মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -১১+১২

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ১১
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

রায়হান কাপঁতে কাপঁতে শব্দ করে হেসে বলে উঠে
” ফুপিকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। শুধু ফুপি না আমাদের হারিয়ে যাওয়া পরিবারের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।” অভিদ অবিশ্বাস্য চোখে রায়হানের দিকে তাকালো। রায়হান নিজেও বিশ্বাস করতে পারছে না। অভিদ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কি শুনেছে এখনও সেটা বুঝে উঠতে পারছে না। অভিদের মাথায়ই কাজ করছে
না। অভিদ ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো।অভিদের একপ্রকার হা-পা কাঁপছে। এতোগুলো বছর ধরে যেই মানুষ গুলোকে খুঁজতে খুঁজতে মন থেকে আধমরা হয়ে গিয়েছিলো সেই মানুষ গুলোকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে শুনে অভিদ কি রিয়েকশন দেবে বুঝে উঠতে পারলো না। রায়হান অভিদের কাধে হাত রেখে হাসতে হাসতে বলে
” কি হয়েছে তোর ? তুই এভাবে তব্দা মেরে বসে আছিস কেনো ?”
অভিদ টাই টেনে গলার নিচে নামিয়ে নেয়। হাসফাস করতে করতে বলে
” ভাই আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। মানে কি… কিভাবে ? এতোবছর পর তাদের খোঁজ… আমার একদমই বিশ্বাস হচ্ছে না কেনো ? আচ্ছা এটা S.R. এর কোনো প্ল্যান নয়তো ?”
রায়হান মাথা নেড়ে বলে
” একদমই নয় কারণ ইনফরমেশন টা আমাদের সিক্রেট ইনফরমার রা দিয়েছে। ওদের প্রাণ চলে গেলেও আমাদের কখনো মিথ্যা বলবে না ওরা। সত্যি ফুপিকে খুঁজে পেয়েছে ওরা।”
অভিদ হঠাৎ হাসতে থাকে। রায়হানও হেসে দেয়। অভিদ হাসতে হাসতে জড়ানো গলায় বললো
” আমি.. পেয়েগিয়েছি আমার পরিবারকে।”
রায়হান অভিদের কাধে হাত রেখে বলে
” ইউরোপের একটা শহরে ওদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। ওদের এখানে আনার জন্য কি ব্যবস্থা করা হবে ?”
অভিদ ঢোক গিলে জিভ ভিজিয়ে নিয়ে বললো
” আমাদের পাসপোর্ট সহ তো সবই আছে তাহলে আজকে রাতের emergency ফ্লাইটের টিকিট বুক কর। যা যা দরকার সব করতে বল আমাদের টিমকে আর দরকার হলে O.R.R. এর পাওয়ার ইউজ করবি কিন্তু আজকে রাতের ফ্লাইটের টিকিটই আমার চাই।” রায়হান মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়।
অভিদ নিলয়কে কেবিনে ডাকে। নিলয় হচ্ছে অভিদের অফিসের পিএ। বলতে গেলে রায়হানের পর নিলয়ই অভিদ আর রায়হানের হেল্পিং হেন্ড। কেবিনে নক করতেই পারমিশন পেয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে নিলয়। অভিদ নিলয়কে দেখে একটা হাসি দিয়ে বললো
” বসো নিলয়।” নিলয় অভিদকে হাসতে দেখে অবাক হয়ে গেলো। অভিদ খুশি না থাকলে সাধারণত এভাবে হাসে না। নিলয় হেসে বলে
” স্যার আপনি খুশি কেনো ?” অভিদ চোখ ছোট ছোট করে নিলয়ের দিকে তাকায়। নিলয় থতমত খেয়ে যায় অভিদের তাকানোর স্টাইল দেখে। অভিদ বিরক্তি প্রকাশ করে বলে
” এটা কোনো কথা বললে তুমি ? খুশি হওয়ার জন্য কি সব সময় কারণ দরকার হয় ? খুশি তো কারণ ছাড়াও হওয়া যায়। যদিও আমার খুশির কারণ প্রয়োজন। যাই হোক বেশি কথা বলছি আমি। আসল কথায় আসি।” নিলয় বোকার মতো তাকিয়ে মাথা নাড়ালো। অভিদ কয়েকটা ফাইল নিলয়ের সামনে রেখে বলে
” এগুলো আগামী এক সপ্তাহের জন্য তোমার দায়িত্বে থাকবে। অফিসের সব কিছু তুমি হ্যান্ডেল করবে। আর আমি আসার পর যদি কোনো গাফলতি দেখি তাহলে তো জানোই আমি কি করবো ?”
