মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -৭+৮

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ০৭
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

রুহি ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো অভিদ তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। হুট করে এমন চাহনিতে রুহি ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে পেছতে নিলেই খাটের নিচে পড়ে যায়। অভিদ লাফিয়ে উঠে বসে রুহির কাছে গিয়ে দেখে রুহি চোখ মুখ কুঁচকে শুয়েই রয়েছে। অভিফ রুহির হাত ধরে শোয়া থেকে বসাতে বসাতে অস্থির হয়ে বলে
” কি হলো তোমার ? ব্যাথা পেয়েছো কোথাও ? চিৎকার দিলে কেনো তুমি ? দেখি ওঠো। ” অভিদ রুহিকে উঠিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে হাত পা দেখতে দেখতে বলে
” কোথায় ব্যাথা পেয়েছো তুমি ? কথা বলছো না কেনো ?”
রুহি কাঁদোকাঁদো চেহারা বানিয়ে বলে
” কি বলবো আমি ? আপনি ভূতের মতো তাকিয়েছিলেন কেনো ? আমি আপনাকে দেখে ভয় পেয়েই তো পড়ে গেলাম।” অভিদ শব্দ করে হেসে উঠে রুহির কথায়। রুহি মুখ ফুলিয়ে তাকায় অভিদের দিকে। অভিদ হাসতে হাসতে বললো
” তাই বুঝি ? আমি তোমার দিকে থাকিয়ে না থাকলে বুঝি তুমি আমাকে দেখতে ?”
রুহি ভেংচি কেটে বলে
” হুহ আসছে ! আমি কাউকে দেখি না। আমি কি আপনার মতো নাকি অন্যকারো দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবো ?”
অভিদ রুহির দিকে ঝুকে ভ্রু নাচিয়ে বললো
” তাই বুঝি ? আমি আমার বউকে দেখেছি এতে কার কি ? আমি চাইলে আমার বউকে কিস ও করতে পারি। ওয়ানা সি ইট ?”
রুহির চোখ বড়বড় করে তাকালো অভিদের দিকে। অভিদ ঠোঁট কামড়ে রুহির দিকে তাকায়। রুহি লজ্জায় মাথা নামিয়ে নেয়। অভিদ কিছুটা ফিসফিস করে বলে
” কি হলো টমেটো হয়ে গেলে কেনো ? তুমি চাইলে কিন্তু আমি কিস করতেই পারি।” রুহি লজ্জায় আরো নুয়ে যায়। রাগ দেখানো তো দূড় কথা মুখ দিয়ে কথা বের করার মতো অবস্থা খুঁজে পেলো না নিজের মধ্যে। অভিদ আবারও ঠোঁট কামড়ে হাসলো। অভিদ সোজা হয়ে দাঁড়ায় রুহিকে স্বাভাবিক করার জন্য বলে
” কেমন লাগছে এখন শরীর ?” রুহির নিচু স্বরে বলে
” ভালো।”
” ঠিকাছে তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি নিচে যাচ্ছি। আর…তুমি হাটতে পারবে তো ?”
রুহি মাথা নেড়ে বলে
” জী পারবো।” অভিদ রুহির হাত ধরে দাঁড় করিয়ে বলে
” কোথায় দেখি আমার সামনে হেটে দেখাও তো !” রুহি ভ্রু কুঁচকে বলে
” হেটে দেখাবো কেনো ? আপনি কি আমাকে দেখতে এসেছেন নাকি এভাবে হাটতে বলছেন ?” অভিদ চোখ রাঙিয়ে বলে
” বেশি কথা বলো তুমি। চুপচাপ হাটো আমার সামনে। আমি দেখতে চাই তোমার পায়ে ব্যাথা রয়েছে কিনা।” রুহি মুখ ফুলালো অভিদের কথা শুনে। অভিদের সামনে ধুপধাপ করে হাটতে থাকে। অভিদ তা দেখে ধমকের স্বরে বললো
” একটা থাপ্পড় দেবো ! এভাবে হাটছো কেনো ? আবার ব্যাথা পেতে যাও নাকি ?”
রুহির এবার প্রচণ্ড রাগ হলো। একবার হাটতে বলে আবার নিজেই ধমক দেয় !
রুহি রেগে বললো
” কি শুরু করেছেন আপনি? একবার হাটতে বলেন আবার নিজেই আমাকে ধমক দিচ্ছেন কেনো ?”
