সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ-১৮

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-১৮
মোর্শেদা হাবিব!
***************
সন্ধ্যের পরপর আমজাদ চৌধুরী আর সাহেদা রাজের কেবিনে এলেন রাজের সাথে দেখা করতে।
আমজাদ জানতেন পৌষী কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই একরকম হুট করেই তার সাথে এখানে চলে এসেছে।তাই স্বাভাবিক ভাবেই নিত্য প্রয়োজনীয় কোনকিছুই তার সাথে নাই!
সে বেচারী ব্যাংকের কাজে বেরিয়েছিল একরকম ভেবে ! কিন্তু হঠাৎ করেই ওকে সেখান থেকেই হায়ার করে সোজা এপোলোতে নিয়ে আসেন তিনি !সেকথা মাথায় রেখেই ওর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র সহ সাহেদাকে আজই একবারে চেকআপ করিয়ে নিতে এসেছেন আমজাদ চৌধুরী।
সাহেদাকে দেখে রাজ সালাম দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো।
সাহেদা ওর কপালে চুমু খেয়ে বললেন-“কেমন আছিস বাবা?”
-“আলহামদুলিল্লাহ…আ’লা কুল্লি হাল!”রাজ মৃদু হেসে জবাব দিলো।
সাহেদা মুচকি হেসে বলল-“কেউ কেমন আছো বললে জবাবে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে শুনেছি! কিন্তু শেষের বাক্যটা কেন বলে তা তো জানিনা?”
রাজ সামান্য হেসে উত্তর দিলো-“আমি যতটুকু জানি যে,আমরা যখন যে অবস্থাতেই থাকি তার জন্য আমরা আল্লাহর শোকর করবো বলেই আল্লাহর প্রশংসা করে “আলহামদুলিল্লাহ”বলি আবার যখন আমাদের ওপর বিপদ বা মসিবত আপতিত হয় তখনও আমরা আল্লাহর প্রশংসা করবো পাশাপাশি বলবো, যে অবস্থাতেই আছি তার সকল প্রশংসা শুধু আল্লাহর জন্যই!কারন আমি এরচে খারাপ থাকতে পারতাম।তাই ওই বাক্যটা বলা!”
সাহেদা এসে রাজের গাল ছুঁয়ে বললেন-“এরই মধ্যে অনেক কিছু শিখে ফেলেছিস।পৌষী তো আমাকে বারবার বলে, কিন্তু আমি অতটা শিখে উঠতে পারিনি! যাক্,ডাক্তার কি বললো?”
-“এক্সরে রিপোর্ট তো আল্লাহর রহমতে ভালো এসেছে,ফ্রাকচার হয়নি তবে মাংস থেতলে গেছে!হয়ত দু চারদিনের মধ্যে ছেড়ে দেবে!”
-“হুঁ,দোয়া করি তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠ্!”
-“কিন্তু আমি সুস্থ হয়ে গেলে তো আর প্রতিদিন তোমাদের দেখা পাবোনা।তাই দুআটাও মন থেকে আসছেনা!” ম্লান সুরে কথাগুলো বলল রাজ।
সাহেদা চুপ মেরে গেলেন।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


আমজাদ বলে উঠলেন-“কেন দেখা পাবিনা?তোর ফুপিকে “নীড়ে’ নিয়ে যাবো আজ।প্রতিদিন ওদের যাবতীয় খোঁজখবর তোকেই রাখতে হবে তবে এই খবরটা তোর মা’কে আপাতত জানতে চাচ্ছিনা! আমি চাই ও নিজেই পৌষীকে ও বাড়ীর বউ করে ঘরে নেবার কথাটা বলুক !”
পৌষী মুখ নামালো।
সাহেদাও কোনো মন্তব্য করলেন না!”
টুকটাক আরো কিছু কথা বলে সাহেদা মেয়ের দিকে তাকালেন।
পৌষী মা’কে জড়িয়ে ধরলো।
তিনি মৃদু শব্দে মেয়েকে কিছু বলে ওর ব্যবহার্য্য জিনিসের ব্যগটা ওর হাতে ধরিয়ে দিলেন।তারপর ভাইয়ের দিকে তাকালেন সাহেদা!
-“ভাইজান,পৌষী এখানে থাকলে ভাবী সাহেবা তো শুনবেন।তখন…!”
