রইলো তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব -১৫+১৬

#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[১৫]

অন্ধকারময় ঘরে বসে আছে মনিরুল ইসলাম। হাতে কফির মগ মাথায় নানা চিন্তা। এই রুমের মতো অন্ধকার তার জিবন। তিক্তময় অতীত থেকে বাচতে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে তার জীবন। একা এই ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। তার এই একাকিত্ব জিবনে না আছে কোন পছন্দের মানুষ না আছে কোন বন্ধু বান্দব। এমনকি বাসায় একটা কাজের লোকও নেই। সারাদিন কলেজ আর রাতে নিজেই নিজের কাজ করেন তিনি। কফির মগ শব্দকরে টেবিলের উপর রেখে উঠে দাঁড়ালেন মনিরুল ইসলাম। অন্ধকার হাতরে কাবার্ড থেকে একটা কালো হুডি বের করে সেটা পরে নিলেন। মাথাটা থাকতেই ক্রুর হাসি হাসলেন তিনি। এই কালো হুডিতে অন্যরকম একটা শক্তি আছে। যার কারনে এটা পরার পর নিজেকে অনেক শক্তিশালী মনেহয় তার। মুখে পৈশাচিক হাসি নিয়ে একটা রুমে গেলেন তিনি। রুমটা দেখতে কোন একটা ল্যাবরেটরির থেকে কোন অংশে কম নয়। একদিকে বড় এক ডেক্সটপ। মনিরুল ইসলাম ডেক্সটপের সামনে বসলেন। ডেক্সটপের স্কিনে জ্বলজ্বল করছে King নামটা। তিনি নামের উপর ক্লিক করলেন। ডেক্সটপের পর্দায় ভেসে উঠলো একটা মেসেজ,
” এই ডিটেকটিভ অনেক বাড়াবাড়ি করছে। আমার ভাইয়ের পায়ে গুলি করেছে। ওর একটা ব্যাবস্থা করতেই হবে।” নিচে লেখা “KING”

মনিরুল ইসলাম দ্রুত হাতে টাইপ করলো,
” তুমি নিজের কাজ করো। এই ডিটেকটিভকে আমি দেখে নিবো।” নিচে লেখলো, “DEATH”

ডেক্সটপ থেকে মুখ সড়িয়ে মুখটা গম্ভীর করে হাতের আঙ্গুল দিয়ে চসমাটা উপরের দিকে তুলে গলার স্বর শক্তকরে বলল, “ডেথকে ধরবে। এত সহজ ডেথকে হাতের নাগালে পাওয়া। ডেথ এর রাজ্যে আমিই রাজা। এই রাজ্যে যে রাজত্ব করতে আসবে তার একটাই শাস্তি, মৃত্যু।”
অট্টহাসিতে ভেঙে পরলো মনিরুল ইসালাম।
” অনেক বার বেড়েছে তোমার ডিটেকটিভ। এবার তোমার দিকটা দেখতে হবে।” KING তার কাজ করে নিবে। এপর্যন্ত যতগুলা মানুষের সাথে কাজ করছে তার মধ্যে কিংকে তার বেশ পছন্দ হয়েছে। ছেলেটার মধ্যে স্পেশাল কিছু রয়েছে যার কারনে ডেথ তাকে বেশ পছন্দ করে। “কিং” বছর বিশের এক যুবক। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারর ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট হওয়ার সুবাদে ইন্টারনেটের এই নিষিদ্ধ ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে পারে। কৌতুহল বসত সে একদিন ডুকে পরে ডাক নেটে। সেখানে অবশ্য আরো একটা কারন আছে আর সেটা হলো, নিজের পরিচিতি বৃদ্ধি করা। যেটা যে অল্প সময়ের মাঝে পরেছে। ডাক নেটে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করার সময় একাদিন তার কাছে মেসেজ আসে ডেথ এর কাজ থেকে। যেখানে ডেথ তাকে তার হয়ে কাজ করতে বলেছে। বিনিমনে সে পারিশ্রমিক তো পাবেই সাথে তার পরিচিতিও হবে। সেই থেকে ডেথ এর সাথে কাজ করে কিং। ডেথ কিংকে চিনলেও কিং কখনো ডেথকে দেখেনি। সময়সময় মেসেজের মাধ্য তথ্য পাঠানো হয়েছে তার পার্সেল সেটা কুরিয়ারের মাধ্যমে। তবে সেখা ডেথ ব্যতিত অন্য কোন নাম ছিলো না। কিং ছেলেটা যেমন সাহসী তেমন দুরন্ত। তাই তো ডেথ তাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে না হলে বাকিদের মতো কিং ও হয়তো ডেথ এর কবলে পরে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতো।

