মেঘ_বৃষ্টি পর্ব=২০

মেঘ_বৃষ্টি পর্ব=২০
❤❤
রোদ-রোদেলা

#তনিয়া_আনিতা

দূরে দাঁড়িয়ে শ্রাবন অফিসের কলিগের সাথে কথা বলছিল।আর তৃনা ওদিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে যেটা বৃষ্টি দূর থেকে লক্ষ্য করে।তাই বৃষ্টি আস্তে আস্তে করে তৃনার পাশে গিয়ে দাড়ালো। কিন্তু তৃনার সেদিকে কোনো হুস নেই সেতো শ্রাবনকে দেখতে ব্যস্ত।

——-কিরে এখান থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে না হেসে সামনে গিয়ে ওকে দেখিয়ে নিজের হাসি দেখা।

হঠাৎ বৃষ্টির কথা শুনে তৃনা চোখ বড় বড় করে তাকালো তারপর ওদিক থেকে চোখ সরিয়ে একটা ফাইল হাতে নিয়ে আমতা আমতা করে

——-কি..কি…ব…লি…স

——-হয়েছে আর আমতা আমতা করতে হবে না এবার বল কখন থেকে এসব হচ্ছে

——কি বলিস কখন হচ্ছে মানে কি হবে

——দেখ তৃনা মিথ্যা বলবি না আমি সব বুঝতে পেরেছি এবার সত্যি সত্যি বলতো তুই কি শ্রাবনকে কোনোভাবে পছন্দ করিস।

বৃষ্টি তৃনাকে অনেক জোরাজোরি করতে লাগলো। একপর্যায়ে তৃনা বৃষ্টিকে সব সত্যি বলল

——-হুমম আসলে সত্যি বলতে আমি শ্রাবনকে পছন্দ না ভালোবেসে ফেলেছি, জানিনা কখন কীভাবে কিন্তু ওর সাথে থাকতে থাকতে আর খুনসুটি ঝগড়ায় কখন যে এই ছেলেটা আমার প্রিয় হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি।

——–তো দূর থেকে আর কতো দেখবি ওকে গিয়ে বল নিজের ভালোবাসার কথা। আচ্ছা ওকি নিজেও তোকে পছন্দ করে বা এমন কিছু কখন আন্দাজ করতে পেরেছিস।

——-নারে তেমন তো কিছু চোখে পরেনি।

——-তাহলে চুপ করে আছিস কেন বলে দে নিজের মনের কথা সময়ের কথা সময়ে বলতে না পারলে দেখবি আর বলার সময় পাবিনা।

——-হুমম কিন্তু ভয় হচ্ছে আমি যা ভাবছি ও যদি তা না ভাবে বা কোনোভাবে আমাকে ভুল বুঝে।আর তাছাড়া আমার পরিবার অনেক কনর্জাভেটিভ। এসব প্রেম ভালোবাসা এলাও করে না।সেই ভয়েও কিছু বলতে পারছি না কিন্তু বিশ্বাস কর অনেক চেষ্টা করছি এসব থেকে নিজেকে সরাতে কিন্তু শ্রাবনকে দেখলে কেমন জানি অনুভূতি কাজ করে তখন আর পরিবারের এসব শাসন মাথায় থাকে না।

——-দেখ তুই তো আর কোনো বেকার ছেলেকে ভালোবাসিস নি শ্রাবন দেখতে যথেষ্ট সুন্দর, ভালো জব করে, ভালো পরিবার দেখিস তোর পরিবার রাজি হবে।তাই অপেক্ষা না করে গিয়ে সরাসরি শ্রাবনকে নিজের ভালোবাসার কথা বলে দে আমি জানি ও তোকে না করবে না।

——-হুমম তবে এখন নয় আমি আরও কিছু সময় নিতে চাই তারপর সুযোগ বুঝে ওকে নিজের মনের কথা জানাবো।

দেখতে দেখতে কেটে গেল আরও দুই সপ্তাহ। ছুটির দিন হওয়ায় মেঘ আর অফিসে গেল না।তাই ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিল।আর বৃষ্টি টেবিলে বসে বসে শ্বাশুরির সাথে কাজ করছে।এমন সময় ওনি বলে উঠল

