রইলো তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব -১৩+১৪

#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[১৩]

“দ্যা ডেথ এলিমেন্ট সম্পর্কে আর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। না মানে এটার সাথে তো বর্তমান প্রচলিত কোন ড্রা*গ এর মিল নাই। তাহলে এই ড্রা*গ আসলো কোথা থেকে।” প্রশ্ন করলো দিগন্ত।

” তাহমিদের বোন মিমি, দিয়া ইশান সহ আরো কুড়িজন মানুষের মৃত্যর কারন এই ডেথ এলিমেন্ট।এই ড্রা*গসের সিমটমের সাথে আমরা অন্য একটা ড্রা*গসের মিল পেয়েছি। যেটা এক নিষিদ্ধ ড্রা*গ। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে এই ড্রা*গ নিষিদ্ধ।”

” কি আছে এই ড্রা*গস এ?”

” ডিটেকটিভ। সেটা তো আপনার কাজ। আপনি খুঁজে বের করুন। আমাদের কোন সাহায্য লাগলে অবশ্যই বলবেন। আর হ্যাঁ, আমাদের কাজ ইল্লিগ্যাল হলেও আমরা কোন ইল্লিগ্যাল কাজ করিনি। আমরা কারো পারসোনাল ইনফরমেশন চুরি কিংবা বিক্রি করিনি। তাই আমি চাইনা আমাদের এই টিমের কথা বাহিরে কেউ জানুক।ডিটেকটিভ, আপনি আপনার টিমকেও বলবেন না। আর হ্যাঁ, আপনার যদি কোন হেল্প লাগে তাহলে অবশ্যই আমাদের এখানে আসতে পারেন।”

উঠে দাঁড়ালো আরাভ। সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, “ফলো মি” তারপর সে একটা রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। ভূমি আরাভের সাথে না গিয়ে সে চলে আসে রুমে। যেখানে সে কিছুক্ষণ আগে ছিলো। আরাভের স্পেশাল রুম, যেখানে পুরো রুমটাই নানা রকম পেপার কাটিং ও ছবি দিয়ে ভর্তি। রুমের এক পাশে বড় একটা পিসি রাখা। তার অপজিট পাশে দেয়ালের সাথে একটা সাদা পর্দা রাখা। আরাভ দিগন্তকপ সবটা দেখালো। তারপর ড্রয়িংরুমে এসে দিগন্তকে বসিয়ে নিজে রুমের দিকে পা বাড়ালো ভূমির খুঁজে। দরজা সামন্য খুলতেই দেখতে পেল ভূমি বিছানায় বসে কিছু ভাবছে। চোখমুখ ফ্যাকাশে। সামনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু ভেবে চলেছে সে। আরাভ ভাবলো, সত্যটা জানার পর হয়তো সে ফেডআপ। তাই আর ভূমিকে না ঘাটিয়ে চলে গেল রান্নাঘরে। প্রথমবার ভূমি ও দিগন্ত ওদের বাসায় এসেছে না খাইয়ে চলে যেতে দেওয়া যায় কি?

রাত দশটা নাগাত সবার ডিনার শেষ হলে দিগন্ত বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে যায়। তারপর আরাভ ভূমিকে নিয়ে বের হয়। গন্তব্য ভূমিদের বাড়ি। গাড়িতে বসে ভূমি কোন কথা বলে না। পুরো রাস্তাটাই বাহিরের দিকে মুখকরে বসে ছিলো। আরাভ ড্রাইভ করলেও আড় চোখে ভূমিকে দেখছিল বারংবার। কিন্তু কোন কথা বলে নি। হঠাৎ গাড়ি ব্রেক করতেই সামনের দিকে ঝুকে যায় ভূমি। নিজের ভাবনায় এতটাই বিভোর ছিলো বুঝতে পারেনি। প্রশ্নের দৃষ্টিতে আরাভের দিকে তাকাতেই আরাভ বাহিরের দিকে ইশারা করে বলল,
” তোমার বাড়ি এসেগেছে।”