____________________________
ঋতুর ধারায় প্রকৃতি জগতে প্রানের সজীবতা রং রুপ ও সিগ্ধতা নিয়ে আসে শরৎ ঋতু। শরৎের ভোরে বয়ে চলেছে ঝিরঝিরি হাওয়া। ছোটছোট পাখিদের বেপরোয়া ধাপাধাপি ও মিষ্টি কলতনে ভরে উঠে চারিদিকে। ভোরের ধবধবে নীল আকাশের বুকে সাদা পেচার মতো তাকিয়ে আছে ভূমি। প্রকৃতির এই অভূত পূর্ন সৌন্দর্য তাকে স্পর্শ করছে কিনা। কৃষ্ণভ্রমরের মতো রাশীরাশী চুল বাতাশে দোল খেয়ে বারি খাচ্ছে ভূমির কোমড়ে। হুস নেই ভূমির। আরাভের সাথে তার তিনদিন যাবৎ কথা হয়না। কলেজ থেকেও ছুটি নিয়েছে সে। আচ্ছা সে কি জানেনা,
” তাকে দেখার জন্যে আমার অক্ষিদ্বয় প্রতিনিয়ত অপেক্ষায় থাকে।”

“এত সকালে ছাদে কি করছিস বোন?”
তন্ময়ের কথায় সামনে তাকায় ভূমি। মাথা নাড়িয়ে বলে,
” এমনি, সকালটাকে উপভোগ করছিলাম।”
তন্ময় কথা বাড়ালো না। টাওয়ালটা মেলে দিয়ে নিচে চলে গেলো। ভূমির বিষন্ন মুখে সেখানেই দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকলো। আরাভের ফ্ল্যাটে যাওয়াটাকি ঠিক হবে। চলে যাবে আরাভের ফ্ল্যাটে। হ্যাঁ, যাওয়া যায়। অধোরে হাসি ফুটে উঠলো তার। হাসি হাসি মুখ নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে ভূমি। আলমারিতে নিজের জামাকাপড় বের করতে গিয়ে চোখ পরে আরাভের কোটের দিকে। যেটা সেদিন ভূমির গায়ে জড়িয়ে দিয়েছিলো আরাভ। কোটটা বের করে সেটা নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো ভূমি।

আজ আর কলেজে যাওয়া হলো না ভূমির। আরাভের ফ্ল্যাটের সামনে এসে রিক্সা থেকে নামে। রিক্সাওয়ালার ভাড়া মিনিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। আরাভের ফ্ল্যাটের সামনে এসে লম্বাশ্বাস নেয় তারপর কলিংবেল বাজায়। সোহান এসে দরজা খুলে দরজার সামনে ভূমিকে দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ভূমি এখানে আসবে সেটা তো জানায়নি আরাভ। সোহান মৃদু হেসে বলে,
” আরে ভাবি আপনি এখানে? না মানে আরাভ তো কিছু বলেনি।”

” আসলে আমি কাউকে না জানিয়ে চলে আসছি। ভাবলাম সারপ্রাইজ দেই।

” ওও আচ্ছা। আসুন ভিতরে আসুন।”

