শুধু আমারই পর্ব ৪

শুধু_আমারই
পর্ব_৪

দুদিন ধরে সায়ান পিয়ার সামনে মোটেও ইজি হতে পারছে না। রাব্বিটা যত নষ্টের মূল! কেন সে পিয়াকে মনে মনে, ঘুরে ঘুরে, বিভিন্ন এঙ্গেলে দেখতে বলল!
এখন চোখ না চাইলেও মন ঠিকই দেখতে চায়!
সেদিন পিয়াকে লুকিয়ে দেখতে গিয়ে ওর কোমরেই চোখ আটকে গেল। আর তা পিয়ার চোখে ধরাও পড়লো।
কি লজ্জা! পিয়া কি ভাবছে কে জানে!
ভালোবাসার মানুষ সানজানা আর সে কিনা চোরা চোখে পিয়াকে দেখে! ছি!

আর পিয়ারও ঝামেলা আছে! শাড়ি পরে নতুন বউ সেজে ঘুরলে চোখ তো ওদিকে যাবেই। পিয়ারও তো বুঝা উচিত।

******

আমি রুমে ঢুকে দেখি সায়ান কোমরে তোয়ালে পেঁচিয়ে শাওয়ার শেষে কেবল বের হয়েছে, আমাকে দেখেই উল্টো ঘুরে আবার বাথরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়।
দরজার ওপাশ থেকে চেঁচিয়ে বলে পিয়া তুমি এ রুমে কি করছো??
— এ রুমে মানে??
— মানে এ সময়টাতে তুমি কিচেনে অথবা মায়ের রুমে থাকো। তো আজ এখানে কেন??

আমিও চেঁচিয়ে উত্তর দেই, আমি থাকি না বলে তুমি দরজা লক না করেই এমন নাঙ্গা হয়ে ঘুরবে??
— ফালতু কথা বলবে না। আমি নাঙ্গা ঘুরছি কোথায়? আর বিছানার উপর থেকে আমার কাপড়গুলো দাও!
— দিচ্ছি! তবে সায়ান, তুমি না একটা আজব চিড়িয়া! তোমাকে চিড়িয়াখানায় রাখা উচিত অতি লাজুক প্রাণী ভূষিত করে।

সায়ান কাপড় পড়ে বের হয়ে বলে আমি মোটেও আজব চিড়িয়া নই। এটাকে ভদ্র ছেলে বলে যা তোমার মতো মিচকা ডাইনী কোনোদিন বুঝবে না।

— কি আমি ডাইনী!! আর তুমি কি? তুমি একটা ড্রাকুলা! তুমি হাসলে তোমার ঐ গজদাঁত ড্রাকুলার মতো চিকচিক করে।

চুল আচড়াতে আচড়াতে সায়ান বলে আমি ড্রাকুলা হলেও কিউট ড্রাকুলা! তোমার মতো না।
আর তুমি আবার শাড়ি পরেছো কেন??

— কেন? তুমি আমার শাড়ি পরার পেছনে লেগেছো কেন? মিচকা ডাইনী আমি, শাড়ি পরি আর আলখাল্লা পরি তোমার কি??

— দরকার কি রোজ রোজ শাড়ি পরার!
— আমার অনেক ভালো লাগে।
— কিন্তু আমার ভালো লাগে না।
—- কেন ভালো লাগে না??
— তোমাকে বুঝাতে পারবো না।
— না পারলে নিষেধও করবে না আর তোমার ভালো লাগা না লাগা দিয়ে আমার কিছু যায় আসে না।
— উফঃ তুমি বুঝছো না!
— তো বুঝাও!!
— শাড়ির কারণে আমি তোমার সাথে ইজি হতে পারি না। আর ঐদিন কি অঘটন ঘটলো! তাছাড়া শাড়িতে…..
— আর কি সমস্যা শাড়িতে??
— তোমাকে … তোমাকে শাড়িতে অনেক বেশি আকর্ষনীয় লাগে তাই আমি চাই না তুমি শাড়ি পরো একদমে সায়ান এ কথাটা বলল।

সাধুবাবার কাচুমাচু চেহারা দেখে আমি হাসতে হাসতে বলি আমাকে আকর্ষনীয় লাগলে তোমার কোনো সমস্যা হয় কি??
— না না আমার কিসের সমস্যা হবে??
— সেটাই তো তোমার তো সমস্যা হওয়ার কথা না, তাই না??
— এক মিনিট! তুমি কি মিন করছো?
— আমি বলছি আমি কেন যে কেউ আকর্ষনীয় হয়ে তোমার সামনে ঘুরলেও তো তোমার সমস্যা হওয়ার কথা না, তাই না??
আমি মুখ টিপে হাসতে লাগি।

