সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ-১৭

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-১৭
মোর্শেদা হাবিব!
***************
রানী ব্যাতিব্যস্ত হয়ে বেরোবার সময় সাবুমিয়াকে ডেকে বাড়ীর কাজগুলো বুঝিয়ে দিলেন!
মিরাকে বাড়ীতেই রেখে গেলেন কারন ওর নতুন শ্বশুড় বাড়ীর লোকেরা হুটহাট করেই চলে আসছে।তাছাড়া মেহমানদারী সামাল দেবার জন্য ইরা তো আছেই।যদিও সে তার নিজের জালাতেই জর্জরিত।তাকেই সামাল দিতে আরেক জন লাগছে।
রানী আজ মর্মে মর্মে পৌষীর অভাবটা যেন উপলদ্ধি করতে পারলেন!ও থাকা কালে রানীর কোন কিছু নিয়ে ভাবতে হয়নি!ও সবসময় নিজের বুদ্ধিমতো সব কাজ সুচারুরূপে গুছিয়ে রেখেছে!তাছাড়া তার তিন মেয়ের সাথেও ওর চমৎকার বোঝাপড়া রয়েছে।
রাজের বাবা ওকে রাজের সাথে বিয়ে দিয়েছেন।কথাটা শুনে রানীর যতটা আঘাত পাবার কথা ছিলো ততটা আঘাত তিনি পাননি! কেন পাননি এটা নিজের মনের কাছেই তার নিজেরো প্রশ্ন!
তাহলে কি তিনি অবচেতনেই পৌষীকে এ বাড়ীর বৌ হিসেবে ভেবেছিলেন?
এখন পৌষী না থাকায় ওর অবস্থানটা রানী টের পাচ্ছেন।শান্ত দীঘির মতো মেয়েটার ব্যক্তিত্বে কখনো কোনো ঢিল পড়লেও তাতে স্রোত সৃষ্টি হতোনা কেবল একটা তরঙ্গ তৈরী হয়েই মিশে যেতো!
আচমকা রানীর নিজের বলা কথাগুলোর জন্য নিজের মনেই অনুতাপ বোধ করছেন !
ভাবতে ভাবতেই গন্তব্যে পৌঁছে গেলেন রানী।গাড়ী এপোলোর ভেতরে পার্ক করার পর রানীর চিন্তা জাল বিচ্ছিন্ন হলো।
গাড়ী থেকে দ্রুত নেমে লিফটে উঠলেন তিনি।

একটা সুসজ্জিত কেবিনে রাজ শুয়ে আছে।বাম পায়ের হাঁটুর কাছ থেকে শুরু করে গোড়ালী পর্যন্ত সাদা ব্যান্ডেজ করা।বাম হাতের কব্জির কাছটা আর বুকে পিঠে সামান্য আঁচড়ের মত ছড়ে গেছে।ডাক্তাররা ফ্রাকচারের আশঙ্কা করছেন।এক্সরে রিপোর্ট দেখলে তারপর বোঝা যাবে!
রাজ চোখ বন্ধ করে চুপ করে শুয়েছিলো।এমন সময় রানীকে ঢুকতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখটা সরিয়ে নিলো!
রানী ধীর পায়ে ছেলের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলেন!
-“কেমন আছিস আব্বু?”
রাজ মৃদু স্বরে বললো-“আলহামদুলিল্লাহ্।”
ছেলের নির্লিপ্ত আচরণ রানীর বুকে বাজলো!ছেলের বুকে হাত বুলিয়ে বললেন-
-“আমি জানি তুই আমার উপর রাগ করেছিস।কারন আমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েই সাহেদারা চলে গেছে!আসলে আমি ওকে ভুল বুঝেছিলাম।তখন ববুঝতে পারিনি যে….!আ’ম স্যরি বাবা।”
রাজ মায়ের দিকে চেয়ে রইল।কোনো উত্তর দিলোনা!
এমন সময় আমজাদ চৌধুরী প্রবেশ করলেন তার সাথে একজন ডাক্তার।দুজনে কথা বলতে বলতে প্রবেশ করলেন!