সোহান দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালে ভূমি ভিতরে প্রবেশ করে। ড্রয়িংরুমে সকলে বেশ মনোযোগ দিয়ে কথা বলছিলো। হয়তো গুরত্বপূর্ণ কিছু কথা। বেশ মনোযোগ দিয়ে আলোচনা করছে সবাই। সাথে দিগন্তও আছে। এই সময় এখানে ভূমিকে দেখে উপস্থিত সকলে অবাক। সকলের দৃষ্টি এখন ভূমির উপর। আরাভের ভ্রুযুগলে সুক্ষ্ম ভাজ তবে মুখে তার প্রাপ্তির হাসি। ভূমি বলল,
” না আসলে আমি আরাভকে এই কোটটা দিতে এসেছিলাম।”

তবুও সকলের উৎসুক দৃষ্টি। ভূমির কথা যেন তাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। আরাভ স্মিত হেসে হাত বাড়িয়ে ভূমিকে নিজের কাছে ডাকলো। এতগুলো মানুষের সামনে এভাবে আরাভের কাছে যেতে সংকোচ বোধ করলো ভূমি। তাই মাথা নিচু করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। মনে মনে এখন নিজেকেই গালি দিচ্ছে, “কেন সে এখানে আসতে গেলো। আরাভ যখন তার সাথে দেখা করছে না তার মানে সে ব্যাস্ত। সবটা জেনেও কেন ভূমির মন শান্ত থাকতে পারেনা। এখন সবাইকে কি করে বুঝাবে সে, তার প্রান প্রিয়র দেখা না পেয়ে মনটা ছটফট করছিলো বলেই তো সে এখানে এসেছে।” আড় চোখে সবার দিকে তাকালো একবার। সবাই কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরাভ এখনো তার দিকে একটা হাত বাড়িয়েই রেখেছে। একটা গম্ভীর কন্ঠশ্বর শুনে সামনে তাকালো ভূমি। দিগন্ত, হ্যাঁ দিগন্ত-ই বলল,

” একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলছি। এভাবে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট না করে আরাভের পাশে গিয়ে বসো।”

সবাই দিগন্তের দিকে তাকালো। আরাভের দৃষ্টি আরো তীক্ষ্ণ হলো। দিগন্তের দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা করলো সে।তখন দিগন্ত বলল,
” আসলে আমার একটু তাড়া আছে তাই বলছিলাম।”

আরাভ কিছু বলল না। ভূমির দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল,
” এসো, আমার পাশে বসো।”

ভূমি গিয়ে আরাভের পাশে বসলো। আরাভ আবার বলল,
” ক্লাস নেই আজ?”

” কলেজে যাইনি।”

আরাভ ভূমির আঙ্গুলের মাঝে নিজের আঙ্গুল ডুবিয়ে দিয়ে সামনে তাকিয়ে বলল,
” আমরা যে কি বলছিলাম?”

দিগন্ত আড় চোখে আরাভ ভূমির হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি আছে এই দ্যা ডেথ এলিমেন্ট-এ।

আরাভ লম্বা একটা শ্বাস টেনে বলতে শুরু কীলো,
” দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে ইউনাইটেড স্টেটে মাফয়া দলগুলোর মধ্যে একটা বিশেষ ধরনের ড্রা*গের প্রচলন ছিলো। তবে কিছু মাসের মধ্যে সেই ড্রা*গের ব্যাবহার সম্পর্ন বন্ধ করে করে দেওয়া হয় এবং সেই সঙ্গে ড্রাগের উৎপাদন ও সম্পর্ন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পিছনে কি কারন সে সম্পর্কে কোন কারন জানা যায়নি। ওই ড্রা*গের সে সমস্ত উপাদান ছিলে সেগুলোর তথ্য ইউনাইটেড স্টেটের নিজেস্ব ডেটাবেজে অত্যন্ত সুরক্ষিত ভাবে গোপন রাখা হয়েছে। সেই ডেটাবেজ থেকে আমরা ওই তথ্য বের করে নেই। আসলে প্রচলিত কোন ড্রা*গের সাথে “দ্যা ডেথ এলিমেন্ট এর উপাদান মিল না পাওয়ায় আমরা বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ ড্রা*গ সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে দিয়েছিলাম। বুঝতেই পারছেন এই কাজটা এক প্রকার চুরি করার মতোই। তবে আমরা কারো পার্সোনাল তথ্য কাউকে বিক্রি করিনি। শুধু মাত্র নিজেদের যেটুকু প্রয়োজন সেইটুকু নিয়েছি। এইরকম বিশেষ ড্রা*গের খোঁজখবর নিতে গিয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত ওই বিশেষ ড্রা*গের নামটা জানতে পারি। আশ্চর্যজনকভাবে ওই বিশেষ ড্রাগের সাথে “দ্যা ডেথ এলিমেন্ট এর সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। ওই ড্রা*গ এর নাম দেওয়া হয়েছিলো।” দ্যা ফরবিডেন”!

