ভালোবাসি প্রিয় পর্ব ২৯+৩০

#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_২৯
#সুলতানা_সিমা

.
শান্তি নীড়ের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দিহান,সাথে অরিন। অরিনকে দিহান বুঝাতে না পেরে বাধ্য হয়ে তাকে আসতে হয়েছে। না এসে উপায় ছিলোনা, অরিন খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল, কান্নাকাটি তো লেগেই ছিল বার বার বলছিলো একবার বাড়ি নিয়ে যান প্লিজ আমি সবাইকে দেখে চলে আসব। দিহান অরিনের কান্না সয্য করতে পারেনা, নিজের জেদের থেকে অরিনের চাওয়ার মূল্য বেশি তাই তাকে আসতেই হলো। কিন্তু এসে সে দোটানায় পড়ে গেছে। গেটের ভেতর ঢুকবে নাকি ঢুকবেনা এটা বুঝে উঠতে পারছেনা। দিহান জানে তার মা কেমন। আর যাই হোক কোনোদিনই অরিনকে মেনে নিবেন না তিনি। যার উপর একবার রেগে যান তাকে তিনি দু’চোখে দেখতে পারেন না। দিহান পকেট থেকে ফোন বের করে জিহানকে ফোন দিয়ে জানালো সে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষানিক পরে জিহান আসলো জিহান আসতেই দিহান জিহানকে জড়িয়ে ধরে দুজনই কেঁদে দেয়। এই ক’দিন জিহান ছাড়া কেউ তার সাথে যোগাযোগ রাখেনি। দিহানকে ছেড়ে দিয়ে জিহান অরিনকে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে। তারপর লাগেজ নিয়ে সে গেটের ভেতর ঢুকে।

কলিং বেল বেজে উঠতেই দিহানের মা এসে দরজা খুলে দিলেন। এতো সকাল সকাল দিহানকে দেখে খুশিতে তিনি আত্মহারা হয়ে গেলেন। ভুলেই গেলেন কী কারণে দিহান বাসা থেকে বেরিয়ে গেছিল। উনার ছেলে যে আর একা নেই তা যেন মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। কতদিন পরে উনার কলিজার টুকরা ছেলেকে দেখলেন। ভুলে তো যাবেনই। ছেলের চলে যাওয়াতে বুকের ভেতরটা শূন্য হয়ে গেছিল। ছলছল চোখে দিহানের দিকে তাকিয়ে বললেন”
_বড় হয়ে গেছিস? মাকে ছাড়া থাকতে শিখে গেছিস?

দিহান ঠোঁট কামড়ে কান্না আঁটকাতে চাইলো। দিহানের মা দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন”
_আয়। আম্মুর বুকে আয়।” দিহান ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর মায়ের বুকে। সুমনা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন। মনে হচ্ছে কত যোগ পরে ছেলেকে বুকে নিলেন। কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেলো। হঠাৎ চোখ যায় দরজার দিকে। অরিন দাঁড়িয়ে আছে। সুমনা ঝট করে দিহানকে নিজের বুক থেকে ছাড়িয়ে নিলেন। অগ্নি দৃষ্টিতে অরিনের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসতে লাগলেন। দিহান অসহায় চোখে জিহানের দিকে তাকাল। জিহান উনাকে বলল”

_মেজো আম্মু। যা হবার তো হয়ে গেছে এখন আর রাগ করে কী হবে রাগ ভুলে ওদের মেনে নিন।” রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সুমনা বললেন”
_আমি একবার বলে দিয়েছি এই মেয়েকে আমি মেনে নিবনা। আমার গলায় ছুরি লাগালেও আমি এই মেয়েকে কোনো দিনই মেনে নিবনা।
_আম্মু আমি অরিনকে ভালোবাসি। যতটা তোমাকে ভালোবাসি ঠিক ততটাই। আমি ওকে ছাড়তে পারবো না।” সুমনা তাচ্ছিল্য হেসে বললেন”
_ভালোবাসিস মাকে? তাহলে ছেড়ে গেলি কেন? তুই আমাকে ভালোবাসলে জীবনেই তুই এই মেয়ের জন্য আমায় ছেড়ে যেতিনা।
_আম্মু তোমাকে ছেড়ে গেলেও আমার জানা ছিলো তোমার খেয়াল রাখার জন্য দিশা,দিয়া, বাবা এমনকি বাড়ির সবাই আছে। কিন্তু অরিনকে ছেড়ে দিলে সে কই যাবে একবার ভাবো। আমি ছাড়া তার কেউ নে,,,,, “দিহানের কথা শেষ হওয়ার আগেই সুমনা হাত তুলে বললেন”
_ব্যস। তোকে আজ একটা কথা পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছি। এই মেয়ে যতদিন এই বাড়িতে থাকবে ততদিন তুই আমাকে মা বলে ডাকতে পারবি না।” রাগে ফুঁসফুঁস করতে করতে তিনি চলে গেলেন। অরিন মাথা নিচু করে দরজায় দাঁড়িয়ে হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগল। নিজেকে খুব তুচ্ছ, খুব নিকৃষ্ট মনে হচ্ছে। দিহান লাগেজ নিয়ে এসে অরিনের হাত ধরে জিহানকে বলল”