অভিদ রেগে বলে
” আমি কি তোমায় এভাবে হাটতে বলেছি? তোমার পায়ে ব্যাথা তুমি মেয়েদের মতো সুন্দর করে হাটবে তুমি এভাবে গুন্ডারের মতো হাটছো কেনো ?”
রুহি চেঁচিয়ে বলে উঠলো
” কি আমি গন্ডারের মতো হাটি ?” অভিদ রেগে বলে
” তুমি চেঁচাচ্ছো কেনো ? যাও ফ্রেশ হয়ে এসো তোমার খাবার টাইম হয়ে যাচ্ছে। গো ফাস্ট !”
রুহি রাগে ফুসফুস করতে করতে ওয়াসরুমে চলে গেলো ।
অভিদ নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে চলে যায়। নিচে এসেই দেখে রায়হান সোফায় বসে রয়েছে আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একজম সার্ভেন্টকে দেখে যাচ্ছে।
অভিদ ভ্রু কুঁচকে রায়হানের দিকে তাকায়। রায়হানের মতিগতি বুঝতে পারলো না অভিদ। তাই সোজা রায়হানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রায়হান অভিদকে দেখে ধেন ভাঙে রায়হানের। রায়হান মাথা তুলে ঠাট্টা স্বরে বলে
” কিরে তোর ঘুম ভাঙলো তাহলে ? আমি তো ভাবলাম আজকে উঠবি না আর।” অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” একদম কথা ঘোরানোর চেষ্টা করবি না। তুই ওই সার্ভেন্ট এর দিকে এভাবে তাকিয়ে রয়েছিলি কেনো ?”
রায়হান নিশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়। অভিদের সামনে দাঁড়িয়ে বলে
” এই সার্ভেন্টকে appointment করেছে কে ?”
অভিদ ভ্রু কুঁচকে বলে
” কেনো তুই করিস নি ?” রায়হান অবাক হয়ে বলে
” অদ্ভুত আমি কেনো করবো ? আমি কাউকে appointment করার আগে তার যাবতীর details আগে collected করি।” রায়হান কথা থামিয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকে। অভিদ দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” মানে কি ? এই মহিলা বলেছিলো তুই appointment করেছিলি তাই আমি আর কিছু বলিনি এখন তুই এসব বলছিস ?”
রায়হান উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠে
” হ্যা মনে পড়েছে। এই মহিলা তো আমাকে বলেছিলো তোর মিস্টার সিনিয়ার নাকি appointment করেছিলো একে। আর তোকে নাকি ওনার সব details দিয়ে দিয়েছিলো ই-মেইল করে।”
অভিদ দাঁত কিড়মিড় করে বলে
” সব মিথ্যা কথা। বুঝে গিয়েছি আমি কি করতে চেয়েছিলো ওরা।”
রায়হান কপাল ঘষতে ঘষতে বলে
” তুই কালকে ঠিকই ধরেছিলি জেউ ইচ্ছে করেই কারেন্ট আর আইপিএস মেইন সুইচ অফ করেছিলো। আমি চেক করে দেখেছি সেই মানবটা এই মহিলাই ছিলো তাই তো আমি ওকে দেখছিলাম। ভাবছিলাম তুই আসলে তোকে জিজ্ঞেস করবো।”
অভিদ এবার সরু দৃষ্টি দিয়ে সেই মহিলা সার্ভেন্ট এর দিকে তাকায়। তিনিও কেমন আড়চোখে তাকাচ্ছেন বারবার। অভিদ দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” একে আজকে গোডাউনে নিয়ে যাবি। অফিস শেষে আমি সেখানেই যাবো।” রায়হান মাথা নেড়ে বলে
” ঠিকাছে। কিন্তু রুহিকে কি আবারও কালকের মতো একা রেখে যাবি ?”
অভিদ রায়হানের প্রশ্নে কেমন জানি কোণা চোখে রায়হানের দিকে তাকালো। রায়হান সেটা খেয়াল করে ভ্রু কুঁচকে বলে
” কি হলো ওভাবে তাকাচ্ছিস কেনো তুই ?”