“দ্যা ডেথ এলিমেন্ট” কে সোজা বাংলায় “দ্যা ফরবিডেন” এর রিমেক-ই বলা যায়।

” দ্যা ফরবিডেন” সম্পর্কে খুব বেশী জানা না গেলেও এটুকু জানা গেছে, সেই সময়ে এই ড্রাগের কারনে বহু মানুষের প্রান গেছে। তাই কয়েক মাসের মধ্যে এই ড্রাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। বিষয়টা সমনে আসার পর থেকে আমরা মারাত্মক কিছু খারাপের আশংকা করছি। এই সময় আমাদের দেশকে খুব একটা সুরক্ষিত বলে মনে হচ্ছে না। আমার কাছে আমার প্রতিশোধটা অনেক বড়। তবে এখন এসব কিছুকে ছাপিয়ে গেছ আসন্ন ভবিষ্যৎ এর চিন্তা। এই ড্রা*গ যে কতটা ভয়ংকর তা কম বেশী আমরা সবাই জানি। সেখা একটা নিষিদ্ধ ড্রা*গ যা এক সময় বহু মানুষের প্রান নিয়েছে সেই ড্রা*গ নিয়ে ডেথ কি করতে পারে সেটা ভাবনারও বাইরে। এতদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের প্রতিশোধ নিয়ে ভাবলেও এখন আমাদের মূল চিন্তা দেশের আসন্ন ভবিষ্যৎ কে রক্ষা করা। আমরা চাইনা আর কেউ ডেথ এর শিকার হোক। তাতে যদি আমাদের জিবন চলে যায় তাও আমরা এর শেষ চাই। জিবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ডেথ এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে আমরা বদ্ধপরিকর।”

কথাগুলো বলে থামে আরাভ। ওর চোখের দৃঢ়তা প্রকাশ করে কথাগুলোর গুরুত্ব। ভূমির চোখমুখে ফুটে উঠে আতঙ্ক। আরাভ লক্ষ করতেই মৃদু হেসে বলে,
” এত চিন্তা করো না নিলাদ্রিতা।” ভূমির আরো কাছে গিয়ে বলে, ” তোমার চোখ ভয় নয় প্রেম দেখতেই বেশী পছন্দ করি।”

তবুও যেন আতঙ্ক কমে না ভূমি। ভয়ে চোখমুখ রক্তশূন্য হয়ে যায়। আরাভ তাহমিদকে এদিকটা সামলাতে বলে ভূমিকে নিজে নিজের পার্সোনাল রুমে যায়।

চলবে,,,,,,,,,,

#Mahfuza Afrin Shikha.#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[১৬]

ভূমির সামনে হাটুগেরে বসে আছে আরাভ। ভূমির হাত আরাভের হতের মধ্যে মুষ্ঠিবদ্ধ। আরাভের দৃষ্টি স্থির তার নিলাদ্রিতার ভয়ার্ত মুখের দিকে। ভূমি অনেক্ষন যাবৎ কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুই বলে উঠতে পারছে না। আরাভ লম্বা শ্বাস নিলো। এক হাতে ভূমির হাত ধরে অন্যহাত রাখলো মুখের গালে। কেপে উঠলো ভূমি। আরাভ বলল,
” ভয় নেই নিলাদ্রিতা। আমি আছি তো।”