——– জানিস তো তোর শ্বশুর কখন কোনো খাবারে অনীহা দেখাতো না যদি খেতে না চাইতো তবে আমি ওনাকে ওই খাবারের গুন সম্পর্কে বলতাম। গুন শুনে ওনি আর না করতেন না।আমি একবার গাজরের হালুয়া রান্না করছিলাম কিন্তু ওনি কিছুতেই খাবেনা আমি এবার ওনাকে গাজর সম্পর্কে কিছু তথ্য দিলাম তারপর নিজ হাতে খাইয়ে দিলাম আর সেদিনের পর থেকে তোর শ্বশুর তো আমার হাতের হালুয়ার পাগল।জানিস মেঘ ও হয়েছে তেমন।

বৃষ্টি কথা গুলো শুনছিল আর হাসছিল। আর সোফায় বসে মেঘ সেগুলো অনুধাবন করছিল।হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো,

——-মা তুমি তো ভালোবেসে বাবাকে হালুয়া রান্না করে খাইয়েছো এবার তোমার বৌমাকে বলো নিজের হাতে রান্না করে আমাকে হালুয়া খাওয়াতে।
,
,
,
,
কথা গুলো বলে মেঘ মনে মনে সেই হাসি পাচ্ছে কিন্তু ওপরে চুপ করে আছে আর মেঘের কথা শুনে ওনিও সাই দিলেন।বেস আরকি লাগে মা ছেলের কথা রাখতে বৃষ্টি রান্না ঘরে গেল গাজরের হালুয়া রান্না করতে।




প্রায় ৩০ মিনিট পর বৃষ্টি রান্না শেষ করলো।আর আলাদা আলাদা বাটি করে হালুয়া নিলো।হঠাৎ তার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এলো সে মেঘের জন্য রাখা বাটিতে গুড়ো মরিচ দিয়ে ভালো করে নাড়াচাড়া করে টেবিলে রাখলো।এদিকে সবাই চলে এলো লাঞ্চ করতে। বৃষ্টি সবাইকে হালুয়ার বাটি এগিয়ে দিল। হালুয়া খেয়ে রোদেলা আর তার শ্বাশুড়ি অনেক প্রশংসা করল আর মেঘ সেগুলো নিয়ে বসে রইল। তা দেখে মেঘের মা বলল

——কিরে মেঘ তুই না খেয়ে বসে আছিস কেন। এটা তো মূলত তোর জন্য রান্না করা হয়েছে। খেয়ে দেখ বৌমা কতো ভালো রেধেছে।

——-হুমম মা খাবো তবে তুমি যেভাবে বাবাকে খাওয়াতে ঠিক সেভাবে।আমি চাই বৃষ্টি নিজ হাতে আমাকে খায়য়ে দিক।
,
,
,
,
,
,
,
কথা টা বলেই মেঘ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে হাসলো মেঘের কথা শুনে তার মা ও রোদেলা হেসে দিল। মেঘের এমন কথায় বৃষ্টি বেশ লজ্জা পেল।তারপর বাটি হাতে নিয়ে এক চামচ হালুয়া মেঘের মুখে দিল আর মেঘ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে তা খেতে নিলো খাওয়ার সাথে সাথে মেঘের মনে হলো সে গাজরের হালুয়া নয় বরং গুড়ো মরিচের হালুয়া খাচ্ছে। সাথে সাথে বৃষ্টির দিকে তাকালো। বৃষ্টি মেঘের অবস্থা টের পেয়ে পৈশাচিক হাসি দিল, এদিকে বৃষ্টি একেরপর এক চামচ মেঘের মুখে ঢুকিয়ে দিচ্ছে আর মেঘ সেগুলো পানি দিয়ে হজম করছে।

——–বেস বেস আর খাবো না হালুয়া অনেক মজা হয়েছে আমার পেট ভরে গেছে

——-তা কি করে হয় আপনি তো আমার হাতের হালুয়া খেতে চেয়েছেন তাই পুরোটা শেষ করতে হবে বলে আবারও খাইয়ে দিল।

মেঘ কোনোভাবে সেগুলো শেষ করে উঠে যেতে নিলে

——–কিরে ভাত খাবিনা সবে তো হালুয়া খেলি

——-না মা আমি আর ভাত খাবো না বৃষ্টি যা হালুয়া রেধেছে সেগুলো আর পানি খেয়ে আমার পেট ভরে গেছে তাই
.
.
.
.
.
.
বলেই মেঘ ওপরে দৌড় দিল আর বৃষ্টি ও মেঘের পেছনে পেছনে দৌড়ে গেল। বৃষ্টি রুমের দরজার কাছে যেতেই মেঘের চিৎকার শুনতে পেল।সে রুমে ঢুকে দেখে মেঘ ওয়াশরুমে ঢুকে চিৎকার করছে।বৃষ্টি বাইরে দাঁড়িয়ে হোহো করে হাসতে লাগলো। কিছুক্ষন পর মেঘ ওয়াশরুম থেকে বের হলে বৃষ্টি নিজের হাসি দমিয়ে রাখে।