— কেন সমস্যা হবে না, আমি কি পুরুষ মানুষ না?
— ও তাই? চিন্তার বিষয় তো! যে ছেলে সানজানার মতো রুপবতী, আকর্ষনীয় হট মেয়ের সাথে প্রেম করে অথচ এখন পর্যন্ত একটা চুমু দেয় নি সে ছেলে তো নিজেই একটা বিরাট সমস্যা।
— তোমার মুখে কি কিছুই আটকায় না, পিয়া? তুমি না অনেক বেশি স্ল্যাং ওয়ার্ড ইউজ করো। তুমি আসলেই একটা মিচকা ডাইনী!
— আজাইরা! আমি সদা সত্যি কথা বলি।

সায়ান হঠাৎ আমার হাত খপ করে ধরে বলে সত্যি কথা বল, না?? তাহলে আসো তোমাকে একটা গভীর করে চুমু খাই। তারপর আমি কি পারি, কি পারি না যাচাই বাছাই করো।

আমি এক লাফে দূরে সরে গিয়ে বলি সরি সরি সরি! বাপরে! সাধুবাবা তো বহুত খেপেছে!

—সেটাই। আমি তোমার মতো ফাজিল না তাই বলে এতো ভালো মানুষও মনে করো না আমাকে, বুঝলে!

— ওকে বস! তো এবার কি সানজানার সাথে ডেটে গেলে চুমু টুমু দিবেন নাকি এবারও সাধুবাবা হয়ে থাকবেন??
সায়ান মুখ বাঁকিয়ে বলে, না এবার আর হাতছাড়া করবো না, কষে একটা চুমু খাবো। আফটার ওল আমিও পুরুষ মানুষ!

আমি হেসে বলি সায়ান কষে কেউ চুমু খায়?? কষে তো চড় খায়!

সায়ান চোখ ঘুরিয়ে —আমি কষে চুমুই খাবো বলে অফিসের উদ্দেশ্য রুম থেকে বের হয়ে যায়।

আমার হাসি থেমে মন খুব খারাপ হয়ে যায়। আমি কেন এ প্রশ্নটা করলাম? যে উত্তর আমি নিতে পারবো না তা কেন জানতে চাইলাম!!

আমি যতই হাসিখুশি সায়ানের সাথে মিশি না কেন, যতই সানজানাকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করি না কেন আমি মনে মনে সানজানাকে হিংসা করি। অনেক বেশি হিংসা!
কারণ আমি আমার অজান্তে এ ছয়ফুট লম্বা আলোথেলো ছেলেটাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। এ ছেলেটার টানে আমি এখনও রয়ে গেছি এ পরিবারে। আমার মতো বুদ্ধিমতী মেয়ে কেন এমন বোকার জগতে বাস করছে আমি জানি না। প্রেমে পড়লে বুঝি এমনই হয়! ঠিক বেঠিক ন্যায় অন্যায় কিছুই মাথায় আসে না। চোখের রঙিন চশমাটা খুলতেই ইচ্ছে করে না!
আমার প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা সব পায়ে ঠেলে সায়ান সানজানার কাছে চলে যাবে তবুও আমি বোকার মতো ওকে ভালোবাসছি। আমি জানি সায়ানের সাথে আমার কোনো ভবিষ্যৎ নেই কিন্তু তারপরও আমি ওকে আঁকড়ে ধরতে চাচ্ছি। ওর সাথে যে কটা দিন আছি সেকটা দিনই যেন আমার, একান্ত আমার।

★*****-******★*****-*——

অফিস শেষে সন্ধ্যায় রাব্বি ভাইয়ের সাথে সায়ান স্টাডি রুমে বসে গল্প করছে। আমি ভদ্রতাবশত দেখা করে হাই হ্যালো করলাম। কিন্তু খেয়াল করলাম সায়ানের মুখটা যেন অন্ধকার হয়ে আছে, সে ভোঁতা মুখে বসে আছে। অথচ রাব্বি ভাই এসেছে শুনে ও কত খুশি হয়েছিলো। ও নিজেই সবসময় বলে রাব্বি ওর প্রাণের বন্ধু! অথচ এখন সায়ানকে দেখে মনে হলো ওর মনের ভেতরে চরম অশান্তি চলছে। কি ঘটনা হতে পারে??
থাক দু বন্ধুর ব্যাপার! ওতোটা মাথা না ঘামিয়ে আমি নাস্তার আয়োজন করতে নিচে চলে যাই।

পিয়া রুম থেকে সরে গেলে রাব্বি বলে কি রে উত্তর দিলি না আমার প্রশ্নের?

