মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -১৩+১৪

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ১৩
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

বিকেল হতেই অভিদের কাছে একটা ফোন আসে। অভিদ কথা বলে রায়হানকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় নিজের গোডাউনের উদ্দেশ্যে।
গোডাউনের সামনে গাড়ি থামলে অভিদ, রায়হান গোডাউনের ভেতর ঢুকে যায়। গোডাউনের দ্বিতীয় তলা উঠে একটা রুমের ভেতর ঢুকেই সেখানে থাকা একটা লোকের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় অভিদ। লোকটা থাপ্পড় খেয়ে হুমরি খেয়ে পরে যায়। অভিদ লোকটার চুল খামঁছে ধরে উঠিয়ে দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” খুব সাহস হয়ে গিয়েছে তোর, না? কিন্তু আফসোস কি বলতো ! এতো সাহস হওয়ার পরও অভিদ রায়জাদার হাত থেকে পালাতে পারলি না রেদোয়ান।”
রেদোয়ান আহমেদ দুর্বল শরীর নিয়ে কাপঁতে কাপঁতে বলে
” আজকে পালাতে পারিনি তো কি হয়েছে ? একদিন না একদিন তো পালাবোই আমি। আর S.R. কে তোর আসল সত্যি জানাবো।”
অভিস অট্টহাসি মেতে উঠে। রেদোয়ান আহমেদ দুর্বল শরীর নিয়ে কোনো রকমে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে ফ্লোরে বসে পড়ে। অভিদ এখনও হেসে যাচ্ছে। রায়হান রেদোয়ান আহমেদ এর সামনে বসে হেসে বলে
” তোর কি মনে হয় তোকে কি আমরা ততোদিন বাঁচিয়ে রাখবো ?”
রেদোয়ান আহমেদ বিচ্ছিরি একটা হাসি দিয়ে বলে
” আমাকে মারার হলে এই এক বছর ধরে আমাকে এখানে বন্দি করে রাখতি না। আমি জানি আমাকে তোরা তোদের কাজের সাহায্যের জন্য আটকে রেখেছিস। S.R. কিভাবে অভিদ রায়জাদার পরিবার ধ্বংস করেছে সেটার জ্বলজ্বলন্ত প্রমাণ আমি। সেই প্রমাণ এর জন্যই তো আমাকে আটকে রেখেছিস।”
অভিদ নিজের হাসি ধীরে ধীরে কমিয়ে বলে
” আচ্ছা ! তুই এসব ভেবে বসে আছিস ? S.R. কে ইনফরম করার জন্যই বুঝি আজ পালানোর চেষ্টা করছিলি ? এই একবছর ধরে তুই এখনও জানিসই না আমি কেনো তোকে আটকে রেখেছি ? আমার পরিবার ধ্বংস করার জন্য S.R. যা যা করেছে তার সমান কাজ তুইও করেছিস। তুইও এসবের সঙ্গে যুক্ত ছিলি রেদোয়ান। আমি তো তোকে তিলে তিলে মারার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু তুই তোর মৃত্যুর দিন ঘনিয়ে এনেছিস আমার আর কি করার আছে? তুই কি ভাবছিস তোকে প্রমাণ হিসেবে রেখেছি আমি ? গাধা আমি নিজেই তো সেই সব কিছুর প্রমাণ। তাহলে তোকে কেনো লাগবে ? সেই ছোট বেলায়ই S.R. এর গ্যাং ধ্বংস করার জন্য এতো কিছু করেছি আমি। যাই হোক, রায়হান ওকে ওর আসল জায়গায় নিয়ে যেতে বল।”
রায়হান তার বডিগার্ড দের ঢেকে বললো
” রেদোয়ান কে নিয়ে যাও।”
” কোথায় নিয়ে যাবো স্যার ?”
