মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -৯+১০

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ০৯
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

রিমির কথার শেষ হওয়ার আগেই অভিদ রিমির হাত বরাবর শুট করে বসে। রিমি ব্যাথায় কাতরাতে থাকে। অভিদ তেড়ে এসে রিমির মুখ চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বলে
” তোর সাহস এতোবড় কি করে হয় অন্যের কথায় তুই অভিদ রায়জাদার বাড়িতে এসে পা রাখিস ! আমার বাড়িতে থেকেই আমার বাড়ির ক্ষতি করিস। তোকে তো আমি এতো সহজে ছাড়বো না।”
রিমি এক হাত ধরেই কাঁদতে কাঁদতে বলে
” না স্যার দয়া করে আমার কিছু করবেন না। আমি এখানে ইচ্ছে করে আসতে চাইনি আমাকে জোড় করে পাঠানো হয়েছে। সিনিয়ার মানে সোহাদ রায়জাদাই আমাকে ভয় দেখিয়ে পাঠিয়েছে। আমি অনেক কষ্টে আমার সংসার চালাই দয়া করে আমাকে মেরে ফেলবেন না। আমি কথা দিচ্ছি আর কোনোদিন আপনার বা ম্যাম এর ধারে কাছে ঘেষবো না। প্লিজ স্যার !!”
অভিদ রিমির চুলের মুঠি চেপে ধরে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। রিমির চোখ বন্ধ করে কাঁদতে থাকে। অভিদ একজন বডিগার্ডকে বলে
” এর হাতের ট্রিটমেন্ট করে বাড়িতে পৌছে দেবে আর তোমরা কয়েকজন ওর উপর নজর রাখবে।”
” ওকে স্যার।” কয়েকজন বডিগার্ড রিমিকে নিয়ে চলে গেলো তাদের মধ্যে দুই জন মেয়েও ছিলো।
রায়হান কাতর গলায় বলে
” আর কতো সহ্য করবি এই লোকটাকে ? এবার দয়া করে হিসেব চুকিয়ে নে। দেখবি হিসেবে খাতা বড় করতে গেলেই আমাদের জন্য বিপদ। তোর রুহি আর সন্তানের কথা কিন্তু ভেবে দেখিস।”
অভিদ শান্ত গলায় বলে
” রায়হান ভেবে চিন্তে কথা বল। তোকে আগেও বলেছি সোহাদ রায়জাদাকে নিয়ে কোনো কথা বলবি না আমার সামনে। যতোই হোক আমাদের মধ্যে গুরু আর শীর্ষর সম্পর্ক।” অভিদ বাকা হাসি দিয়ে রায়হানের দিকে একপলক তাকিয়ে চলে গেলো। রায়হান নিশ্বাস ফেলে বলে
” এসবের জন্য কম বিপদ আসবে বলে আমার মনে হয় না।” রায়হানও বেড়িয়ে গেলো গোডাউন থেকে।
গাড়িতে উঠতেই অভিদ ড্রাইভারকে বলে গাড়ি স্টার্ট দিতে। ড্রাইভার গাড়ি রায়জাদা বাড়ির দিকে ঘুরিয়ে নিলো। অভিদ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে হঠাৎ বলে উঠলো
” আজকে বাড়িতে কেউ একজন এসেছে, জানিস তুই ?”
রায়হান বাইরের দিকে মুখ করে মুখ বাকিয়ে বলে
” আমাকে কিছু না জানানো হলে আমি জানবো কিভাবে?”
