে বসল। বটি দিয়ে কাজ করার অভ্যাস তাঁর নেই। দিহান অরিনকে বলে”

_কী কাটবা?
_কাচা মরিচ।
_কেন?
_তরকারিতে দিলে ভালো লাগবে তাই।
_দেওয়ার দরকার নেই এমনিই ভালো লাগবে।
_না লাগবে না। ওটা দিলে বেশি ভালো লাগবে।
_তাহলে কাঁটবা কেন আস্ত দিয়ে দাও।
_না। আস্ত হলে আমার ভালো লাগেনা। আর আমি মরিচের গুঁড়ো দেইনি এটা দেবো বলে।
_তাহলে দাও আমার কাছে আমি কেঁটে দিচ্ছি।
_না আমি পারবো।
_হাত জ্বলবে আমার কাছে দাও।
_আপনার ওতো জ্বলবে।
_জ্বললে জ্বলোক দাও আমার কাছে।”

দিহান এক প্রকার জোর করেই অরিনের থেকে বটি নিয়ে মরিচ কেঁটে দেয়। কিছুক্ষণ পরে তার হাত জ্বলা শুরু হয়ে যায়। হাত জ্বলার জন্য ঠিক মতো খেতেও পারেনা। তবে অরিনকে কিছুই বুঝতে দেয়নি। রাত ১১টায় অরিনকে আসছি বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। যখন ফিরে আসে তখন ১২টা বেজে যায়। অরিন অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে। ঘরে ফেরার পথে হঠাৎ করে বৃষ্টি নেমে গেছিল তাই দিহান বিজে গেছে। জামা পাল্টে দিহান লাইট অফ করে জানালা খুলে দিয়ে অরিনের পাশে এসে বসে। অরিনের হাতের উপর হাত রেখে মৃদু গলায় ডাক দেয়”

_অরি। এই অরি। অরিইইইই।” দিহানের ডাক শুনে অরিন চোখ খুলে তাকাল। চাঁদের আলো জানালা দিয়ে এসে খাটের উপর পরছে। দিহানের মুখটা চাঁদের আলোয় আরও বেশি আকর্ষণীয় লাগছে। মনে হচ্ছে দুনিয়ার সমস্ত মায়া সুন্দর্য সব কিছু দিহানের রাজত্বে। মাত্রই ঘুম থেকে ওঠা অরিনের ইচ্ছে করছে দিহানকে একটু আদর করে দিতে। দিহানের কাছে একটা রাত চাইতে দিহানকে মন ভরে আদর করার জন্য শুধু একটা রাত ভিক্ষে চাইতে। দিহানের সব নিঃশ্বাস গুলো তাঁর উপরে এসে পরছে। সমস্ত শরীর জুড়ে শীতল শিহরণ বয়ে চলছে। দিহান অরিনের হাত ধরে বলল”

_একটু উঠবে? “ধ্যান ভাংলো অরিনের। ওঠে বসে ওড়নাটা ঠিক করতে করতে বলল”
_কী হইছে?
_দিহান অরিনের হাত ধরে নিয়ে জানালার পাশে গেল। আকাশে এক থালা চাঁদ তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। দিহান চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল”
_চেয়ে দেখো এই পূর্ণ চাঁদকে যে কখনো এক ফালি তো কখনো এক চিমটি। সে রাত বদলানোর সাথে সাথে বদলে যায় নিজেও। কখনো বা ক্ষয় হয়ে বদলায় কখনো বা পূর্ণ হয়ে। মানুষ জীব কিছুটা চাঁদের মতোই আজ সে পূর্ণ তো কাল শূন্য।

দিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে অরিন। দিহান তাঁর হাত ধরে আছে। দিহানের ছোঁয়া,কোমল গলা, চাঁদের আলোয় দিহানের মায়াভরা মুখ অরিনের নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে দিহান যা ভাবার ভাবুক দিহানের কাছে নিজেকে সপে দিতে। অরিনের হার্ট বিট বেড়ে চলছে দিহান জানালাটা বন্ধ করে দিল ঘরটা একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। দিহান একটা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা কাঁচের বৈয়াম হাতে নিল। চাদরটা সরাতেই বৈয়ামের আলোয় দিহান অরিনের মুখ সবুজ রঙে চকচক করতে লাগে। অরিন অবাক হয়ে তাকায় বৈয়াম ভর্তি জোনাকিপোকা। দেখে মনে হচ্ছে অনেকগুলা সবুজ বাতি জ্বালিয়ে বৈয়ামে ঢুকিয়ে রাখছে। দিহান বৈয়ামের ঢাকনা খুলে দিল। সাথে সাথে জোনাকি গুলা বেরিয়ে পুরো রুম জুড়ে ছড়িয়ে পরলো। অরিনের হাঁ হয়ে পুরো রুম দেখতে লাগল। অন্ধকারের কোনো ছিটেফোঁটাও আর নেই চারিদিকে সবুজ বাতি জ্বালানো জোনাকি উড়ছে। অরিন হাত বারিয়ে দুইটা জোনাকি তার হাতের মুঠোয় নিয়ে মুখের সামনে আনলো জোনাকির আলোয় অরিনের চারিদিক চকচক করছে। অরিনের মনে হচ্ছে সে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখছে যেন ঘুম ভেঙ্গে গেলেই সে এই স্বপ্নের মতো সুন্দর সময়টা হারিয়ে ফেলবে। অরিন ঘুরে ঘুরে মুগ্ধ হয়ে পুরো ঘর দেখছে চোখ থেকে তার খুশির জল গড়িয়ে পরছে ঠোঁটে খুশির হাসি। এই দিনটা কী সত্যিই তাঁর জীবনে লেখা ছিল? অরিন হাত মেলে ঘুরছিল তখনই চোখে পড়ে দিহান হাঁটু গেড়ে তাঁর সামনে বসে আছে। অরিন থেমে যায় অবাক চোখে দিহানে দিকে তাকায়,যা দেখছে সে ঠিক দেখছে তো? দিহানের দুহাত অরিনের দিকে বারিয়ে দিল। হাতে কচু পাতায় মুড়ানো বৃষ্টির জল। হাত বারিয়ে দিয়ে দিহান বলল”

_হরিণ টানা চোখ গুলা যখন চোখে পরেছিল তখন ঘোর লাগা চোখ ফিরিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। গাল জুড়ে ছড়িয়ে পরা এক গুচ্ছ চুল যখন কানে গুঁজছিলে,তখন অবাক হয়ে দেখেছিলাম কানে চুল গুঁজার দৃশ্য কতটা সুন্দর হয়। পিচ্ছিল ঘাটের সিঁড়ি বেয়ে নামার জন্য যখন প্রথম তোমার কোমল হাতের ছোঁয়া পেয়েছিলাম সেদিন বুকের ভেতর তোলপাড় হচ্ছিলো,জানিনা কেন। ধীরে ধীরে তোমার প্রতিটা জিনিস আমায় আকৃষ্ট করেছে। যতবার তোমাকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে গিয়েছি ততবার নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছে। কেন যেন তোমাকে আমি অপরাধী ভাবতে পারিনা। আজকাল জানতে ইচ্ছে করেনা কেন তুমি বিয়ে করেছ আমায়, ভয় হয় যদি সব জেনে হারিয়ে ফেলি তোমাকে । নিজের সবকিছু ছেড়ে তোমার হাত ধরেছি, এমনি এমনি নয় অরিন ভালোবাসি তোমাকে তাই ধরেছি। ফুল দিয়ে তো সবাই সবার জীবনে আসে আমি না হয় ভিন্নকিছু নিয়ে আসলাম। যেমন ভিন্ন ভাবে তুমি আমার জীবন্র এসেছিলে। পবিত্র জল বৃষ্টি জল, আর এই পবিত্র জল দিয়ে তোমার সব কষ্ট মুছে দিতে এসেছি। দিবে সুযোগ আমায় তোমার দুঃখ মুছার? তোমায় দু’হাতে গুছিয়ে দেওয়ার? কথা দিচ্ছি সারাজীবন আগলে রাখব বুকে। ভালোবাসবে আমায়। অধিকার দিবে তোমার জীবন গুছানোর? তোমাকে আগলে রাখার।”