আমজাদ তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন
-“ওটা নিয়ে তুই ভাবিসনা।রানী ইরাকে নিয়ে খুব ঝামেলার মধ্যে আছে।তাই আমিই ওকে হাসপাতালে আসতে নিষেধ করেছি।ছেলের সাথে প্রতিদিন ফোনে কথা বলে নিচ্ছে, আর কি।”
-“ইরার কি হয়েছে?”
-“মেয়েটার আমার ভাগ্যটাই খারাপ।অপাত্রে পড়েছে।ওর হাজবেন্ডকে নিয়েই সমস্যাটা বেঁধেছে।খুব বিশ্রী সমস্যা….কি আর বলবো!”
সাহেদা আর কোনো প্রশ্ন করলেন না।
রাজ আর পৌষীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার নিজের ডাক্তারের চেম্বারে গেলেন!
★★
রানী সময়টা আসলেই খুব খারাপ যাচ্ছে।একদিকে মীরার নতুন শ্বশুড়বাড়ীর কুটুম্বিতা অপরদিকে ইরার শ্বশুড়বাড়ী থেকে ওকে ফিরে যাবার তাগিদ দিচ্ছে ওর শ্বাশুড়ী! কিন্তু ইরা ফিরে না যাবার ব্যাপারে অনড়।ইরার ব্যপারটা নিয়ে রানী যথেষ্ট চিন্তায় আছেন।এর একটা স্থায়ী সমাধান দরকার!এভাবে তো অনন্তকাল চলতে পারেনা!
রানী সিদ্ধান্ত নিলেন এ নিয়ে ইরার বাবার সাথে রাতে বসবেন।একটা স্থির সিদ্ধান্তে আসতে হবে তাকে।ইরার সাথেও কথা বলতে হবে।বিষয়টা রানীকে যথেষ্ট ভাবিয়ে তুলেছে!লাখ টাকা খরচ করে এতো ধুমধাম করে বিয়ে দিলেন অথচ একটা বছরও গেলোনা মেয়ে তার স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে এসেছে।কারন ইরার স্বামী রূপে-গুনে,অর্থ-
বিত্তে,যশ-খ্যাতিতে কোন অংশে কম নয় কমতি কেবল ঈমানদারীতায় যার ভিত্তিই হলো সততা!
আর সেই সামান্য সততাটুকুর অভাবেই তার আদরের মেয়ে আজ মুখ কালো করে ঘুরে বেড়ায়,আত্মীয় -স্বজনের কৌতুহলী প্রশ্নের সম্মুখীন হবার ভয়ে সব ধরনের ঘরোয়া আড্ডা মজলিস এড়িয়ে বেড়ায়!
রানীর বুকটা ফেটে যেতে চায়।কি ভেবেছিলেন আর কি হলো!
বড় মেয়ে বলে ইরাকে একটু বেশীই আদর করেন রানী!বড় ছেলে রাজ আর প্রথম মেয়ে ইরার প্রতি তার ফিলিংসও অন্যরকম।
আর আজ তার সেই দুর্বল দুটো স্থানেই আঘাত পেয়েছেন তিনি!
ছেলেটা একসিডেন্ট করে হাসপাতালে পড়ে আছে।মেয়েটা স্বামীর দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে নিজের সংসারে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে।
★★★
রাজ চুপচাপ পৌষীর কাজকর্ম দেখছিলো।
ওর চেহারাটা কিছুটা ম্লান।
দু একদিনের মধ্যে ওকে হাসপাতাল ছেড়ে দিতে হবে।
এদিকে পৌষী আজ রাজকে ধরে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে ওর গা ধুয়ে দিয়েছে।গত দুদিন ধরে গোসল করতে না পেরে রাজের নিজেরই অস্বস্তি লাগছিলো।আজ অস্বস্তি কিছুটা দুর হয়েছে।ওর চুলগুলো আলাদা করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে দিয়েছে।তারপর সেগুলোকে শুকনো করে মুছে দিয়েছে।
সবশেষে রাজের কাপড় বদলে ওকে ফ্রেশ করে শেষে পৌষী নিজেও গোসল সেরে একটা হালকা ক্রিম কালারের থ্রিপিস পড়েছে!
ভেজা চুলগুলো ওর পিঠময় ছড়ানো।গোসলের পরপর মেয়েদের চেহারায় যে সজীব কমনীয়তা দেখা যায়,পৌষীর মুখটা সেকারনেই কিনা কে জানে রাজের চোখে ওকে খুব সজীব দেখাচ্ছে!