অভিদ ভ্রু কুঁচকে বলে
” তুই মেয়েদের মতো মুখ বাকিয়ে কথা বলিস কেনো বারবার ?” রায়হান ত্যাড়া ভাবে বললো
” তোর কি তাতে ? আমার মুখ আমি বাকিয়েছি। আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো।”
অভিদ দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” শালা ক্যাঙ্গারু তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলিস কেনো হ্যা ? যাহ তোকে বলবোই না কে এসেছে।” রায়হান রেগে বলে
” তোর বলা লাগবে না। আমার চোখ আছে আমি দেখে নিতে পারবো বাড়িতে গিয়ে। আর দরকার হলে এখানে বসেই খোঁজ নিতে পারি আমি। বুঝেছিস ?” অভিদ চুপ করে গেলো কথা বললেই যে রায়হানের সাথে ঝগড়া হবে সেটা বুঝতেই পারছে।

এদিকে বাড়িতে তুলমুল ঝড় বয়ে গিয়েছে। পুরো মরা বাড়িটা একটা পাগলা গারদের বাড়ির রূপ ধরেছে। দুপুর থেকে রুহি আর মিশু যা ইচ্ছে তাই করেছে। বাড়িতে বসেই দুজন সব শপিং করেছে, ফুড পাণ্ডা থেকে প্রচুর খাবার অর্ডার করেছে, নাচ গান সব করেছে। বলতে গেলে দুজন মিলে সারাদিন পার্টি করেছে। বাড়ির অবস্থাও পুরো বেহাল। সব সার্ভেন্টরা মিলে কাজ করে যাচ্ছে। অভিদ এসে এমন অবস্থা দেখলে সবার বারোটা বাজিয়ে দেবে সেই ভয়ে সবাই দৌড়ে কাজ করছে। কিছুক্ষণ আগে রুহি ক্লান্ত হয়ে উপরে চলে যাওয়ায় মিশু সোফায় বসে বসে তার ল্যাপটপে কিছু ডিজাইনিং নিয়ে কাজ করছিলো হঠাৎ বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠতেই মিশু কাজ ছেড়ে চারদিকে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই এখানে। মিশু ল্যাপটপ রেখে উঠে দরজা খুলে দিতেই মিশুর হাসি মুখটা চুপসে গেলো।
দরজার বাইরে রায়হান এক দৃষ্টিতে মিশুর দিকে তাকিয়ে আছে। মিশুকে এখানে দেখে প্রচণ্ড বিস্মিত হয়েছে রায়হান সেটা চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পারলো মিশু। মিশু একটা ঢোক গিলে দরজার পাশ হয়ে কিছুটা দূড়ে দাঁড়ায়। রায়হানের পাশ থেকে হঠাৎ অভিদ বলে উঠে
” কেমন আছো শালিকা ? শুধু কি একজনকেই দেখবে তুমি ? আমাকেও একটু দেখো ! আমি কিন্তু আগের থেকে অনেক হ্যান্ডসাম হয়ে গিয়েছি।”
মিশু মুচকি হাসি দিয়ে অভিদের কাছে এগিয়ে যায়। অভিদ আলতোভাবে মিশুকে জড়িয়ে ধরে আবার ছেড়ে দেয়। মিশু হেসে বলে
” ভাইয়া তুমি কিন্তু সত্যি অনেক হ্যান্ডসাম হয়ে গিয়েছো। রুহি তোমাকে একা ছাড়ে কি করে ? আমার যদি এমন একটা জামাই থাকতো তাহলে তাকে সিকিউরিটি দেওয়ার জন্য আমিও তার সাথে সাথে থাকতাম।”
অভিদ আড়চোখে রায়হানের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে
” সেই মানুষটা তো তোমার সামনেই রয়েছে তুমি বললে কালকেই তোমাদের নিকা করিয়ে দেবো। তারপর যতো ইচ্ছে সাথে সাথে থেকো।”
মিশু অভিদের দিকে তাকিয়ে ছিলো অভিদকে বিড়বিড় করে কথা বলতে দেখে বললো
” ভাইয়া তুমি কি আমাকে কিছু বলছো ?”
অভিদ মাথা নেড়ে বলে
” নাহ, ভাবছিলাম তোমার বোনের কি আর আমাকে দেখার মতো সময় আছে ? আমাদের সবার জীবনের মোরটাই তো ঘুরে গেলো এখন কি আর এসবের দিকে আমাদের খেয়াল রয়েছে ? আমরা আমাদের জীবনটা আগের মতো গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছি।”
মিশু প্রতিউত্তরে কিছু বললো না শুধু হতাশার নিশ্বাস ফেলে। অভিদ চোখের কোণের পানি মুছিয়ে নিয়ে চারদিক পরখ করে বলে
” রুহি কোথায় ? তুমি রয়েছো অথচ ও এখানে নেই কেনো ?”
