শুধু তুই ৩ পর্ব -২৭

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ২৭
#Tanisha Sultana

এক মনে তাকিয়ে আছে আদি নিধির মাথার দিকে। এক অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে গেছে আদি। এই এক রত্তির মেয়েটা আদিকে পাল্টে দিচ্ছে। আদি সেটা বেশ বুঝতে পারছে। চাইলেও মেয়েটাকে দুরে সরাতে পারছে না। কিন্তু এই মেয়েটাতো ছোট। এখনো মেচরিটি আসে নি। তাই আদিকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলছে আর আদির সাথে থাকছে। কিন্তু যখন বড় হবে ভালো মন্দ বুঝবে তখন তো বুঝতে পারবে এরকম একটা ছেলের সাথে ওর যায় না। এই ছেলে ওর যোগ্য নয়। তখন তো চলে যাবে। যেমনটা জুঁই চলে গেছিলো। তাই আর আদি মায়াতে জড়াতে চায় না।
পুরো জীবনটা পরে আছে নিধির। নিধি যখন ঠিক ভাবে প্রাপ্ত বয়ষ্ক হবে তখন তো আদির চুল পেকে যাবে। নিধি বুঝতে পারবে এরকম বুরোর সাথে সংসার করা যায় না। আদিকে নিজেকে কন্ট্রোল করতে হবে। জড়াবে না নিধির সাথে। নিধির একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যতে গড়ে দেবে। তারপর নিধির জীবন থেকে সরে যাবে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আদি।
“তুমি যদি আরও কয়েক বছর আগে পৃথিবীতে আসতে বা আমি যদি আরও পরে দুনিয়াতে আসতো তাহলে ভালো হতো। তোমার আমার বয়সের ডিফারেন্স এতোটা না হতো।
ধ্যাত কি সব ভাবছি। এসব ভাবা ঠিক না।।
আদি চোখ বন্ধ করে নেয়।
নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

প্রায়,রাত শেষের দিকে চলে এসেছে। এখন পর্যন্ত আদির চোখে এক ফোটা ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই।
ফজরের আজানের শব্দে নিধির ঘুম ভেঙে যায়। নিধিকে নরতে দেখে আদি চোখ বন্ধ করে নেয়। নিধি মাথা উঁচু করে আদির মুখটা দেখে মুচকি হাসে। আর একটু এগিয়ে এসে আদি কপালে লেপ্টে থাকা সিল্কি গুলো হাত দিয়ে এলোমেলো করে দেয়।
” এতো কিউট কেনো আপনি? খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। আচ্ছা আপনার কি আমাকে ভলাোবাসতে ইচ্ছে করে না? কেনো করে না? আমি কি সুন্দর না? না কি আপনাকে ইমপ্রেস করতে পারি না?
নাহহহ আমাকে তিথির থেকে টিপস নিতে হবে৷ কি করে আপনাকে আচলে বাঁধবো। আজ থেকেই উঠে পড়ে লাগবো কাজে।
নিধি বিরবির করে বলে।
মুখটা এগিয়ে এনে আদির কপালে চুমু দেয়। আদির বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। আর চোখ বন্ধ করে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও অনেক কষ্টে আছে।
নিধি আদির থেকে সরে যায়। মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে অন্য পাশে শুয়ে থাকে।

ভোরের দিকে আদির চোখ লেগে আসে। সব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে যায়।
তিথির কাছ থেকে টিপস নেয় নিধি। এখন থেকে তিথির কথা মতো চলবে। তাই আদি নিধিতে মগ্ন হয়ে যাবে। তিথি বলেছে।

সকাল সকাল গোছল সেরে ইউটিউব দেখে শাড়ি পড়ে নেয়। লাল পারে নীল শাড়ি পড়ে। শাড়িটা খুব পাতলা। ঠোঁটে গাড়ো লিপস্টিক কানে নীল ঝুমকো গলায় চেকন স্বর্নের চেইন নাকে সাদা পাথরের ছোট নাক ফুল হাত ভর্তি নীল চুড়ি পায়ে নুপুর। চোখে মোটা করে কাজল পড়েছে। উঁচু হিল পড়ে নেয়।
বেশ লব্ধা দেখাচ্ছে নিধিকে। নিধি হাইট ৫’ আর আদির হাইট ৬’ আদির মাথা ছুঁতে গেলে নিধিকে মোরার ওপর দাঁড়াতে হয়।
আয়নায় নিজেকে নিজে দেখেই নিধি হাজার বার ক্রাশ খাচ্ছে। ফোন নিয়ে ফটাফট কয়েককটা সেলফি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট করে নেয়। তারপর হাঁটতে যায়। ওমা নিঅি হাঁটতে পারছে না। শাড়ি উঁচু করে ধরে লাফাতে লাফাতে কিচেনে যায়।
ইউটিউব দেখে শাড়ি পড়ে নিয়েছি কিন্তু শাড়ি পড়ার পর কি করে হাঁটতে হয় সেটা কেনো ইউটিউব এ দেওয়া নেই?
নিধি ইউটিউবকে বকতে বকতে যায়।