রায়হান রেদোয়ানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো
” স্পেশাল ট্রিটমেন্ট রুমে।” বডিগার্ডরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো। রায়হান আবার বলতেই তারা রেদোয়ানকে নিয়ে চলে গেলো। বুঝতে পারছে না তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাই কিছু বলছেও না।
অভিদ চোয়াল শক্ত করে বলে
” এমন ভাবে ওকে মারবো যে ওর দ্বিতীয় জন্ম হলেও এই দিনটার কথা ওর মনে থাকে।”
অভিদ আর রায়হান রুমে ঢুকতেই রেদোয়ান চেঁচিয়ে বলে উঠে
” অভিদ, অভিদ আমাকে নামিয়েদে দয়া করে। আর কোনোদিন আমি পালানোর চেষ্টা করবো না। দয়া করে এইভাবে আমাকে কষ্ট দিস না। অভিদ নামিয়ে ফেল আমাকে। তোর পায়ে পরছি আমি অভিদ।”
অভিদ বাকা হাসি দিয়ে তাকিয়ে থাকে। রেদোয়ানকে একটা মোটামুটি বড় একটা পাত্রের উপর দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পাত্রে ফুটন্ত গরম পানি রয়েছে। রেদোয়ান ছাড়া পাওয়ার অভিদ রায়হানের কাছে বারবার আকুতি মিনতি করে যাচ্ছে কিন্তু অভিদ রায়হান শুনছেই না এমন ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অভিদ তার জ্যাকেট থেকে গান বের করে সামনের চেয়ারে বসে পড়ে পাশে রায়হানও আড়াম করে সিনেমা দেখার জন্য বসে পড়ে। অভিদের হাতের গান দিয়ে নিজের কপাল স্লাইড করতে করতে বলে
” ভাবছি মরবিই যখন তখন তোর মরার আগে তোর পাপের কয়েকটা হিসাবও দিয়ে দেই।”
রেদোয়ান কাঁদতে কাঁদতে বলে
” অভিদ দয়া করে আমার সাথে এমন করিস না। রায়হান বাবা আমাকে বাঁচিয়ে দাও। আমি আমার বাকি জীবন গুলো তোমাদের দাস হয়ে থাকতেও রাজি। অভিদ নামিয়ে দাও !”
অভিদ রায়হান একে অপরের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে উঠে। রায়হান হাসতে হাসতে বলে
” বাব্বা !! এতোদিন আমাদের মারার জন্য উঠে পরে লেগেছিলি আর সেই তুই এখন আমাদের বাবা বলছিস ? রিয়েলি ! আমার তো একদমই বিশ্বাস হচ্ছে না।” রেদোয়ানকে বেধে ঝুলিয়ে রাখা দড়িটার কোণা বাশে বাধা ছিলো। অভিদ সেটায় শুট করে দেয়। সাথে সাথে দড়ি ছিঁড়ে রেদোয়ান ফুটন্ত গরম পানিতে পড়ে গেলো। রেদোয়ার চিৎকারও বন্ধ হয়ে গেলো। রেদোয়ান যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। গলা দিয়ে শব্দও বের করতে পারছে না শুধু কাতরাচ্ছে। পানির থেকে কিছুটা দড়ির অংশ বেড়িয়ে ছিলো অভিদ এগিয়ে এসে সেই অংশটা টান দেয়। ধীরেধীরে রেদোয়ানের অর্ধ পোড়া শরীর টাও উপরে উঠে আসে। রেদোয়ানের শরীরের চামড়া পুড়ে ছিলে গিয়েছে। অভিদের মনে হিংস্রতা জেগে উঠেছে। অভিদ হিংস্রতার হাসি দিয়ে নিচে রাখা চিলি পাওডার হাতে নেয়। রেদোয়ানের গায়ে ছুড়ে মারতে থাকে মরিচ গুলো। রেদোয়ান খুব কষ্টে আর্তনাদ করে উঠে কিন্তু এই আর্তনাদ শোনার জন্য কেউ নেই। রেদোয়ানের পুরো শরীর অসম্ভব জ্বালা করতে থাকে। সবই নিজের পাপের জ্বালা। ছটফট করতে করতে রেদোয়ানের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। রেদোয়ান একদম চুপ হয়ে যায়। পুরো রুম নিস্তব্ধ হয়ে যায়। বডিগার্ডরা একেক জন হাড় কাঁপিয়ে কাঁপছে। অভিদ প্রশান্তির হাসি দিয়ে বলে