ডাক্তার আমজাদ চৌধুরীকে ব্যখ্যা দিতে লাগলেন রাজের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে!যদিও তারা নিশ্চিত নন তবু ফ্রাকচার হবার সম্ভাবনা রয়েছে।যদি তা না হয়ে থাকে তবে সে দুতিন দিনের মধ্যেই রিলিজ পেয়ে যাবে।
ডাক্তার রাজকে চেকআপ করে চলে যাবার পরে আমজাদ ভারী স্বরে ছেলেকে বললেন-“এখন কেমন আছিস?”
রাজ মাথা নাড়লো-“আলহামদুলিল্লাহ!”
-“হমম…”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


রানী স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন-“ওকে কি এখানে দু একদিন থাকতে হবে?
আমজাদ উত্তর দিলেন-“থাকতে হলে থাকবে!”
-“তাহলে রাতে তো কারো থাকতে হবে ওর সাথে।ওদিকে আজ মীরার শ্বশুড়বাড়ীর লোকেরাও রাতে আসবে!বুঝতে পারছিনা কোনদিক সামলাবো!ডাক্তারকে বলে ওকে রিলিজ করে বাসায় নিয়ে গেলে হবেনা?”
আমজাদ মৃদু ধমকের সাথে বললেন-“কি দরকার,ও এখান থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েই তারপর বাড়ী যাবে।দুটো দিন থাক এখানে!ওর সাথে রাতে থাকার লোকের অভাব হবেনা।তুমি বাড়ী চলে যাও!এদিকটা আমি দেখছি!”
রানী ছেলের কপালে চুমো খেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ী চলে গেলেন! নীরা মায়ের সাথে এসেছিলো। সেও ভাইয়ের সাথে হাত মিলিয়ে মায়ের পিছু পিছু চলে গেলো!
আমজাদ চৌধুরীও ওদের সাথে সাথেই বেরিয়ে গেলেন।রাজ সময় কাটানোর জন্য নার্সকে দিয়ে দুটো ম্যাগাজিন যোগাড় করেছে।শুয়ে শুয়ে সেগুলোই দেখতে লাগলো।
একটু পরেই আমজাদ চৌধুরী বাইরে থেকে ফিরে আসলেন।এসে ছেলের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে ওর শরীরের খোঁজ খবর নিলেন।
-“কি রে ফুপিরে খুঁজতে যেয়ে নিজেই দেখি কুপোকাত হয়ে গেলি।”
রাজের মুখটা মলিন হলো।আমজাদ ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন!
-“সুস্থ হয়ে ওঠ তাড়াতাড়ি।তারপর তোর ফুপিদের খুঁজিস!”
-“ততদিনে অনেক দেরী হয়ে যাবে না বাপ্পী? ফুপিরা কোথায় আছে সেখবরটা না জানা পর্যন্ত আমার স্বস্তি লাগছেনা।ওরা যদি ঢাকা ছেড়ে চলে যায়?”
-“চলে গেলে কি আর করা।তুই তোর মায়ের পছন্দে এমিকাকে বিয়ে করে ফেলবি।”
রাজ বাবার দিকে তাকালো।সে ওর সাথে ঠাট্টা করছে কিনা বোঝার চেষ্টা করলো!আমজাদ ওর কাঁধে হালকা চাপড় মেরে বললেন-“আমি বিকেলের দিকে একবার এসে দেখে যাবো।রাতে তোর সাথে থাকার জন্য তো কাউকে লাগবে।তোর বৌ থাকলে সে নিজেই তার দায়িত্বটা ঠিক পালন করতে পারতো।কিন্তু সে তো….যাক্,তুই বিশ্রাম নে!আমি যাচ্ছি।”
আমজাদ চলে যাবার পরে রাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ম্যাগাজিনে মন দেবার চেষ্টা করলো।কিন্তু বাপ্পি যাবার সময় যেকথা বলে গেলেন সেকথাই মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।সত্যিই তো, পৌষী থাকলে ওর হাসপাতালে থাকাটা আনন্দময় হয়ে উঠতো কিন্তু সে আশার গুড়ে নিজেই বালি ঢেলেছে।পৌষীকে খূঁজে পায়নি।
ম্যাগাজিন পড়তে গিয়ে রাজের ঝিমুনি আসতে লাগলো।ম্যাজিনটাকে বুকের উপর রেখেই ঘুমিয়ে পড়লো সে।
ঘুমের ঘোরেই টুং টাং শব্দ পেলো।
হয়তো নার্স অষুধপত্র ঘাটাঘাটি করছে।একসময় মিষ্টি একটা গন্ধ নাকের কাছে এলো।তারপর ওর কপালে সেই মিষ্টি গন্ধটা চুমো খেলো।
রাজের মনে হলো সে হয়তো সুন্দর কোনো স্বপ্ন দেখছে।
রাজ আধো ঘুম আধো চেতনে অনুভব করলো কেউ একজন ওর হাতটা নিজের হাতে টেনে নিলো।তারপর আলতো করে ওর হাতে হাত বুলাতে লাগলো।
রাজের ঘুম ছুটে গেলো।ঝট করে ফিরে তাকালো আর তাকিয়েই স্থির হয়ে গেলো।
এ এক অদ্ভুত মুহূর্ত, দুজন দুজনের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।না বলা সমস্ত কথা যেন উপচে পড়ছে চোখের ভাষাতে!