_চলে যাচ্ছি। উনাকে বলে দিবে আমিও উনার ছেলে। আমিও একবার বলে দিয়েছি যে বাড়িতে অরিনের জায়গা হবেনা সে বাড়িতে আমার ছায়াও থাকবেনা। চলো অরিন।

_না তোমরা যেওনা।” সিঁড়ির দিক থেকে লারার গলা শুনা যেতেই সবাই সেদিকে তাকাল। লারা শাড়ীর কুঁচি ধরে দৌড়ে নামছে। লারা এসে অরিন দিহানের সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল”
_যাবেনা তোমরা প্লিজ।” দিহান লারাকে বলল”
_যেতে নিশ্চয়ই আসিনি ভাবী। কিন্তু কিছুই করার নেই। ভালো থাকবেন।” দিহান যেতে ঘুরে দাঁড়ায়। লারা দৌড়ে গিয়ে দুহাত মেলে পথ আঁটকায়। অনুরোধের গলায় বলে”
_ প্লিজ যেওনা দিহান । মা সন্তানের উপর রাগ করতেই পারে তাই বলে বাড়ি ছেড়ে দিবা? চাচি তোমাদের উপর রাগ না ঝাড়লে কার উপর ঝাড়বে? পারা প্রতিবেশীর উপর? তোমরা সন্তান হও, তোমাদের মারবে বকবে আবার বুকে টেনে নিবে। একটা জিনিস আমাদের আজ খারাপ লাগে বলে যে কালও সেটা খারাপ লাগবে এমনটা তো নয়। চাচি একদিন না একদিন অরিনকে মেনে নিবে। সে জন্য উনার মন জয় করতে হবে। উনার রাগ ভাঙ্গাতে হবে। এভাবে দূরে দূরে থাকলে আজীবন দূরে থাকা যাবে কোনো কিছুর সমাধান হবেনা দিহান। তাই প্লিজ তোমরা চলে যেওনা দিহান। চাচির রাগটা একবার ভাঙ্গিয়ে দেখ আমার বিশ্বাস অরিনের মতো মেয়েকে উনি ভালো না বেসে থাকতে পারবেন না।”

জিহান বিস্মিত চোখে লারার দিকে তাকিয়ে আছে। লারা রূপবতী এটা তার জানা ছিল। আজ জানলো লারা শুধু রূপবতী নয় গুনবতীও। জিহানের মা সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ ধরে লারার সব কথা শুনলেন। লারার বলা শেষ হতেই তিনি লারার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আলতো করে লারার গালে হাত রেখে বললেন”
_আমি ভাগ্যবতী যে আমি এরকম একটা মিষ্টি বউমা পেয়েছি। তোমার শশুড় ঠিকই বলে। জিহান ভুল মানুষের হাত ধরেনি।” শুনে জিহান কিছুটা লজ্জা পেল। যদিও সে লারাকে ভালোবেসে বিয়ে করেনি তবুও কথাটা তার মন ছুঁয়ে গেছে। দিহানের বড় মা দিহানকে জড়িয়ে ধরলেন দিহান চুপ হয়ে আছে। উনি দিহানকে বললেন”

_মায়ের মতো জেদি হয়েছিস। জেদ দিয়ে কী সবকিছু হয়? আয় বউমাকে নিয়ে ভেতরে আয়।” দিহান দাঁড়িয়ে থাকল তার বড়মা ধমক দিয়ে বললেন”
_আসতে বলছি খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?” দিহান এখনো নড়ল না। মুখে জগতের আঁধার নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দিহানের বড়মা বললেন”
_তোর বাবা মাও আমার কোনো কথা ফেলে না আর তুই বউদের সামনে আমায় ছোট করছিস?” দিহান অরিনকে নিয়ে ভেতরে আসলো। তার বড়মা অপমানবোধ করছেন আর সে জেদ দেখাবে এটা হবেনা। লারা তাদের এনে তাদের রুমে দিয়ে গেল।

দিহান অরিন এসেছে শুনে দিহানের বাবা মনে মনে খুশিই হলেন। ছেলে জন্য ভেতরে ভেতরে পোড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। দিহানের ছোট চাচ্চুও মনে শান্তি ফিরে পেলেন। এতদিন টেমশনে ছিলেন তিনি দিহানের জন্য। দিহানকে ছেলের মতো দেখেন তিনি। কিন্তু খুশি নন দিহানের বড় চাচ্চু। উনি চিল্লাচিল্লি করে সবাইকে বকাবকি শুরু করে দেন। দিহানের রুম থেকে সব কিছু শুনা যায় ভাগ্যিস দিহান তখন ওয়াসরুমে ছিল নয়তো কেউ তাকে আঁটকে রাখতে পারতো না। উনি অরিনকে খুনির মেয়ে সস্তা মেয়ে লোভী মেয়ে যা তা বলেছেন। অরিন সব শুনেও চুপ থাকলো। দিশা ইশি দিয়া সায়রা চৌধুরী এসে তাদের সাথে দেখা করে যায় শুধু আসেনা লুপা। লুপাকে দেখার জন্য অরিনের মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে। কিন্তু লুপা নাকি ঘুমে আছে। দিশা বলে গেল দুদিন থেকে নাকি লুপা নিজের রুম থেকেই বের হচ্ছেনা। অরিন চিন্তায় পড়ে যায়। লুপার কোনো সমস্যা হয়নি তো এটা ভেবে ভয় লাগে তার।