ভূমি বাহিরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসার চেষ্টা করে। তারপর আরাভের দিকে একপলক তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাড়ির ভিতরে চলে যায়। আরাভ বিস্ফারিত নয়নে তাকিয়ে থাকে ভূমির চলে যাওয়ার দিকে।ভিতরে যাওয়া তো দূরে থাক যাওয়ার আগে গুড নাইট বলার ও প্রয়োজন মনে করলো না। অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মৃদু হাসলো আরাভ।এবং বিড়বিড়ায়, ” ব্রেনে এতটা চাপদিও না নীলাদ্রিতা। পরে দেখবে তোমার মাথা চেপ্টা হয়েগেছে।” গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে বসে রইলো সে। দৃষ্টি উপরের দিকে ভূমির রুমের বারান্দায় ঝুলন্ত উড়নার দিকে।

বাড়ির ভিতরে পা রাখতেই ড্রয়িংরুমে দেখা মিলল, ইউনুস হোসাইন রোজিনা হোসাইন ও তন্ময়ের। সবার হাতের চায়ের কাপ। সামনে টেলিভিশনে চলছে বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার ক্রিকেট ম্যাচ। ইউনুস হোসাইন ও তন্ময় মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখছে।রোজিনা হোসাইন বিরক্ত চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।এই খেলার জন্যে তার সিরিয়াল দেখতে পারছেন না তিনি। ভূমি তীক্ষ্ণ চোখে বাবা আর ভাইয়ের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের মধ্যে চলবে নীরব যুদ্ধ। একজন আরেক জনের দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকাবে। বাংলাদেশ যত খারাপ খেলুক না কেন ইউনুস হোসাইন সবসময় তার পক্ষে। আর তন্ময় সে রোজ তার দল পরিবর্তন করবে। যেদিন যে দেশ জিতবে সেই দেশের পক্ষ সে নিবে। ভূলেও বাংলাদেশের সাপোর্ট নিবে না। বরং উল্টে বলবে, খেলা বুঝোনা তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম সাপোর্ট করো। খেলা বুঝলে কখনো করতে না। এই নিয়ে দুজনের মাঝে চলে নিরব ধন্ধ।দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো ভূমি। ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সকলে তার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। ইউনুস হোসাইন তন্ময়ের দিকে চোখের ইশারা করতে তন্ময় মাথা নেড়ে বাহিরের দিকে পা বাড়ায়।

বাড়ির সামনে আরাভের গাড়ি দেখে স্মিত হেসে এগিয়ে যায় তন্ময়। আরাভের দৃষ্টি তখনো ভূমির বারান্দার দিকে স্থির। তন্ময় এসে জানালার নক করতেই সামনে তাকায় আরাভ। একগাল হেসে বাহিরে বের হয়ে আসে।তন্ময় বলে,
” কেমন আছেন ভাইয়া?”
” ভালো। তোমার কি অবস্থা। পড়াশুনা কেমন চলছে?”
” ভালোই। আপুর কি কিছু হয়েছে। দেখলাম কেমন হয়ে আছে। কারো সাথে কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।”
আরাভ মৃদু হেসে বলল,
” কি যে হলো সেটা আমিও বুঝতে পারছিনা বুঝলে শালাবাবু।”
” ওওও আচ্ছা। ভিতরে আসুন। বাবা অপেক্ষা করছে।”
” আজ না। আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি। অন্যদিন আসবো। আজ আসি কেমন। বোনের খেয়াল রেখো। আসি।”
” ভিতরে আসলে ভালো লাগতো।”
” অন্যদিন অবশ্যই আসবো।”

বলেই তন্ময়ের সাথে হাত মিলিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে বারান্দায় এখনো উড়না ঝুলছে। মৃদু হেসে গাড়ি স্টার্ট দেয় আরাভ। কিছুক্ষণের মধ্যে চোখের আড়াল হয়ে যায় গাড়ি আর তন্ময় ফিরে আসে বাড়ির ভিতরে।

