মায়ার বাঁধন পর্ব -১১+১২

#মায়ার_বাঁধন🍂
১১.
বেশ হইহই করে ব্যাগপত্র গোছাতে ব্যস্ত নীরা। এতক্ষণের দুশ্চিন্তা মুহুর্তেই আনন্দ উচ্ছ্বাস হয়ে ধরা দিয়েছে তার নিকট। কতগুলো দিন পর নিজের বাড়িতে যাবে। চেনা বাড়ি, চেনা মানুষজন, নিজস্ব সেই ঘরটি। সব মিলিয়ে এক আবেগী অনুভূতি। তুরান তৈরি হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন বসে বসে ফোন স্ক্রলিং করছে। অপেক্ষা নীরার জন্য। আধঘন্টা হয়ে গেছে অথচ নীরা এখনো তৈরি হতে পারে নি। অবশেষে তুরান বিরক্ত হয়ে বলল,

-“এক রাতেরই তো ব্যাপার। এতো আটঘাট বাঁধার কী আছে? আধঘন্টা ধরে তৈরি হচ্ছো আর কত সময় নেবে?”

তুরান পুনরায় ফোনে মনোযোগী হয়। নীরা এক ভেংচি কেটে নিজের কাজে মন দেয়। আর যাই হোক এই খুশি খুশি আমেজটায় তুরানের সঙ্গে ঝগড়া করে কিছুতেই মুড খারাপ করতে চায় না।

সবই তো ঠিক ছিল কিন্তু বিপত্তি বাঁধল অন্য জায়গায়। যখন নীরা কামিজের চেইন আটকাতে পারছিল না। সচরাচর কামিজের পেছনে চেইন সে লাগায় না। কারণ একা হাতে চেইনের লাগাল পাওয়া কঠিন। কিন্তু বিয়ের মৌসুমে তার অগোচরেই দর্জি চেইন লাগিয়ে ফেলেছে। এখন তো পড়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাড়াহুড়ো করে তৈরি হতে গিয়ে সেখান থেকে একটি ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকেছে সে। ভুলেই গিয়েছিল এই জামাটাতে চেইন আছে। এখন সম্পূর্ণ ড্রেস পড়ার পড়ে মনে পড়েছে। পুনরায় ড্রেস চেঞ্জ করে আবার ড্রেস এনে পড়তে বেশ সময় লেগে যাবে। সেই সঙ্গে রেগে যাবে তুরান। কিন্তু এখন উপায়?

—–
বেশ সময় নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো নীরা। কেমন কাচুমাচু ভঙ্গিতে এগিয়ে আসছে সে। কাঁধ জুড়ে ওড়না চাপিয়ে রেখেছে। ওয়াশরুমের দরজার শব্দে একপল সেদিকে তাকাল তুরান। নীরার এমন অবস্থা দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলল। পরপরই কর্কশ গলায় বলল,

-“এখনো এমন পিনপিন করে চললে যেতে যেতে তো দুপুর গড়িয়ে যাবে। নাকি তোমার যাওয়ার ইচ্ছেটাই নেই। একবার শুধু বলে দাও তারপর দেখো এখনি সব ছেড়ে ছুড়ে কীভাবে একটা জম্পেশ ঘুম দেই।”

নীরা আঁতকে উঠল। না না বলে আর্তনাদ করল। পরপরই ধীর পায়ে এগিয়ে এসে তুরানের সম্মুখে দাড়িয়ে পড়ল। দু-হাত সমানে কচলে যাচ্ছে সে। তুরান পুনরায় সেদিক একপল তাকিয়ে তীব্র বিরক্তি নিয়ে বলল,

-“আবার কী হলো…..?”

নীরা আমতা আমতা করল। বলল,

-“ইয়ে মানে, আ আমার…. ”

-“হ্যাঁ তোমার কী?”