নিলয় একটা ঢোক গিলে বলে
” জজী স্যার বুঝেছি। কিন্তু স্যার আপনি এক সপ্তাহের জন্য কোথায় যাবেন ? না মানে আপনি তো এতোদিনের জন্য অফিস বন্ধ করেন না শুধু একবার করেছিলেন রুহির ম্যাম এর অসুস্থতার কারণে কিন্তু এখন তো তেমন কিছু নেই তাই বলছিলাম।”
অভিদ আলতো হেসে বলে
” সেই রকম কিছু নেই কিন্তু রুহির মতোই ইম্পরট্যান্ট কিছুর জন্য আমার কিছুদিন অফিসে আসা হবে না। আমি না আসার পর্যন্ত ততোদিন অফিসটা তোমার দায়িত্বে থাকবে। পারবে তো সব কিছু সামলে নিতে ?”
নিলয় হাসি দিয়ে বলে
” অবশ্যই স্যার। আপনার কথাই আমার জন্য অনেক বড় আদেশ। আমি সব কিছু সামলানোর চেষ্টা করবো আর কোনো প্রবলেম হলে অবশ্যই আপনাদের জানাবো আমি।”
অভিদ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলে
” ঠিকাছে তাহলে আমি কিছুক্ষণ পর চলে যাবো। অফিসটা দেখে রেখো আর কাউকে বলাএ দরকার নেই আমি কোথাও যাচ্ছি। ওকে ?” নিলয় সম্মতি জানিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।

বাড়িতে ঢুকেই অভিদ রুহিকে দেখতে পেলো। আজকে মিশুর ইম্পরট্যান্ট ক্লাসের জন্য ক্যাম্পাসে যেতে হয়েছে তাও রুহি একাই বসে রয়েছে। অভিদ খুশিতে আত্মহারা হয়ে কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা দৌড়ে রুহির কাছে গিয়ে রুহিকে বসা থেকে উঠিয়ে ঘোরাতে থাকে। রুহি না দেখেই ভয়ে চোখ বন্ধ করেই চিৎকার শুরু করেছে। সব সার্ভেন্টরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অভিদের দিকে। অভিদ রুহিকে সোজা করে দাড়ঁ করিয়ে কিছু বলতে নিলেই সার্ভেন্টদের দিকে অভিদের চোখ পড়ে। সবাইকে বড় বড় করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রেগে ধমক দিয়ে বলে
” তোমাদের কি কাজ নেই ? সব সময় দেখি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকো। তোমার তো এমনিই রাখা হয়নি এখানে। এর পর থেকে তোমার কোনোদিনও যেনো ড্রইংরুমে না দেখি ! বুঝেছো ?” সার্ভেন্টরা মাথা নিচু করে কাপঁতে কাপঁতে সেখান থেকে চলে গেলো। অভিদ ওদের বকা দিতে দিতে রুহির দিকে তাকিয়ে দেখে রুহি মাথায় হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। অভিদ রুহির হাত ধরে চিন্তিত হয়ে বলে
” কি হয়েছে তোমার ? শরীর খারাপ লাগছে নাকি তোমার ?”