তন্ময় ভিতরে এসে ইউনুস হোসাইনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো। ইউনুস হোসাইন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। এই মেয়েটার মাথায় কখন কি চাপে বুঝা দায়। টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে দেখেন, এখনো তিন ওভার খেলা বাকি। উঠে দাঁড়ালেন তিনি। এই খেলা দেখার চেয়ে মেয়ের মুখোর হাসি অনেক দামি। ধীর পায়ে ভূমির রুমের দিকে চলে যান তিনি। দরজা খোলাই ছিলো। নক করে ভিতরে ডুকে দেখেন বিষন্ন মুখে বিছানায় বসে কিছু ভাবছে ভুমি। ভূমি ভাবনা এতটাই গভীর ছিলো যে বাবার উপস্থিতি টেরও পেল না। ইউনুস হোসাইন মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত রাখলেন। কেপে উঠলো ভূমি। পাশ ফিরে নিজের বাবাকে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলল। ইউনুস হোসাইন বললেন,
” এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন?”

” দায়িত্ব আর পরিবারের মধ্যে কোনটা বেছে নিবে তুমি?”

” আগে দেখবো দায়িত্বটা কেমন? এতে মানুষের ভালো হবে নাকি খারাপ হবে। আমার এইটুকু দায়িত্ব পালনে যদি আমার পরিবার শান্তি পায় তাহলে আমি দায়িত্ব-ই বেছে নিবো।”

” পরিবার নয় বাবা। এতে দেশ, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এমনি হাজারো মানুষের জীবন রক্ষা হবে। তবে তোমার পরিবারের কোন লাভই হবে না।”

” মানুষ মরণশীল। প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। এটা চিরন্তন সত্য। কে কবে কখন মারা যাবে সেটা কেউ বলতে পারে না। আমি এখন আছি কাল নাও থাকতে পারি। থাকবো না পরিবারের পাশে। ভাববো না পরিবারের কথা। এমন সাধারণ মৃত্যুর চেয়ে আমি যদি হাজার মানুষের প্রান বাঁচিয়ে যাই তাহলে সেটাই আমার জন্যে গর্বের।”

” মানে তুমি দায়িত্ব বেছে নেওয়ার কথা বলছো।”

” যদি এমনটা হয় তাহলে।”

” থ্যাক ইউ বাবা। আমার কনফিউশন দূর করে দিলে।”

ইউনুস হোসাইন ভূমির মাথায় হাত বুলিয়ে আদরে দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। ভূমি বলল,

” তুমি সত্যিই ম্যেজিসিয়ান বাবা। সব সময় আমার কনফিউশন, আমার কষ্ট সব ভ্যানিস করে দাও। আমার সুপার হিরো তুমি।”

” সব বাবাই তার কন্যার কাছে সুপার হিরো।”

” তুমি স্পেশাল।”

শব্দ করে হাসলো ইউনুস হোসাইন। ভূমি উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে হাসি মুখে বলল,

” দু-মিনিট। আসছি। তারপর আমরা ছাদে বসে গল্প করবো। বাবা আজ তুমি কফি বানাবে। অনেক দিন তোমার হাতের কফি খাইনা।”

বারান্দায় চলে গেল ভূমি। ইউনুস হোসাইন হাসিমুখে মেয়ের ঘর থেকে বিদায় নিলেন। মেয়ের মুখের এই হাসিটার জন্যে পৃথিবীর সমস্ত সুখ বিসর্জন দিতে পারেন। ভূমি বারান্দায় গিয়ে কল করলো আরাভের নাম্বারে। আরাভ তখন মাত্র-ই বাড়ির রাস্তায় গাড়ি ডুকালো। প্রথম বার রিং হতে হতে গাড়ি নিয়ে বাড়ির গেটে প্রবেশ করলো। দ্বিতীয়বার রিং হতে গাড়ি পার্কিং এ ডুকালো। তৃতীয়াবার রিং হতেই কল রিসিভ করলো আরাভ। ওপাশ থেকে ভূমির মিষ্টি গলা,

” বাড়ি পৌঁছে গেছেন,,উহঃ সরি পৌঁছে গেছো?”

” পার্কিং এ বসে আছি। এখন কল করলে?”

” কিছু বলার ছিলো?”

” হুম বলো।” গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো আরাভ। ওপাশ থেকে ভূমি বলল,

” আমিও তোমার সাথে কাজ করতে চাই।”

” মানে!”

” ওই ডেথ এর বিরুদ্ধে আমিও তোমাদের সাথে কাজ করতে চাই।”

” একদম-ই না।” এসব তোমার মাথায় আসে কি-ভাবে?”

