সীমাহীন ভালোবাসার নীড় পর্ব -০৪

#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ৪
,
,
,
,
,
আদ্রিয়ান নওমির রুমের ভিতরে যেয়ে দেখে নওমি তার চেয়ে লম্বা একটা পুতুল কে নিয়ে মারামারি করচ্ছে আর কি কি জেনো বলচ্ছে আদ্রিয়ান নওমির পাশে যেয়ে বসতেই নওমি একটু সরে বসলো। আদ্রিয়ান খানিকটা হাসলো।

আদ্রিয়ানঃকে বুঝি আমার উপরে রাগ করেছে
নওমিঃধলু কাউকে বলে দে আমি পচা মানুষদের উপর রাগ করিনা
(ওর পুতুলকে উদ্দেশ্য করে বলে)
আদ্রিয়ানঃওলে বাবা বুঝলাম আমি পচা মানুষ কিন্তু আমি তো কিছু বলিনি
নওমিঃতোমার জন্যই তো নানি আমাকে বকা দিলো
(ঠোঁট উলটে)
আদ্রিয়ানঃআচ্ছা সরি মাফ করে দেও আর হবে না এই যে কান ধরছি(নওমির কান ধরে)
নওমিঃএটা আমার কান (মুখ ফুলিয়ে)
আদ্রিয়ানঃতাহলে আমার কান কোনটা
নওমিঃকেনো কেনো এইটা
(আদ্রিয়ান এর কান টেনে ধরে)

দুইজনে মিলে অনেকক্ষন মজা করে। খুব তাড়াতাড়ি দুইজনার বন্ধুত্ব হয়ে যায় দরজার আড়াল থেকে নিহারিকা রেজওয়ান এবং শামসের রেজওয়ান সস্তির নিশ্বাস ছাড়ে কারন এর আগে যতো গুলা ডাক্তার দেখানো হয়েছে সব গুলো নওমির বাচ্চামো তে হয়তো বিরক্ত হয়ে চলে গেছে নাহলে নওমি ভয়ে লুকায় পড়েছে।

______

রাত ১২ টা
আদ্রি ধীরে ধীরে রুম থেকে বের হয়। যাতে কেউ বুঝতে না পারে কারন বুঝতে পারলে মিসেস খান আর মিস্টার খান তুলকালাম বাধাবে এমনিতেই মিথিলার জন্য মিসেস খান এর মেজাজ টাও তুঙ্গে উঠে আছে,,,,

আদ্রি বাহিরে বের হয়ে সস্তির নিশ্বাস নেয় গ্যারেজ থেকে সাইকেল বের করে সাইকেল এর ঝুড়িতে একটা বক্স রাখে তারপর সাইকেল নিয়ে চলে যায় তার শান্তির নীড়ে। খান ভিলা থেকে প্রায় ৪০ মিনিটের দুরুত্বে একটা বিল আছে আদ্রি সেই বিলটা নাম দিয়েছে #সীমাহিন ভালোবাসার নীড়। তার খুব কাছের একটা মানুষ তাকে এই জায়গাটাই নিয়ে এসেছিলো কিন্তু সে জানে না মানুষ টা এখন কোথায় আদৌ আছে কি না কিন্তু জায়গাটা আজও তার সাথে আছে

আদ্রি বিলে পৌছে সাইকেল এর ঝুড়ি থেকে বক্সটা বের করে সেটা নিয়ে একটা ব্রেঞ্চিতে গিয়ে বসে। বক্সটা খুলে একটা রেড ভেলভেট কেক বের করে তার ভিতর থেকে যার উপরে লিখা হ্যাপি বার্থডে আদ্রি+ দিয়ে ফাকা আজকে যে তার সাথে আরও একজনার জন্মদিন কিন্তু কে সে তার নাম তার জানা নাই খালি এইটুকু জানা আছে এই সে দিন যেদিন সে মানুষ টার সাথে তার দেখা হয়েছিলো