অরিনের চোখ থেকে সুখের জল গড়িয়ে পরছে। সত্যি কী তাই হচ্ছে যা সে দেখছে? দিহান তাকে ভালোবাসে? যে মানুষটাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য সে ব্যাকুল হয়ে থাকে সে মানুষটা তার কাছে অধিকার চাইছে? এই মূহুর্তে অরিনের মনেই হচ্ছেনা সে অসহায় একটা মেয়ে। মনে হচ্ছে পৃথীবির সব থেকে সুখী নারী সে। দিহান অরিনকে আবার বলল”

_কী হল অরি দিবেনা অধিকার? থাকবেনা আজীবন আমার পাশে?” অরিন কেঁদে কেঁদে উপর নিচ মাথা নাড়াল। তারপর দিহানের হাত থেকে কচুপাতায় মুড়ানো বৃষ্টি জল নিয়ে দিহানকে বলল”

_সব অধিকার দিব আপনায়। আমার জীবনের সবকিছুতেই আপনার অধিকার দিলাম। যদি কেউ এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়না? সোজা তাকে উপরে পাঠিয়ে দিব। তবুও কখনো আপনার ছেড়ে যাবনা।
#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_২৮
#সুলতানা_সিমা

আজ তিনদিন হল দেশে এসেছে নীল। এই তিনদিনে সে বাসা থেকে বের হতেই পারেনি। আজ লুপার সাথে দেখা করার জন্য বের হচ্ছে, তার সাথে শামুও যাচ্ছে। সে শামুকে নিবেনা বলছিলো, কিন্তু তার মা তাকে বলেন সে যেন শামুকে সাথে নিয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে শামুকে সাথে নিচ্ছে। বাইকে বসে শামুর অপেক্ষা করছে নীল। এই কয়েকদিনে শামুর সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তবে শামু যে তাকে শুধু বন্ধু ভাবেনা এটা সে ঠিকই আন্দাজ কর‍তে পারে। কিছুক্ষণ পরে শামু আসে। শামু হোয়াইট টপস এর সাথে ব্ল্যাক জিন্স পরেছে। জিন্সের হাঁটুতে উরুতে ছেড়া নীল কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে ফেলে এই ছেড়া ছেড়া জামাগুলা তাঁর খুব বিরক্ত লাগে। আর মেয়েরা পরছে দেখলে তো আরো বেশি বিরক্ত লাগে। সে ছেলে হয়েও এমন জামা পরতে তাঁর লজ্জা লাগে, আর শামু কিনা সবসময় এইগুলা পড়ে। শামুর উপরে অধিকার ফলানো ঠিক হবেনা তাই নীল চুপ থাকল। শামু এসে বাইকে বসে এক হাতে নীলের পেট জড়িয়ে ধরলো। শামুর এভাবে ধরাতে নীলের শরীরে কারেন্ট শকডের মতো লাগে। লাগাটা স্বাভাবিক, সে একটা যুবক ছেলে কোনো যুবতীর ছোঁয়ায় তার এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। নীল বাইক স্টার্ট দেওয়ার পড়ে শামু কিঞ্চিৎ হেলে পড়ে নীলের পিঠের ওপর।

নীলের পেট জড়িয়ে ধরে বসে আছে শামু ।বাতাসের ঢেউয়ে শামুর সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে। সূর্যের আলোর ছোঁয়ায় ভ্রুযুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকে আছে তাঁর। টকটকে লাল গাল চিকচিক করছে রোদে। বাইকের ছোট আয়নায় মাঝে মাঝে এই সুন্দর দৃশ্যটা একপলক দেখে নিচ্ছে নীল। অবাধ্য চোখ কথা শুনে না তাঁর। না চাইতেই চলে যায় আয়নায় ভেসে ওঠা শামুর প্রতিচ্ছবিতে। সুন্দর মূহুর্তটা অবিলম্বে শেষ হয়ে যায়। শামুর মনে হচ্ছে মাত্রই তো বাইকে ওঠলাম এতো তারাতাড়ি এসে গেলাম। বাইক থেকে নেমে নীল আর শামু একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো।