বৃষ্টি ভালো করে লক্ষ্য করে মেঘের জামা কাপড় প্রায় আাধ ভেজা, চুল গুলো এলোমেলো, চেহারা পুরো লাল হয়ে গেছে, মেঘের মনে হচ্ছে ওর নাক মুখ দিয়ে আগুনের ধোয়া বের হচ্ছে। মেঘের এমন অবস্থা দেখে বৃষ্টি নিজের হাসিকে আর আটকে রাখতে পারল না। পুরো রুম জুড়ে হাসতে লাগলো আর তা দেখে রাগে মেঘের মাথা ফেটে যাচ্ছে।




——–আহা বউয়ের হাতে হালুয়া খাবে কি স্বাধ তাই না।বেশ হয়েছে, এখন কেমন লাগছে সেদিন তো আমাকে অনেক বড় বড় কথা শুনিয়েছেন, এখন তো ভালোই জব্দ হয়েছেন।ইসস আপনাকে দেখে না বড্ড মায়া লাগছে।মিষ্টি খাবেন আপনার ঝাল কমাতে পারে শুধু মিষ্টি, এনে দেয়।
,
,
,
,
বলেই আবারও হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে বৃষ্টি খাটে বসে গেল আর লুটোপুটি খেতে লাগলে।বৃষ্টির এমন কাজে মেঘের মেজাজ বলতে গেলে চরম পর্যায়ে।একদিকে ঝাল, অন্য দিকে বৃষ্টির ঝাঝালো কথা দুটোই মেঘের ধর্য্যের বাধ ভেঙে দিচ্ছে। মেঘ আর না পেরে বৃষ্টিকে একটানে নিজের কাছে টেনে বুকের সাথে মিশে নিল।বৃষ্টি কিছু বলতে যাবে তার আগেই বৃষ্টির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দিল।আচমকা মেঘের এমন কান্ডে বৃষ্টি পুরো পাথরের মতো হয়ে গেল। সে এখন বুঝছে না তার কি করা উচিত। যখন বুঝতে পারল সে মেঘকে ধাক্কাতে লাগলো। বৃষ্টির মনে হচ্ছে তার দম আটকে যাবে।কিন্তু মেঘের তো সেদিকে কোনো খেয়াল নেই সে নিজের কাজে মত্ত। প্রায় ২০ মিনিট পর মেঘ বৃষ্টির ঠোঁট ছেড়ে দিল। আর বৃষ্টি নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে কান্না করতে লাগলো। তা দেখে মেঘ

——–কি হলো কাদছো কেন,খুব বেশি ব্যাথা পেয়েছো কিন্তু কি বলোতো তুমি ইট মেরেছো পাটকেল তো তোমায় খেতে হবে তাই না।আর কি জানি মিষ্টির কথা বলছিলে,তোমার এমন মিষ্টি ঠোঁট থাকতে আবার অন্য মিষ্টির কি কোনো দরকার আছে। ধন্যবাদ ঝাল খাওয়ানোর জন্য নাহলে এই মিষ্টিটুকু পেতাম না। আমার তো জোস লেগেছে। ভুলেও আমার সাথে লাগতে এসো না তাহলে এর চেয়ে বেশি খারাপ হবে

বলে বেরোতে গেলে আবার পেছনে ফিরে

———-তুমি যদি চাও আমি রোজ ঝাল খাবো,কিন্তু তোমাকে আমায় রোজ মিষ্টি খাওয়াতে হবে।এমন মিষ্টির জন্য আমি আজীবন ঝাল খেতে রাজি।

বলেই দুষ্টমির হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেল আর বৃষ্টি ঠাই দাঁড়িয়ে চেয়ে রইল মেঘের যাওয়ার দিকে। সে এখনো বুঝে উঠতে পারছে না এতোক্ষণ তার সাথে কি হলো আর মেঘ কি বলে গেল।
,
,,
,
,
,
,
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here