_________________________

নীলকে দিহানের বড়মা ফোন দিয়ে বলছেন আজ তাদের বাসায় যেতে। দিহান এসেছে শুনে নীলও ভাবলো যাওয়া যাক যা হবার তাতো হয়েছে মায়ের বয়সি মানুষ গুলা ক্ষমা চাইছে লুপাও নিজের ভুল বুঝতে পারছে তাহলে আর অভিমান চেপে কী হবে। নীল রেডি হয়ে রুম থেকে বের হতেই শামুর সম্মুখীন হল। শামু নীলকে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল”

_কোথাও যাওয়া হচ্ছে বুঝি?
_হুম এক ফ্রেন্ডের বাসায়।
_আমিও যাবো প্লিজ।” নীল কিঞ্চিৎ বিরক্তি নিয়ে তাকাল। সব সময় সব বায়না পূরণ করা যায়না। সে যেখানে যেতে চায় সেখানেই যাওয়ার জন্য শামু বায়না ধরে। নীল নিজেকে সামলে শামুকে বলল”
_শামু দেখো আমি আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছি। তার আম্মু চাচিরা আমার সাথে তোমাকে দেখলে আমায় খারাপ ছেলে ভাব্বে।” শামুর মুখে অন্ধকার নেমে আসলো। নীল এসবে পাত্তা দিলনা। এসবে পাত্তা দিতে গিয়ে সে শামুকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিছিল। এমনটা হলে দেখা যাবে একসময় সে শামুর প্রতি দূর্বল হয়ে গেছে। এভাবে চললে হবেনা। মানুষ জাতি সে এরা বিষাক্ত ছোবল খেতে খেতেও সে মধুর ছোবল বলতে শিখে যায়। বিরক্তিকর জিনিসকেও হঠাৎ করে ভালোবেসে ফেলে তাই সাবধান থাকতে হবে। নীল শামুর পাশ কেটে নিচে এসে উঁচু গলায় তার মাকে আসছি বলে সে বেরিয়ে গেল।

শাওন আর নীল মিলে আসলো দিহানদের বাসায়। সেদিনের পরে এই প্রথম দুজন শান্তি নীড় এসেছে। কলিং বেল বাজাতেই দিহানের বড়মা এসে দরজা খুলে দিলেন। যেহেতু দিহানের বাবা-চাচ্চুরা ওইদিনের ঘটনা বিষয়ে কিছুই জানেন না তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাদের সাথে কথা বললেন। নীল শাওন দিহানের সাথে দেখা করল। তারপর দিহানের বড়মা বললেন দিহানের বাবা মা ও তার চাচ্চুকে বুঝাতে। কিছুক্ষণ পরে ড্রয়িংরুমে সবাইকে ডেকে আনলো তারা। দিহান অরিন বাদে পরিবারের সবাই আছে এখানে। নীলের সোজা সোফায় বসেছেন লুপার মা আর উনার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে লুপা। নীল একবারের জন্যেও লুপার দিকে তাকালো না। না লুপা একবারের জন্য শাওনের দিকে তাকাল। তার অবাধ্য চোখ বারবার নীলের দিকেই যাচ্ছে।

নীল শাওন দিহানের বাবা মাকে ও তার বড় চাচ্চুকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ফলাফল জিরো। দিহানের বাবা বুঝলেন কিন্তু দিহানের মা আর তার বড় চাচ্চু এটা বুঝলেন না। উনারা উঠে উনাদের রুমে চলে গেলেন। নীল হতাশ হলো দিহানের বড়মাকে বলল”
_তাহলে আমি উঠছি।
_উঠছি মানে? খেয়েদেয়ে যাবা।[বড়মা]
_না না আন্টি আমি খেয়ে এসেছি।” লুপার মা অপরাধী গলায় বললেন”
_বাবা তুমি কী এখনো আমাদের উপর রেগে আছো? দোষ তো তোমাদের দুজনের। তোমার আর লুপার। তোমরা যদি একবার বলে দিতা তাহলে কী এমনটা হতো?” লুপার মাকে আঙুল দিয়ে গুঁতা দিলেন দিহানের বড়মা। জিহান আর লুপার বাবা জিজ্ঞাসুক চোখে তাকিয়ে আছেন। দুজনের কপালে বাঁজ। লুপার মা হুসে এলেন এতোক্ষণ ধরে বোকার মতো বলে যাচ্ছেন খেয়ালই করেন নি জিহান আর উনার স্বামী এখানে। জিহান বলল”