” এটা পার্সেল করে S.R. কে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করো।” অভিদ রায়হানকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় গোডাউন থেকে।

সার্ভেন্ট বাড়ির দরজা খুলে দিলে অভিদ, রায়হাম ভেতরে ঢুকে। ভেতরে ঢুকতেই রায়হানের প্রথমে চোখ গেলো মিশুর দিকে। মিশু বারবার হাই তুলছে আর ডিজাইন আর্ট করছে। অভিদ রায়হানের দিকে একবার তাকিয়ে হেসে উপরে চলে গেলো। রায়হান অভিদকে চলে যেতে দেখে হেসে মিশুর কাছে চলে গেলো। সার্ভেন্ট দরজা লাগিয়ে কিচেনে চলে গেলো।
রায়হান এসেই মিশুর গা ঘেঁষে বসে পড়লো। মিশু ভ্রু কুঁচকে পাশে তাকায়। রায়হানকে দেখে মিশু স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে শান্ত ভাবে বললো
” কোথায় ছিলে দুজন ?” রায়হান হেসে বললো
” অফিসের কাজ ছিলো আর কি।”
মিশু আবারও হাই তুললো। চোখ কচলে নিজের কাজ করতে করতে বলে
” অফিসের কাজ ছিলো নাকি কাউকে পরাপারে পাঠানোর কাজ করছিলে ? এমনি এমনি তো আর মাফিয়া হওনি দুজন।”
রায়হান অবাক হয়ে বলে
” তুমি কি করে জানো ?” মিশু দাঁত কেলিয়ে বলে
” মেজো মাফিয়ার হবু বউ বলে কথা। নিজেকে সব বুঝে নিতে হবে।”
রায়হান থতমত খেয়ে মিশুর দিকে তাকিয়ে বলে
” মেজো মাফিয়া মানে ?”
মিশু মুখ কুঁচকে বিরক্তকর চাহনি দিয়ে বলে
” মানুষ মেরে কি তোমার বুদ্ধি সব পানিতে ভেসে গিয়েছে ? ভাইয়া আর তুমি দুজনই তো মাফিয়া। ভাইয়া মাফিয়া হওয়ার পর তুমি হয়েছো তাহলে তো তুমি মেজো মাফিয়াই। আর তুমি বলেছিলে O.R.R এর meaning হচ্ছে Ovid Rayjada- Rayhan.”
রায়হান জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলে
” হ্যা বুঝেছি এবার আমি। আচ্ছা তুমি তোমার কাজ করো। আমি ফ্রেশ হয়ে ঘুম দেবো একটা।”
মিশু হাই তুলে বলে
” দাঁড়াও আমিও যাবো।” মিশু তার সব জিনিস পত্র গুছিয়ে নিয়ে উঠে যায়। রায়হান মিশুর হাত থেকে কয়েকটা জিনিস নিয়ে বলে
” শোনো আজকে রাতেই তোমার লাগেজ গুছিয়ে রেখো। কালকে আমাদের ফ্লাইট আছে।”
মিশু হাটা বন্ধ করে দিলো। বিস্ময় নিয়ে রায়হানের দিকে তাকালো। রায়হান ভ্রু নাচিয়ে বলে
” কি হলো এভাবে তাকাচ্ছো কেনো ?”
মিশু অবাক স্বরে বলে
” কোথায় যাবো আমরা ? আর ফ্লাইট! কিসের ফ্লাইট ?”
রায়হান মাথা নেড়ে বলে
” উঁহু বলা যাবে না। কালকে গেলেই দেখতে পাবে। আর কোনো কথা জিজ্ঞেস করবে না। শুধু নিজের লাগেজটা গুছিয়ে রাখবে। আর রুহিরটা তুমি বা অভিদ গুছিয়ে দিও।”
মিশু ভ্রু কুঁচকে বলে
” তুমি মজা করছো কেনো ? আমার কি কোনো পাসপোর্ট আছে নাকি ? আমি কিভাবে abroad যাবো ?”
রায়হান তার খাল হাত দিয়ে মিশুর মাথায় গাট্টা মেরে বলে
” গাধী এতোক্ষণ আমাকে গাধা বলছিলে এখন তো দেখছি তুমি নিজেই গাধী। আমরা সবাই যে অভিদ আর রুহির হানিমুনের পর ট্যুরে গিয়েছিলাম তখন পাসপোর্ট করা হয়েছিলো সেইসব কি ভুলে গিয়েছো নাকি তুমি?”