” নাহ রুহি এতোক্ষণ এখানেই ছিলো একটু আগেই রুমে গিয়েছে । রুহি নাকি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।” অভিদ হালকা হেসে বলে
” ঠিকাছে তাহলে আমি উপরে যাচ্ছি তোমরা কথা বলো।”
মিশু জোরপূর্বক হাসি দিলো। অভিদ উপরে চলে যেতেই মিশু রায়হানের দিকে তাকায়। রায়হান মিশুর এমন চাহনি দেখে আমতা আমতা করে বললো
” আ..আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।” রায়হান একপ্রকার ছুটে উপরে চলে গেলো। মিশু রায়হানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। হুট করে কান্না দলা পাকিয়ে আসে। মিশু বড় একটা শ্বাস নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
” বি স্ট্রং মিশু ! আমি তো জানতামই এখানে আসলে এমন কিছু হবে তাহলে ভেঙে পড়ার মতো কিছু নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে।” মিশু নিজের জিনিস পত্র গুছিয়ে নিয়ে নিজের বরাদ্দকৃত রুমে চলে যায়।
অভিদ রুমে আসতেই রুম ফাকা দেখতে পেলো। অভিদ অবাক হয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখলো রুহি সেখানেও নেই। রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার আগেই ওয়াসরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ শুনতে অভিদ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। বসে থেকে রুহির অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার শব্দ শুনে অভিদ সেদিকে তাকিয়ে অবস্ক হয়ে গেলো। রুহির ড্রেস অর্ধেক ভিজে গিয়েছে। রুহির হাত-পাও কাঁপছে। রুহি দেয়াল ধরে ধরে কোনো রকমে বাইরে বেড়িয়ে আসতেই শরীরের ভর ছেড়ে দিতেই। অভিদ ঠিক সময় রুহিকে নিজের বাহুডোরে আগলে নেয়। রুহিকে কোলে তুলে এনে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে দেয় অভিদ। রুহির অবস্থা দেখে অভিদ অস্থির হয়ে
বললো
” কি হয়েছে তোমার রুহি ? শরীর খারাপ লাগছে ? আমাকে একটু ফোন করোনি কেনো ? আমি ডক্টর নিয়ে আসতাম। তোমার কি বেশি খারাপ লাগছে ?”
রুহি আলতো ভাবে মাথা নাড়িয়ে ক্লান্ত স্বরে বলে
” নাহ আমি ঠিকাছি। আসলে ফাস্ট ফুড খেয়ে হজম হয়নি তাই বারবার বমি হচ্ছে।” অভিদ ভ্রু কুঁচকে বলে
” মানে তুমি এই অবস্থায় বাইরের খাবার খেয়েছো কেনো ? এসব খাবার খেয়ে ডক্টর তো না করেছে তাহলে কেনো খেয়েছো ? দেখেছো কি অবস্থা করেছো নিজের !”
রুহি প্রতিউত্তরে কিছু বললো না। কারণ ডক্টর আগে থেকেই এসব খাবার থেকে দূড়ে থাকতে বলেছে তাকে। আজকে কোন ভূত চেপেছিলো মাথায় নিজেও জানে না। রুহি ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানোয় গা এলিয়ে দিতে অভিদ চেঁচিয়ে বলে উঠে
” এই তুমি এভাবে ঘুমাচ্ছো কেনো ? এখন কি আবার নিজের ঠান্ডা লাগানোর ধান্দায় আছো নাকি ? তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করো।”
রুহি মুখ লটকিয়ে বলে
” উঁহু পারবো না আমি। আমার ঘুম পাচ্ছে।”
অভিদ কড়া গলায় বলে
” ঘুম পাচ্ছে তো ঘুমাবে আগে ড্রেস চেঞ্জ করে নাও তারপর, উঠো জলদি !”
রুহি প্রচণ্ড কান্না পেলো কিন্তু রুহি কাঁদলো না। নিজের কান্না দমিয়ে রেখে মুখ ফুলিয়ে বলে
” ঠিকাছে আপনি জান আমি চেঞ্জ করছি।”
অভিদ ভ্রু কুঁচকে বলে
” আমি জাবো মানে ? আমি এক পাও নড়বো না এখান থেকে।”
রুহি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলে
” মানে আমি আপনার সামনে চেঞ্জ করবো নাকি ?”