সে রাজের জন্য গরম ভাতের বক্সটা বের করলো।ক্যান্টিনে রুগীদের উপোযোগী সাদা ভাত,সব্জী,মাছের ঝোল,মুরগীর মাংস রান্না হয়।ওখানে বলে রাখা হয়েছে।ক্যান্টিন থেকে বয় এসে দু’ বেলা খাবার দিয়ে যায় এ রুমে ।
পৌষী প্লেট বাটি সব বের করে রাখলো।
সে নিজেই ভাত মাখিয়ে রাজকে খাইয়ে দেয়।
এখনো ভাত খাওয়াবার প্রস্তুতি হিসেবে সেগুলো বের করে ধুয়ে নিলো।কিন্তু এখনি ভাত বের করলোনা কারন এসময় ডিউটি ডাক্তার একবার এসে দেখে যায়।সে এসে চলে গেলে পৌষী ভাত বের করে।এখন কেবল পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সব বের করে গুছিয়ে রাখলো সে।
রাজকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পৌষী মুচকি হেসে বলল-
-“কি দেখছেন অমন করে?”
-“তোমাকে?”
-“আমাকে এভাবে দেখার কি হলো?আমি কি নতুন?”
-“তুমি তো পপ্রতিদিন নিত্য নতুন রূপে ধরা দিচ্ছো আমাকে।”
-“তাহলে যেদিন পুরোনো হয়ে যাবো সেদিন বুঝি আর ভালো লাগবেনা!”
-“কিছু জিনিস আছে যা কখনো পুরোনো হয়না।এভার গ্রীন থাকে।তুমি তেমনি একজন!”
পৌষী মৃদু হেসে ওর পাশে বসল!
রাজ ওর হাত ধরে বলল-
-“কত কষ্ট করছো আমার জন্য!
-“আপনি আমার স্বামী, আপনার সেবা করা আমার জন্য ফরয!”
-“আর আমাকে ভালোবাসাটা?”
-“সেটাও….!”
-“তাহলে আমি যখন তোমাকে ভালোবাসতে চাই তখন আমাকে বাধা দাও কেন?”
পৌষীর মুখটা ম্লান হয়ে গেলো।রাজ ওর গালে হাত রেখে বললো-
-“আমি কি আমার অধিকার পুরোপুরিভাবে পাবোনা?”
-“আপনি তো সব জানেন।আমাদের বিয়ে হয়েছে সত্য কিন্তু এখনো আমাদের মাঝে লৌকিকতার বড় দেয়াল।সেই দেয়াল টপকে আমি আপনাকে ধরা দিতে পারিনা।আমরা পরস্পরের কাছে অঙ্গিকারাবদ্ধ।মামার কাছেও।
রাজ লম্বা করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো!
পৌষী ঠোঁট মুড়ে হাসলো-“ধৈর্য্যের ফল সবসময় মিষ্টি!”
-“হুমম…কিন্তু ধৈর্য্য জিনিসটা বড্ড তেতো।”
-“আপনার পায়ের ব্যথাটা দ্রুত সেরে যাচ্ছে!হয়তো দু একদিনের মধ্যে আপনাকে ডিসচার্জ করে দেয়া হবে!আপনার তো খুশি হবার কথা!”
-“কিভাবে খুশি হই বলো?বাড়ী ফিরে গেলে তো তোমাকে সারাক্ষণ কাছে পাবোনা!এখন কি মনে হচ্ছে জানো? মন চাচ্ছে আরেকটা পা ভেঙ্গে ফেলি!তারপর আরো অনেকদিন এখানে থেকে যাই!ইস্…কেন যে এতো অল্প ব্যথা পেলাম।আরে বেশী ইনজিওরড হলে…..!”রাজের মুখ চেপে ধরলো পৌষী!
-“পাগলের মতো কি বলছেন এসব?নিজের জন্য কেউ এভাবে বদদুআ করে….ছিঃ ?”
-“তুমি জানোনা তোমাকে পেয়ে আমি কতটা খুশি!অথচ কাল বা পরশু তুমি যাবে একদিকে আর আমি যাবো আরেকদিকে।জানিনা আম্মা তোমাকে কবে আমার বউ করে ঘরে আনবেন!”