রাজ মৃদু স্বরে বলে উঠল-“তুমি…?”
পৌষী ওর কপালে হাত রাখলো!
রাজ আস্তে করে ওর হাত সরিয়ে দিয়ে অন্যদিকে তাকালো !
পৌষী ডান হাত বাড়িয়ে ওর মুখটা নিজের দিকে ফেরালো।
রাজ তাকিয়ে আছে অভিমানাহত চোখে।
-“স্যরি….!” পৌষী মৃদুস্বরে বললো!
রাজ কিছু বললো না।
পৌষী আস্তে করে ওর মাথাটা রাজের বুকে রাখলো।
রাজ টের পেলো পৌষী কাঁদছে।
একহাতে ওর মুখটা আঁকড়ে ধরলো।পৌষী ভেজা চোখে তাকিয়ে বললো-
-“আমার জন্যেই আজ আপনার দুরবস্থা!”
রাজ মাথা নেড়ে মুচকি হাসলো!
ওর থুতনীর দাড়ীতে নাক গুঁজে বললো পৌষী।
-“এখন কেমন আছেন আপনি ?”
-“যেমন রেখেছো… !”
-“খুব বেশী লেগেছে….না ?”
-“হমম”!
-“কোথায় লেগেছে?”
-“এখানটায়…..”!
বলে বুকের বামদিকটায় হাত রেখে ইঙ্গিত করলো রাজ।
পৌষীর চোখ পানিতে টলমল করছে।
রাজ ঊঠে বসতে চাইলে পৌষী ওকে সাহায্য করলো!আধশোয়া করে ওকে বসিয়ে পৌষী ওর বুকের কাছে বসে ওর চুলে হাত বুলিয়ে বলল-“আল্লাহর রহমত আপনার খারাপ কিছু হয়নি!”
-“হলে কি হতো!তুমি তো জানতেও না!আমাকে মেরে রেখে তো চলেই গেছিলে!”
-“ছিঃ এভাবে বলবেন না!আমি তো কেবল নিজের সম্মান বাঁচাতে চলে গিয়েছিলাম!”
-“তাই বলে আমার কথা একটাবারও ভাববে না?তুমি জানো সেই দুটো দিন আমার কেমন কেঁটেছে?'”
-“স্যরি…!”পৌষী মুখ নামালো!
-“আরো কাছে এসে আদর করে স্যরি বলো তাহলে স্যরি নেবো নইলে নেবোনা!”
পৌষী মুচকি হেসে রাজের বুকে মাথা রাখতেই রাজ ডান হাত দিয়ে ওকে শক্ত জড়িয়ে ধরলো।
পৌষীর মাথার ওপর নিজের থুতনী ঠেকিয়ে বললো-“সব নাহয় রেখে গেছো বুঝলাম,মোবাইলটা পর্যন্ত নাওনি।তুমি কি আমার সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ রূপে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলে?”
পৌষী সোজা হয়ে বসলো।অপরাধীর মতো মুখ নামিয়ে বললো-
-“ন্…না…আসলে!”