” আমি অনেক ভেবে চিন্তে এই ডিসিশন নিয়েছি। আমি তোমাদের সাথে কাজ করবো। চাইলে আমি কলেজে নজর রাখবো। কারা ড্রা*গ সাপ্লাই করে, নজর রাখবো।”

” ভূলেও এই কাজ করবে না। এতে কতটা রিক্স তুমি জানো। আজ যেটা বলেছো সেটা যেন তোমার মুখে আর না শুনি। শক্ত গলায় বলল আরাভ। ওপাশে ভূমি চুপ। আরাভ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বড়করে শ্বাস নিয়ে নরম সূরে বলে, ” তোমার জিবন নিয়ে বাজি খেলতে পারবো না আমি।”

” নিজের খেয়াল রাখবো।”

” ডেথ এর ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার ধারনা নাই। এটা অস্ত্রের লড়াই নয় ভূমি। অস্ত্রের লড়াইতে শত্রু ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা করা গেলেও বুদ্ধি লড়াইতে শত্রুর ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা করা যায় না। আর এখানে ডেথ, সে নিজেই এক মৃত্যু। তার পথের যে বাধা হবে তার মৃত্যু নিশ্চিত।”

” আর তোমাদের বুঝি কিছু হবে না।”

” ডেথ এর মতো আমাদেরও কোন পরিচয় নাই। তাই আমাদের চেনা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আর তুমি ডেথ এর কথা মাথা থেজে ঝেড়ে ফেলে দাও।ডেথ এর বিরুদ্ধে কাজ করার কথা সেটা কল্পনাও করো না। চুপচাপ ঘুমাবে এখন। আমি রাখছি।”

ভূমিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দেয় আরাভ। মোবাইলটা পকেটে পুরে সামনের দিকে পা বাড়ায়। বিড়বিড়াতে থাকে,
” কলেজে নজর রাখবে। কি সাহস। সাহন নয় দুঃসাহস। না হলে এমন কথা ভাবতো না। আর ওকি জানেনা। ও। এসবের মাঝে থাকলে আমি ঠিকমতো কাজ করতে পারবো না। সারাক্ষণ ওর চিন্তা আমার মাথায় ঘুরতে থাকবে। কাজ করবে না তো। আমার সব কাজ ভণ্ড করে দেওয়ার ধান্দা। তখন থেকে ভেবে ভেবে এই সলিউশন বের করছে ম্যাডাম ”

চলবে,,,

Mahfuza Afrin Shikha.#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[১৪]

আরাভ ক্লাসে এসে থেকেই দেখছে ভূমির ক্লাসে মন নেই। কখনো গম্ভীর হয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে আবার কখনো রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আরাভের দিকে।আরাভ মাখে মাঝেই লক্ষ করছে। ভূমির সাথে তার দৃষ্টি সংযোগ হওয়ার পরেও দৃষ্টি নামিয়ে নেয়নি। হয়তো কাল রাতের কথার জন্যে রেগে আছে ভূমি ওর উপর। তাই আর কিছু না বলে পড়ানোতে মন দেয়। আড় চোখে মাঝে মাঝে ভূমিকে দেখছিলো সে। ভূমি তখন মাথা নিচু করে বসে ছিলো। ক্লাস শেষে আরাভ ভূমির দিকে একপলক তাকিয়ে বের হয়ে যায়। অফিসরুমে যাওয়ার সময় ভূমিকে একটা মেসেজ করে,
” রেগে আছো?”

মিনিট পাচেক অপেক্ষা করার পরেও ওপাশ থেকে কোন উত্তর এলো না। আরাভ ধরেই নিয়েছে আর কোন উত্তর আসবেও না। তাই মোবাইল পকেটে পুরে অফিসরুমে যায়। পরপর কয়েকটা ক্লাস শেষে আবারও মোবাইল চেক করে। না ভূমির থেকে কোন রিপ্লাই আসে নি। মোবাইল রেখে লম্বাশ্বাস নেয়। বিড়বিড়ায়, ” ডেঞ্জারাস মেয়ে একটা। কি সব চিন্তাভাবনা মাথায় নিয়ে ঘুরে। তুমি যতই রাগ দেখাও তোমার এই ইচ্ছে আমি কোনদিনও পূরণ করতে দিবো না। সরি নিলাদ্রিতা। তোমার জিবন নিয়ে খেলা, সেতো কোনদিনও পারবো না।”