_কী করছে ও আর লুপা? কী বলেনি ওরা?” দিশা তড়িঘড়ি করে বলল”
_তেমন কিছু না আসলে নীল ভাইয়া আর লুপা ঝগড়া করছিল সবাই লুপার পক্ষে কথা বলেছিল তাই নীল ভাইয়া মনে মনে রেগে আছে কারণ দোষ সব লুপার ছিল। ” ইশিকে কনুই দিয়ে গুঁতা দিয়ে বলল”
_কিরে বলনা।” ইশি থমথমে হয়ে বলল”
_হ হ হ্যাঁ। হ্যাঁ হ্যাঁ ও যা বলছে তাই।” জিহান কিঞ্চিৎ সন্দেহের চোখে তাকাল। নীল মাথা নিচু করে বসে আছে তার মনটা আঁকুপাঁকু করছে লুপাকে একটা পলক দেখার জন্য। কিন্তু সে থাকাবেনা। লুপার যে সর্বনাশি রূপ। একবার দেখে নিলে বার বার চোখে ভাসে। হয়তো লুপাকে সে ভালোবাসে বলেই লুপাকে তার কাছে এতোটা সুন্দর,আকর্ষণীয় লাগে। শাওন আঁড়চোখে একবার দিশার দিকে তাকাল। দিশা তার দিকে তাকিয়ে ছিল শাওন তাকাতেই ঝট করে চোখ সরিয়ে নিলো। লারা সবারই দৃষ্টি অনুসরণ করছে। নীল বলল”

_আব,,,আসলে আমার উঠতে হবে আম্মু অসুস্থ বাসায় একা আছে।” নীলের মা অসুস্থ শুনে নীলকে আর জোর করলেন না কেউ। তবে সবাই তাকে বলে দিল দু একদিন পরে যেন আসে। তাও থাকার জন্য। শাওনকেও বলল। নীল শান্তি নীড়ের গেটের বাইরে এসে লম্বা দম ছাড়ল। লুপার সামনে বসে চোখ নামিয়ে রাখা যে কতটা কষ্টের তা সে ছাড়া আর কেউ বুঝবেনা। বার বার মন বলছিল একবার দেখে নেই একবার দেখে নেই। কিন্তু মনকে যে সবসময় প্রশ্রয় দিতে নেই। নয়তো বড় অপরাধ হয়ে যায়।

_______________
.
সারাদিন নিজেদের ঘরে বসে কাটায় অরিন আর দিহান। লারা তাদের খাবার দিয়ে যায়। খেয়েদেয়ে লারার সাথে দেখা করতে রুম থেকে বের হয় অরিন। লারা তাকে নিয়ে ছাদে যায়। ছাদে গিয়ে অরিন লারাকে বলে”

_এবার বলো কে সে মুখোশধারী?
_লুমার আম্মু।” লারার গম্ভীর গলার জবাব শুনে অরিন কিঞ্চিৎ জোর গলায় বলে”
_কিইইইইইইই। লুপার আম্মু? নিজের চোখে দেখেছো?
_উঁহু নিজের চোখে দেখিনি। কিন্তু যা আন্দাজ করছি তা ভুল করিনি।
_আমাকে সবকিছু খুলে বলো।” লারা রেলিং ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল”
_সেদিন তোমরা যাওয়ার পরে লুপার রুমে গেছিলাম। ওর রুম থেকে আসার সময় আমার চোখে পড়ে লুপার ড্রেসিং টেবিলের উপর ব্লাক ব্রেসলেট।
_তো? একটা ব্রেসলেট দেখে কী প্রমাণ হলো?
_ওটা মিহানের ছিলো। ” অরিন অবাক হয়ে থাকায়।লারা আবার বলতে লাগে। “তার পরের দিন আমি লুপাকে ছলেবলে জিজ্ঞেস করি ওটা কার। যদিও আমি আগে থেকে জানতাম এটা মিহানের। ও বলে এটা তার ভাইয়ের কোনো এক এক্সিডেন্টে নাকি সে মারা গেছে।
_কী? এক্সিডেন্ট?
_বুঝনা? তার মা তার ভাইকে খুন করেছে এটা সে বলবে কেমনে?
_কিন্তু আপু এটা কীভাবে সম্ভব? দিহানের মা হলে একসময় মেনে নেওয়া যেত কিন্তু লুপার মা,উনার মতো সরল একটা মানুষ কীভাবে একাজ করতে পারে?
_অরিন আমরা যা চোখে দেখি তা আমাদের দেখানো হয়। আর যা দেখিনা তা আমাদের চোখের আড়ালে লুকিয়ে রাখা হয়।
_কী বলতে চাও?
_লুপার মা আসলে এতোটা ইনোসেন্ট না যতটা আমরা ভাবছি।
_লারা আপু এসবে এটা নিশ্চয়ই প্রমাণ হয়না সবকিছু উনি করাচ্ছেন।
_ হিসাব মিলাও অরিন জিহান আর দিহানের সাথে যে কাজ হয়েছে সেটা উনার ছেলের সাথে হয়নি। উনিই একমাত্র ব্যক্তি যার কোনো রাগ নেই তোমার উপর। এই বাড়ির সম্মান নষ্ট হওয়ায় উনার কোনো মাথা ব্যথা নেই।
_লারা আপু উনার ছেলে এখনো ছোট আর উনি আমায় ভালোবাসেন কারণ আমি উনার মেয়ের ফ্রেন্ড। আর খাবারদাবার ছাড়া উনার অন্য কিছু নিয়ে মাথা ব্যথা নেই এটা আমি আগে থেকেই জানি।
_কাউকে বিশ্বাস করা ভালো অন্ধ বিশ্বাস করা জীবনের জন্য কালো। আমি তোমাকে প্রমাণ করে দিব ওটা লুপার মা আর আমার মিহানের মৃত্যুর প্রতিশোধটাও আমি নিবই।
#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_৩০
#সুলতানা_সিমা