-“আসলে কি আমি জানতে চাই! তুমি আমাকে বিন্দুমাত্র আভাস না দিয়ে একা একজন অসুস্থ মানুষকে সাথে নিয়ে পথে নামলে কোন্ সাহসে ?”
রাজের কন্ঠস্বরটা কিছুটা কঠিন শোনালো।পৌষী কোনো জবাব দিতে পারলোনা।
-“আমি রাগ যতনা করেছি তারচে বেশী কষ্ট পেয়েছি! সে তোমার মা আর আমার কিছুই না? সে একটা মেজর অপারেশনের রুগী!”
-“আম্মা নিজেই থাকতে চাচ্ছিলো না!”
-“আচ্ছা, আমার আম্মু কি বলেছে তোমাদেরকে?”
পৌষী চুপ করে রইলো!
রাজ দ্বিতীয়বার আর কোনো প্রশ্ন না করে বললো-
-“ইন ফিউচার যদি আমাকে ফেলে পালবার ধান্ধা করো তো জেনে রেখো,আজ তো হাসপাতালের বেডে পেয়েছো, সেদিন লাশটা…..!”
দ্রুত রাজের মুখে নিজের হাতচাপা দিলো!
রাজ হাত সরিয়ে দিয়ে তাতে চুমু খেয়ে বললো-“অনেক কষ্ট দিয়েছো,তুমি!”
-“একবার তো স্যরি বললাম!”
-“স্যরি তে কি হয়?”
-“তাহলে আর কিভাবে বলবো!”
রাজ কিছু একটা বলতে যাবার আগেই দরজা খোলার শব্দে পৌষী সরে বসলো!
নার্স ঢুকলো।
বেডের পায়ের কাছে এসে চার্টটা হাতে নিয়ে বললো-“আপনার ঔষধ গুলো খেয়েছেন?”
রাজ পৌষীকে দেখিয়ে বলল-“সি ইজ মাই ওয়াইফ।টেল হার এভরিথিং,সি’ল গিভ মি।
নার্স “ওকে” বলে ওষুধের বক্সটা হাতে নিয়ে পৌষীকে দেখিয়ে দিলো কোনটা কখন।
তারপর রাজের জ্বর দেখে পালস চেক করে চলে গেলো!
নার্স চলে গেলে রাজ হাতের ম্যাগাজিনটা সরিয়ে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলো পৌষীর দিকে। পৌষী সেই হাত আঁকড়ে ধরলো!
রাজ বললো-
-“সেই কখন থেকে বোরকা পড়ে বসে আছো।এটা খুলে বসো!”
-” না,থাক্…ওড়না আনিনি!”
-“এখানে তো আমি ছাড়া কেউ নেই!ডাক্তার এলে চট করে হিজাবটা পড়ে নিও!”
পৌষী বোরকাটা খুলে একপাশে হ্যাঙ্গার ঝুলিয়ে রেখে এসে বসলো! হিজাবটা হাতে নিয়ে পড়তে যাবে রাজ সেটা টান দিয়ে হাতে নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিলো।
-“এখানে বসো তো !” নিজের পাশের জায়গাটা দেখিয়ে বললো রাজ।পৌষী চুপচাপ তাই করলো!
রাজ ওর হাত ধরে বললো-“বাপ্পী তোমাকে কোথায় পেলো!
পৌষী ব্যাংকের ঘটনাটা খুলে বললো।মামীকে আসতে দেখে বড়মামা ওকে ডাক্তারের রুমে বসিয়ে রেখেছিলেন।তারপর মামিরা চলে গেলে বড়মামাই ওকে এখানে দিয়ে যান।
তিনি পৌষীর কাছ থেকে বাড়ীর ঠিকানাও নিয়ে গিয়েছেন।অফিস হয়ে তিনি সোজা মগবাজারে যাবেন।রাজ অবাক হয়ে বললো-“মগবাজারে কে থাকে?”