রুহি অভিদের হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে বিরক্তিকর গলায় বলে
” পাগলে পেয়েছে নাকি আপনাকে ? হুট জরে ভূতের মতো এন্ট্রি নেন কেনো আপনি ? আর এভাবে ঘুরানোর মানে কি ? আমার বমি পাচ্ছে এখন। ইশশশ! আমার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন আপনি।” অভিদ রুহির কথা শুনে কোনো রিয়েকশন করলো না। উল্টো বড় একটা হাসি দিয়ে রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরে। রুহির গায়ে কাঁপুনি দিয়ে উঠে। অভিদ রুহির কোমড় জড়িয়ে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো। রুহির হৃদ কম্পন বেড়ে গেলো। অভিদ অন্য হাত রুহির গালে ডুবিয়ে দিয়েই শরীরে এক শীতল শিহরণ বয়ে গেলো রুহির। অভিদ মুকজ এগিয়ে এসে দুই দুজনের দুই অধর জোড়া মিলিয়ে দিয়ে গভীর ভাবে স্পর্শ করলো। রুহির অভিদের হটাৎ এমন কাণ্ডে হতবাক হয়ে যায়। অভিদের স্পর্শ পেয়ে রুহি অভিদের কাধের কোর্টের অংশ শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো। মুহূর্তেই দুজনের মধ্যকার সব দুরত্ব চলে গেলো।
অনেক্ষন পর অভিদ সরে এলো কিন্তু কোমড় জড়িয়ে এখনো রুহিকে নিজের কাছে রেখেছে।
রুহি এখনও অভিদের কাধের দিক খামঁছে ধরে রেখেছে। রুহি তার বিস্ময় ছাড়িয়ে এখনও স্বাভাবিক হতে পারেনি এক প্রকার স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অভিদ হাসতে হাসতে বলে
” আজকে আমি অনেক খুশি রুহি। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে সবাইকে আমার খুশির কারণটা বলে বেড়াই। তুমি কি জানো আমি কেনো খুশি ?” রুহি মাথা নেড়ে বোঝায় যে রুহি কিছুই জানে না। অভিদ খুশি হয়ে বলতে নিলেও কিছু একটা ভেবে থেমে যায়। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে অভিদ আলতো হেসে বললো
” এখন বলবো না। তোমার জন্য নাহয় ছোট একটা সারপ্রাইজ হয়ে থাক কথাটা।” অভিদ তার কথা শেষ করে উপরে চলে গেলো। রুহি তার হাতটা আলতোভাবে নিজের ঠোঁট জোড়ার উপর রাখে। কিছুক্ষণ আগের কথাটা ভাবতেই রুহির গায়ে কম্পন দিয়ে উঠে। রুহি একটা ঢোক গিলে বিরবির করতে করতে উপরে মিশুর রুমে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসে রইলো। অভিদের সামনে গেলেই যে লজ্জায় অজ্ঞান হয়ে যাবে সেটা খুব ভালো করেই জানে রুহি।
এক ঘন্টা পর…
মিশু নিজের রুমে ঢুকেই অবাক হয়ে যায় রুহিকে দেখে। রুহি খাচ্ছে আর টিভি দেখছে আবার হাতে ফোন নিয়ে ভিডিও ও দেখছে। মিশু তার ব্যাগটা রেখে রুহির পেছনে দাঁড়িয়ে রুহির মাথায় গাট্টা মেরে বসে। রুহির কোলে থাকা বাটিটা পড়ে ভেঙে গেলো। কাচের টুকরো গুলো ছড়িয়ে পরে আর বাটিতে থাকা কুসুম গরম চিকেন সুপ গুলোও মাটিতে গড়াগড়ি খেতে থাকে। রুহি কাঁদোকাঁদো চেহারা বানিয়ে ফ্লোরে তাকিয়ে থাকে। আর মিশু মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুহিকে খাবার খেতে দেখেছে কিন্তু রুহির কোলে খাবার দেখেনি তাই এভাবে ধাক্কা দিয়েছিলো। রুহি ফুপাতে ফুপাতেবলে
” তুই আমার চিকেন সুপ ফেলে দিলি ! এখন আমি খাবো কিভাবে ?” মিশু দুই কান ধরে বলে
” সরি বোন আমি খেয়াল করিনি। I am very very sorry. Please don’t angry please ! তুই তোর রুমে যা আমি রুম পরিষ্কার করে দিতে বলছি।”
রুহি কাঁদোকাঁদো চেহারায় উঠে দাঁড়ালো দাঁড়াতে গিয়েও রুহির সেইদিনের ক্ষতের মাঝে কাচ পড়ে গেলো। ব্যাথা কমে গেলেও এখন আবার পুরনো ক্ষত জায়গাটা জ্বলে উঠে। রুহি চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে ধরে কোনো রকমে ব্যাথা সহ্য করে নেয়। মিশুর রুম থেকে বেড়িয়ে যায় অভিদের রুমে যাবে কিনা সেটা নিয়ে কনফিউজড হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে উপায় না পেয়ে অভিদের রুমে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নেয়।
রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখতে পেলো অভিদ ফোনে কথা বলছে। কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মেরে চুল টানতে থাকে। রুহি দেখেই বুঝে গেলো অভিদের মাথা আবার গরম হয়ে গিয়েছে। রুহি বিছানার এসে বসে পরে। রুহি ঘাপটি মেরে বসে রইলো অভিদের রাগি চেহারা দেখে। অভিদেরও তাকাতে তাকাতে দরজার দিকেই চোখ পড়ে। ফ্লোরে রক্ত মাখা পায়ের ছাপ দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয় অভিদ। অভিদ হুট করে রুহির পায়ের দিকে তাকালো।
রুহি মাথা নিচু করে বসে থাকায় কিছুই দেখতে পেলো না। অভিদ দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে রুহির পা উঠিয়ে দেখে রুহির দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো
” এসব কি তোমার পায়ে ? আবার ব্যাথা পেয়েছো তুমি ?” রুহি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বসে থাকে।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ১২
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

অভিদ দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে রুহির পা উঠিয়ে দেখে রুহির দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো
” এসব কি তোমার পায়ে ? আবার ব্যাথা পেয়েছো তুমি ?” রুহি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বসে থাকে।
অভিদ রাগী গলায় বলে
” কি হলো কথা বলছো না কেনো তুমি ?”
রুহি পায়ে হাত রেখে মিনমিন গলায় বলে
” আমার হাত থেকে পরে কাচ ভেঙে গিয়েছিলো। উঠার সময় কাচের টুকরো আমার পায়ে ঢুকে পড়েছিলো।” অভিদ রাশভারী গলায় বলে
” একটুও কি নিজের খেয়াল রাখতে পারো না তুমি ? এই সময় তো অন্তত দেখে শুনে চলতে পারো নাকি ?” রুহি মাথা নিচু করে বিরবির করে বলে
” বকা না দিয়ে একটু পা টাও তো দেখতে পারে নাকি ? আমার পায়ে কতো ব্যাথা করছে !”
অভিদ রুহির বিড়বিড় করে বলা কথা শুনতে পেলে দ্রুত উঠে গিয়ে ফার্স্টএইড বক্স এনে রুহির সামনে বসলো। বেডে বসে রুহির পা নিজের কোলে তুলে নেয়। রুহি সরিয়ে ফেলতে নিলে অভিদের চোখ রাঙানো দেখে আর সরানো হয় না। পুড়নো ব্যান্ডেজ খুলে পায়ে ওয়েন্টমেন্ট লাগাতেই পা জ্বলে উঠে। রুহি দ্রুত পা সরিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিয়ে বলে
” ব্যাথা পাচ্ছি তো আমি।”
অভিদ শক্ত গলায় বলে
” ব্যাথা পেয়েছো আর সেটা সহ্য করবে না এমনটা কি কখনো হয় ? এরপর থেকে যদি নিজের খেয়াল না রাখো তাহলে আমি নিজে তোমার এমন অবস্থা করবো ! ভাবতেও পাবে না।” অভিদ শক্ত হাতে রুহির পা ধরে আবার নিজের কোলে রেখে ব্যান্ডেজ করে দিলো। রুহি বসে ব্যাথায় ফুঁপাতে থাকে। ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে অভিদ রুহির পা ছেড়ে দেয়। রুহি ছাড়া পেয়ে সাথে সাথে নিজের পা গুটিয়ে নেয়। চোখ পানি মুছতে মুছতে অভিদের দিকে তাকালো। অভিদও তার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রুহি জানে না এই চাহনির মধ্যে কি ছিলো কিন্তু রুহির নিচের কথা মাথায় আসতেই লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। হঠাৎই রুহির মাঝে এক রাশ লজ্জা এসে ভর করেছে।
অভিদ রুহির সামনে এসে বসে কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে। রুহিও চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকে। অভিদ নিরবতা ভেঙে বললো
” আচ্ছা রুহি তোমার কি কখনো কিছুই মনে পড়ে না?”