সায়ানের কেমন হাসফাঁস লাগে। কি উত্তর দিবে ও! সানজানা দেশে ফিরলে সায়ান পিয়াকে ডিভোর্স করবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর সায়ান নিজেও জানে না।
সায়ান এখন খুব সুন্দর একটা সময় পার করছে। শুধু সুন্দর না, শ্রেষ্ঠ সময় পার করছে। পিয়ার সাথের বন্ধুত্ব ওর জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। সেখানে ডিভোর্স, কবুল, সমাজ, নীতি সব কিছু ছাড়িয়ে, সবকিছুর উর্ধ্বে পিয়া।
পিয়াকে এক সময় চলে যেতে হবে সেটা সায়ানও জানে কিন্তু মনকে বুঝাতে পারে না। মনের এ দ্বিধা সায়ান কারও সাথে শেয়ার করতে পারে না। সায়ানের সবচেয়ে কাছের মানুষ এক রাব্বি আর দ্বিতীয় এই পিয়া। কিন্তু পিয়াকে তো আর ওকে নিয়েই অস্থিরতার কথা বলা যায় না আর রাব্বিটা জানি ইদানীং কেমন হয়ে গেছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সায়ানের দিকে তাকায়। যেন চোখ দিয়েই মন নিংড়াতে চায়। এমন সব প্রশ্ন করে বসে যার উত্তর সায়ান জানে না বা নিজের কাছেই স্বীকার করতে চায় না।

রাব্বি আবার বলে দেখ সায়ান তুই যেহেতু ডিসাইড করেছিস তুই সানজানাকেই চাস, তো পিয়াকে নিয়েও তোর আলাদা কিছু চিন্তা করা উচিত।

সায়ান কিছু বলে না। সে কি আসলেই সানজানাকে চায় নিজেই বুঝে না। আর পিয়াকে নিয়ে কি আলাদা চিন্তা করবে সে!

রাব্বি নিজের মতো বলতে থাকে পিয়াকে ডিভোর্স দিলেও যেহেতু ও তোর খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে সুতরাং তোর উপর একটা দায়িত্ব থেকে যায় ওর। পিয়া তোর জন্য এতো বড় স্যাক্রিফাইজ করছে তোরও তো ওর ভালো মন্দ চিন্তা করা উচিত, তাই না??
যদিও পিয়া ডিভোর্সের পর আশা করি ঝামেলায় পড়বে না। ও ডাক্তার, দেখতে সুন্দরী-ভালো পাত্র ও পেয়ে যাবেই। তুই ওর জন্য নিজ দায়িত্বে পাত্র দেখিস। বুঝলি!

সায়ানের দম বন্ধ বন্ধ লাগে। পিয়ার বিয়ে, ওর পাত্র কি বলে রাব্বি। শালা কি বন্ধু না দুশমন?
সবচেয়ে বড় কথা ও পিয়ার পিছনে লেগেছে কেন? পিয়ার ভালো চায় বলে বলে খালি সায়ানকে কেন আক্রমন করে কে জানে!

রাব্বি সায়ানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষণ পর বলে আমিও কিন্তু পাত্র খারাপ না।
তুই আমাকে তোর লিস্টে রাখতে পারিস। তুই তো আমাকে ভালো করেই চিনিস। আমি যে পিয়ার জন্য বেস্ট হবো তা তুই অস্বীকার করতে পারবি না। তাছাড়া আমি তোদের বন্ধুত্বে কখনোও কোনো বাধাও হবো না ।

হঠাৎ সায়ানের মাথায় রক্ত উঠে যায়। প্রচণ্ড রাগে সে হিতাহিত ভুলে রাব্বির কলার চেপে ধরে।

ঐ মুহূর্তে পিয়া স্বপ্নাবুর সাথে নাস্তা নিয়ে ঢুকে।

রাব্বি পরিস্থিতি বুঝে সাথে সাথে হেসে বলে মারপিট ছাড়া চলতেই পারিস না বুঝি, দোস্ত। এখন বিয়ে করেছিস বউয়ের সামনেও পিটাবি?