অভিদ ডোন্ট কেয়ার ভাবে বলে
” হ্যা কেনো কি হয়েছে ? আমি তো তোমার হাজবেন্ডই।”
রুহি লজ্জায় মাথা নুয়ে নেয়। আরো কোনো কথা বলার মতো শব্দ খুঁজে পেলো না রুহি। মিনিট একের পর অভিদ রুহির লজ্জার কারণ বুঝতে পারলো। অভিদের নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করলো। অভিদ আলমারি থেকে ড্রেস এনে রুহির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে
” নাও চেঞ্জ করো তাড়াতাড়ি আমি বাইরে আছি। আর দেড়ি করলে কিন্তু আমি পারমিশন ছাড়াই ঢুকে পরবো।”
রুহি মাথা নেড়ে হ্যা বললো। অভিদ দ্রুত পা চালিয়ে বেড়িয়ে গেলে রুহি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
অভিদ রুমের বাইরে বের হতেই রায়হানকে দেখতে পেলো। রায়হান কাধে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে উঁকি ঝুঁকি মেরে কোথাও যাচ্ছে। অভিদ চুপিচুপি রায়হানের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। রায়হানের কাধে দুইবার হাত রাখতেই রায়হান পেছনে ঘুরে ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে বসে। অভিদ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রায়হানকে পর্যবেক্ষণ করে বলে
” কোথায় যাচ্ছিস তুই ?” রায়হান ঢোক গিলে মাথা নিচু করে নেয়। অভিদ আবারও একই প্রশ্ন করতেই রায়হান বললো
” আমি এখানে থাকতে পারবো না ভাই। মিশুকে দেখতেই আমার সেইদিনের কথা মনে পড়ছে। সেইদিনের নিজের ব্যবহারের কথা মনে পড়তেই আমার কষ্ট হচ্ছে।”
অভিদ রায়হানের দুই কাধে হাত রেখে বলে
” সেইদিন যা হয়েছিলো হয়েছে! আজ সব ভুলে যা। মিশু আমার কথায় এখানে এসেছে তাহলে তুই কেনো চলে যাচ্ছিস ? মিশুর কি কোনো ফিলিংস হচ্ছে না ? মিশু একটা মেয়ে তাই ওর বেশি হচ্ছে আর তুই ছেলে হয়ে পালিয়ে যাচ্ছিস ? আমি বলছি সুযোগ কে হাত ছাড়া করিস না। হতে পারে এই সুযোগ দ্বিতীয় বার কোনোদিন পাবি না তুই। তাই বলছি মিশুর সাথে কথা বলে মান, অভিমান, রাগ যা রয়েছে সব ভুলে নিকের সম্পর্ক ঠিক করে নে।” রায়হান কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজের ব্যাগ নিয়ে রুমে চলে গেলো।
অভিদও নিজের রুমে এসে দেখে রুহি ইতিমধ্যে ঘুমিয়ে গিয়েছে। অভিদ রুহির পাশে বসে রুহির মাথায় হাত রাখতেই রুহি ধপ করে চোখ খুলে তাকায়। অভিদ মুচকি হেসে বলে
” আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি তুমি ঘুমাও।”
অভিদের আদুরে কথা শুনে রুহি কিছু বলতে পারলো না। রুহি চোখ বন্ধ করে অভিদের ছোঁয়া উপভোগ করতে থাকে। ধীরে ধীরে একসময় গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ১০
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

অভিদ মুচকি হেসে বলে
” আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি তুমি ঘুমাও।”
অভিদের আদুরে কথা শুনে রুহি কিছু বলতে পারলো না। রুহি চোখ বন্ধ করে অভিদের ছোঁয়া উপভোগ করতে থাকে। ধীরে ধীরে একসময় গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।
অভিদ রুহির গায়ে ব্ল্যাংকেট জড়িয়ে দিয়ে ঝুকে রুহির কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে রায়হান, মিশুর সাথে ডিনার করতে থাকে। ডিনারে অভিদ আর মিশু হাসি মজা করলেও রায়হান কোনো কথা বললো না। চুপচাপ নিজের খাবার খেয়ে উঠে চলে যায়। মিশু রায়হানের চলে যাওয়া দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে অভিদকে উদ্দেশ্য করে বললো