ছুটির শেষে আরাভ নিজের কাজ গুছিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে বের হয়। ও জানে ভূমি আজ ওর জন্যে অপেক্ষা করবে না। হলোও তাই, ভূমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে রিক্সার জন্যে। অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পরেও যখন কোন রিক্সা পেলো না তখন ক্যাব বুক করলো। আর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ক্যাব আসার অপেক্ষা করতে লাগলো। তখনি ওর সামনে গাড়ি নিয়ে এসে দাঁড়ায় আরাভ। আরাভ গাড়ির কাচ নামিয়ে বলল,

” চলে এসো। আকাশের অবস্থা ভালো নয় মনে হয় বৃষ্টি নামবে।”

ভূমি যেন আরাভকে দেখলোই না। অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আরাভ মৃদু হেসে গাড়ি থেকে নেমে আসলো ভূমির সামনে।
” আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না?”

” আমি যাব না আপনার সাথে। ক্যাব বুক করেছি।”

” আমার সাথেই যাবে তুমি। কোন ক্যাবট্যাবে নয় ওকে।”

আরাভ ভূমির হাত ধরে ওকে গাড়িতে নিয়ে বসাতে চাইলে ভূমি নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। আর তখনি শুরু হয় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজে চলেছে।একজন সামনে তাকিয়ে অপরজন দেখছে বৃষ্টি ভেজা প্রিয়সীকে। কতক্ষণ দেখেছে জানা নেই। হর্নের শব্দে হুশ ফেরে আরাভের। ভূমির ক্যাব এসেগেছে। ভূমি ক্যাবে উঠবে এমন সময় আরাভ ভূমির হাত ধরে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
” এই শরীর নিয়ে তুমি ক্যাবে যাবে।”

আরাভের চোখ মুখে দুষ্ট হাসি। ভূমির আরাভের হাসির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালো তারপর নিজের দিকে তাকাতেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো। বৃষ্টি ভিজে জামা লেপ্টে আছে শরীরের সাথে যার কারনে শরীরের প্রতিটা ভাজ নিখুঁত ভাবে দেখা যাচ্ছে। দু-হাত সামনে দিয়ে উল্টো দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো ভূমি। আরাভ স্মিত হেসে দুই আঙ্গুল দিয়ে নিজের মুখের পানি সড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে কারতে ক্যাবের কাছে গিয়ে ভাড়া মিটিয়ে দেয়। তারপর ভূমির কাছে এসে ওকে পাজা কোলে তুলে নেয়। আকস্মিক এমন হওয়ার ভূমি ভয় পেয়ে আরাভের গলা জড়িয়ে ধরে। আরাভ মৃদু হেসে বলে,
” ভয় নেয়। এই দেহে একবিন্দু পরিমান রক্ত থাকতে তোমার কোন ক্ষতি-ই আমি হতে দিবো না।”

ভূমি মুগ্ধ দৃষ্টি আরাভের দিকে চেয়ে রইলো। মুখে কিছু বলল না। তবে ওর মনে ভালোবাসার প্রজাপ্রতি হাওয়ায় দুল খাচ্ছে সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্চে।লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারন করছে ভূমির গালদুটো। আরাভ ভূমিকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে অপর পাশে বসলো। ভূমি এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। উড়নাটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা। আরাভ হাসলো। গাড়ির পিছনের সিট থেকে নিজের অতি পছন্দের কোটটা এনে ভূমির গায়ে জড়িয়ে দিলো। ভূমি তাকালো আরাভের চোখের দিকে। আর আরাভ ভূমির চোখের দিকে। কোমড়ে শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠলো ভূমি। লাজ্জারাঙা চোখ নিয়ে আরাভের দিকে তাকাতেই দেখলো আরাভের চোখমুখে সেই দুষ্ট হাসি। ভূমি কিছু বলার জন্যে মুখ খুলতেই আরাভ ভূমির অধরো নিজের তর্জনী ঠেকায়। তারপর ভূমির অধোরে নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলল,