দিনটা ছিলো ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী বাবা মা সবাই থাকতেও অনাথ হয়ে পড়েছিলো সে। তার সাথে দুই দন্ড বসার মতোও ছিলোনা কেউ। সেদিন ছিলো তার জন্মদিন স্কুল থেকে বের হয়ে রাস্তাই একা একা হাটছিলো সে। হাটতে হাটতে কখন মাঝ রাস্তাই পৌঁছে গেছিলো বুঝতেই পারেনি সে। বুঝতে পারলো আশেপাশের মানুষের চিৎকার চেচামেচিতে
একটা ট্রাক সম্পূর্ণ ফ্রোর্সে তার দিকে ধেয়ে আসচ্ছিলো ছোট আদ্রি ভয়ে দুই হাত দিয়ে মুখে ঢেকে নিয়েছিলো সেকেন্ড পড়েই তীব্র এক ধাক্কায়
রাস্তার ওইপাশে গিয়ে পড়ে আদ্রি ঘাস থাকায় বেশি ব্যাথা না পাইলেও ভয়ে জ্ঞান শূন্য হয়ে পরে যখন জ্ঞান ফীরে তখন সে এই বিলে নিজেকে আবিষ্কার করে। তার মাথার পাশে একটা মাস্ক পরিহিত ছেলে বসে ছিলো

আদ্রিঃআপনি কে
ঃ,,,,
আদ্রিঃকি হলো কিছু বলচ্ছেন না কেন

এই বার ও ওই সাইড থেকে কোন উত্তর না আসাতে আদ্রি ভেবে নেয় হয়তো কথা বলতে পারে না তার আফসোস হয়
আদ্রিঃতোমর ই ভালো তাই না কথা বলতে পারোনা কিন্তু দেখো আমি কথা বলতে পারি কিন্তু কথা বলার কেউ নাই

ছেলেটা অবাক চোখে তাকায় আদ্রির দিকে হয়তো বয়সের বেশি ম্যাচুরিটি নিয়ে কথা গুলা বলছে
তাই।

আদ্রিঃজানো আজকে আমার জন্মদিন প্রতিবার এই দিনে পুরো বাসা সাজানো হয় ভালো ভালো রান্না হয় সব আমার পছন্দের কিন্তু এই বার তো কারো মনেই নাই (মাথা নিচু করে)

হঠাৎ করে ছেলেটা আদ্রির সামনে একটা কেক এর বক্স বারায় দেয়।আদ্রি অবাক চোখে তাকায়

আদ্রিঃতোমার কাছে কেক কি করে আজকে কি তোমার ও জন্মদিন

ছেলেটা হ্যা তে মাথা নাড়ায় আদ্রি কেক এর উপর নাম টা পরে হ্যাপি বার্থডে তারপরে আর মনে পরেনা তার কতো চেষ্টা করেছে সেদিন কার পর থেকে ছেলেটাকে আর দেখেনি আদ্রি কিন্তু ঘটনাটা আর জায়গা টা তার সৃতিতে গেথে গেছিলো তাই তো সেদিনকার পর থেকে প্রতি বছর এই দিনে এই জায়গায় আসে সে,,,,,,

____

দূরে দাঁড়িয়ে কেউ একজন আপন মনে আদ্রির সকল কান্ড গুলো ভিডিও করছে। সাথে কতো গুলো ছবিও ক্লিক করা হয়ে গেছে। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে সামনে বসে থাকা মানবীটির কর্মকাণ্ড আজকে প্রায় ৬ বছর পরে জায়গাটায় পা রেখেছে সে। পড়াশুনা ব্যবসায় এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো যে ভুলেই গেছিলো এই মায়াবীনি টার কথা সে তো ভাবতেও পারনি হঠাৎ এই ভাবে সামনে আসবে তার নীড়ের পাখিটা । সে তো ভুলেও গেছিলো পাখিটার কথা
কিন্তু যখন আজকে সকালে পাখিটার সাথে তার ধাক্কা লাগে তখন গার্ডকে দিয়ে তার সকল ইমফোর্মেশান টা সার্চ করতে বলে আর সেখানেই তার স্কুল সার্টিফিকেট এ পাখিটার ছবি দেখে তার মস্তিষ্কে পুরানো সৃতি ফুটে উঠে