” ভাইয়া আমি এখানে কয়দিন থাকবো ?” অভিদ মিশুর প্রশ্নের কারণ বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বলে
” রুহি একা ভয় পায় তাই তোমাকে এখানে আনা হয়েছে তবে তোমার কোনো প্রবলেম হলে আমাকে বলবে আমি সলভ করার চেষ্টা করবো আর তোমার বাড়িতে চলে যেতে ইচ্ছে হলে আমাকে বলবে আমি বাড়িতে দিয়ে আসবো।”
মিশু আলতোভাবে মাথা নেড়ে বলে
” না ভাইয়া আমার কোনো প্রবলেম নেই। রুহির সাথেই তো থাকবো।” মিশু আর কোনো কথা বললো না। অভিদও ডিনার শেষে রুমে এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে।
মিশু ডিনার শেষ করে গায়ে চাদর জড়িয়ে উপরের সিরির দিকে হাটা দেয়। উদ্দেশ্য তার ছাদে যাওয়ার। অভিদের ছাদটা খুব সুন্দর ফুল গাছ দিয়ে অনেক সাজানো গোছানো আর একটা সুইমিংপুলও রয়েছে। অভিদের বাড়ির ছাদটা মিশুর অসম্ভব প্রিয়। ছাদের দরজা দিয়ে ঢুকেই মিশুর চোখ যায় আকাশের গোল থাকার মতো সুন্দর চাঁদের দিকে। মিশু মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে ছাদের রেলিং এ হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। গলায় ঝুলানো হেডফোনের দিকে খেয়াল আসতেই মিশু বড় একটা হাসি দিয়ে মোবাইলে গান ছেড়ে কানে হেডফোন গুঁজে দেয়। মিশুর খুব বাজে একটা স্বভাব এটা। মিশুর কানে একবার হেডফোন গুঁজে রাখা হলে তার সামনে লাউড সাউন্ড দিয়ে গান ছেড়ে রাখলেও মিশুর হুশ থাকে না।
রায়হানও হাটতে হাটতে ছাদে এসে হাজির হয়। চাদর গায়ে থাকার প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে চিনতে পারে মিশুকে। রায়হান কিছুক্ষণ সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে। অভিদের কথা শুনে মিশির কাছে এগোতে চাইলেও মনের বাধায় আটকে যাচ্ছে বারবার। রায়হান বড় একটা শ্বাস নিয়ে ধীর পায়ে সামনে এগোতে থাকে। মিশুর দিকে যতো এগোতে থাকে ততোই রায়হানের হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে। রায়হান ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
” কেমন আছো ?” মিশুর কোনো রিয়েকশন না দেখে রায়হান দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে আবারও বলে
” তুমি এখনও আমার প্রতি অভিমান করে রয়েছো ? কথা বলবে না আমার সাথে ?”
এবারও মিশুর মাঝে কোনো রিয়েকশন দেখলো। রায়হান এবার অসহায় ভাবে মিশুর পানে চেয়ে থাকে। রায়হান ধরে নিয়েছে মিশু তার প্রতি অনেক রাগ জমিয়ে রেখেছ। রায়হান আরো কয়েকবার মিশুকে ডাকলো। কিন্তু প্রতিবারের মতো একবারও উত্তর পেলো না। শেষে রাগে রায়হানের মাথার রক্ত গরম হয়ে গেলো। রায়হান একেবারে মিশুর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মিশুর সামনে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে গেলো। মিশু চোখ বন্ধ করে কানে হেডফোন লাগিয়ে রেখেছে। হেডফোন দেখেই রায়হান যা বোঝার দরকার সব বুঝে গেলো। রায়হান রেগে মিশুর কান থেকে হেডফোন টান দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো। আচমকা আক্রমণে মিশু ভয় পেয়ে পাশে তাকায়। রায়হানকে দেখে চমকে যায় মিশু। মিশুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রায়হান হেডফোন ছুড়ে ফেলে দিয়ে রেগে বলতে থাকে
” এই হেডফোন নিয়ে এতো কিসের ভালোবাসা তোমার, হ্যা ? এতোক্ষণ ধরে তোমাকে ডেকে যাচ্ছি অথচ একটা কথাও শোনোনি তুমি। এতোদিন হয়ে গেলো এখনও এসব বদ অভ্যাস চেঞ্জ করোনি তুমি। কবে এসব বেড হ্যাবিট চেঞ্জ করবে ?”