মিশু জিভ কেটে বলে
” ইশশশ একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম। যাই হোক আমি আগে ঘুমাবো তারপর সব লাগেজ গোছানো শুরু করবো।” রায়হান হালকা হাসলো। মিশু স্বাভাবতই ঘুম পাগলি মেয়ে। রায়হান মিশুর রুমে সব জিনিস দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

অভিদ নিজের লাগেজ প্যাক করছিলো। কাজ করতে করতে রুহির দিকে চোখ যেতেই দেখলো রুহি নড়ছে। অভিদ হাতে জিনিস রেখেই রুহির কাছে ছুটে এলো। রুহি চোখ খুলে মাথায় হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বলে
” মাথা ব্যাথা করছে কেনো ?”
অভিদ রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আলতো স্বরে বলে
” মেডিসিন খেলে ঠিক হয়ে যাবে। পায়ে ব্যাথা করছে আর ?” রুহি পিটপিট চোখে অভিদের দিকে তাকালো। অভিদ মুচকি হাসি দিলো। রুহির আগের কথা মাথায় আসতেই রুহি লাফিয়ে উঠে বসে। অভিদের থেকে কিছুটা দূড়ে বসে আতংকিত গলায় বলে
” কি চাই আপনার ? আপনি তখন সব মিথ্যা বলেছেন তাই না ?”
অভিদ রুহির হাত টেনে কাছে নিয়ে আসতে চায় কিন্তু রুহি নিজের হাত ছাড়িয়ে কোলে কুশন নিয়ে গুটি মেরে বসে থাকে সেখানেই। রুহি না আসায় কভিদ নিজেই উপরে উঠে আসে। রুহি পিছিয়ে যেতে চাইলেই অভিদ রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে চেপে ধরে। রুহি ভীতু দৃষ্টিতে অভিদের দিকে তাকালো। অভিদ মুচকি হেসে বলে
” তখন যা হয়েছে সব ভুলে যাও। তবে একটা কথা মনে রেখো তুমি আমার স্ত্রী আর এই সন্তান আমাদের। সেটা অস্বিকার করতে পারবে না তুমি। আর সত্য জানতে চাইলে নিজের স্মৃতি ফিরে আসার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তোমাকে। তখন সব পরিষ্কার হয়ে যাবে তোমার কাছে আর নিজেকে একদম আমার থেকে দূড়ে সরানোর চেষ্টা করবে না” রুহি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে অভিদের দিকে।
অভিদ রুহির তাকানো দেখে হালকা শব্দ করে হাসে।
” শোনো কালকে রাতের ফ্লাইটে আমরা ইউরোপ যাচ্ছি। তোমার যা যা প্রয়োজন সব আমি প্যাক করে নিয়েছি আর কিছি দরকার হলে আমাকে বলবে নিয়ে নেবো আমি।” অভিদ রুহির কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতেই রুহির গায়ে কম্পন সৃষ্টি হয়। অভিদ বেড নেমে নিজের কাজ করতে থাকে আর মাঝে মাঝে রুহির দিকে তাকাচ্ছে। রুহি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভিদের দিকে।

পরদিন রাত ১২টার ফ্লাইটে অভিদরা সবাই প্ল্যানে উঠে বসে। অভিদ প্ল্যানে বসেই বড় একটা নিশ্বাস নিলো। তার সেই হারিয়ে যাওয়া পরিবারের কিছু মানুষকে ফিরে পাবে ভাবতেই খুশিতে অভিদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে।#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ১৪
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

পরদিন রাত ১২টার ফ্লাইটে অভিদরা সবাই প্ল্যানে উঠে বসে। অভিদ প্ল্যানে বসেই বড় একটা নিশ্বাস নিলো। তার সেই হারিয়ে যাওয়া পরিবারের কিছু মানুষকে ফিরে পাবে ভাবতেই খুশিতে অভিদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে।