কিচেনে সৌরভ আর সৌরভের মা রান্না করছে। নিধির লাফানোর শব্দে ওরা ভ্রু কুচকে নিধির দিকে তাকায়।
“ও মা নিধি তুমি লাফাচ্ছো কেনো?
সৌরভের মা এগিয়ে এসে বলে।
” আর কাকিমা বলো না
ইউটিউব দেখে শাড়ি পড়া শিখে নিয়েছি কিন্তু শাড়ি পড়ে কি করে হাঁটতে হয় এটা ইউটিউব এ নেই। তাই এমন করে হাঁটছি।
বিরক্তি নিয়ে বলে নিধি।
সৌরভের মা বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। সৌরভ হা করে তাকিয়ে আছে।
“আমি কফি বানাবো। নিধ একটা লাফ দিয়ে বলে।
” এই না না আমআমি করে দিচ্ছি
সৌরভের মা বলে।
“আমার সুইট কাকিমা
গাল টেনে বলে নিঅি।
সৌরভের মা কফি বানাতে যায়।
” তোমাকে এতো বড় বড় লাগছে কেনো? পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বলে সৌরভ।
“সত্যি বড় বড় লাগছে। নিধি লাফিয়ে উঠে বলে। সৌরভ আর সৌরভের মা ছিটকে ওঠে।
সৌরভ বুকে থু থু দেয়।
” ইসসসস আমাকে বড় বড় লাগছে। ভাবতেই লজ্জা লজ্জা লাগছে। নিধি লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বলে।
“পাগল হয়ে গেলো না কি? হঠাৎ এমন বিহেব করছে কেনো?
সৌরভ মনে মনে ভাবছে।

” কাকিমা হয়েছে?
এক লাফ দিয়ে একটু এগিয়ে বলে নিধি।
“হ্যাঁ হ্যাঁ হয়েছে।
তারাতাড়ি করে নিধিকে কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বলে উনি। নিধি ধন্যবাদ বলে লাফাতে লাফাতে চলে যায়।

রুমে এসে আদির পাশে কফির মগ রেখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে নেয়। তারপর আদির পাশে বসে মুচকি একটা হাসি দেয়। কেমন নার্ভাস নার্ভাস লাগছে৷
একটা ঢোক গিলে নেয়।
” ও গো শুনছেন? উঠুন না? ও সুয়ামি উঠুন না।
আদিকে ধাক্কা দিয়ে বলে নিধি।
এরকম ডাক শুনে আদি ধরফরিয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসে।
“ককে
এদিক সেদিক চোখ ফিরিয়ে কিছু খোঁজার চেষ্টা করে বলে।
নিধি লজ্জা লজ্জা মুখ করে বসে আছে।
নিধির দিকে চোখ পড়তেই আদি স্তব্ধ হয়ে যায়। এ কাকে দেখছে আদি? এটা কি নিধি?
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিধির দিকে। চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়েছে।
আদি ভ্রু কুচকে ফেলে। কারণ নিধি সত্যি সত্যি লজ্জা পাচ্ছে না কিন্তু লজ্জা পাওয়ার ভাব করছে।
” আপনার জন্য কফি এনেছি।
কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বলে। আদি কফির মগটা নেয়। নিধি রেগে যায়। আদির হাত থেকে মগটা নেয়। আদি কপালে দুটো ভাজ ফেলে।
“কি হলো?
” আমি এতো সুন্দর করে সাজুগুজু করেছি। পাক্কা এক ঘন্টা লজ্জা পাওয়ার একটিং করে লজ্জা পাওয়া শিখেছি। আর আপনি নিরামিষের মতো কফির মগ নিলেন।
শুনুন। আমি যখন কফির মগ এগিয়ে দেবো তখন আপনি মগ নেওয়ার বাহানায় আমার হাত ছুঁয়ে দেবেন। আমি লজ্জায় নুয়িয়ে পড়বো। বুঝছেন?
আঙুল তুলে ঝাঁঝালো গলায় বলে নিধি।
আদি হাবলার মতো তাকিয়ে আছে। কি বলছে এই মেয়ে? আদির মাথায় ঢুকছে না? হঠাৎ হলো টা কি?
নিধির পেটের দিকে চোখ আটকে যায় আদির। ফর্সা পেটের ওপর নীল রং। মাতাল হওয়ার জন্য যথেষ্ট। আদি একটা ঢোক গিলে।
“এই কি হলো? কথা কানে যাচ্ছে না।
নিধি বলে।
” তুমি আমার মুখ
নিধি আদিকে থামিয়ে বলে
“একদম বাজে কথা না। আমি যা বলবো তাই।
আদি নিধির কথা শুনে ঢোক গিলে। বেড়াল হঠাৎ সিংহ হলো কি করে?
“আজ আর আদি নিরামিষ থাকতে পারলো না।

চলবে
ছোট হওয়ার জন্য সরি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here