অভিদের কথার মানে বুঝতে না পেরে রুহি তার ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে নেয়। অবুঝ গলায় বললো
” মানে ? কি মনে পরবে ?”
অভিদ জিভ দিয়ে তার শুষ্কয ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে বললো
” মানে তোমার যে তোমার অতীতের কিছু সময়ের ঘটনা গুলো মনে নেই সেগুলো কি তোমার মনে পড়ে না ?” রুহি মাথা নিচু করে ডানে বায়ে মাথা নেড়ে না বোঝালো। অভিদ অসহায় গলায় বলে
” কোনো কিছুই না ? আচ্ছা আমাকে দেখেও কি তোমার কিছু মনে পড়ে না ? আমাদের আগের কতো স্মৃতি রয়েছে কিছুই মনে পড়ে না ?”
রুহি অবাক হয়ে বললো
” আমাদের স্মৃতি মানে ? আমরা কি আগে থেকে একে অপরকে চিনতাম ?”
অভিদ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো
” হ্যা। আমরা দুজন দুজনকে খুব ভালো ভাবে, গভীর ভাবে চিনতাম। তোমার প্রশ্ন ছিলো না তোমার গর্ভে সন্তান কার ? তাহলে শোনো। এই সন্তান আমার আর তোমার। আমাদের এক বছর আগে বিয়ে হয়েছিলো।”
রুহি অবিশ্বাস্য চাহনি দিয়ে তাকালো। অভিদ অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। রুহির এই দূড়ে দূড়ে থাকা অপরিচিত দের মতো ব্যবহার একদমই সহ্য হচ্ছে না অভিদের তাই আজকে নিজেকে আটকাতে না পেরে বলেই দিলো।
রুহি জোড়পূর্বক হাসি দিয়ে বলে
” আপনি মজা করছেন তাই না ?” অভিদ রুহির হাত চেপে ধরে বলে
” না রুহি। আমি একদমই মজা করার মুডে নেই। তুমিই আমার স্ত্রী। তুমি বিশ্বাস না করলে আমি তোমাকে আমাদের বিয়ের ভিডিও, ছবি, ফ্রেম সব দেখাতে পারি। আমাদের ঘুরতে যাওয়ার, সময় কাটানোর কতো স্মৃতি রয়েছে ! সব দেখাবো তোমাকে।”
রুহি অভিদের হাত থেকে নিজের হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে নিয়ে বলে
” আপনি কি বলছেন এসব? আপনি মিথ্যা বলছেন সব আমি জানি। মা বাবা কখনো আমাকে মিথ্যা বলবে না আমাকে। এমন কিছু হলে নিশ্চই আমাকে বলতো সবাই।”
অভিদ উঠে দাঁড়িয়ে হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রুহি হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে বসে থাকে। হঠাৎ অভিদের এসব কথা তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
অভিদ তার স্টাডি রুম থেকে নিজেদের বিয়ের ফটো ফ্রেম সহ আরও কয়েকটা ফ্রেম নিয়ে রুমে চলে আসে। রুহির সামনে সব গুলো ফ্রেম রেখে বললো
” এই যে তোমার সামনেই সব কিছু রয়েছে এখন অন্তত বিশ্বাস করো প্লিজ ! তুমি আমার স্ত্রী। তোমার গর্ভের সন্তানও আমাদের।”
রুহি একে একে সব গুলো ফ্রেম দেখতে থাকে। সব গুলো দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রুহি। রুহি মাথা চেপে ধরে জড়ানো গলায় বলে
” আপনি মিথ্যা বলছেন আমি জানি। এই সব গুলো এডিট করা। আপনি এসব মিথ্যা ছবি দেখিয়ে আমাকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন।”