একটা টেবিলে বসে বসে এতক্ষণ নীলের অপেক্ষা করছিল লুপা। নীলকে আসতে দেখে খুশিতে তাঁর মুখে হাসির ফুল ফুটে ওঠলো। কিন্তু নীলের সাথে অন্য একটা মেয়েকে দেখে তা সাথে সাথেই ঝরে গেল। চেহারায় নেমে আসলো দুনিয়ার সমস্ত আঁধার। নীল এসে একটা চেয়ার টেনে বসল, নীলের পাশে শামুও বসল। নীল লুপাকে বলল”

_কিরে কেমন আছিস?” লুপা অবাক হয়ে থাকায়। নীল তাকে তুই করে বলছে? তার বুঝ হয়েছে থেকে নীল তাঁকে তুমি করে বলে,আর আজ কিনা তুই? লুপা নিজেকে সামলে স্বাভাবিক ভাবেই বলল”
_জ্বি ভালো। আপনি?
_হুম আমিও ভালো আছি।” শামুকে দেখিয়ে বলল” ও হচ্ছে শামীমা আমার কাজিন।
কাজিন শুনে কেন জানি লুপার খুব খারাপ লাগে। ঠোঁটে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা টেনে শামীমার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল” লুপা।
শামু হ্যান্ডশেক করে বলল”
_শামীমা। সবাই আমাকে শামু বলেই ডাকে চাইলে তুমিও ডাকতে পারো।
_হুম। আপনাদের জন্য কী অর্ডার দিবো বলুন।
_আমার জন্য একটা কোল্ড কফি আর আইসক্রিম।[শামু]”
নীল শামুর দিকে চোখ গরম করে তাকায়। কাল থেকে গলা বসে আছে শামুর। বার বার শামুর মা নীল ও তাঁর মাকে কল দিয়ে বলছেন শামুর খেয়াল রাখতে। এখন কিনা সে এসব অর্ডার করছে। নীল শামুকে কিঞ্চিৎ ধমক দিয়ে বলে”
_শামু তোমার গলা বসে আছে আর তুমি এসব খেতে বলছো?
_কিচ্ছু হবে না একটুই তো খাবো।
_উঁহু একটুও খাওয়া যাবেনা। পরে অসুস্থ হলে তোমার আম্মু আমার আম্মু কেউই আমায় ছাড়বে না।
_নীল ভাই প্লিজজজজজজজজ।
_ওকে ফাইন খাও।” নীল কিঞ্চিৎ রেগেই কথাটা বলল। শামু নীলের হাত ধরে অনুরোধের গলায় বলল”

_আজকেই খাবো আর কোনোদিন খাবো না প্লিজ।
_ওকে।

সম্মতি পেয়ে শামু নীলকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ দিল। শামুর এই একটা অভ্যাস একটুখানি খুশি হলেই জড়িয়ে ধরে। লুপাকে তীক্ষ্ণ চোখে তাঁদের দিকে তাকাল। বুকটা পোড়ে যাচ্ছে তাঁর। ইচ্ছে করছে টেবিলটা তুলে শামুর মাথায় মারতে। নীলকে ছেড়ে দিয়ে শামু সোজা হয়ে বসে লুপাকে বলল”
_নীল ভাইও কফি খাবে।” লুপা কিঞ্চিৎ হাসলো জোরপূর্বক হাসি। নীল কী খাবে না খাবে সেটা কী নীল বলতে পারবেনা এসবও উনাকে বলতে হবে যত্তসব। মনে মনে শামুর গোষ্ঠী উদ্ধার করছে লুপা। শামু এদিক ওদিক তাকিয়ে চারপাশ দেখতে লাগল। নীল চুপচাপ বসে আছে না একবার লুপার দিকে তাকাচ্ছে না লুপার সাথে কোনো কথা বলছে। নীলের এমন আচরণ লুপার কলিজাটা ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। যে নীল নির্লজ্জের মতো লুপার দিকে হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকতো, সে নীল কিনা আজ আঁড়চোখেও একবার তার দিকে তাকাচ্ছে না। ওয়েটার এসে তাঁদের কফি দিয়ে গেল। নীল কফিতে চুমুক দিয়ে লুপার দিকে না তাকিয়েই বলল ”