লারার কথা শুনে অরিন আঁতকে উঠল। এসব কী বলছে লারা তাহলে সে লুপার মাকে খুন করে দিবে? এমনটা হলে তো লুপা এতিম হয়ে যাবে, মা ছাড়া বেঁচে থাকার স্বাদ কতটা তেতো হয় এটা অরিন জানে, সে কিছুতেই চায়না লুপা এতিম হোক। অরিন কিঞ্চিৎ গলা উঁচিয়ে লারাকে বলল”
_আপু মিহান ভাই কিভাবে খুন হয়েছে সেটা পুরোপুরি ভাবে না জেনে তুমি উনার গায়ের ফুলের টুকাও দিবানা।” অরিনের কথা লারা কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে তাকাল। তারপর ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি নিয়ে বলল”
_তুমি খুব বোকা অরিন। তবে হ্যাঁ তোমার কথাই থাকল আমি আগে মিহানের মিত্যুর আসল কারণ জানবো। আপাতত এটা নিশ্চিত হওয়া দরকার এই মুখোশধারী উনি নাকি অন্য কেউ, তবে তার আগে তোমার সাহায্য লাগবে।
_আমার সাহায্য?
_হুম তোমার সাহায্য। তুমি শুধু আমাকে বলেছ এই বাড়িতে আসার কারণ, বিয়ে করার কারণটা এখনো জানাওনি। যদি তুমি সবটা না জানাও তাহলে আমি কিভাবে সব আন্দাজ করব।” লারার কথাটা অরিনের কাছে ঠিক মনে হলো আসলে লারাকে সব না জানালে কীভাবে সে এই খেলাড়ীর হিসাব মিলাবে।

_আমার সৎ বোন তানভী, ও সৎ হলেও কখনো আমি তাকে সৎ ভাবিনি। সব সময় মায়ের পেটের বোনের চোখে দেখেছি। আমি জানতাম ও প্রেম করে কার সাথে করে ছেলে কেমন তা জানতাম না। আর জানলেও আমি কিছু করতে পারতাম না কারণ ওদের নিয়ে কথা বলার অধিকার আমার নেই। কিন্তু ভালোবাসার অধিকার তো আছে। আমি চাইলেও ওদের সৎ ভাবতে পারিনা। একদিন হঠাৎ করে আমার হোয়াটসঅ্যাপে একটা ভিডিও আসে,ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায় তানভী একটা ছেলের সাথে অন্তরঙ্গ মেলামেশা করছে। আমি তানভীকে দেখাই ভিডিওটা, তানভী আমার হাতে পায়ে ধরে কান্না করে বলে আমি যেন এসব মাকে না দেখাই আর একটা কিছু করি। যতই হোক তানভীর শরীরে আমার বাবার রক্ত বইছে। ওর সম্মান মানে তো আমারও সম্মান। ভিডিওটা কোনোভাবে ছড়িয়ে পরলে আবার মৃত বাবার নামে মানুষ নানা কথা বলবে। হোক আমার বাবা খুনি সন্ত্রাসী কিন্তু সে আমার বাবা তো। আমি ওই নাম্বারে কল দেই একটা মেয়েলী গলা ভেসে আসে। ফোনের ওপাশ থেকে বলে দেখা করতে আমি দেখা করি, দেখা করার পরে আমাকে দিহানের একটা ছবি দিয়ে বলে আমি যেন একে বিয়ে করে শুধু কাবিননামাটা এনে দেই আর কিছু না। আমার মামাতো বোন মহীনি আপুকে ফোন দিয়ে সবটা জানাই আপু আমায় নিষেধ করে এমনটা করতে। কিন্তু আমি শুনিনি ভাবলাম এইটুকুই তো এর তো বেশি কিছুনা তাহলে করেই নেই। তারপর ওইদিনই আমি দিহানকে ফলো করি। দিহানের কথার জালে তাকে ফাঁসিয়ে তাকে বিয়ে করি। বিয়ের পরে জানতে পারি সে লুপার ভাই। দিহানের সাথে আমার একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমি বুঝতে পারলাম এভাবে এগুনো আমার ঠিক হচ্ছেনা আমি ব্ল্যাকমেইলারকে বললাম আমি আর এসব কর‍তে পারবো না। সে আমাকে আমার আর দিহানের ভিডিও দেখিয়ে হুমকি দেয় আমি তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে চললে সে এই ভিডিও আমার পরিবারের মানুষদের দেখিয়ে দিয়ে বলবে আমি কলেজের নাম করে বাইরে পুরুষ নিয়ে ঘুরি। আমি ভয় পেয়ে যাই কারণ এটা মা দেখলে আমায় বিয়ে দিয়ে দিত আমার লেখাপড়া,স্বপ্ন সব শেষ হয়ে যেত। তারপর ও আমায় একটা কাগজ দেয় কাগজটায় লেখা দিহান চাইলেও আগামী তিন বছরে আমায় ডিভোর্স দিতে পারবে না। আমি কাগজটায় দিহানের সাইন নেই। কিছুদিন পরে আবার এসে বলে আমি যেন এই বাড়িতে এসে আমার অধিকার চাই আমি না বলি না বলার কারণে আমাকে অনেক টর্চার করে। তারপর দিহানকে খুন করে দিবে বলে হুমকি দেয়। ”