সায়ান পিয়াকে দেখে চুপ হয়ে বসে। স্বপ্নাবু চলে গেলে রাব্বি বলে পিয়া তুমি কি প্রতিদিন শাড়ি পরো? এ যুগে কেউ কিন্তু বিয়ের পর এতো শাড়ি পরে না। তোমার ব্যাপারটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। আমি বিয়ে করলে আমার বউকেও রোজ শাড়ি পরে থাকতে বলবো।
পিয়া একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। রাব্বির কথাগুলো জানি কেমন। মুখে বলে এক কথা কিন্তু চোখে অন্যকিছু খেলা করে। ঠিক বুঝতে পারে না পিয়া।

পিয়া রুম থেকে বের হয়ে গেলে সায়ান অসহায় চোখে রাব্বির দিকে তাকিয়ে বলে তুই কেন এমন করছিস রাব্বি? এমন কথা কেন বলছিস যার জন্য আমি তোর কলার চেপে ধরলাম।

রাব্বী চেহারায় খুব আলাভোলা ভাব এনে বলে আসলেই তো, তুই কেন আমার কলার চেপে ধরলি দোস্ত?? আমি তো বুঝলামই না। তুই কি বুঝেছিস? রাব্বি আবার সায়ানের দিকে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকায়।

রাব্বীর ফালতু অভিনয় দেখে সায়ান মুখ শক্ত করে বসে থাকে।

— আজ আসি দোস্ত। তুই চিন্তা করে বের কর তুই কেন রাগ করলি। ইদানিং আমার কথায় কেন তোর এতো রাগ উঠে?? উত্তর পেলে আমাকে জানাইস!
এটা মনে রাখবি সবসময়, আই এম অলওয়েজ ফর ইউ দোস্ত! এখন যাই।

রাব্বি চলে গেলে সায়ান ওভাবেই বসে থাকে। রাব্বিকে তার বিরক্ত লাগছে আর এই বিরক্ত লাগার কারণে নিজের উপরই রাগ লাগছে। রাব্বি কেমন ছেলে তা সায়ানের চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। রাব্বি পাত্র হিসাবে ভালো সেটা বলার অবকাশ থাকে না বরং সায়ানের চেয়েও ভালো। কোনো বিপদে আপদে রাব্বি সবসময় সায়ানের আশ্রয় হয়েছে অন্যদিকে সায়ান কখনোও কাউকে আশ্রয় দিতে জানে না। নিজেই নার্ভাস হয়ে আশ্রয় খুঁজে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আজ নিজের বন্ধুটাকে খুব বিরক্ত লাগছে। পিয়াকে নিয়ে রাব্বির এতো আগ্রহ সায়ান কোনোভাবেই নিতে পারছে না।
পিয়ার কথা মনে হতেই সায়ানের অস্থিরতা আরও বেড়ে যায়। অনেকটা ছুটে সে নিজের রুমে যায় পিয়ার খোঁজে।

পিয়া রুমেই বসা ছিল। সায়ান কিছুক্ষণ একথা সেকথা বলে। তারপর জিজ্ঞেস করে পিয়া তোমার ফিউচার প্ল্যান কি??

পিয়া সায়ানের দিকে না তাকিয়েই বলে কোন প্ল্যান জানতে চাও? ক্যারিয়ার নিয়ে কি ভাবছি সেটা, না তোমার সাথে ডিভোর্সের পর কি করবো সেটা?

পিয়া সরাসরি পয়েন্টে চলে আসায় সায়ান নিজেই বোকা বনে যায়। এরপর আর কি প্রশ্ন করবে বুঝে পায় না।

পিয়া নিজেই বলে তোমাকে ডিভোর্সের পর কয়েকদিন সবকিছু থেকে ছুটি নিবো। নিজের মতো থাকবো, নিজেকে নিয়ে ভাববো। তারপর চাকরী, পড়াশোনায় ডুব দিবো।

—আর বিয়ে?

—-হ্যাঁ ওটাও করবো। তবে এবার প্রেম করে বিয়ে করবো। আর স্যাটেল মেরেজের রিস্কে যাবো না।ন্যাড়া বেল তলা একবারই যায়, কি বল?

সায়ান মুখ শুকনো করে হাসার চেষ্টা করে।

—দুবছর প্রেম করে আমার পুরো দিওয়ানা বানিয়ে তারপর বিয়ে করবো। এমন ছেলে বিয়ে করবো যে তোমার মতো আমার শাড়ি পরা নিয়ে প্রতিদিন পটপট করবে না। বরং আমাকে শাড়ি পরা দেখলে আদর আহ্লাদ করবে। আর তোমার মতো আলাভোলা ছিঁচকাঁদুনে তো আর চাই না। এবার স্ট্রং মেন্টেলেটির ছেলে বিয়ে করবো যার কাঁধে মাথা রেখে আমি নিশ্চিন্তে জীবন কাটাতে পারি, বুঝলে??