অভিদ ঠোঁটে বাকা হাসি ঝুলিয়ে বলে
” আজকে স্পেশাল কেউ একজন আসবে।”
রায়হান অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অভিদের দিকে। স্পেশাল কেউ আসবে আর সেটার ব্যাপারে রায়হান কিছুই জানে না ভেবে অনেকটা অবাক হলো রায়হান। চোখ বড়বড় করে উৎসাহিত হয়ে বলে
” কে আসবে রে ? আমাদের বাড়িতে তো স্পেশাল মানুষ হয়ে আসার মতো কেউ নেই তাহলে কেই আসবে ?” অভিদ পকেটে হাত গুঁজে বললো
” আছে কেউ একজন। আসলেই দেঝতে পাবি। রুহি নিচে আসলে গার্ডেনে পাঠিয়ে দিস।” অভিদ কথা শেষ করে শিশ বাজাতে বাজাতে বাগানের দিকে চলে গেলো। রায়হান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাতে থাকে।

রায়হান টিভি ছেড়ে বসে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে দেখলো রুহি নেমে আসছে। রায়হান রুহিকে দেখে রুহির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। রায়হান আচমকা সামনে আসায় রুহি ভয় পেয়ে গেলো। রায়হান রুহিকে দেখে বুঝতে পারলো ভয় পেয়েছে তাই বললো
” ভয় পেয়েছো ?” রুহি ঢোক গিলে মাথা নাড়ালো। রায়হান হেসে বলে
” আমি তোমার ভাইয়ের মতোই ভয় পেয়ো না। আমি রায়হান অভিদের ভাইয়ের মতোই।”
রুহি মুচকি হাসি দিলো। রায়হান গার্ডেনের দিকে ইশারা করে বলে
” অভিদ তোমাকে বাইরে যেতে বলেছে তুমি যাও।”
রুহি আলতোভাবে মাথা নাড়িয়ে গার্ডেনের দিকে চলে গেলো। রায়হান হালকা হাসি দিয়ে রুহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো।
রুহি গার্ডেনের দিকে আসতেই দেখতে পেলো পুরো জায়গাটা বিভিন্ন দেশি, বিদেশি ফুল দিয়ে ভর পুর হয়ে আছে। অন্যপাশে অনেক ফল গাছ রয়েছে। কয়েকটা গাছে রঙিন ফলে ভরপুর হয়ে আছে। সব কিছু দেখে রুহির মন ফ্রেশ হয়ে গেলো। রুহি সব কিছু দেখতে দেখতে হাটতে থাকে। ধীরে ধীরে অনেক সামনে এগিয়ে আসে। আরো সামনে এগিয়ে আসতেই দেখতে পেলো একটা বড় সুইমিংপুল পাশে তাকাতেই রুহির চোখ ছড়গাছ হয়ে গেলো। অভিদ খালি গায়ে পুশ আপ করছে। রুহির হিচকি উঠে গেলো অভিদকে দেখে। শব্দ শুনে অভিদ রুহির দিকে তাকালো। রুহি সাথে সাথে পেছন ঘুরে গেলো। অভিদ বাকা হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়াল। টাওয়াল আর ওয়াটার বোতল নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। রুহি পা চালিয়ে চলে যেতে নিলেই অভিদ পেছন থেকে বলে উঠলো
” স্টপ হেয়ার রুহি।” রুহি তার পা চালানো থামিয়ে দিলো। রুহির হিচকি থামার নামই নেই। অভিদ রুহির সামনে দাঁড়িয়ে হাতের বোতল এগিয়ে দিতেই রুহি কেড়ে নিয়ে ঢকঢক করে অর্ধেক পানি খেয়ে নেয়। অভিদ হুট করে রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ঠোঁট চেপে হেসে বলে
” রুহি ! ইউ লুকিং সো হট এন্ড কিউট।”
অভিদের কথা রুহির কর্ণপাত হতেই রুহির মুখ থেকে সব পানি ফিচকে বেড়িয়ে গেলো। রুহি অনবরত কাশতে থাকে।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ০৮
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

অভিদ হুট করে রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ঠোঁট চেপে হেসে বলে
” রুহি ! ইউ লুকিং সো হট এন্ড কিউট।”
অভিদের কথা রুহির কর্ণপাত হতেই রুহির মুখ থেকে সব পানি ফিচকে বেড়িয়ে গেলো। রুহি অনবরত কাশতে থাকে।
অভিদ আবারও হেসে রুহির মাথায় আলতো ভাবে চাপড় দিতে দিতে ঠাট্টার স্বরে বলে
” এতো তাড়াহুড়ো কিসের তোমার ? রোমেন্স তো করতেই পারবো আমরা। রোমেন্স এর জন্য সময় তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না!”