এইটুকু বলে কেঁদে দেয় অরিন। লারা বুক ছিড়ে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অরিনের চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বলল”
_ভালোবাসো দিহানকে?” অরিন ছলছল চোখে লারার চোখের দিকে তাকিয়ে উপর নিচ মাথা নাড়ায়। সত্যিই সে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে দিহানকে। আজকাল দিহান চোখের আড়াল হলে তার মনে হয় এই বুঝি সে দিহানকে হারিয়ে ফেলল। দিহানকে ছাড়া তার সবকিছু শূন্য হয়ে যায়। লারা অরিনকে জড়িয়ে ধরে বলল।
_কেঁদনা অরিন, সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমায় বলতে ভুলে গেছি, বাবাকে ওই কালপ্রিট ছেড়ে দিয়েছে।” অরিন লারাকে ছেড়ে লারার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল”

_সত্যি?
_হুম। কিন্তু বাবা আমাকে ভুল বুঝতেছে অরিন। তোমাকে সব কিছু পরে বলবো। এখন যাও নিচে যাও। আমি একটু পরে আসছি।” অরিন দাঁড়িয়ে থাকল। লারা বলল” কী হলো যাও।”

অরিন চলে আসলো। কিন্তু তার ভয় হচ্ছে লারা যদি সত্যি সত্যি লুপার মাকে মেরে দেয়। অরিনের সব থেকে বেশি ভয় হচ্ছে দিহানকে নিয়ে। যদি কোনোদিন দিহানকে হারিয়ে ফেলে। ভালোবাসা যত গভীর হয় হারানোর ভয় ততই তীব্র হয়। তাই হয়তো এই ভয়টা আজকাল তাকে ভালো থাকতে দেয়না। অরিন রুমে এসে দেখল দিহান ফোনে কার সাথে কথা বলছে। কথা বলছে বললে ভুল হবে গালাগালি করছে। দিহানের এই স্বভাবটা অরিনের খারাপ লাগে। এমনি রাগ করেনা হঠাৎ রেগে গেলে অশিক্ষিতদের মতো হয়ে যায়। খারাপ ভাষায় কথা বলে। অরিনকে দেখে দিহান ফোন কেটে দেয়। অরিন দিহানকে বলে”

_কার সাথে কথা বললেন?” দিহান চুপ থাকল কিছু বলল না। রাগে দিহান ফোঁস ফোঁস করছে। দিহানকে দেখে অরিন কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে যায় তাই সে চুপচাপ পাশে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পরে দিহান শুয়ে পড়ে। তারপর টান দিয়ে অরিনকে বুকের উপর ফেলে দিল। অরিন নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করে বলল”
_আরে দরজা খোলা কী করছেন ছাড়ুন।” দিহান অরিনকে দু’হাতের বেড়িতে বেঁধে নিয়ে বলল”
_স্বামী রাগ থাকলে বউরা আদর করে রাগ ভাঙ্গায়,কেমন বউ গো তুমি স্বামীর রাগ না ভাঙ্গিয়ে চুপ থাকছো?
_স্বামী রেগে গেলে চুপ থাকতে হয় এটাই আমি জানি। [একটু থেমে] কে ফোন দিছে বলুন না প্লিজ।
_তন্দ্রা।” অরিনের মুখটা কালো হয়ে গেল। দিহান অরিনের থুতনি ধরে মুখটা তোলে বলল” মন খারাপ করো কেন? আমাদের পবিত্র সম্পর্ক এখানে কারো বাধা কাজ করবে না। তন্দ্রা কেন,একমাত্র উপরওয়ালা ছাড়া কারোরই শক্তি নেই আমার থেকে তোমাকে আলাদা করার। তুমি ভেবনা কখনো তোমাকে ছেড়ে দিব। আমার সর্বোচ্ছ দিয়ে আমি তোমাকে আগলে রাখবো।
_কখনো যদি জানতে পারেন আমি খুব খারাপ তখনও ছেড়ে দিবেন না?
_কলিজাকে ছেড়ে দিলে বুঝি মানুষ বাঁচতে পারে?” অরিনের মুখটা এখনো কালো। দিহান অরিনকে আদুরে গলায় বলল” বউটার মন খারাপ কেন? স্বামীর যে খুব খারাপ লাগছে তা কী বুঝেনা বউ?”
_আপনার আম্মু কী কোনোদিন আমায় মেনে নিবেন। আমার খুব খারাপ লাগে যখন উনি বলেন আমি আপনার যোগ্য নই উনি আমায় মানবেন না।
_মেনে নিবে, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের ঘর আলো করে একটা বেবি আসুক দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে। আম্মু কিন্তু বেবি খুব পছন্দ করে।” দিহান অরিনকে ঘুরিয়ে খাটের মাঝামাঝি শুয়ে দিয়ে তার নাকে অরিনের নাক ছুঁয়ে বলল”