পৌষী তৃণার সূত্রে পাওয়া ফ্ল্যাটের কথাটা বললো।রাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
-“জানিনা,আম্মুর মনে কি চলছে!সে তোমাকে নিজ থেকে বৌ বলে মেনে না নেয়া পর্যন্ত বাপ্পী বা আমি তাকে কোনোরকম ফোর্স করবো না।কারন তাতে সে আমাদের চাপে মেনে নিলেও তোমার ব্যপারে তার ইগোটা থেকে যাবে!এটা আমি চাই না!এর জন্য আমাকে যতদিন অপেক্ষা করতে হয় করবো।
পৌষী চুপচাপ শুনলো রাজের কথাটা, নিজে কোনো মন্তব্য করলোনা।
হঠাৎ মনে পড়তেই উঠে ঔষধের বক্সটা এনে তা থেকে অষুধ বের করে রাজের হাতে দিলো!গ্লাসে পানি ঢেলে রাজের হাতে দিলে রাজ তা হাতে নিয়ে বললো-
“প্রথমে মনে হচ্ছিলো,আমার কি দুর্ভাগ্য, তোমাকে খুঁজতে যেয়ে নিজেই গৃহবন্দী হয়ে পড়লাম।”
-“আর এখন কি মনে হচ্ছে?”
রাজ হাসলো-“নিজেকে পৃথিবীর সবচে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।জানতাম না,হাসপাতালের বিছানায় এসে সেবা শুশ্রুষার জন্য তোমাকে পেয়ে যাবো! নিজের সৌভাগ্যে নিজেরই ঈর্ষা হচ্ছে।
পৌষী রাজকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে বললো-
“আচ্ছা,অনেক গল্প হয়েছে।এবার বিশ্রাম নিন।একটু ঘুমানের চেষ্টা করুন!”
-“ঘুমুতে ইচ্ছা করছে না।তোমার সাথে গল্প
করতে ভালো লাগছে!”
-“লাগুক।এখন কোনো গল্প না।আমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছিনা!”
-“সত্যি যদি আবার পালিয়ে যাও…!”
পৌষী দুষ্টু হেসে বললো-
-“তাহলে আপনি আরেকটা বিয়ে করে সংসারী হয়ে যাবেন!”
রাজ চট করে পৌষীর চোয়ালটা চেপে ধরলো ডান হাত দিয়ে!
-“কি বলেছো? আমাকে কষ্ট দিয়ে খুব মজা পাও তুমি, তাই না?”
পৌষী রাজের দিকে তাকিয়ে রইলো!
তারপর নরম সুরে বললো-“মৃত্যু ছাড়া আমরা আর আলাদা হবো না,ইনশাআল্লাহ! ”
★★★
সাহেদা ধীর পায়ে হাঁটাহাঁটি করছিলেন! এমন সময় দরোজায় নক হলো।সাহেদা, দরোজা খুলে আমজাদ চৌধুরীকে দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বললেন–“ভাইজান.
…তুমি?”
-“কেমন আছিস?”ভারী স্বরে বললো আমজাদ চৌধুরী।
সাহেদা সসংকোচে বললো-
-“এসো ভেতরে এসো ভাইজান !”
আমজাদ চৌধুরী ঘরে ঢুকে একটা চেয়ারে বসতে বসতে বললেন-
-“তোর সাথে অনেক কথা আছে।আমি বেশীক্ষণ বসবোনা!তোর কাপড় চোপড় যা আছে হালকা পাতলা গুছিয়ে নে!বাকিটা পরে এসে নেয়া যাবে।এখন তুই আমার সাথে চল্!”
সাহেদা মৃদু স্বরে বলল-“না…ভাইজান!আমি জানি তুমি আমাকে রানী ভিলায় নিতে এসেছো!কিন্তু আমি ওখানে যাবোনা!”
-“কে বললো তোকে রানী ভিলায় নিতে এসেছি।তুই ধানমন্ডিতে আমাদের পুরোনো বাসা “নীড়”এ থাকবি।ওখানে সব সুব্যবস্থা করা আছে।তুই এতোবড় একটা অপারেশনের রুগী।এ বাড়ীতে তো কিছুই নেই…ছিলি কি করে এই কদিন ভাবতেই পারছিনা!”
সাহেদা ম্লান হাসলো!
-“পৌষী ফিরলে তো আমাকে খুঁজবে….!”
-“খুঁজবে না, ও এখন হাসপাতালে আছে রাজের কাছে!!”
-“সে কি? রাজের কি হয়েছে?”
-“চল্…যেতে যেতে সব কথা হবে।”
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here