রুহির কাশি থামার বদলে আরো বেড়ে গেলো। অভিদ এবার সিরিয়াস হয়ে রুহির কাশি থামানোর চেষ্টা করতে থাকে। রুহির পিঠ ঘষতে থাকে। কিছুক্ষণ পর রুহির স্বাভাবিক হতেই অভিদ বলে
” ঠিকাছো তো ?”
রুহি আড়চোখে অভিদের দিকে তাকায়।! অভিদের কথার উত্তর দিলো না। অভিদ তা দেখে রেগে গেলো। রুহিকে বাজিয়ে বললো
” কথা বলছো না কেনো তুমি ? তুমি কি সত্যি আমার থেকে কিস চাইছো ? আমার কিন্তু কোনো আপত্তি নেই !”
অভিদের কথা শুনে রুহির কান গরম হয়ে গেলো। রুহি লজ্জায় নুয়ে রইলো। অভিদ তার দূরত্ব ঘুচিয়ে আরো কাছে এসে দাঁড়ালো। বাকা হাসি দিয়ে ফিসফিস গলায় বলে
” তুমি তৈরি তো ?” রুহি একেবারে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছে। অভিদ সামনে থাকায় না পারছে লড়তে আর না পারছে দৌড়ে চলে যেতে। হঠাৎ অভিদের পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠল। অভিদ আর রুহি দুজনই পেছনে ঘুরে তাকালো। সার্ভেন্টকে দেখে রুহি ছিটকে কিছুটা দূড়ে সরে এলো। অভিদ ভ্রু কুঁচকে সেই সার্ভেন্ট এর দিকে তাকিয়ে থাকে। সার্ভেন্ট টা রুহি আর অভিদের দিকে বারবার কেমন করে তাকাচ্ছে সেটা অভিদ খেয়াল করে গম্ভীর গলায় বললো
” কি চাই তোমার ? এখানে কি করছো ? আর এভাবে ঘুরে ঘুরে কি দেখছো তুমি?”
সার্ভেন্টটি থতমত খেয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বললো
” সরি স্যার আমি আপনাদের ব্রেকফাস্ট এর জন্য ডাকতে এসেছিলাম। আপনাদের ব্রেকফাস্ট অনেক আগেই রেডি।”
অভিদ রেগে কিছুটা একটা বলতে নিয়েও থেকে গিয়ে বলে
” তোমার নাম কি ?” মহিলাটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
” র…রিমি।”
অভিদ রেগে বললো
” তো রিমি তোমাকে আমি কি বলেছিলাম যে, ব্রেকফাস্ট হলে আমার কাছে বলে যাবে ?” রিমি মাথা নিচু করে নেয় ঢোক গিলে ডানে বায়ে মাথা নাড়িয়ে না বললো। অভিদ রেগে কিড়মিড় করে বলে
“নেক্সট টাইম আমার কাজে বাধা দিলে তোমাকে ছাড়বো না আমি। আমি কি আমার প্রাইভেট টাইমও স্পেন্ড করতে পারবো না তোমার জন্য ?”
অভিদের ধমক শুনে রুহি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। রিমির কপাল বেয়ে ঘাম ঝরতে থাকে। রিমি আবারো কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠে
” সরি স্যার আর হবে না। আর কখনো এমন হবে না আজকের মতো মাফ করে দিন !”