-“জামার চেইন টা……. ”

তুরানের কুঁচকানো ভ্রু প্রসারিত হলো। নীরাকে আগামাথা একপল দেখে নিয়ে সোজাসাপ্টা জবাবে বলল,

-“পেছন ঘোরো।”

নীরা কাচুমাচু করে পেছন ঘোরে। আঁটসাঁট বেঁধে দাড়িয়ে রয়। যেন তার সঙ্গে ভ’য়ং’ক’র কিছু ঘটতে চলেছে। তুরান ভালো ভাবে দেখে নেয় নীরার পৃষ্ঠদেশ। কিন্তু তেমন কিছুই বোধগম্য হয় না। ওড়নার আস্তরণে পুরো পৃষ্ঠ ঢেকে রাখা। তুরান বুঝল তাকে আন্দাজ মোতাবেক কাজ করতে হবে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিজের ডান হাত কিছুটা এগিয়ে নেয় সে। পরপরই লক্ষ্য করল তার ধীর গতিতে এগোনো হাতটি থরথর করে কাঁপছে। এ কেমন অনুভূতি। নীরাকে বউ হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও তার অভ্যন্তরিণ আ’ত্মা ঠিক জানে নীরা তার বউ। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে খোদা তায়ালা এমনিতেই এক ঐশ্বরিক টান সৃষ্টি করে দেন। যার ফলে সম্পূর্ণ অজানা অচেনা মানুষটির সঙ্গেও গড়ে ওঠে এক সুদীর্ঘ মায়ার বাঁধন। সে বাঁধনে আবদ্ধ হয়ে মানুষ পার করে দেয় গোটা জীবন। তৈরি করে সুখের সংসার। নীরার প্রতিও তেমনই টান অনুভব করে তুরান। শত হোক বয়সের দিক দিয়ে সে এক তরতাজা-টাগরা যুবক। সহধর্মিণীর সঙ্গে একই ছাদের নিচে থেকেও যে কামবাসনা জাগ্রত হবে না এমনটা কখনোই হতে পারে না। তুরানেরও হয়নি। গভীর রাতে যখন নীরা পরম নিশ্চিন্তে বাচ্চা শিশুর মতো ঘুমিয়ে থাকে অজান্তেই ছটফটিয়ে ওঠে তখন তুরান। বিছানার এপাশ ওপাশ ধরফর করেও যখন মেলে না প্রশান্তির দেখা তখন বাধ্য হয়ে উঠে চলে যায় বেলকনিতে। ডিভানে বসে শেষ করে একের পর এক সিগারেটের প্যাকেট। ইদানীং প্রায় রাতই তার এভাবে কাটছে। তবে তা সম্পূর্ণ নীরার অগোচরে। এখনই সে এ পথে পা বাড়াতে চায় না। নিজেকে সময় দিতে চায়৷ নীরাকে পুরোপুরি বুঝতে চায়। পূর্ণাঙ্গ ভালবাসায় আবদ্ধ হতে চায়। তারপরই না হয় পূর্ণতা পাক তাদের সম্পর্ক। ততদিন না হয় হোক অপেক্ষা। অপেক্ষার ফল সর্বদাই সুমিষ্ট হয়ে থাকে।

দীর্ঘক্ষণ পরেও যখন তুরানের থেকে কোনো রেসপন্স এলো না তখন নড়েচড়ে উঠল নীরা। মিনমিনে কন্ঠে বলল,
-“লে..লেট হচ্ছে।”

সম্ভিৎ ফিরে পেল তুরান। ছোট্ট করে ‘হু’ বলে এগিয়ে গেল পুনরায়। নিজেকে সর্বস্ব শক্ত করে নীরার ওড়নার নিচ দিয়ে হাত গলিয়ে দিল। নিমেষেই হাতে পেয়ে গেল চেইনের ঘাট। খুব সন্তপর্ণে তুলে আটকে দিল সেটা। নীরা ঠায় দাঁড়িয়ে। তুরানের ভারী নিশ্বাস পড়ছে তার কাঁধ বরাবর। শিউরে ওঠছে ক্ষণে ক্ষণে। দু’জন দু’জনের নিশ্বাসের গতি গুণতে পারছে যেন কিন্তু বেশিদূর এগোনোর সা’হ’স বা ইচ্ছে কোনটিই কারোর নেই। দু’জনেই রয়েছে এক তুমুল অপেক্ষায়। তুরান রয়েছে নিজেকে বোঝার অপেক্ষায় আর নীরা রয়েছে তুরানের সদ্বুদ্ধি ফেরার অপেক্ষায়।