আরাভের কথায় ভূমি শান্ত হতে পারলো না। ভূমি জানে আরাভ তার কোন ক্ষতিই হতে দিবে না। তবে আরাভ! তার দায়িত্ব কে নিবে। এই ডেথ যে ভয়ংকর তাতে তো আরাভের জিবন সংকটময়। ডেথ যদি একবার আরাভের সন্ধান পায় তাহলে যে আরাভের আর কোন অত্বিত্বই থাকবে না। আরাভকে হাড়ানোর কথা মনে হতেই শরীর যেন রক্তশূন্য হয়ে গেল। ছলছল করে উঠলো ভূমির চক্ষুদ্বয়। আরাভের গালে নিজের হাত রেখে বলল,
” যে তুমি এত মানুষের দায়িত্ব নিলে, সেই তোমার দায়িত্ব দায়িত্ব কে নিবে শুনি?”

আরাভ হাসলো। ভূমির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” যে আমায় সৃষ্টি করেছে, যার দয়ায় এতগুলো মানুষের দায়িত্ব নিতে পারছি সেই আমার দায়িত্ব নিবে। আর তোমার ভালোবাসা। ভালোবাসার নাকি অনেক শক্তি, এত ভালোবাসো তুমি আমায়। এই ভালোবাসা রেখে কোথায় যাই বলতো। আমাদের যে আরো অনেকটা পথ চলার বাকি।”

ভূমি আরাভের সামনে বসলো। আরাভের দুগালে হাত রেখে বলল,
” তোমার কিছু হবে না তো। আমার খুব ভয় হচ্ছে। তোমার হাড়ানোর ভয় আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায়।”

আরাভ ভূমির হাতের হাতের উপর হাত রেখে নিজে অধোর স্পর্শ করে নিলো। ভূমিকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিতে নিতে বলল,
” কিচ্ছু হবে না আমার। দেখে নিও।”

আরাভ মুখে যতই বলুক ওর কিছু হবে না। তবে আজ এই মুহূর্তে অনেক ভয় লাগছে। সত্যিই যদি ওর কিছু হয়ে যায়। তাহলে কি হবে ওর নিলাদ্রিতার। জানে, মৃত্যুর স্বাদ একদিন সবাইকে গ্রহন করতেই হবে। তবে এখন ভূমিকে একা রেখে সে যে মৃত্যুকে গ্রহন করতে পারবে না। কি হবে আরাভ না থাকলে, ভূমি ওকে ভূলে যাবে। অন্যকাউকে নিয়ে নিজের জীবন শুরু করবে। আরাভের নিলাদ্রিতাকে অন্যকেউ ভালোবাসবে, আদর কারবে। না এটা সে সহ্য করতে পারবে না। এদিক থেকে আরাভ বড্ড স্বার্থপর। কথাগুলো ভাবতেই দুচোখ ঝাপসা হয়ে আসে আরাভের।

শুধু আরাভ না। যে কোন মানুষ তার অতি পছন্দের জিনিস বা প্রিয় জিনিসটা কাউকে স্পর্শ করতে দেয় না। সে তাকে সবার থেকে আগলে রাখে, নিজের কাছে রাখে। গভীর যত্নে পরম ভালোবাসায় আগলে রাখে। খুব প্রিয় জিনিসের অংশীদার মানুষ কোনদিন মেনে নিতে পারে না। এটাই বাস্তব, এটাই সত্য।সে একটু চোখের আড়াল হলেই মানুষটা যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে।

আরাভের বাহুবন্ধনে থেকে ভূমির অনেকটা হলেও স্বত্বি মিলেছে। ভূমি আরাভের বুকে মুখ গুজেই বলল,
” দিয়ার মৃত্যুটা কি এই “ডেথ এলিমেন্ট” এর কারনেই হয়েছে।”