রুহি বসেই সিটে মাথা এলিয়ে দিলো। অভিদ রুহির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। রুহি চোখ বন্ধ করে রাখায় সেটা দেখতে পেলো না। রায়হান আর মিশু পেছনের সিটে বসেছে।
অভিদ রুহির হাতের উপর হাত রাখে। অভিদ ভালো করেই জানে ফ্লাইট ছাড়লে রুহি ভয় পাবে।
এদিকে রুহি নিজের হাতে কারো ছোঁয়া পেয়ে সাথে সাথে চোখ খুলে তাকায়। হাত অনুসরণ করে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ সামনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে রুহির দিকে তাকিয়েও একটা হাসি দিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়। রুহি মুখ ফুলিয়ে রাখে।
কিছুক্ষণ পর এনাউজমেন্ট করে বলে দিলো সিটের বেল্ট বাধার জন্য। রুহি অর্ধেক বাধতে বাধতে অভিদ নিজেরটা বেধে রুহির বেল্টও বেধে দেয়। রুহি মিনমিন স্বরে বলে
” Thank you.” অভিদ গম্ভীর চেহারায় রুহির দিকে তাকালো। রুহি ঢোক গিলে চুপ করে গেলো। ফ্লাইট ছাড়তেই রুহির গা গুলিয়ে আসতে থাকে। অভিদ রুহির হাতের উপর হাত রেখেছিলো প্ল্যান ছাড়তেই রুহি ভয় পেয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে অভিদের হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চেঁচিয়ে উঠে। অভিদ ঠোঁট চেপে হাসতে থাকে। অভিদ আশ্বস্ত স্বরে বলে
” কিছু হবে না চুপ করে বসে থাকো। আর বাইরে তাকাও ভালো লাগবে তোমার।”
রুহি window পাশের সিটে বসার পরেও সেদিকে তাকালো না। অভিদের কথায় ঘনঘন মাথা নেড়ে না বললো। অভিদ ঠোঁট চেপে নিঃশব্দে গা দুলিয়ে হাসলো। রুহির অভিদের বাহু চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে মুখ লুকিয়ে রেখেছে।
এদিকে মিশুর একদমই ভয় করছে না। মিশু শুধু ছবি তুলছে আর গান শুনে যাচ্ছে রায়হানের সাথে।
কিছুক্ষণ পর অভিদ রুহির পাশ কাটিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রুহিকে উদ্দেশ্য করে বললো
” রুহি দেখো আমাদের সাথে পাখিরা উড়ছে।” রুহি চোখ বড়বড় করে অভিদের দিকে তাকিয়ে আবার প্ল্যানের ভেতরে চারপাশ দেখতে দেখতে বলে
” কোথায় ? এরোপ্ল্যানের ভেতর পাখি কোথা থেকে আসবে ? আপনি কি পাখিও নিয়ে এসেছেন ?”
অভিদ শব্দ করে হেসে দিলো রুহির কথা শুনে। রুহি বোকার মতো তাকায় অভিদের দিকে। অভিদ হাসতে হাসতে বলে
” গাধী বাইরে তাকিয়ে দেখো !” রুহি জানলার দিকে তাকালো। বাইরে তাকাতেই রুহির চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। বাইরে এক ঝাক পাখি প্ল্যানে সাথে উড়ছে। রুহির মনে হলো পাখিরা এই জীবনহীন বস্তু এরোপ্ল্যানের সাথে প্রতিযোগিতা করছে। আকাশ দেখে মনে হতে লাগলো রুহি আকাশের রাজ্যে এসে পড়েছে। রুহির মন জুড়িয়ে গেলো। রুহি হেসে বলে
” আচ্ছা এই আকাশের টুকরো গুলো আমরা নিয়ে যেতে পারি না ? পড়ে সেটা আমাদের রুমে রেখে দেবো। তাহলে আমাদের রুমেও আকাশ থাকবে।” অভিদ চমকে যায় রুহির কথা শুনে। অভিদ ফ্যালফ্যাল করে রুহির দিকে তাকিয়ে থাকে। রুহি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো
” কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো ? আমাকে কিছুটা আকাশ নিতে দেবেন না?”