কাজ শেষে এক মুহূর্ত দাড়াল না তুরান। জোর কদমে ঘর ছাড়ল সে। যেতে যেতে শুধু বলে গেল, ‘অপেক্ষায় আছি।’
ব্যস,পরপরই উধাও হলো সে। সজ্ঞানে ফিরে নীরাও ঝটপট লেগে পড়ল বাকি গোছগাছ টুকু সেরে নিতে। কিন্তু পারছে কই? ক্ষণে ক্ষণে লজ্জায় রক্তিম হয়ে আঁচলে মুখ ঢেকে মৃদু হাসছে।

—–
লং-টার্ম জার্নি ড্রাইভারের সঙ্গ আবশ্যক। বাড়ির বিশ্বস্ত ড্রাইভার শফিক সঙ্গে আছে। ড্রাইভ করছে আপনমনে। তার পাশের সীটে বসেছে তুরান। তার গভীর মনোযোগ ফোন অব্দি সীমাবদ্ধ। পেছনের সীটে বসেছে হিয়া,টিয়া আর নীরা। হিয়া বসেছে মাঝে। তার দুইপাশে দুইজন। টিয়া ও নীরা। নীরা ইচ্ছাকৃত জানালার সাইডে বসেছে। লং-টার্ম জার্নিতে মাঝেমধ্যে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বমি পায়। শরীর ফুরফুরে রাখতে তখন বাহিরের খোলা হাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আর টিয়া সে তো বরাবরের বিচ্ছু। জানালার সাইডে ছাড়া সে কখনোই বসবে না। এটা নিয়ে স্কুল পিকনিকে যাওয়ার সময় বাসে বসে বেশ কয়েকবার হট্টগোল বাধিয়েছে। মোট কথা জানালার সাইড তার চাইই চাই। শুরুতে সবাই আপত্তি করলেও এখন সকলেই জানে জানালা যেখানে টিয়া সেখানে। ক্লাস রুমে বসেও এটাই করে সে।

জানালার সাইডে বসে একহাত বাহিরে বের করে গুনগুনিয়ে গান গাইছে টিয়া। অপর পার্শ্বে বসে নীরা আপনমনে দেখছে প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য। সীটে মাথা এলিয়ে দিয়ে বেশ উপভোগ করছে প্রকৃতির বাহারি সাজসজ্জা। হিয়া মাঝে বসে ফোন স্ক্রল করছে। সে একেবারে শান্তশিষ্ট প্রকৃতির মেয়ে। হৈ হুল্লোড়, কোলাহল থেকে দূরত্ব মেপে চলে। সর্বদাই শান্ত থাকা তার স্বভাব। ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে। টিয়া যতটা চঞ্চল হিয়া ঠিক ততটাই শান্ত। একজনে আগুন হলে আরেকজন তবে পানি। পাঁচ মিনিটের বড় হবার সুবাদে হিয়া সর্বদাই টিয়াকে শাসনে রাখে। টিয়ার করা ছেলেমানুষী গুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়। ভালোওবাসে প্রচুর বোনকে।