আরাভ ভূমিকে ছেড়ে ওকে বিছানার উপর বসিয়ে নিজেও ভূমির পাশে বসে। তারপর বলে,
” হ্যা। দিয়ার মৃত্যুর জন্যে পুরোপুরিভাবে “ডেথ এলিমেন্ট কে দায়ি করে যায় না। তবে দিয়া আরো অনেক আগে থেকে ড্রা*গ এডিক্টেট। বছর খানেক হবে। দিয়ার কাজিন মিমি মানে তাহমিদের বোন ওরা সেও ডেথ এর শিকার। মিমির সাথে দিয়াও ড্রা*গ নিতো নিজেদের অজান্তে। তবে দিয়ার বয়ফেন্ড, সে ড্রা*গ সাপ্লাই করতো। “দ্যা কিং” এর হয়ে কাজ করতো ইমাদ। সেও ড্রা*গ নিতো তবে খুবই কম। ইমাদ কখনো দিয়াকে ড্রা*গ দিতো না। দিয়াকে ড্রা*গ দিতো অন্যজন। “কিং” এর হয়ে কলেজে অনেক স্টুডেন্ট-ই কাজ করে। তাদের মধ্যে একজন দিয়াকে ড্রা*গ দিতো। এই কথা ইমাদ জানার পর “কিং” এর সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। ইমাদ জানায় সে আর তার হয়ে কাজ করবে না এবং পুলিশের কাছে “কিং” এর নামে কমপ্লেইন করবে। কিং মুখে কিছু না বললেও ডেথ এর কাছে ইমাদের কথা জানায়। এবং ডেথ এর প্ল্যান অনুযায়ী দিয়া প্রথমে ইমাদকে মারে ও পরে নিজে ছাদ থেকে ঝাপ দেয়। আর এই “কিং” টা কে জানো?”

” কে?”

” কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টের ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট, অভি।”

ভূমির চোখমুখ উৎফুল্ল হয়ে যায় মুহূর্তেই। উত্তেজিত হয়ে জিগ্যেস করে,
” ওই যে লম্বা সুন্দর কানে ইয়ার রিং পরা ছেলেটা।” আরাভ মাথা নাড়ালে ভূমি বলে, ” আরে সে তো আমাদের ক্লাসের ইশার বয়ফ্রেন্ড।”

আরাভ মৃদু হাসে। দুহাতের তালু ঘসে একটু নড়েচড়ে বসে।তারপর বলে,
” অভির আবার গার্লফ্রেন্ড। পর কতগুলা গার্লফ্রেন্ড আছে সে ও নিজেও হয়তো জানেনা। মেয়েদের সাথে কিছুদিন প্রেম প্রেম খেলা খেলে তারপর তাকে ড্রা*গ এডিক্ট বানিয়ে দেয়।” আরাভ এবার ভূমির মুখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল, ” বাহিরের কোন খাবার খাবে না এমনকি কেউ কিছু দিলেও নিবে না সে তোমার যত পরিচিত হোক না কেন। আমি কোন রিক্স নিতে চাই না।”

” আচ্ছা ঠিক আছে। আমি কারো থেকে কিছু নিবে না। তোমার সব কথা মেনে চলবো। তুমি যা বলবে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো। তবে তোমাকেও একটা কথা দিবে হবে।”

” আমাকে?”

” হুম।”

” কি কথা শুনি।”

” তুমি নিজের খেয়াল রাখবে। সবার কথা ভাবতে গিয়ে নিজেকে ভুলে গেলে চলবে না।”

আরাভ হাসলো। তৃপ্তির হাসি। ভূমির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো। তারপর বলল,
” মাথাটা একটু টিপে দাওতো। খুব ক্লান্ত লাগছে।”
” তুমি কিন্তু কথা দিলেনা।”
” আচ্ছা বাবা নিজের খেয়াল রাখবো।”