” কোন কথা শুনতে চাই না।”
” আরাভ, কি করছো তুমি ছাড়ো কেউ দেখে ফেলবে।”
আরাভ ভূমির কথার কোন জবাব না দিয়ে ভূমিকে টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে ঘাড়ে মুখ ঠেকিয়ে কোমড়ে স্লাইড করতে করতে বলে,

” আদর কারতে জানো নাকি শিখাতে হবে?”
চোখমুখে দুষ্ট হাসি নিয়ে তাকিয়ে থাকে ভূমির দিকে। লজ্জায় ভূমি মাথা নিচু করে ফেলে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। আরাভ আবার বলে,

” আগে বলো জানো নাকি শেখাতে হবে।”
ভূমি মাথা নিচু করে জবাব দেয়,

” এসব কাউকে শেখাতে হয় নাকি। এগুলো তো মানুষ এমনি শিখে যায়।”
আরাভ নিজের মুখটা বাড়িয়ে বলে,

” ঠিক আছে তাহলে এখন আদর করো আমায়।”
ভূমি আশ্চর্য হয়ে আরাভের দিকে তাকায়। তারপর বলে,

” আমি জানিনা। শিখতে হবে।”
“তাহলে শিখিয়ে দিচ্ছি।” এই বলে আরাভ ভূমির দিকে মুখটা আরেকটু এগিয়ে দিতেই ভূমি বলে,
” আরাভ ছাড়ো আমায়। বিয়ে আগে এসব করতে নেই। আমরা বিয়ের পর,,
” শাট আপ ভূমি। আমি জানি আমার লিমিট কতটুকু।”

আরাভ ভূমির কপালে গালে নাকে চোখে চুমু খায়। তারপর ভূমির গলার তিলের দিকে তাকিয়ে শুকনো ডুক গিলে। বিড়বিড়িয়ে বলে,
” তোমার তিলটা বড্ড নেশাতুর, আমি চাইলেও নিজেকে আটকে রাখতে পারছি না। সরি নিলাদ্রিতা।”

ভূমির গলায় থাকা তিলের উপর গভীর ভাবে চুমু দেয় আরাভ। তারপর ভূমিকে ওর সিটে বসিয়ে দিয়ে সিল্টবেল বেধে দেয় অতঃপর নিজের সিল্টবেল ও বেধে নেয়। আরাভ ড্রাইভ করছে আর ভূমি জানালার দিকে তাকিয়ে বাহিরের বৃষ্টি দেখছে। কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পরতেই ব্লাশ করছে বারংবার। আরাভ ভূমির অবস্থা দেখে না হেসে পারে না। ড্রাইভ করতে করতে বলে,

” মাথা থেকে ডেথ এর ভূত নেমেছে নাকি আরো আদর করতে হবে।”

চোখ ছোট ছোট করে আরাভের দিকে তাকায় ভূমি। কপালে কিঞ্চিৎ ভাজ ফেলে বলে,
” এইজন্যে তুমি,,,,,
” ইয়েস ডার্লিং। সকাল থেকে আমার সাথে কোন কথা বলছো না। কল দিলে রিসিভ করছো না। মেসেজের রিপ্লাই করছো না। শাস্তি তো পেতেই হতো।”
“এটা শাস্তি!”
” না ভালোবাসা বলে এটাকে। বুঝতে পারোনি। আবার করে বুঝাবো।”

ভূমি এবার সিরিয়াস হয়ে বসে। তারপর বলে,
” আমি তোমাদের সাথে থাকলে কি এমন হবে। প্লিজ আমাকে নাও না তোমাদের সাথে। আমিও তোমাদের সাহায্য করতে চাই।”

” কি হবে? দিয়ার অবস্থা দেখে বুঝতে পারোনি কি হতে পারে। এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও। আর আমাকে আমার কাজে মন দিতে দাও। তুমি এসবে জড়ালে আমি মন দিয়ে নিজের কাজ করতে পারবো না। মনটা সারাক্ষণ তোমার কাছে পরে থাকবে। আচ্ছা তুমি কি চাওনা আমি এই কাজে সফল হই।”