_একটু আদর করি?
_উঁহু।
_প্লিজজজজজজ।
_দেখুন আমার কাজ আছে ছাড়ুন আমায়।
_যদি না ছাড়ি?” বলতে বলতে দিহান অরিনের দিকে একটু ঝুঁকে পড়ে। অরিন কিঞ্চিৎ ধমক দিয়ে বলে।
_পাগল নাকি দরজা খোলা দেখছেন না?” দিহান ওঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আসে। তবুও শুনেনা অরিনের কথা। শুনবে কী করে অরিন নামক নেশা যে তাকে সব সময় মাতাল করে রাখে।

______________

আজকাল লুপা কেমন জানি মন মরা হয়ে থাকে। সব সময় নিজের ঘরে বন্ধি হয়ে থাকে। সায়রা প্রথমে ভেবেছিলেন বাড়ির ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে হয়তো কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছে। কিন্তু না এখন তার মাঝে আরো বেশি পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। মেয়ের রুমে এসে ঢুকলেন সায়রা,দরজা খোলা ছিলো। রুমটা ঘুটঘুটে অন্ধকার,সায়রা লাইট জ্বালালেন। লুপা মূর্তির মতো ফ্লোরে বসে আছে। সায়রা তড়িঘড়ি করে মেয়ের পাশে বসলেন, ব্যথিত গলায় জিজ্ঞেস করলেন”

_লুপা কী হয়েছে রে মা তোর। এভাবে বসে আছিস কেন? আম্মুকে বল।” লুপা রক্তলাল চোখে মায়ের দিকে তাকালো। কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে চোখ থেকে জল নয় রক্ত ঝরে পরবে। চোখের চারপাশ ফুলে আছে। ঠোঁট শুষ্ক হয়ে আছে। লুপা তার মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। বুকের ভেতর দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে তার। সায়রা ঘাবড়ে গেলেন মেয়ের এমন কান্ডে। মেয়ের মুখ তুলে ধরে চোখের পানি মুছে জিজ্ঞেস করলেন। ”

_কীরে কী হয়েছে আমায় বল। কেন কাঁদছিস তুই। আম্মুকে বল? কী হইছে তোর বল মা?
_আ আ আম্মু আমাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দাও আম্মু প্লিজ।” কাঁদতে কাঁদতে বলল লুপা। সায়রা বুঝতে পারছেন না হঠাৎ মেয়েটার হলো কী। সেদিন শাড়ী পরে সেজেগুজে বাইরে বের হলো। সেই থেকে এসে যে মেয়েটা মন মরা হয়ে থাকে, না ভালো ভাবে খায় না কারও সামনে যায়। আচ্ছা এমন তো নয় লুপা কোনো ছেলেকে ভালোবাসে ওইদিন ওই ছেলের সাথে দেখা করতে গেছিলো। ভাবতেই ভেতরটা ধুক করে ওঠে সায়রার। লুপার মাথায় হাত বুলিয়ে মোলায়েম গলায় বললেন”
_কাউকে ভালোবাসিস?” লুপা ভেজা চোখে মায়ের দিকে তাকালো। তারপর ঝটপট চোখের পানিটা মুছে না সম্মতি মাথা নাড়িয়ে বলল”
_না বাসিনা ভালো। তুমি আমাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দাও আম্মু প্লিজ। আব্বুর সাথে কথা বলো আম্মু প্লিজ আমাকে তুমি বাঁচতে দাও আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
_কী হইছে বলনা রে মা।
_আম্মু প্লিজ যাও আমি একা থাকতে চাই।” সায়রা চৌধুরী আর কথা বাড়ালেন না চলে গেলেন রুম থেকে। একেরপর এক সন্তান হারিয়ে এই দুই সন্তানকে নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি। দুটো বাচ্চা ছোট বেলায় মারা গেছে। তাদের ভুলে যেতে পারলেও মিহানকে ভুলতে পারেন না। মিহানের মৃত্যুর কষ্ট টা লুপা আর রুহানের দিকে চেয়ে ভুলে যান তিনি। আর এই দুই সন্তান যদি ভালো না থাকে তিনি নিজেই বা কীভাবে ভালো থাকবেন। সারাদিন মুখে প্লাস্টিকের হাসি নিয়ে ঘুরলেও একমাত্র রাতের আকাশের চাঁদ আর মাথার নিচের বালিশ জানে, উনি আসলে কতটা কষ্টে থাকেন। সারাটা রাত পার করেন অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে। রাত পোহালে আবার শুরু করেন ভালো থাকার অভিনয়।