পৌষী ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললো!তারপর প্রসঙ্গ বদলাতে চাইলো-
-“ইরা আপার সমস্যাটা কি খুব জটিল ?”
রাজ উত্তর দেবার জন্য মুখ খুলতেই রাজের সেল ফোন বেজে উঠলো!
রাজ কথা বন্ধ করে ফোন ধরল-“আসসালামুআলাইকুম আম্মা!”
ওপাশে রানী কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকলেন!
তারপর বললেন-“আগে তো সালাম দিতি না,এখন দেখি হুজুর হয়ে গেছিস?”
-“হুজুর কি কোনো বিশেষ জাতের প্রাণী ?আমি তোমার জন্য আল্লাহর কাছে শান্তি চাইলাম, কই তুমি খুশি হবে তা না…..”!
-“আর আমার কপালে শান্তি……ইরার কথা তো শুনেছিস,তোর বাবা বলেনি কিছু?”
-“কিছুটা শুনেছি।বাবা তেমন কিছু ভেঙ্গে বলেনি! কেন কি হয়েছে?”
-“বাড়ী আয় সব শুনবি!ইরা আর ও বাড়ী ফিরে যাবেনা!ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিতেই হচ্ছে।”
-“সে কি..কেন?”
-“জানিনা…!”
বলে রানী দীর্ঘশ্বাস ফেললেন বড় করে,তারপর বললেন-
“পৌষীর বদদোয়া লেগেছে।না জেনে মেয়েটাকে কষ্ট দিলাম বলেই কিনা কে জানে, আল্লাহ আমাকে কষ্ট চিনিয়ে দিলেন।ইরার শ্বশুড়বাড়ী থেকে উল্টো ওর নামে অপবাদ দিচ্ছে,কেমনটা লাগে বল্?কেস করে দিতে মন চায়!কিন্তু ইরা বারন করে!বলে মানসম্মান থাকবেনা তাতে।ওর ভবিষ্যতটাও তো দেখতে হবে!”
-“দেখো, বাপ্পীর সাথে কথা বলো!”
-“বলেছি…!তোর বাবা শুনে বেশ আপসেট!সে ও ডিভোর্সেরই পক্ষপাতি!এদিকে আমার নিজের শরীরটাও ভালো যাচ্ছেনা!”
-“তোমার কি হয়েছে?”
-“বুকটা ব্যথা করে!অতিরিক্ত টেনশনের কারনে নাকি এমনটা হচ্ছে।ডাক্তার বললো!”
-“এতো টেনশন করোনা।বিশ্রাম নাও।সব ঠিক হয়ে যাবে!”
-“রাখি তাহলে?তোকে রিলিজ করবে কবে ?”
-“হয়তো আরো দু একদিন।এখনো নিশ্চিত না!”
রাজ ফোন কেটে পৌষীকে মায়ের ফোনালাপের কথাগুলো সংক্ষেপে ব্যখ্যা করলো!পৌষীর ইরার কথা শুনে বেশ আফসোস হলো!
এমন সময় ডাক্তার এলে তার সাথের নার্স গেটে নক করতেই পৌষী দ্রুত নিজেকে বড় হিজাবে আবৃত করে নিলো!
ডাক্তার রাজের পা ভালো করে চেক করে বললেন-“রুমের ভেতরেই কিছুটা হাঁটাহাঁটি করবেন। ব্লাড সার্কুলেশন বাড়বে।আপনার ভাগ্য খুব ভালো যে,লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়নি।তাহলে ব্যপারটা মারাত্মক হতো।রাজকে ধরে দাঁড় করিয়ে দিলেন তিনি নিজেই।
-“হাঁটুন,দেখি।রাজ হাঁটতে লাগলো ধীর পায়ে।পৌষী অদুরে এককোণে দাঁড়িয়ে সব দেখতে লাগলো।রাজ দু তিন ধাপ হেটেই ধপ করে বেডে বসে পড়ে বললো!
-“কষ্ট হচ্ছে!”
ডাক্তার চিন্তিত মুখে বললেন-“এমনটাতো হবার কথা না।আপনার রিপোর্ট তো চমৎকার এসেছে।আচ্ছা,আপনাকে দুটো ব্যয়াম শিখিয়ে দিচ্ছি। সেগুলো এক্সারসাইজ করুন।কাল দেখি কি অবস্থা!”