মিশু রেগে বলে
” আমার বেড হ্যাবিট নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি আমার মতো থাকবো। আমার হেডফোন নিয়ে এতো কিসের শত্রুতা তোমার ? আজ পর্যন্ত প্রায় ৩১টা হেডফোন নষ্ট করেছো তুমি আর কতো নষ্ট করবে ? তোমার জন্য হেডফোন কিনে একবারও শান্তি পেলাম না।”
রায়হান দুই পা এগিয়ে এসে বলে
” বেশ করেছি নষ্ট করেছি, আরো নষ্ট করবো আমি। যতোদিন পর্যন্ত তোমার এই বদ অভ্যাস চেঞ্জ না হবে ততোদিন এই আক্রমণ চলতেই থাকবে। আমিও দেখবো কি করে চেঞ্জ না করে থাকো তুমি।”
মিশু রেগে রায়হানের হাতে খামঁছি বসিয়ে দেয়। রায়হান হঠাৎ হেসে দেয় মিশুর কাজ দেখে। হাসতে হাসতে বলে
” তুমি এখনও জংলী বিড়ালের মতো খামঁছি দাও !” মিশু রেগে বোমের মতো তাকিয়ে থাকে। রায়হান ধীরে ধীরে একেবারে চুপ হয়ে যায়। ধীর গলায় বললো
” কেমন আছো ?” মিশু চোয়াল শক্ত করে রায়হানের দিকে তাকিয়ে রইলো। হেডফোন কেড়ে নেওয়ায় মাথায় রক্ত টগবগ করছে তার। মিশু জবাবে শক্ত গলায় বলে
” ভালো আছি দেখেই তো আপনার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। মরে গেলে কি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম নাকি ?”
রায়হান রেগে বলে
” এসব কথা তোকে বলতে না করেছি না ?”
মিশু মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে
” আমার মুখ আমার যা ইচ্ছে তাই বলবো। কারোর কোনো অধিকার নেই আমার কথা নিয়ে কথা বলা।”
রায়হান অগ্নি দৃষ্টিতে মিশুর দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করে মিশুর কোমড় চেপে ধরে রেলিং এর সাথে মিশুকে মিশিয়ে অন্য হাতে মিশুর মুখ চেপে ধরে দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” আর কারো অধিকার না থাকলেও আমার অধিকার রয়েছে। আর আমি যতোদিন বেঁচে থাকবো সেটা শুধুই আমার অধিকার থাকবে।কিন্তু তোর কোনো অধিকার নেই বা আমি কোনো অধিকার দেইনি আমার অধিকার নিয়ে কথা বলার। এর কোনোদিন অধিকার নিয়ে কথা বললে তোকে সেখানেই মেরে ফেলবো।”
ব্যাথায় মিশুর চোখ টলমল করতে থাকে। তবুও সেদিকে খেয়াল না করে মিশু জড়ানো গলায় বলে উঠে
” আমার জীবনের এতোই যখন অধিকার তাহলে কেনো চলে গিয়েছিলে আমাকে ছেড়ে ? তখন কি এই অধিকারে কথা মনে পড়েনি ?”
রায়হান মিশুকে ছেড়ে দূড়ে দাঁড়াল। মিশুর চোখের অবাধ্য পানিগুলো গাল বেয়ে পড়তে থাকে। রায়হান হঠাৎ ঝড়ের গতিতে এসে মিশুকে জড়িয়ে ধরে কাতর গলায় বললো
” আমাকে ক্ষমা করে দিবি প্রথম আর শেষ বারের মতো প্লিজ ! আর কোনোদিন তোকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববো না। সেইদিনের জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিবি ? পুরো জীবন একসঙ্গে কাটাতে চাই। শুধু তোর সঙ্গে, প্লিজ আমাকে শেষ সুযোগ করেদে !!”
মিশু রায়হানের বুকে মুখ গুঁজে ঢুকড়ে কেঁদে উঠে। এতোদিনের অবাধ্য কান্না গুলো বেড়িয়ে আসতে চাইছে। ধীরে ধীরে মিশুর কান্না গুলো গভীর হতে থাকে। রায়হান মিশুর দুই গালে হাত রেখে অসহায় গলায় বলে
” আমাকে তোর করে নিবি ?” মিশু কাঁদতে কাঁদতে ঘন ঘন মাথা নেড়ে রায়হানের কথায় হ্যা উত্তর দেয়। রায়হান মুচকি হেসে মিশুকে নিজের বুকে আগলে নেয়।
রায়হানের কাধে মাথা রেখে মিশু তার এতোদিনের মনে জমিয়ে রাখা সব কথা, অভিমান, রাগ সব রায়হানের কাছে প্রকাশ করতে থাকে।
দরজার বাইরে থেকে এমন দৃশ্য দেখে অভিদ প্রশান্তির হাসি দিলো। তাকে নিয়ে ভাবতে গিয়েই তো রায়হান মিশুর থেকে অনেকটা দূড়ে চলে এসেছিলো। আবার দুজনকে এক করতে পেরে অভিদ মনে মনে প্রচণ্ড খুশি হলো।

পরদিন সকাল সকাল অভিদ আর রায়হান অফিসে চলে আসে। রায়হান নিজের কেবিনে চলে যায়। অভিদ নিজের কেবিনে বসে কিছু সিক্রেট ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ রায়হান ধুপধাপ পায়ে অভিদের কেবিনে ঢুকেই বলতে থাকে
” অভিদ সোহাদ রায়জাদার খবর শুনেছিস ?”