সায়ান মাথা নিচু করে বসে ছিল। পিয়ার কথা শেষ হলে সে চুপ করে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
পিয়া চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে খেয়ালই করে না সায়ান বুকে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে বেড়িয়ে গেছে।

#****★******-

সায়ান আজ বাইরে অযথা হেঁটে বেড়াচ্ছে। কোথাও শান্তি পাচ্ছে না। মনের মধ্যে কি এক যন্ত্রণা, চিনচিন ব্যথা, কেমন এক হিংসা অনুভুতি! মনে অসংখ্য প্রশ্ন কিন্তু উত্তর জানা নেই।
অশান্ত মন সমাধান না পেয়ে সবচেয়ে আশ্রয়ের জায়গা পরম বন্ধুর কথাই মনে পড়ল সায়ানের। অবশেষে সে উদ্দেশ্যেই রওনা দিল।

আজ রাব্বির বাসায় কেউ নেই। বাবা-মা আজ সকালে বোনের বাড়ি রাজশাহী বেড়াতে গেছে। রাব্বি একা একা টিভি দেখছে আর সায়ানের কথা ভাবছে।
আজকের ডোজ সায়ানের জন্য হয়তো বেশি হয়ে গেছে। সায়ান কতটা হজম করতে পারবে কে জানে। কিন্তু ওর মগজ ক্লিয়ার না হওয়া পর্যন্ত রাব্বি হাল ছাড়বে না। অল্প দিনের ভালোলাগা আর সত্যিকারের ভালোবাসা যে এক না তা সায়ানের বুঝা উচিত। পিয়া যে সায়ানের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা দখল করে আছে তা ওর অনুভব করা উচিত।

সায়ান আর সানজানা নিজেদের ভালোলাগা থেকে ভালোবাসায় জড়িয়েছিলো সেখান পর্যন্ত সব ঠিক ছিলো। হয়তো তা সামনে এগুতো কিংবা হোঁচট খেয়ে পড়তো। কিন্তু ঝামেলা বাঁধে সায়ানের এমন হঠাৎ বিয়ে হওয়া আর হুট করে পিয়া সায়ানের জীবনে চলে আসা। পিয়া শুধু আসে নি ওর বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে সায়ানের হৃদয়ে অন্তরে একেবারে গিঁথে গেছে। যা সায়ান মোটেও অনুধাবন করতে পারছে না।
পিয়ার প্রতি সায়ানের যে মুগ্ধতা তা আর কারোও প্রতি সায়ান দেখায় নি। এমন কি সানজানার বেলায়ও না। সানজানার সাথে শুধুমাত্র কমিটেড বলে সে যদি পিয়াকে সরিয়ে সানজানাকেই বেছে নেয় তবে সায়ান জীবনের চরম ভুল করবে। সানজানার মাঝে সে বার বার পিয়াকেই খুঁজবে। ফলে সে সানজানাকে নিয়ে সুখী হতে পারবে না। অন্যদিকে পিয়াকে চোখের আড়াল করলেও মনের আড়াল করতে পারবে না সায়ান।

সায়ানের একটা বড় সমস্যা সে নিজে থেকে কোনো ডিশিসন নিতে পারে না। অন্যের ডিশিসনটাই নিজের করে নেয়। সানজানা ওকে ভালোবাসি বলেছে ব্যাস সায়ান ওটাকেই ভালোবাসা ধরে নিয়েছে।
অথচ সত্যিকারের ভালোবাসা ওর সামনেই ওকে বার বার ছুঁয়ে যাচ্ছে কিন্তু বোকাটা টেরই পাচ্ছে না। এবার অন্তত নিজের অনুভূতিটা নিজে বুঝুক। নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিক সে আসলেই কি চায়।

হঠাৎ কলিং বেল বাজায় রাব্বির চিন্তায় ছেদ পড়ে। এখন আবার কে আসলো ভেবে বিরস মুখে দরজা খুলে দেখে সায়ান দাঁড়ানো। চোখ লাল, বিমর্ষ মুখ।কিছুক্ষণ আগেই দেখা চেহারার সাথে এখনের চেহারার কোনো মিল নেই। যেন এইমাত্র যুদ্ধ হেরে পরাজিত সৈনিক নত মাথায় দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে।

সায়ান তোর কি হয়েছে?—বলতেই সায়ান রাব্বিকে ধুপ করে জড়িয়ে ধরে কিন্তু কিছু বলে না।
রাব্বির বুঝতে বাকি থাকে না সায়ানের মনে ঝড় বইছে। আজ রাব্বিই তার একমাত্র আশ্রয়।

চলবে।
লেখকঃ ঝিনুক চৌধুরী।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here