_কী জানি বলবি বললি। কী বলবি?”। লুপা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। নীলের কি একবারও ইচ্ছে করছেনা লুপার দিকে তাকাতে। কত শখ করে আজ শাড়ী পড়ে সেজেগুজে এসেছে সে। সবকিছু তো নীলের জন্যই। লুপা একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে রেখে বলল”
_আব,,,শামু আপু যদি একটু বাইরে যেতেন। না না আপনাকে যেতে হবেনা “নীলের দিকে তাকিয়ে” আপনি একটু আমার সাথে বাইরে আসবেন?

নীল টেবিলের দিকেই দৃষ্টি রেখেই বলল”
_যা বলার এখানে বল। আমি কোথায় যেতে পারব না আর শামুকে একা বাইরে যেতে দিবনা।” লুপা অসহায় চোখে তাকাল। নীলের এত এত পরিবর্তন সে মেনে নিতে পারছেনা। সত্যিই মানুষ বড়ো আজব প্রাণী
। কখন কাকে ভালো লেগে যায় কখন কাকে মন দিয়ে বসে সেটা তাঁরা নিজেও জানেনা। আজ যেটা ঘৃণিত কাল সেটা প্রিয় হয়ে যায়। আর কাল যেটা প্রিয় তো আজ সেটা বিরক্তকর হয়ে যায়। লুপা কষ্টটা চাপা রেখে অপরাধী গলায় বলল”
_সরি নীল ভাইয়া সেদিন আমি অবুঝের মতো এমন কান্ড না করলে আপনাকে সবার সামনে এতটা ছোট হতে হতনা আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ।” নীল তাচ্ছিল্য হাসল। শামু উৎসুক গলায় বলল”
_কী হয়েছিলো?
_কিছু না তুমি খাও।” গম্ভীর গলায় বললো নীল। তারপর লুপাকে বলল”
_আমি কিছু মনে করিনি। আর এবিষয় নিয়ে কথা না বললে আপাতত খুশি হবো।
_আমার আরো কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে।” এতক্ষণে নীল লুপার দিকে চোখ তুলে তাকাল। কারণ লুপার গলা কান্নাজরিত। চোখ তুলে তাকিয়ে তাঁর মনে হলো সে ভুল করে ফেলেছে। এবার তো এই মায়া পরীর মায়ার জালে সে আঁটকে যাবে। লুপা আজ কাজল পরেছে চোখে চশমা পরেনি। অরেঞ্জ কালার শাড়ী সাথে ম্যাচিং করে দু হাত ভরে চুড়ি পরেছে। নীল স্বপ্নে লুপাকে এই ভাবে সাজাতো আজ স্ব চোক্ষে দেখছে। এইতো তাঁর স্বপ্ন পরী। লুপাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। নীল চোখ নামিয়ে নিল। এই মায়ায় সে আঁটকে পড়তে চায়না বলেই তো সে চোখ তুলে তাকাচ্ছেনা। আবারও টেবিলের উপর চোখ রেখে নীল বলল”
_কী কথা?” লুপা শামুর দিকে তাকাল। শামুর সামনে কীভাবে সে বলবে কিন্তু না বলেও যে থাকতে পারবেনা। লুপা নীলকে বলল”