হিয়া ফোন ক্রল করতে করতে সটান হয়ে বসে। ফোন দেখতে আর ভালো লাগছে না। তাই ফোনটা অফ করে আড়মোড়া ভেঙে পাশ ফিরে তাকায়। অকস্মাৎ চমকে ওঠে সে। কম্পিত কণ্ঠে আর্তনাদ করে বলে ওঠে, ‘টিয়ায়ায়ায়া।”
#মায়ার_বাঁধন🍂
১২.
খুব করে টিয়ার মাথাটা বারকয়েক ঠেসে দিল হিয়া। মেয়েটার জন্য তার একদন্ড শান্তি নেই। টিয়াকে প্রতি সে যতটা যত্নবান নিজের প্রতিও সে কখনোই ততটা নয়। বোনটার একটু কিছু হলেও প্রাণপাখি যেন উড়ে যায় তার। এই তো একটু আগেই যখন সে ফোনে অধৈর্য হয়ে পাশ ফিরে তাকালো টিয়া তখন দিব্বি এক হাতের সঙ্গে সঙ্গে এবার মাথাটাও জানালা থেকে বাহিরে বের করে দিয়েছে। মুহূর্তেই আ’ত্না কেঁপে ওঠে হিয়ার। চলন্ত গাড়ি। মাঝামাঝি যানবাহন সম্পন্ন রাস্তায় কেউ এমন করে? যদি কিছু অঘটন ঘটে যায় তখন? পরক্ষণেই আঁতকে উঠে টিয়াকে টেনে ভেতরে নিয়ে আসে হিয়া। টিয়ার মাথাটা দু-হাতে ধরে ইচ্ছে মতো কয়েকটা ঠাসা দেয়। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,

-“একটুও শান্তি দিবি না আমায়? এত বড় ধাড়ি মেয়ে হয়ে কিনা বাচ্চাদের মতো আচরণ করছিস। কবে আক্কেল হবে তোর?”

টিয়া ফুঁসে ওঠে। জোরালো কন্ঠে বলে,
-“কী করেছি আমি?”

হিয়া এবারে ছোট্ট করে এক চ’ড় বসিয়ে দেয় টিয়ার গালে। ক্রোধে কটকট করে বলে,
-“গাঁ’ধি কোথাকার। এখনো বুঝতে পারছিস না তুই কী করেছিস? জানালা দিয়ে ওভাবে ঝুলে ঝুলে স্বপ্নে ভেসে বেড়ালে কী কাজ হবে? যখন তখন যে কোনো বড় দূর্ঘটনা ঘটতে সময় নেবে না নাকি? সে খেয়াল কী আদৌ তোর মধ্যে আছে?”

টিয়া অসহায় ফেসে তাকিয়ে পড়ল। ঠোঁট উল্টে বলল, ‘সরি।’ পরক্ষনেই নীরার কথায় সে কিছুটা জেগে ওঠে।

-“থাক না হিয়া ছোট তে বুঝতে পারেনি। এভাবে বকাঝকা করো না।”

নীরার কথায় টিয়া আহ্লাদী কন্ঠে বলল,
-“দেখেছ তো ছোট ভাবি মাত্র পাঁচ মিনিটের বড় হয়ে কীভাবে আমাকে বকাঝকা করে? এমন ভাব মনে হয় যেন ও আমার পাঁচ মিনিট নয় পাঁচ বছরের বড়।”

হিয়া চোখ গরম করে তাকালো। টিয়ার মাথাটা পুনরায় আরেক ঠাসা দিয়ে বলল,

-“পাঁচ মিনিট হোক বা পাঁচ বছর, বড় তো বড়-ই হয়। সত্যিটা মানতে শিখ।”

টিয়া মুখ ভেংচি কেটে পুনরায় বাহিরে দৃষ্টি দেয়। তবে এবারে আর হাত,মুখ বাহিরে দেয় না। চুপটি করে বসে আছে। নীরা এতক্ষণে পড়ে মৃদু আওয়াজে হেসে উঠল। হিয়াও হাসল ওর সঙ্গে। ফ্রন্ট সিটে বসা তুরানও এক পল লক্ষ্য করে নিয়েছে তার পিচ্চি বউয়ের প্রাণবন্ত হাসি।