অভিদ রুহির কাধ চেপে ধরে বলে
” আমার মিথ্যা কথা বলে কি লাভ রুহি ? তুমিই বলো। অভিদ রায়জাদার কি কোনো কিছুর অভাব আছে? আমার সব কিছু রয়েছে শুধুমাত্র তুমি ছাড়া। যেই তুমি আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলে। তোমাকে ছাড়া এক পা চলতে আমার বুকে ব্যাথা করতো সেই তুমি আজকে আমার থেকে শত হাত দূড়ে থাকো।” অভিদ আরো কিছু বলার আগেই রুহি অভিদের বুকে অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়ে। অভিদ রুহিকে দুই হাতে আগলে নেয়। রুহিকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই রায়হান আসে। রায়হান এসেই বলতে থাকে
” এসব কি অভিদ ? একজন বডিগার্ড বললো তুই নাকি স্টাডি রুম থেকে তোদের বিয়ের ছবি নিয়ে এসেছিস ?”
অভিদ দেয়ালে পাঞ্চ মেরে চেঁচিয়ে বললো
” কি করবো আমি ? আমার দিকটা একবারও ভেবে দেখেছিস ? প্রত্যেকটা সময় আমাকেই কষ্ট ভোগ করতে হয়। রুহিকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারছি না। রুহি আমার কাছে থেকেও নেই। সব সময় দূড়ে দূড়ে থাকে। আজকে আমি এতোবড় একটা খুশির খবর পেয়ে সব কিছু ভুলে গিয়েছিলাম। এটাও ভুলে গিয়েছিলাম আমার ভাগ্য কেমন। ফুপির কাছে যেয়েও যেতে পারলাম না। শেষে কিনা একটা ফ্লাইটের জন্য আমার যাওয়া পিছিয়ে গেলো। একদিনের এই সময় ব্যবধানেই যদি আমি আবার তাদের হাড়িয়ে ফেলি ? আমার খুব ভয় করছে। এর মধ্যে রুহির এর অপরিচিত দের মতো ব্যবহার আমি সহ্য করতে পারছি না।”
রায়হান অভিদের কাধে হাত রেখে বলে
” তুই এভাবে ভেঙে পরছিস ? এতোবছর ধরে যেই O.R.R. মাফিয়াকে তৈরি করেছিলি সেটা কি এমনি এমনি ? অভিদ রায়জাদা কি এমনি হয়েছিলি ? সব কিছু ফিরে পাওয়ার জন্য অন্ততপক্ষে এইটুকু ধৈর্য ধর। আর তোর কি মনে নেই নিলয় কি বলেছিলো ? রুহিকে এভাবে জোড় করে মনে করালে ওর মাথায় রক্ত চলাচল বন্ধ করে ব্রেন স্টোকও করতে পারে। রুহিকে না হারানোর জন্য এতোকিছু করলি আর নিজেই রুহিকে হাড়িয়ে ফেলার ফন্দি আঁটছিস নাকি ?”
অভিদ কিছু বলে উঠার আগেই অভিদের ফোন কল আসে। অভিদ হতাশার নিশ্বাস ফেলে ফোন হাতে নিয়ে দেখে স্ক্রিনে সোহাদ রায়জাদা নামটা জ্বলজ্বল করছে তাও ভিডিও কল।

রায়হান দেখতে পেয়ে দাঁতেদাঁত চেপে বললো
” এসে পড়েছে যম। এই লোকটা সব সময় আমাদের মাঝে তৃতীয় ব্যাক্তির মতো ঘুরঘুর করে।”
অভিদ চোখ বড় বড় করে বলে
” তুই চুপ করবি ? যদি শুনতে পায় তুই এমন করিস তাহলে কি কি করবে তুই কি সেই সম্পর্কে অবগত না ?” রায়হান ফ্যাকাসে করে ফেলে।
অভিদ কল রিসিচ করতেই ফোনে আধ বয়সি একজন সুন্দর পুরুষকে দেখা যায়।
অভিদ মুচকি হেসে বললো
” Hiw are you Mr. Yang man ? এতোদিন পর আমার কথা মনে পড়লো বুঝি ?”