_আসবেন একটু বাইরে প্লিজ?” নীল কিছুক্ষণ কি যেন ভাবল তারপর বলল”
_ওকে চলো।” শামু আইসক্রিম খাচ্ছিল, নীল দাঁড়াতেই শামুর কনুইয়ের সাথে তাঁর গা লেগে ধাক্কা খেয়ে শামুর হাত থেকে আইসক্রিম পড়ে যায়। শামুর ঠোঁটে মুখে বুকে অনেক জায়গায় আইসক্রিম ছিটকে পড়ে। নীল তৎক্ষণাৎ টিস্যু নিয়ে শামুর ঠোঁটে মুখে লেগে যাওয়া আইসক্রিম মুছতে লাগে। লুপার বুকের ভেতর আগুনে দাউদাউ করতে লাগে। এই দৃশ্যটা লুপাকে এতো কষ্ট কেন দিচ্ছে? শামুর ঠোঁট মুখ মুছে তাঁর গলা মুছে দিয়ে হাত আরেকটু নিচে নামাতে লাগলো।

তাহলে কী এখন? লুপা আর একমূহুর্ত দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না বড় বড় পা ফেলে চলে গেল এখান থেকে।

নীলের হাত বুকের সামনে এসে থেমে যায়। তাঁর হাত কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। অবিলম্বে হাত সরিয়ে নিয়ে ইতস্তত হয়ে কিছুক্ষণ শুধু বসে থাকে। শামুও লজ্জায় লাল হয়ে আছে। নীল একটা টিস্যু শামুর হাতে তুলে দেয়। তারপর সেও বেরিয়ে আসে। লুপা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। নীল তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। লুপা মাথা নিচু করে আছে। নীল বলল”
_হ্যাঁ বল। কী যেন বলবি?” লুপা যা বলতে এসেছিল আপাতত তা আর তাঁর বলা হবেনা। এক কথায় লুপা কথাই বলতে পারবেনা তাঁর গলায় সব আঁটকে আছে। নীল বলল”
_কী হলো বলছিস না কেন কী কথা?
লুপা মাথা নিচু করেই থাকল মাথা তুললে হয়তো তার ছলছল চোখ নীলের চোখে পড়ে যাবে। লুপা মাথা নিচু রেখেই না সম্মতি মাথা নাড়ালো। তারপর কিঞ্চিৎ কাঁপা গলায় বলল”
_কি কি কিছু না।” লুপা তড়িঘড়ি করে ওখান থেকে চলে গেল। নীল হতভম্ব হয়ে গেল। হঠাৎ লুপার কী হলো সে কিছুই বোঝতে পারল না। সে নিজেইতো বাইরে ডেকে আনলো কিছু বলবে বলে। তাহলে? বুক ছিড়ে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রেস্টুরেন্টের দিকে পা বাড়ায় নীল। লুপার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয় সে বড্ড ভুল করে ফেলেছে। বার বার চোখে শুধু লুপার মুখটা ভেসে উঠছে।