অভিদ শীতল চাহনি দিয়ে রায়হানের দিকে তাকায়। রায়হান চুপ মেরে গেলো। অভিদের চাহনি দেখে বুঝতে পারলো না এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো? রায়হান ভ্রু কুঁচকে বলে
” তুই এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো ? কি করেছি ?”
অভিদ এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে
” তুই কি কোনো ভিআইপি মানুষ ? ভিআইপি কেনো বলছি কোনো মন্ত্রি আমার অফিসে আসলেও আমার অনুমতি ছাড়া কেবিনে ঢোকে না আর তুই যেভাবে ঢুকছিস যেনো তোর জন্য আলাদা রুলস করে রেখেছি আমি !”
রায়হান মুখ বাঁকাল অভিদের কথায়। অভিদ আবার কড়া চোখে তাকাতেই রায়হান দরজার কাছে বাইরে গিয়ে দরজায় নক করে বলে
” ভেতরে আসবো স্যার ?”
অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” কাম ইন।” রায়হান ঢুকেই ধুপধাপ পায়ে অভিদের সামনে দাঁড়িয়ে উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে
” ভাই সোহাদ রায়জাদা তার বিডিতে আসার প্ল্যান পিছিয়ে নিয়েছে। মানে তিন মাস পর আসবে।”
অভিদ ল্যাপটপ দেখতে দেখতে বলে
” জানি আমি।” রায়হান অবাক হয়ে বলে
” তুই কিভাবে জানিস ?”
অভিদ বিরক্তকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে
” তুই যার থেকে পেয়েছিস সে আমারই লোক। আচ্ছা একটা কথা বল ! কালকে মিশুকে ফিরে পাওয়ার খুশিতে কি তুই তোর সব কাজের উল্টো পাল্টা করে দিচ্ছিস ? এমন হলে তো তোকে বনবাসে পাঠানো উচিত।” রায়হান থতমত খেয়ে বলে
” ত-তুই কি বলছিস এসব ? আমার কাজ আছে যাচ্ছি আমি।” রায়হান দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেলো কেবিন থেকে অভিদ তা দেখে আলতো হাসলো।
রায়হান নিজের কেবিনে এসে বসতেই তার ফোন বেজে উঠে। রায়হান মুখ ফুলিয়ে ফোন হাতে নেয়। স্ক্রিনের নাম দেখে রায়হান সাথে সাথে কল রিসিভ করে। রিসিভ করে মোবাইলের ওইপাশ থেকে কিছু কথা শুনে রায়হানের হাত অবশ হয়ে যায়। রায়হান দৌড়ে কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায়।
অফিসের সব এমপ্লয়িরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। রায়হান অভিদের কেবিনের ঢুকেই অভিদকে দাড় করিয়ে জড়িয়ে ধরে। অভিদ প্রথমে চমকে গেলেও পড়ে বিরক্ত হয়ে বলে
” আরে ভাই কি শুরু করেছিস তুই ? কাজ করতে দিবি তো নাকি ? তোকে দেখছি পাগলা গারদে পাঠাতে হবে এবার !”
রায়হান অভিদের কথা শুনেছে কিনা সে নিজেও জানে না। রায়হান খুশিতে আত্তহারা হয়ে গিয়েছে কি করবে বুঝতেও পারছে না। রায়হান খুশিতে হাসতে হাসতে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
” অ অভিদ কিভাবে বলবো আমি বুঝতে পারছি না। তর এতোবছরের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। মানে… কিভাবে বলবো আমি !”
অভিদ রায়হানের অবস্থা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে
” কি হয়েছে ?”
রায়হান কাপঁতে কাপঁতে শব্দ করে হেসে বলে উঠে
” ফুপিকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। শুধু ফুপি না আমাদের হারিয়ে যাওয়া পরিবারের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।” অভিদ অবিশ্বাস্য চোখে রায়হানের দিকে তাকালো।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..
চলবে~ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here