অভিদ চেঁচিয়ে বলে
” গেট আউট ফ্রম হেয়ার !” রিমি দৌড়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। রুহি ঢোক গিলে অভিদের দিকে তাকালো। অভিদ রাগে অগ্নির মতো লাল হয়ে আছে। অভিদকে দেখে রুহি কিছু বলার মতো সাহস পেলো না। অভিদ হঠাৎ রুহির কাছে এসে রুহির হাত চেপে ধরে। রুহি ভয় পেয়ে চোখ বড়বড় করে নেয়। লোজটা কি তাকেও এখন বকবে ? ভেবেই রুহির হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। রুহিকে অবাক করে দিয়ে অভিদ হুট করে রুহিকে কোলে তুলে নিলো। রুহি ভয় পেয়ে অভিদের গলা জড়িয়ে ধরে। অভিদ রুহিকে নিয়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
এদিকে রুহি অভিদের খালি গায়ের সাথে লেপ্টে থাকায় খুবই লজ্জা পেতে থাকে। তবে মুখ দিয়ে কোনো কথা বলতে পারলো। অভিদ রুহিকে নিয়ে সোজা ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসিয়ে নিজে হনহনিয়ে রুমে উপরে চলে যায়। রুহি অবাক হয়ে অভিদের চলে যাওয়ার পথ চেয়ে তাকিয়ে থাকে। রায়হান ব্রেকফাস্ট করছিলো অভিদকে এভাবে যেতে দেখে নিজেও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।

রায়হান রুহির কাছে এসে বলে
” অভিদের কি হয়েছে রুহি ?” রুহি রায়হানের দিকে তাকিয়ে আলতো স্বরে বলে
” রিমি নামের একজন সার্ভেন্ট গার্ডেনে গিয়েছিলো তাই উনি রেগে গিয়েছেন।” রায়হান কিড়মিড় করে সেই মেয়েটার দিকে তাকালো। রিমি মাথা নিচু করে কাজ করতে থাকে। হঠাৎ অভিদের বলা কথা মনে পড়তেই রায়হান বলে
” আচ্ছা আজকে বাড়িতে কি কেউ আসবে নাকি ? মানে সেই সম্পর্কে তুমি কি কিছু জানো ?”
রুহি ভ্রু কুঁচকে বলে
” কোথায় না তো !” রায়হান আবারও কিছু বলার জন্য প্রস্তুতি নিতেই সিরি দিয়ে নামার ধপাধপ শব্দ শুনতে পায়। সবাই সেদিকে তাকিয়ে দেখে অভিদ এভাবে নামছে। রুহি আগেই অভিদের শার্ট খেয়াল করলো। পড়নে শার্ট দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। অভিদ ধপাধপ পায়ে রিমির সামনে এসে দাঁড়াল। হাতে থাকা একটা খাম রিমির সামনে ছুড়ে রেখে গম্ভীর গলায় বলে
” এখানে তোমার এই মাস সহ আগামী তিন মাসের সেলারি রয়েছে। কাজ না পাওয়া পর্যন্ত তোমার কম হলেও প্রায় ছয় মাসের মতো চলে যাবে এই টাকায়। আজকের পর এই বাড়ির সামনে পা রাখবে না। got it ?”
রিমি কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়ালো। অভিদের মুখের উপর কিছু বলতে পারলো না কারণ কিছু বললেই অভিদ কিছু করে বসবে। রিমি তাদের কমন রুমে চলে যায় যেখানে সব লেডিস সার্ভেন্টরা নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র রাখে। রিমি চলে যেতেই অভিদ রায়হানকে চোখের ইশারায় কিছু বললো যেটা রুহি খেয়াল করলো। রায়হান এখান থেকে চলে যেতেই রুহি প্রশ্ন করে বলে
” আপনি রায়হান ভাইয়াকে কি ইশারা করেছেন ?”
অভিদ শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রুহির দিকে। পরে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে
” গার্ডেনে তো কিছু করা হলো না তাই বললাম আমাদের রুমটা বাসরের মতো সাজিয়ে দিতে যাতে আর গার্ডেনের প্রয়োজন না হয়।”
রুহি হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভিদের দিকে। অভিদের এমন উত্তর শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না রুহি। রুহির চেহারা দেখে অভিদ ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলে
” ঠিক করেছি না কাজটা ?” রুহির গাল দুটো লাল গোলাপের রঙ ধারণ করে। অভিদ মুচকি হাসি দেয় রুহিকে দেখে। ব্রেকফাস্ট সার্ভ হতেই অভিদ রুহিকে খাইয়ে দিতে থাকে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে অভিদ টিস্যু দিয়ে নিজের মুখ মুছতে মুছতে বলে
” আমি অফিসে যাচ্ছি। আজকে একদম ভয় পাবে না। আজকে দুপুরের আগে হয়তো মিশু চলে আসবে।” মিশুর নাম শুনেই রুহির চোখ মুখ চকচক করে উঠে। উৎফুল্ল কন্ঠে বলে
” সত্যি ? মিশু আসবে ?”