_______________________________

তিন চার দিন থেকে জিহান লক্ষ্য করছে লারা অস্বাভাবিক আচরণ করছে। সবসময় একা একা বসে থাকছে জিহানের উপস্থিতিতে কেঁপে ওঠছে। রাত জেগে রুমে পায়চারী করেছে। খেতে বসলে না খেয়ে সবার দিকে তাকিয়ে থাকছে। জিহান বুঝতে পারছেনা হঠাৎ লারার হলোটা কী। নতুন বিয়ে করেছে বলে জিহান একমাসের ছুটি চেয়েছিল এরমধ্যে পনেরোদিন চলে গেছে। এই পনেরোদিনে সে কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারেনি লারার বিষয়ে। তবে এতে কোনো আফসোসও হচ্ছেনা জিহানের,কেননা এতোদিনে সে নিশ্চিত হয়ে গেছে লারা আর যাই করুক জিহানের খারাপ করবেনা।এই বিয়ের পিছনে লারার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য থাকবে না। হতে ওতো পারে লারা জিহানকে ওই রাতটার জন্যই বিয়ে করছে। যে রাতটায় সে মাতাল হয়ে ডুব দিয়েছিল লারার মাঝে। জিহান আপাতত লারার বর্তমান বিষয় নিয়ে ভাবছে। লারা কেন হঠাৎ এমন হয়ে গেল তা তাঁর জানতেই হবে। ভেবেছিল যা হওয়ার হোক এনিয়ে সে মাথা ঘামাবেনা কিন্তু এখন মনে হচ্ছে লারার কী হয়েছে এটা জানা খুব জরুরী। নয়তো যে জিহানেরও শান্তি লাগবেনা। লারা খাটে বসে ছিল জিহান গিয়ে লারার পাশে বসল। জিহান গলা খাঁকড়ি দিল। লারার আগের মতই বসে আছে। জিহান লারাকে ডাক দিল। লারার কোনো ভাবান্তর হলোনা। জিহান লারাকে কিঞ্চিৎ ধাক্কা দিয়ে ডাক দেয়, লারা কিঞ্চিৎ চমকে ওঠে। জিহান বলে
_এভাবে চমকালে কেন? কী এতো ভাবো?
_ক ক ক কই না না নাতো কী ভাব্ব।” লারা এভাবে চমকানো কথা বলা দেখে জিহান কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে ফেলে। লারা বরাবরই চালাক মেয়ে জিহান সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছে দেখে সে নিজেকে সামলে জিহানকে বলল”

_আব,,,আ মানে,,আসলে বাড়িতে যা ঘটে গেছে আমি এসব মেনে নিতে পারছিনা। এভাবে দিহান ভাই অরিনের চলে যাওয়া আমার মোটেই ভালো লাগেনি। তাছাড়া বাড়ির সব মানুষ কেমন জানি হয়ে গেছে। সবসময় সবাই মন মরা হয়ে থাকে এসব দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে। ” জিহানের মন খারাপ হয়ে গেল, আসলেই তার বাড়িটা মৃত বাড়ির মতো হয়ে গেছে। সবাই সবসময় মরা মুখে বসে থাকে। লারা জিহানের হাতের উপর হাতটা রাখল জিহান লারার দিকে তাকালো। লারার কোমল হাতের ছোঁয়া তার হৃদয়ে অন্যরকম শিহরণ জাগায়। লারা জিহানকে বলল”

_আপনি ওদের ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলুন না প্লিজ।
_আমি কীভাবে বলবো। তুমি শুননি সবাই কী বলছে? কেউ কোনোদিন ওদের এই বাড়িতে তুলবে না। আর মেজো আম্মুতো বলেই দিয়েছে উনার গলায় ছুরি লাগালেও উনি এই মেয়েকে মেনে নিবেন না।
_এগুলাতো রাগের মাথায় বলছেন আপনি প্লিজ ওদের আসতে বলুন দেখবেন ওরা আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
_কিন্তু,,,
_প্লিজ।” জিহান কেন জানি লারাকে না বলতে পারল না। লারার টানাটানা চোখে আঁটকে গেল। জিহান হ্যাঁ সূচক মাথা দুলিয়ে বলল”
_হুম। আমি দেখছি।
_ধন্যবাদ।”লারা হাত সরিয়ে নিল। জিহানের কেন জানি খুব খারাপ লাগছে লারা হাত সরিয়ে নেওয়াতে। ফোনটা নিয়ে জিহান বারান্দায় চলে যায়। দিহানকে ফোন দেওয়া দরকার।