—–
বাড়ি পৌঁছতে প্রায় দুপুর গড়িয়ে যায়। গাড়ি থেকে নেমেই নীরা কেমন এক অন্য নীরা হয়ে উঠল যেন। সবকিছুই ঠিক ছিল কিন্তু তুরানের চরম বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়াল নীরার চোখের পানি। এসে থেকেই মা – চাচিদের সঙ্গে কান্না জুড়ে দিয়েছে। এদিকে যে জামাই দাড়িয়ে রয়েছে সে খেয়াল কী কারো আছে? তখনই তুরানের নিকট এগিয়ে এলেন নীরার বাবা হাশিম শিকদার। তুরানকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

-“এসো বাবা ভেতরে এসো। দেখ না তোমার শ্বাশুড়ি মেয়েকে পেয়ে কেমন বাচ্চা হয়ে গেছে। জামাই যে এখনো বাহিরে দাড়িয়ে সে খেয়াল কী তার আছে?”

তুরান মৃদু হেসে শুধু বলল, “ইট’স ওকে।”

পরপরই পেছন থেকে হাজির হলো হিয়া-টিয়া। হিয়া সূক্ষ্ম হেসে সালাম জানাল হাশিম শিকদারকে। কিন্তু টিয়া সে তার ননস্টপ বকরবকর চালু করে দিয়েছে। বলছে,

-“আরে আঙ্কেল শুধু ওদিকে দেখলে হবে? এদিকেও তো দেখুন। আমরাও তো এসেছি না। এসব বড় বড় ছেলেমেয়ে বাতিলের খাতায় ফেলে আমাদের মতো কচি বাচ্চাদের নিয়ে ভাবুন।”

হাশিম শিকদার শব্দ করে হেসে দিয়ে টিয়াকে কাছে টেনে নিলেন। বাধ্যতার সহিত মাথা নুয়িয়ে বললেন, “অবশ্যই, অবশ্যই।”

আড়াল হতে টিয়ার কথাগুলো শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেললো নয়ন। সে নীরার কাছেই আসছিল কিন্তু ওদের দেখে চেপে গেছে। হাজার হোক নীরার সম্মুখে পড়া মানে আবেগে কেঁদে দেওয়া শিওর কিন্তু টিয়ার সম্মুখে কাঁদা মানে নিজের পায়ে নিজেই কু’ড়া’ল মা’রা। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে যেভাবে এসেছিল ঠিক সেভাবেই প্রস্থান করল নয়ন। সুমন ঠিকই এলো। সে বেশ শক্তপোক্ত ছেলে। বোনকে কীভাবে সামলাতে হয় সে জানে সঙ্গে নিজেকেও। সুমন এগিয়ে গিয়ে তুরান সহ হিয়া-টিয়ার সঙ্গে সূক্ষ্ম আলাপ সেরে নিল। অগত্যা চলে গেল বাড়ির বাহিরে। হিয়া একপল পেছন ঘুরে দেখে নিল সদ্য যৌবনে পা রাখা কিশোর ছেলেটিকে। তার কিশোরী মন অবলীলায় নানান কথাই তখন ভাবতে মত্ত।

—–
কয়েকদিন পর নিজের চেনা পরিবেশে পা রেখে বড্ড অচেনা লাগছে নীরার সবকিছু। মনে হচ্ছে কত যুগ পর এলো এখানে। সবকিছু অন্য রকম লাগছে। ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল সে। নীরা বেড়তেই তুরান গিয়েছে ফ্রেশ হতে। তুরানের হলে একসঙ্গে দু’জনে নিচে যাবে। নীরার মা বারবার করে বলে দিয়েছে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে। নাস্তার ব্যবস্থা করা আছে। হিয়া-টিয়াকে গেস্ট রুম দেওয়া হয়েছে। ওরা ওখানেই ফ্রেশ হচ্ছে।

ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে তুরানের দৃষ্টি গেল নীরার দিকে। মেয়েটা সেই সকালের মতো উশখুশ করছে কেমন। তুরান ভেবে পেল না কিছুই। অগত্যা জিজ্ঞেস করেই ফেলল,

-“কী হয়েছে? এ্যানি প্রবলেম?”