রুহির কথা শুনে অভিদের মনে হচ্ছে সে আকাশে ভাসছে। অভিদের হঠাৎ পেট ফেটে হাসি আসতে চাইলো কিন্তু অভিদ কোনো রকমে চাপিয়ে রাখার চেষ্টা করতে থাকে। অভিদের উত্তর না পেয়ে রুহি কাঁদোকাঁদো হয়ে বললো
” আপনার নাকি সব রয়েছে ? আর আমি একটু খানি আকাশ চেয়েছি তাতেই মুখ বন্ধ হয়ে গেলো আপনার ? আমাকে একটু আকাশ এনে দিতে পারবেন না আপনি ?” অভিদ জোড়ে একটা শ্বাস নিয়ে নিকের হাসি আটকে বললো
” আমার পুরো আকাশটাই তো তোমার তাহলে একটু খানি আকাশ নিয়ে কি করবে তুমি ? পুরো আকাশটাই তোমার তাই তোমার নেওয়ার দরকার নেই।”
রুহি মাথা নেড়ে বললো
” নাহ আকাশটা যখন আমারই তাহলে আমি তো নেবোই। আমি বাড়িতে যাওয়ার সময় অনেকখানি আকাশ নিয়ে যাবো।”
অভিদ ঢোক গিলে রুহির দিকে তাকায়। রুহিকে পাগলে ধরেছে নাকি? এসব বাচ্চাদের মতো উল্টো পাল্টা কথা কেনো বলছে ? অভিদ এসব ভাবতে থাকে। রুহি কিছুক্ষণ উল্টো পাল্টা বকবক করার পর রুহি ঘুমিয়ে পড়লো। অভিদ রুহিকে রুহিকে এক হাতে জড়িয়ে রাখে।

দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা পর ফ্লাইট ল্যান্ড করে। অভিদ রুহিকে নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এসে বড় একটা নিশ্বাস নিলো। রুহি চারপাশে প্রচুর মানুষ দেখে ভয়ে অভিদের হাত জড়িয়ে ধরে রাখে। অভিদরা সবাই নামতেই অনেক ছেলে মেয়েদের দেখলো দৌড়ে আসছে ছবি তোলার জন্য। রুহি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। অভিদ কি এতোবড় সেলিব্রেটি নাকি যে তার সাথে ছবি তোলার জন্য এতো মানুষ দৌড়ে আসছে ? ভাবতে ভাবতে রুহি মিশুকে জিজ্ঞেস করে বসে
” মিশু সবাই ওনার সাথে সেল্ফি নেওয়ার জন্য এভাবে দৌড়ে আসছে কেনো রে ?”
মিশু কেমন একটা চাহনি দিলো রুহি সেই চাহনির মানে বুঝে উঠতে পারলো না। কিছুক্ষণ পর মিশু চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো
” তুই জানিস না কিছু এখনিও ?”
রুহি বুঝতে না পেরে বলে
” কি জানবো ?” মিশুর চেহারায় অবাক হওয়ার রেশ দেখা গেলো। মিশু অবাক স্বরে বলে
” সত্যি তুই জানিস না কিছু ? মানে ভাইয়া তোকে জানায়নি? ভাইয়ার কোম্পানি মানে Ovid Rayjada group of company বর্তমানে world ১০ টা বেস্ট কোম্পানির মধ্যে ৪ নাম্বারে রানিং করছে। আর এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রি। ভাইয়া তো কতো এওয়ার্ডও পেয়েছে।” রুহি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভিদের দিকে। অভিদ তাকে এই কথা জানালো না ? ভেবে মনে মনে রুহি কিছুটা কষ্ট পেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে কালো পোষাক পরিহিতা অনেক গুলো বডিগার্ড আসলো। সবার থেকে অভিদকে দূড়ে সরিয়ে অভিদ, রুহি, রায়হান, মিশুদের নিয়ে প্রচণ্ড ভিরের মাঝ থেকে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। অভিদ দের গাড়ি ছেড়ে দিতেই বডিগার্ডরা তাদের গাড়ি নিয়ে অভিদের পেছনে আর সামনে আসতে থাকে।
অভিদরা ব্রেনেনবুর্গ গেটের বিপরীতে হোটেল অ্যাডলন টিতে উঠে। একদিনের মাঝে এই হোটেল এর সঙ্গে ডিল করা রায়হান অভিদের জন্য কিছুটা কঠিন ব্যাপার ছিলো কিন্তু শেষপর্যন্ত অভিরা হোটেল বুক করতে পারে।