অভিদ হালকা হেসে বলে
” হুম। তবে একটা কথা মাথায় রেখো বাড়ির বাইরে পা রাখলেই তোমাদের সাথে খারাপ কিছু হবে। মাথায় রাখবে কথাটা।” অভিদ গম্ভীর গলায় কথাটা বলে তার বক্তব্য শেষ করে। রুহি ঢোক গিলে বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ায়। অভিদ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে রুহির মাথা ধরে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে
” ভালো মেয়ের মতো থাকবে আর বেবির খেয়াল রাখবে। এছাড়া কোনো দরকার হলে বা ভয় লাগলে আমাকে ফোন করবে। ওকে ?” রুহির আবারও মাথা নেড়ে হ্যা বলে। অভিদ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।
রুহি ছুটে রুমে চলে গেলো। মিশু আসার কথা শুনে রুহি অনেক খুশি হয়ে গিয়েছে। এই বাড়িতে তো শুধু সার্ভেন্ট আর বাড়ি ভর্তি বডিগার্ড ছাড়া আর কেউ নেই তাই সবারই একা একা লাগবে।
কয়েক ঘন্টা পর রুহি গেটের বাইরে গাড়ি দেখে রুহি দৌড়ে ছুটে গেলো নিচে
রুহি এতোক্ষণ ব্যালকনিতে বসে বাইরে তাকিয়ে ছিলো আর মিশুর আসার অপেক্ষা করছিলো।
মিশু গাড়ি থেকে নেমেই রুহিকে দেখতে পেলো। মিশু দৌড়ে রুহিকে জড়িয়ে ধরে অভিমানী স্বরে বলতে থাকে
” কেমন আছিস আমার বনু ? তোকে ছাড়া কতো একা একা লাগছিলো আমার তুই জানিস ? কিভাবে তুই আমাদের ছেড়ে চলে এলি? একটা বার ফোনও করলি না তুই।”
রুহি মলিন চেহারায় বলে
” সরি মিশু। আসলে বাড়ির সবার উপর রাগ হয়েছিলো তাই আর ফোন করা হয়নি। রাগ করিস না প্লিজ !”
মিশু রুহিকে ছাড়িয়ে মুচকি হেসে বলে
” রাগ করিনি। আজকে চলে এসেছি যখন তখন তো আর কোনো রাগারাগি নেই। আজকে ইচ্ছেমত মজা করবো আমরা।” রুহি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে মিশুকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। আর একজন বডিগার্ড এসে মিশুর লাগেজ দিয়ে যায়।

হাত, পা বেধে রিমিকে আটকে রাখা হয়েছে। রিমি অনবরত কেঁদে যাচ্ছে। কে তাকে তুলে এনেছে সে জানে না তাই ভয়ে কাঁদছে। দরজা খোলার শব্দ
শুনে রিমি মাথা তুলে সামনে তাকালো। হঠাৎ রিমির চোখে এক ঝাক আলো এসে পরে। রিমি চোখ বন্ধ করে নেয় আলোর প্রভাবে। আবারও চোখ খুলে তাকাতেই অভিদ, রায়হান আর কয়েকজন বডিগার্ডকে দেখতে পেলো। রিমি অবাক হয়ে যায় ওদের দেখে। অভিদ চেয়ার টেনে বসে হাতে গান ঘুরাতে ঘুরাতে বলে
” তো বল তোকে কে পাঠিয়েছে। আর এবার কোন ক্ষতি করতে পাঠিয়েছে ?” রিমি তরতর করে ঘামতে থাকে। অভিদ দাঁতেদাঁত চেপে বলে উঠে
” কথা বলছিস না কেনো ? তুইও কি বাকিদের মতো উপরের বাসিন্দা হতে চাস ?”
রিমি হঠাৎ ভয়ে কেঁদে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলে
” না আমার কিছু করবেন না দয়া করে। আমাকে আপনার মিস্টার সিনিয়ার রায়জাদা পাঠিয়েছিলো। আপনার সব তথ্য ওনাকে দেওয়ার জন্য। আমি এতোদিন ওনার কথা মতোই কাজ করছিলাম। দয়া করে আমার কিছু করবেন না… আহ।”
রিমির কথার শেষ হওয়ার আগেই অভিদ রুহির হাত বরাবর শুট করে বসে। রিমি ব্যাথায় কাতরাতে থাকে।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..
চলবে~ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here