আরাভ ভূমির কোমড় জড়িয়ে শুয়ে রইলো। আর ভূমির হাত খেলা করছে আরাভের চুলের মাঝে।

________________________
সকাল সকাল ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত হয়েছে দিগন্ত। গন্তব্য এখন মনিরুল ইসলাম।কম্পিউটার, ইন্টারনেট এসব সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম সবচেয়ে পারদর্শী। তাইতো নিজের সমস্যার সমাধান করতে মনিরুল ইসলামের স্বরনাপ্ন হয়েছে সে। গতকাল যখন আরাভের বলা কথাগুলো দিগন্ত ডিপার্টমেন্টে সব খুলে বলে তখন রফিক মির্জা দিগন্তকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেইস সলভ করতে বলে। না হলে এই কেইসে তিনি অন্যকাউকে ইনভলব করবেন। দিগন্ত ডিপার্টমেন্ট থেকে তিন দিনের সময় চেয়েছে এর মধ্যে সে ডেথ এর সাথে যোগাযোগ করার কোন না ক্লু নিশ্চয় পাবে। রফিক মির্জা দিগন্তকে তিনদিনের সময় দিয়েছে ডেথ সম্পর্কে আরে তথ্য নেওয়ার। দিগন্ত যেহেতু এই কাজ নিজের ইচ্চেতে নিয়েছে তাই সে এটা থেকে নড়বে না। এই ডেথ এর শেষ সেও দেখতে চায়। তাইতো সকাল সকাল মনিরুল ইসলামের শরণাপন্ন হলো সে। মনিরুল ইসলাম তাকে যদি সাহায্য করে।

বেশ উৎসুক নিয়ে তাকিয়ে আছে মনিরুল ইসলাম। দিগন্ত হাত মুচড়াহচ্ছে। কিভাবে তাকে কথাটা বলবে সেটা বুঝতে পারছে না। মনিরুল ইসলাম জিগ্যেস করলো,
” কিছু বলবেন ডিটেকটিভ দিগন্ত।”
” হ্যাঁ, আসলে আমি ডেথকে নিয়ে কিছু তথ্য পেয়েছি। আমি চাই আপনি ডেথ সম্পর্কে জানতে আমাকে সাহায্য করুন।”

মনিরুল ইসলামের মুখটা গম্ভীর হলো। তবে মুখ দেখে বুঝার উপায় নেই। সে জিগ্যেস করলো,
” কি তথ্য পেয়েছেন আপনি?”

দিগন্ত একটু নড়ে বসলো। বুক টানটান করে মাথা উচু করে মনিরুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ডেথ বর্তমানে এক ধরনের ড্রা*গ পাচার করছে। যেটা সারাবিশ্বে নিষিদ্ধ। এমনকি এটা কেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অজানা। সেই ড্রা*গ ডেথ পাচার কারছে। যার নাম দিয়ে “দ্যা ডেথ এলিমেন্ট। আমি চাই আপনি ইন্টারনেট থেলে এই ডেথ এলিমেন্ট সম্পর্কে আমাকে কিছু তথ্য বের করে দিন। আর ডেথ এর উপর একটু নজর রাখুন।”

মনিরুল ইসলাম মৃদু হেসে বলল,
” হ্যা সিউর। আমি অবশ্যই করবো। আপনাকে সাহায্য করতে পারলে আমার ভালো লাগবে।”

দিগন্ত উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
” এবার তাহলে আমি আসি।”

মনিরুল ইসলাম ও দাঁড়িয়ে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার জন্যে। দিগন্ত হাত মিলিয়ে বিদায় নিয়ে চলে যেতেই মনিরুল ইসলামের চোখমুখ রাগে লাল হয়ে গেলো। ধপ করে চেয়ারে বসে পেপার ওয়েটটা চেপে ধরলো। চোখমুখ শক্তকরে বলতে লাগলো,
” ডেথ এলিমেন্ট” পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এই অল্প সময়ে এতদূর পৌঁছে যাওয়া অসম্ভব। তাহলে নিশ্চয় এর পিছনে অন্যকেউ কাজ কারছে। কে হতে পারে। কার এত বড় দুঃসাহস যে, ডেথ এর উপর নজর রাখে। কিছুক্ষণ ভাবার পর ওর মাথায় একটা নামই এলো, ” স্টার গ্রুপ।” অনেকদিন হলো এই গ্রুপের সাথে কথা হয়না। দেখতে হচ্ছে এবার।”

চলবে,,,,,,

#Mahfuza Afrin Shikha.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here