অভিদ, রায়হানরা নিজেদের রুমে চলে যায় আর রুহি আর মিশুকে আলাদা রুম দিয়ে দেয়। সবাই সারাদিন রেস্ট করে। তবে অভিদ রুহির খোঁজ খবর নিলেও রুহি একবারও অভিদের সাথে কথা বললো না। রুহি কোন কারণে রেগে আছে সেটা বুঝতে না পেরে অভিদও আর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করলো না। পরে রুহির সাথে কথা বলবে ভেবে রাখে।
পরদিন অভিদ, রুহি, রায়হান, মিশু চারজন আর অভিদের বডিগার্ডরা বার্লিনের এক বিলাশ বহুল বাড়ির সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়। অভিদ আর রায়হান কয়েকটা লোকের সাথে কথা বলে রুহি মিশুকে নিয়ে সোজা লিফটে উঠে গেলো। বিল্ডিং এর ২০ তলা ফ্লোরে গিয়ে লিফট থামে। সবাই আবার সেখান থেকে নেমে যায়। অভিদ আবারও সামনে হাটতে থাকে। কিছুদূড় যাওয়ার পর অভিদের পায়ের গতি কমে আসে। একটা ফ্ল্যাট এর সামনে গিয়ে অভিদ থেমে যায়।
অভিদ বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে কলিংবেল প্রেস করে। কিছুক্ষণ পর হুট করে দরজা খুলে গেলো। দরজার সামনের মহিলাকে দেখে অভিদের থুতনি কাপঁতে কাপঁতে থাকে। মহিলাটা ইংলিশে অভিদদের জিজ্ঞেস করলো
” সরি, কারা আপনারা ?” অভিদের গলায় কান্না গুলো দলা পাকিয়ে আসতে থাকে। রায়হান অভিদের অবস্থা বুঝতে পেরে এগিয়ে এসে মহিলার উদ্দেশ্যে বললো
” আমরা কি ভেতরে আসতে পারি?”
মহিলাটা অবাক হয়ে বলে
” আপনারা বাঙালি ?” রায়হান মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। মহিলাটা খুশি হয়ে সবাইকে ভেতরে আসার জন্য পথ ছেড়ে দাঁড়ায়। একে একে সবাই ভেতরে ঢোকে তবে অভিদ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। অভিদকে ঢুকতে না দেখে রুহিও ঢুকলো না। মহিলাটা অভিদের সামনে এসে বললো
” তুমি আসছো না কেনো ? আর তোমাকে কেমন যেন লাগছে মনে হচ্ছে তুমি অসুস্থ। ভেতরে এসো তুমি !” অভিদ কাঁপা কাঁপা পায়ে ভেতরে ঢুকে এলো। অভিদের পেছন পেছন রুহিও ভেতরে ঢুকলো। মহিলাটা রুহিকে দেখে রুহির কাছে এসে হাসিমুখে বলে
” তোমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ বুঝি ?”
রুহি মাথা নেড়ে হ্যা বললো। মহিলাটা রুহির মাথায় হাত রেখে বলে
” বাহ তোমাদের দুজনকে খুব মানিয়েছে। তোমাকে কিন্তু খুব মিষ্টি লেগেছে আমার।”
রুহি লজ্জামাখা হাসি দিলো। অভিদ হঠাৎ আক্রমণের মতো মহিলার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
মহিলাটা ভয় পেয়ে যায় এমন কাজে।
অভিদ মহিলাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে
” ফুপি তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছো ? তুমি তোমার ছেলে অভিদকে কি করে ভুলে গেলে ? তুমিও আমাকে স্বার্থপরের মতো ছেড়ে চলে এসেছো কেনো ?”
মহিলাটা অভিদকে ঝাড়া মেরে দূরে সরিয়ে দিলো। অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকিয়ে বলে
” কে তুমি ?”
অভিদ জড়ানো গলায় বলে
” তোমার বড় ভাই অনয় রায়জাদা আর রিমার ছেলে অভিদ রায়জাদা। যাকে তোমরা ১৬ বছর আগে সেই বাংলাদেশে ফেলে রেখে নিজেরা এখানে এসে গা ঢাকা দিয়ে রেখেছো। আর আমার ছোট কলিজা ছোট পরিটাকেও নিজেদের সাথে নিয়ে এসেছিলে। তোমরা সবাই আমাকে একা করে রেখে এসেছিলে। আমি সেই অভিদ রায়জাদা।”
সেই অর্ধ বয়স্ক মহিলার মাথার সব ফাকা হয়ে গেলো। যেই বিপদ থেকে বাঁচার জন্য সে গা ঢাকা দিয়েছিলো সেই বিপদ যে আবার তার আশেপাশে চলে আসবে সেটা নিমিষেই বুঝে নিলো।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here