বলে ডাক্তার নার্স বিদায় নিলেন।পৌষী এগিয়ে গিয়ে ডোর লক করে হিজাব খুলে হাতে নিতেই নিজেকে শূন্যে আবিস্কার করে যারপরনাই চমকে উঠলো।
রাজ ওকে পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে নিয়েছে।
পৌষী অবাক হয়ে প্রায় চিৎকার করে উঠলো-“আরে নামান আমাকে,আপনার পায়ে ব্যথা!আমার ওজন জানেন?”
সামান্য খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ওকে নিয়ে বেডের ওপর রাখলো রাজ-“কত?পঞ্চান্ন?”
পৌষী লাজুক হাসলো-“ইয়া আল্লাহ্,প্রায় কাছাকাছি বলেছেন , চুয়ান্ন!”
-“হমম….আই ওয়াজ রাইট!”
-“কিন্তু আপনি পায়ের ব্যথায় হাঁটতে পারছেন না।আমাকে নিলেন কিভাবে?”
-“এটা হলো ম্যাজিক!”
-“কোনো ম্যাজিক না,আপনি ডাক্তারকে সত্য কথাটা বলেন নি!”
রাজ পৌষীর নাক টেনে ধরলো-“বললেই তো বাড়ী পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।তোমাকে ছেড়ে এখনি যেতে ইচ্ছে করছেনা।”
-“ইস্, কি ভয়ংকর।মিথ্যা বলা কত্ত গুনাহ।”
-“মিথ্যা বলিনি! এখনো পায়ে সামান্য ব্যথা আছে সেটাই বাড়িয়ে বলেছি,এই যা..!”
-“খুব খারাপ।আমার বাড়ী যাওয়া দরকার!”
-“দরকারটা কি আমার চেয়ে বেশী?”
-“না,তা না।সরুন,আপনাকে ভাত খাইয়ে দেই।খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
রাজ ওকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো!
★★★
মীরার বিয়ে হয়েছে সপ্তাহ দুয়েক হলো!আগামী সপ্তাহে সে স্বামীর সাথে অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে!কিন্তু মীরার মন বেশ খারাপ।আজ মীরাদের বাসা থেকে ওর পুরো শ্বশুড়বাড়ীকে দাওয়াত করা হয়েছে!
সাথে মীরার ঘনিষ্ট বান্ধবী নেহাকেও বলেছে মীরা।দুতিন বছরের জন্য চলে যাবে।প্রিয় বান্ধবীর সাথে আবার কবে দেখা হয় না হয় তাই বান্ধবীকে আসতে বলেছে!
মীরা আজ নতুন বধূর সাজে সেজে এসেছে,জড়োয়া অলংকারে মীরার সমস্ত শরীর জলজল করছে!
রানীর চোখ যেন জুড়িয়ে গেল!কিন্তু মীরার চেহারায় নতুন বধূর দীপ্তিটাই যেন নেই!রানী ভাবলেন হয়তো ক’দিন পরেই বাইরে চলে যাবে বলে মন খারাপ!তবু রানীর মন অজানা আশঙ্কায় দুলে উঠলো!
সব ঠিক আছে তো?
বড় মেয়ের ঘটনা তার মনে এক তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্ম দিয়েছে।তাই তিনি মীরার বান্ধবী নেহাকে একফাঁকে ডেকে বললেন-
-“মীরাকে ডেকে জিজ্ঞেস করোতো মা…ওর মুখটা কালো কেন?”
নেহা মুখটা নামিয়ে ফেললো সংকোচে।
রানীর মনটা খচ করে উঠলো-“কি হয়েছে নেহা?”
নেহা ইতস্তত করতে লাগলো!
রানী কিছুটা ধমকের সুরে বলরেন-“বলছো না কেন?কোনো সমস্যা?”
-“ই..ইয়ে মানে আন্টি…আপনি মুরুব্বী মানুষ, কিভাবে বলি!”
রানী নেহার হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে এলেন।
দরোজা লক করে দিয়ে বললেন-“খুলে বলো তো মা।কোনো রকম সংকোচ করোনা!আমার মেয়েটা ক’ দিন বাদেই অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে!দেশে থাকবেনা যে যখন তখন ওর সমস্যা সমাধানের জন্য ছুটবো…ওর কি হয়েছে আমাকে বলো?”
নেহা মৃদু স্বরে মীরা সমস্যাটা বললো।
শুনে রানীর মাথাটা ঘুরে উঠলো!”
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here