” এসব তুমি কি বলছো। আমি চাই তুমি সফল হও। আর ওই ডেথকে তার শাস্তি দাও। অনেক মানুষের জিবন নিয়ে খেলেছে আর নয়।”

” তাহলে তুমি এসবে জড়াবে না। পাগলামি করো না। প্লিজ ভূমি আমার এই কথাটা রাখো।”

ভূমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,
” ঠিক আছে। আমি আর পাগলামি করবো না। তুমি তোমার কাজে সফলতা অর্জন করো।

আকস্মিক ব্রেক করতেই সামনের দিকে ঝুকে পরে ভূমি। ভূমির বাড়ি এসেগেছে। আরাভ ভূমির দিকে তাকিয়ে বলল,
” এই তোমার বাড়িটা আরেকটু দূরে হলে কি ক্ষতি হতো বলতো।”

” কেন?
“না কিছু না। নামবে তো নাকি?”
” বৃষ্টিতে ভিজে যাব।”
” এমনিতেই অনেকটা ভিজেছো। আর এইটুকু রাস্তায় কিছু হবে। বাসায় গিয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিবে।”

ভূমি আরাভের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গলা জড়িয়ে ধরলো। তারপর আরাভের অধোরে নিজের অধোর গভীরভাবে স্পর্শ করে বলল,
” তখন এটা বাকি ছিলো।”
আরাভ অবাক চোখে দেখছে তার নিলাদ্রিতাকে। আর ভূমি হাসি মুখে আসছি বলে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। আরাভ ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিজের ওষ্ঠে হাত বুলায় মনে মনে বলে,
” এটা সত্যি ছিলো।”

রুমে গিয়ে ভূমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। লজ্জা লাগছে তার ভীষন লজ্জা লাগছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের লাজ্জারাঙা মুখ দেখে নিজের মনেই হেসে ফেলল। দু-হাতে মুখ চেপে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধকরতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে আরাভের দুষ্টুমি মাখা হাসি

______________________
মনিরুল স্যারের সাথে দেখা করে মাঠের দিকে হাটতে থাকে দিগন্ত। মূলত ডেথকে নিয়েই কথা হয়েছে তার সাথে। যেহেতু মনিরুল স্যার একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার তাই তার কাছ থেকে ডাক নেট সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জেনেছে দিগন্ত। আর মনিরুল স্যার বলেছে সে এই কেইসে সব রকমভাবে সাহায্য করবে। আগামিকাল মনিরুল স্যারকে নিয়ে নিজের অফিসে যাবে দিগন্ত। রফিক মির্জা নিজে তার সাথে কথা বলবে। এসব ভাবতে ভাবতে যখন মাঠের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল দিগন্ত তখন দেখতে পেল মাঠের পাশে একটা ছেলে অপর একটা ছেলেকে পার্সেল দিচ্ছে। দিগন্তের দৃষ্টি আরো তীক্ষ্ণ হলো। পকেট থেকে রিভালবার বের করে ছেলেদুটোর দিকে তাক করে এগিয়ে আসতে গেলে একজন কলেজের ভিতরের দিকে চলে যায় আর অপরজন রাস্তার দিকে। দিগন্ত রাস্তার দিকে ছুটে চলা ছেলের পিছনে ছুটতে ছুটতে বলে,
” দাঁড়াও বলছি না হলে স্যুট করে দিবো।”

ছেলেটা দাঁড়ায় না। সামনের দিকে ছুটতে থাকে। শেষে দিগন্ত ছেলেটার পা বরাবর স্যুট করে। গুলিবিদ্ধ পা নিয়ে ছুটতে থাকে ছেলেটা। দিগন্তও ছেলেটার পিছনে। রাস্তার পাশে আসতেই একটা বড় কালো গাড়ি এসে ছেলেটাকে তুলে নিয়ে চলে যায়। আর দিগন্ত সেখানেই হাটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। সামনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়ায়, “শিট, একটুর জন্যে মিছ করলাম। তবে মানতেই হবে এই ডেথের ক্ষমতা প্রখর।”

চলবে,,,,,,,

#মাহফুজা আফরিন শিখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here