(জি ইয়েস আপনাদের ধারনা ঠিক সকালে যে ব্যাক্তিটার সাথে ধাক্কা লেগেছিলো সে ব্যাক্তিটাই অফিসের বস এবং আদ্রিতার পিছু নিচ্ছিলো আর আদ্রিকে সেদিন বাচানোর মানুষটাও এক।কিন্তু মানুষ টা কে সেটা দেখি আপনারা বলতে পারেন কি না)

বেশ কিছু ক্ষন পরে সেখানে আদ্রিয়ান এর গাড়ি এসে থামে আদ্রি কেক টার বক্স লুকিয়ে রাখে কি দরকার জোড় করে কিছু মনে করিয়ে দেওয়ার হোক না সেটা জোড় করে ভুলানোর চেষ্টা

আদ্রিয়ানঃতুই এখানে এতো রাতে কি করছিস। তুই জানিস যদি মা জানতে পারে তখন কি হবে। রোজ রোজ কথা শুনতে ভালো লাগে তোর
(আদ্রিতার সামনে দাঁড়িয়ে)
আদ্রিঃএকটু বসবেন প্লিজ(বসার জন্য জায়গা করে দিয়ে কাতর গলায় আবদার করে)

আদ্রিয়ান বোনের কাতর গলায় করা আবদার টা ফেলতে পারেনা বসে যায় বোনটার পাশে। আদ্রিয়ান বসতেই আদ্রি তার কাধে মাথা রাখে

আদ্রিঃজানেন মিস্টার খান আমার না একটা ভাই ছিলো বড় ভাই খুব ভালোবাসতো আমাকে আমি বলতে পাগল ছিলো সে। আমার আব্বু সে আমার মাকে ভালোবাসতো কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তার বিয়ে হয়ে যায় আমার খালামনি মানে আমার বড় আম্মুর সাথে। কিন্তু আব্বু তো আম্মুকে ভালোবাসতো তাই বড় আম্মুর সম্মতি নিয়েই বিয়ে করেছিলো আম্মুকে (এই টুকু বলে নিশ্বাস ছাড়ে আদ্রি।)

আদ্রিয়ান অবাক হয়ে চেয়ে আছে বোনের পানে নিজের ভাইয়ের কাধে মাথা রাখে বলচ্ছে আমার না একটা ভাই ছিলো কতোটা অভিমান থাকলে এমন টা বলে কেউ

আদ্রিঃজানেন সবাই খুব ভালোবাসতো আমাকে আব্বুর প্রিন্সেস ছিলাম আমি আমার সব আবদার বিনা শর্তে পূরন করা হতো। জানেন আমার বড় আম্মু তার মেয়ের চেয়ে বেশি আমার খেয়াল রাখতো। কিন্তু আমার ভাগ্য সেটা মানতে নারাজ তাইতো আম্মু ছেড়ে চলে গেলো বহুদূরে। আম্মু যাওয়ার পরে বড় আম্মুর আচরণ বদলে যেতে থাকলো ধীরে ধীরে চোখের কাটা হয়ে গেলাম তার ভাইয়া আপু তারাও আর তেমন কথা বলতোনা ভাইয়া দূর থেকে খেয়াল রাখলেও বুকে জরায়ে জিজ্ঞেস করা টা ভুলে গছিলো যে কেমন আছি আমি। আব্বুও দূরে সরায় দিলো এতো বড় একটা পৃথিবীতে নিঃশ্ব হয়ে গেলাম আমি এতো এতো মানুষের ভীড়েও আমি একা কেনো (কাদতে কাদতে হেচকি উঠে গেছে)

হেচকি তুলে কান্না করতে করতে এক সময় ঘুমাই পড়লো আদ্রি আদ্রিয়ান ও তার চোখের কোণায় লেগে থাকা অশ্রু মুছে বোনকে কোলে তুলে নিলো,,

চলবে!!!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here