নীরা নড়েচড়ে বসল। তুরানের মুখোমুখি চেয়ে বলল,

-“আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল।”

-“হুম বলো।”

-“আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা যেমনই থাক না কেন প্লিজ এখানে কোনো রকম সিনক্রিয়েট করবেন না প্লিজ। একটা দিনেরই তো ব্যাপার একটু মানিয়ে নিয়েন। আসলে বাবা-মা যদি এসব জানতে পারে খুব কষ্ট পাবে। আমার মা এমনিতেই হাই প্রেসারের রুগী।”

তুরান নীরার চিন্তান্বিত মুখশ্রীতে একপল তাকালো। নিষ্প্রভ কন্ঠে বলল, “হু,চেষ্টা করব।”

নীরা স্বস্থির নিশ্বাস ফেলল। সে ভেবেছিল হয়তো তুরান বেঁকে বসে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দেবে।

—–
নানান রকম পিঠায় পুরো টেবিল সাজানো। সঙ্গে রয়েছে আরও নানা পদের মিষ্টান্ন খাবার। তুরান এক ঢোল গিলল। এত এত মিষ্টান্ন খাবার। সে এমনিতেই মিষ্টি তেমন একটা পছন্দ করে না। তার ওপর আবার এতো এতো খাবার সবেতেই মিষ্টি। তাও যা ভেবেছিল কোনো রকমে একটু মুখে তুলে ভেগে যাবে কিন্তু চারপাশ থেকে সকলে যে হারে হৈ হৈ করছে তাতে মনে হয় না পার পাবে। বউটাও তার হয়েছে এক। তাকে এমন অকূলপাথারে ছেড়ে দিয়ে সে দিব্বি ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে। তাও যে জোরজবরদস্তি উঠে চলে যাবে সে উপায়ও বন্ধ। একটু আগে নীরার কাছে যেই কথা সে দিয়েছে তার বরখেলাপ হয়ে যাবে না? নিরুপায় হয়ে নিজের তীব্র অপছন্দের জিনিসও গাণ্ডেপিণ্ডে গিলতে হচ্ছে তাকে। একেই বোধহয় বলে মাইকার চিপা।

এদিকে হিয়া-টিয়া বেশ ইনজয় করছে। এত এত আয়োজন। সবথেকে বড় কথা এত সাধের পিঠা তারা আগে কখনো খায়নি। এতো সব পিঠার নামও জানে না। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে নীরার চাচির থেকে জেনে নিচ্ছে। তাদের জন্য এটা একটা গুড এক্সপ্রেরিয়েন্স। নাস্তার পাঠ চুকিয়ে সকলে চলে গেল বিশ্রাম নিতে। তুরান গিয়ে ধপাস করে বেডে শুয়ে পড়ল। সে নিজেকে নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছে। নাস্তায় যদি এতো আইটেম থাকে তাহলে লাঞ্চে কী থাকবে? লাঞ্চ রাখারা জায়গা হবে তার এই ছোট্ট পেটে? এরা বোধহয় তাকে খাইয়ে খাইয়েই মে’রে ফেলার পরিকল্পনায় আছে।

হিয়া জোর পায়ে আগেই ঢুকে গেছে রুমে। সকালে তাড়াতাড়ি উঠেছে এখন একটু বিশ্রাম আবশ্যক। কিন্তু চঞ্চল স্বভাবের টিয়া চলেছে ধীর গতিতে। হঠাৎ কী দেখে যেন তার পা থেমে যায়। চটজলদি পর্দা সরিয়ে উঁকি দেয়। তার অধর কোণে ফুটে ওঠে এক অমায়িক, দুর্বোধ্য হাসি।

.
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here