সোহাদ রায়জাদা হা হা করে হেসে উঠলো। ফোনের পেছন থেকে রায়হান লোকটার হাসির শব্দ শুনে দাঁত কিড়মিড় করছে। রায়হানকে দেখে মনে হচ্ছে রায়হান অভিদের বাধায় আটকে রয়েছে নয়তো সোহাদ রায়জাদাকে সামনে পেলেই পরপারের বাসিন্দা করে দিতো তাকে।
সোহাদ রায়জাদা হাসতে হাসতে বলে
” কি যে বলো অভিদ! তোমাকে আমি কোনোদিন ভুলতে পারবো নাকি ? তোমাকে ভুলে গেলে তো আমার নিজেকেই আগে ভুলতে হবে। তোমাকে নিয়েই তো আমি নিজেকে সাজিয়েছি।”
অভিদ ম্যাকি হাসি দিয়ে বলে
” হ্যা তাই তো এতোদিন ধরে একটা মেসেজও করোনি। আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে একটা সারপ্রাই দেবো কিন্তু এখন ভেবে রেখেছি তুমি একেবারে এখানে আসলেই নাহয় সারপ্রাইজ দেবো।” সোহাদ রায়জাদা হাসতে হাসতে বলে
” তাই? আমি তো ভেবেছিলাম আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো। আমি প্ল্যান করেছিলাম আগামী মাসেই বিডিতে এসে তোমাকে একদম সারপ্রাইজ করে দেবো কিন্তু এর মাঝেই অনেক বড় একটা ডিল নিয়ে কথা হচ্ছে । এই ডিলটা নিয়ে আমার কনেক বড় স্বপ্ন ছিলো। এটা যে এতো তাড়াতাড়ি আমি পেয়ে যাবো সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। আমার এখন প্রায় তিন মাসের মতো বিডিতে আসার প্ল্যান পিছিয়ে গিয়েছে।”
অভিদ বাকা হাসি দিয়ে বলে
” তুমি তোমার ড্রিম ডিল কনফার্ম করো আর এদিকে আমি নাহয় তোমার জন্য আরো কিছু সারপ্রাইজ রেডি করি। যাতে তুমি আসলে শুধু চমক আর চমক পাও। আমার তো ভয় হচ্ছে এতো চমক পেয়ে তুমি মরে না যাও।”
সোহাদ রায়জাদা অট্টহাসিতে মেতে উঠে। অভিদও তালে তাল মিলিয়ে হাসতে থাকে। কিন্তু অভিদের হাসির মাঝে যেই হিংস্রতা মিশে রয়েছে সেটা সোহাদ রায়জাদার ধরা ছোঁয়ারও বাইরে। সোহাদ রায়জাদা আরো কিছুক্ষণ কথা বলে রায়হানের সাথে কথা বলতে চাইলে রায়হান অভিদকে তার কথা বলতে না করলো। তাই শুধু অভিদ কথা বলে ফোন রাখলো।
রায়হান কপালের ঘাম গুলো মুছে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলে
” এই লোকটা যে কেনো আমাকে খোঁজে ! এর সাথে কথা বললেই আমার মাথার রক্ত টগবগ করে।”
অভিদ বিরক্ত হয়ে বলে
” তুই চুপ করবি ? সব সময় এই লোকটা লোকটা করিস কেনো ? একটু সুন্দর করে ডাকতেও তো পারিস নাকি ?” রায়হান রেগে চোঝ রাঙিয়ে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ বাকা হাসি দিয়ে তাকিয়ে থাকে। বিকেল হতেই অভিদের কাছে একটা ফোন আসে। অভিদ কথা বলে রায়হানকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় নিজের গোডাউনের উদ্দেশ্যে।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here