_____________________

দিহানের বুকে মাথা রেখে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে অরিন। দিহানের ফোন বাজতেছে টেবিলের উপর। দিহান নড়ছেনা নড়লে যদি অরিনের ঘুম ভেঙ্গে যায় সেই কারণে। সারারাত ভালোবাসার সাগরে ডুবে ছিলো দুজন। সকালে অরিনের হঠাৎ করেই মাথা ব্যথা ধরে যায়। দিহান অরিনের মাথা টিপে দেয় কিন্তু অরিনের মাথা ব্যথা কমেনা, দিহানও থেমে থাকেনি সে অরিনের মাথা টিপে দেয় মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় অনেক্ষণ পরে অরিনের ঘুম লাগে, তাই দিহান এখন অরিনের ঘুম ভাঙ্গাতে চাইছেনা। দিহানের ফোনে দুবার কল এসে আর আসলো না দিহান অরিনের নিস্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। পাগলীটা তাকে এতো ভালোবাসে তার উপর এতোটা আসক্ত, আজকের রাত না আসলে সেটা হয়তো কখনো জানাই হতোনা। কয়েকটা জোনাকপোকা আর কিছু বৃষ্টি জল পেলে যে কেউ এতো খুশি হয় তা তার জানা ছিলোনা। দিহান অরিনের মাথায় একটা চুমু এঁকে দিল। অরিনের সবসময় ঘুম পাতলা। আজ সে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।

_বিকাল ৪টায় অরিনের ঘুম ভাঙ্গে। অরিন ঘুম থেকে উঠে দেখে দিহান তার দিকে তাকিয়ে আছে। দিহান মৃদু গলায় বলে”
_গুড আফটারনুন সুইটহার্ট।” অরিন লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। ঠোঁটের কোনে লজ্জার হাসি। দিহান অরিনের থুতনি ধরে বলে”
_কী লজ্জা লাগছে? রাতে তো বাঘিনী হয়ে গেছিলা এখন দেখি ভেজা বেড়াল হয়ে গেলা।” অরিন চোখ বন্ধ করে থাকলো। লজ্জায় সে লাল হয়ে গেছে। দিহান দুহাতে অরিনকে জড়িয়ে ধরলো। অরিনও তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকল তাঁর বুকে।

অনেক্ষন পরে দুজন ওঠে। অরিন ওয়াসরুমে চলে যায়। দিহান রান্নাঘরে যায়। তরকারি ঠান্ডা হয়ে আছে ভাতও ঠান্ডা। ঠান্ডার মাঝে ঠান্ডা খেতে ভালো লাগেনা। আর রাতে যে দুজন খেয়েছিল আর খাওয়া হয়নি। দিহান চুলায় আগুন জ্বালিয়ে ভাত বসায় তরকারি গরম করে ভাত তরকারি নিয়ে আসে। এসে দেখে অরিম উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। দিহানের চেহারায় চিন্তার চাপ ফুটে উঠলো। এভাবে শুয়ে আছে কেন? শরীর খারাপ লাগছে নাকি? রক্তপাতটা একটু বেশিই হয়ে গেছিলো। এমনিতেই অরিনের শরীর দূর্বল। এখন হয়তো আরো বেশি দূর্বল লাগছে। দিহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অরিনকে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো”

_শরীর খারাপ লাগছে?” অরিন ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা টেনে না সম্মতি মাথা নাড়াল। গরম ভাতে ধোঁয়া উড়ছে। দিহান গিয়ে হাত পাকা নিয়ে ভাত ঠান্ডা করতে লাগে। ভাত কিছুটা ঠান্ডা হয়ে এলে দিহান অরিনকে ধরে বসিয়ে মুখে তুলে খাওয়ায়। অরিনকে খাইয়ে নিজে খেয়ে এসে ফোন হাতে নেয়। জিহান কল দিছিল। দিহান জিহানকে কল দেয়, জিহান বলে বাসায় যাওয়ার জন্য, দিহান সাফ সাফ না বলে দেয় সে যাবেনা। কিছুক্ষণ পরে আবার কল আসে কল ধরার পরে ফোনের ওপাশ থেকে লারার গলা ভেসে আসে। লারা অরিনের সাথে কথা বলে। অরিন লারাকে বলে যে করেই হোক সে দিহানকে মানিয়ে সে বাসায় ফিরবেই। ফিরতে যে তাকে হবেই। নাহলে কীভাবে সে এই মুখোশধারীকে স্ব চোক্ষে দেখবে।

চলবে…..।
চলবে……।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here