_________________

নীল ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখল শামু তার বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পা উপরে তুলে দুলাচ্ছে আর একটা বইয়ের পৃষ্টা ওলট-পালট করছে। নীল কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে ফেলে। শামু খুব ছোট একটা স্কার্ট পরে আছে। উরু পর্যন্ত উন্মুক্ত হয়ে আছে। উপুড় হয়ে শুয়ায় বুকের অর্ধেক উন্মুক্ত হয়ে আছে। নীলের ইচ্ছে করছে শামুকে কড়া কয়েকটা কথা শুনাতে। এভাবে নিজের দেহ দেখিয়ে দেখিয়ে হাঁটার মানেটা কী সে বুঝেনা। মুসলিমের ঘরে জন্ম নিয়ে এভাবে চলাফেরা করে, নীলের তা একদমই ভালো লাগেনা। আপাতত নীল নিজের রাগ দমিয়ে চুল মুছতে মুছতে শামুকে বলল”

_কী ব্যাপার শামু আমার রুমে যে,কোনো দরকারে এসেছো?” শামু ওঠে বসে বলল”
_হুম। আমি একটু শপিংয়ে যাবো।
_তো যাও আমাকে বলছো কেন?
_তোমাকে নিয়ে যাবো।
_তুমি আম্মুকে নিয়ে যাও। আমার কাজ আছে। এখন যাও।” শামুর মুখে অন্ধকার নেমে আসলো। নীল এসবে পাত্তা দিলোনা। শামু চলে যেতে লাগলো দরজার সামনে থেকে আবার ফিরে এসে বলল”
_আচ্ছা তোমার ফোনে চাশমিজ নামে কার নাম্বার সেভ করা।” নীলের বুকটা ধুক করে ওঠল। চাশমিজ নামে সে লুপার নাম্বার সেভ করে রাখছে। নীল কিছুটা বিচলিত হয়ে বলল”
_কেন কী হয়েছে?” শামু দুহাত সামনে বেঁধে বলল”
_কল দিয়েছিল। দুই-তিনটা দেওয়ার পরে ভাবলাম ধরে বলে দেই তুমি শাওয়ার নিচ্ছো। ওমা আমি হ্যালো বলার সাথে সাথে আমাকে বলে,এই মেয়ে কে তুমি? তোমার কাছে এই ফোন কেন?
_ওকে যাও তুমি।
_আমি কী উত্তর দিছি জান?
_কী?
_আমি নীলের বউ কাল আমাদের বিয়ে হয়েছে ফুলসজ্জা হয়েছে এখন নীল শাওয়ার নিচ্ছে।”

শামুর কথা বলা শেষ হওয়ার সাথে সাথে নীল শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে শামুর গালে একটা থাপ্পড় দিল। শামুর এই সীমাহীন বাড়াবাড়ি তার একদমই সয্য হয়নি। শামু গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে নীলের দিকে তাকাল। দিল রক্তিম চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রাগে শরীর কাঁপছে তার। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চেঁচিয়ে বলে ওঠল”
_তুমি জান তুমি কার কাছে কী বলেছো?” দাঁতে দাঁত চেপে মাথা চেপে ধরল। নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বলল” গেট আউট। ” শামু দাঁড়িয়ে থাকল নীল চেঁচিয়ে বলল” কথা কানে যায়না।” শামু চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

নীল নিজে নিজের চুল টেনে ধরলো। রাগে ইচ্ছে করছে শামুকে খুন করে ফেলতে। হাতের টাওয়েলটা ছুঁড়ে ফেলে ফোন নিয়ে লুপার নাম্বারে ডায়েল করল। লুপার ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। নীল রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে জামা কাপড় পরে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। শাওনকে ফোন দিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে আসতে বলল শাওনের সাথে তার ব্যাপারটা শেয়ার করবে। লুপাকে সে ভালোবাসে কিন্তু লুপার উপর জমে থাকা অভিমান লুপা দিহানের বোন সব বাধা থাকে এগুতে দেয়না। শাওনের সাথে শেয়ার করলে হয়তো শাওন তাকে কোনো বুদ্ধি দিবে। লুপাকে ছাড়া যে সে থাকতে পারবে না এটা সে বুঝে গেছে। তার জীবনে ভালো থাকতে হলে লুপার বড্ড প্রয়োজন।

শাওন তড়িঘড়ি করে বাইরে বের হচ্ছে দেখে তার মা তাকে জিজ্ঞেস করলেন”
_কিরে কই যাস?
_নীল ফোন দিছে আম্মু আমি যাচ্ছি আর আসছি।
_হুম তাড়াতাড়ি আসবি।” শাওন বাসা থেকে বেরিয়ে বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিলো। লুপাকে প্রপোজ করার জন্য অনেক গুলা প্ল্যান করেছে। আজ সে নীলের সাথে সব শেয়ার করবে নীল যেটা বেস্ট বলবে সে ভাবেই লুপাকে প্রপোজ করবে।

চলবে…….।

আমি জানি অনেকে প্রচুর বিরক্ত হচ্ছেন। রেসপন্স কমে যাচ্ছে কেন? কিন্তু আমি কী করবো বলুন প্রতিদিন চাই রহস্য খোলে দিব বাট পারিনা। আপনারা বিরক্ত হলে সরি। আগামী তিন-চার পর্বে ইনশাআল্লাহ সব খোলাসা হয়ে যাবে😞
চলবে…..।
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here