১৬ বছর বয়স পর্ব ৩

গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_৩ : #শাওয়ার
লেখিকা : #Lucky

শাওন দরজা ঠেলে রুমে ঢুকল। আমি তাকালাম। শাওনকে দেখে আমি সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
উনি এখানে কেন! আমার কি ওনার সাথে এক রুমে থাকতে হবে এই ৭ দিন?
শাওন এসে টেবিল ল্যাম্প এর পাস থেকে ওর ফোন টা নিয়ে আবার বেরিয়ে গেলে। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাচলাম।

একটু পরেই পিসামশাই দরজায় টোকা দিয়ে বলল, তুই কি জামা কাপড় আজ আর চেঞ্জ করবি না?!
জলদি কর। খাবার ত রেডি। সব গুলা শাড়ি পাতলা পাতলা। আর শাড়িগুলোর রঙ লাল, কমলা, মিষ্টি কালার, গোলাপি। অর্থাৎ শাশুড়ী মা সব কালারফুল শাড়ি দিয়ে ভরে দিয়েছেন।

দরকারি সব ই আছে। কয়েকটা লিপস্টিকও আছে। কিন্তু এত পাতলা শাড়ি পড়লে সব ই বুঝা যাবে।
অনেক বেছে বেছে একটা একটু তুলনামূলক ভাল পেলাম। জলদি ফ্রেস হয়ে সেটা পরে ডাইনিং এ এলাম। খাবার প্লেটে খাবার রেডি।
পিসা বলল,”দেখ তোর বর রান্নাও পারে।”
শাওন পিসামশাই এর কথায় কান দিল না। খাবার সার্ভ করতে লাগল। আমার প্লেটে যত ভাত দেওয়া হইছে আমি অতটা খাই না। পিসা বলল, কি রে খা।

– আমি এত খাইনা ত। (আমি)
– আরে diet বাদ দে। খা খা।(পিসা)
– সত্যিই পারব না।
শাওন আমার সামনে থেকে প্লেট টা নিয়ে ভাত কমিয়ে আমার সামনে দিল।
পিসা বলল, তা তোর অফিস কটা থেকে কটা। ৮ টা থেকে রাত কটা?
– কেন? (শাওন)
– না। আর কি একা একা থাকবে মেয়েটা কত সময়।(পিসা)
শাওন জানেই যে পিসা একা ফিরবে আমাকে না নিয়ে। তাই কথা বাড়িয়েও লাভ নেই।

আমার প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হলো যে একা মানে। পিসা ত আছেই। কিন্তু বলতে পারলাম না। পিসার ফোন বেজে উঠল। পিসা নিজের রুমে গেল ফোন তুলতে।
শাওনের প্লেটে ১টা রুটি আর কি কি সবজি, শসা এগুলো। এতটুকু খেয়ে থাকে কেম্নে কে জানে। কিন্তু স্বাস্থ্য ত ভালই। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম এগুলো শাওন আমার মুখোমুখি বসা। হঠাৎ শাওনের চোখে চোখ পড়ল। হার্ট এট্যাক পাওয়ার মত অবস্থা হল আমার। তাই সাথে সাথে আমি প্লেট একটু সামনের দিকে ঠেলে বললাম, “খাওয়া শেষ।”
বলেই তাড়াহুড়ো করে পালাতে গিয়েই ওচোট খেয়ে পড়লাম।
কি লজ্জাজনক বিষয়। পিসামশাই কথা শেষ করে ততক্ষনে হাজির।
– কিরে পরলি কিভাবে?
বলতে বলতে পিসা ধরে আমাকে উঠালেন।
শাওনের এবিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
– তুইও বসে আছিস। ধরলি না? (পিসা)
শাওন বলল, আমার ত আর আইনের মত লম্বা হাত না যে ধরব এখান থেকে।
একথা শুনে পিশা হাসতে লাগল। আমি নিজের রুমের দিকে গেলাম। নিজের মানে শাওনের।

শাওন পিশামশাই কে বলল, দয়া করে কাল ই ফিরে যাও আর ওকেও নিয়ে যাও।

“কি যে বলিস তোর মা আমাকে মেরে পুতে দিবে।” ফিসফিস করে পিশামশাই বলল।

শাওনের খাওয়া শেষ তাই উঠে এসে পিশার পাসে বসে স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে বলল, সুন্দরবন ঘুরতে যাওয়ার টিকিট কেটে দিব, থাকা খাওয়া আর ১ মাস ঘুড়ার সব টাকা দিব। ডিল?

পিশামশাই একটু কেশে বলল, “ঘুষ?……..ওসব ঘুষ টুষ আমি খাই না।”

শাওন তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বলল, “সাথে সাজেক যাওয়ার টিকিট বোনাস তোমার জন্য।”

পিশামশাই এর চোখ জ্বল জ্বল করে উঠল, সত্যি?

শাওন বলল “yeah, deal?”

আমতা আমতা করে পিশা বলল, “আমি হাতে কিছু পাওয়ার আগে বিশ্বাস করতেছিনা কিছু।”

“কাল ই পেয়ে যাবে,” শাওন উঠে চলে গেল হাত ধুতে।

শাওন আগের মত আর হাসিখুশি নাই দেখে পিশার খারাপ লাগতে লাগল।
আগে কত এমন ডিল করেছে। শাওন জানে পিশামশাই ঘুরতে অনেক পছন্দ করে। শাওন টাকা দিয়ে দিয়ে পিশামশাইকে ঘুড়তে যেতে সাহায্য করত। পিসি রাগ করত যে এত কিসের ঘুড়াঘুড়ি।
পিশামশাই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে খেতে আরম্ভ করল।

ঘরে এসে আমি বিছানায় বসে কনুই এ হাত দিয়ে রইলাম। বেশি ব্যথা লাগে নি। হাতের কনুইতে একটু লেগেছে। এমন ব্যথা আগেই অনেক পেয়েছি কাকি মনির থেকে। নিজের বাপ মা না থাকলে যা হয় আর কি।
যাইহোক বিছানার দিকে তাকাতেই ঘুম এসে গেল। কোনো চিন্তা না করেই বিছানায় শুয়ে পড়লাম।

দশটা বাজে।
শাওন রুমে আসল। আমি উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে ছিলাম। দরজার আওয়াজ শুনে বালিশের কোনা শক্ত করে চেপে ধরলাম। চোখ জোড়েসোরে বন্ধ করলাম।
শাওন লাইট অফ করে সোফায় শুয়ে পড়ল। বিছানা থেকে বালিশ ও নিল না।
যাই হোক আমার কি। আমি শান্তিতে ঘুমাই। হুহ। কিন্তু ওইদিনের শাওন আর আজকের শাওনের সাথে আকাশ পাতাল তফাত। তাও সাবধানে থাকা লাগবে। আমার বান্ধবীর বরের মত কাহিনী হলে?

কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলাম।
শাওন ঘুমাতে পারছে না। কারণ ওর সোফায় ঘুমানোর অভ্যাস নেই। সোফায় নড়াচড়াও করা যায় না। শাওনের ঘুম আসছে না।
সারা রাত ওর এভাবেই কেটে গেল।

ভোরে ওঠা শাওমের অভ্যাস। ৮ টায় অফিস। সেই অনুপাতে ৬ টায় উঠে গোসল করে নিজের নাস্তা নিজে তৈরি করে খেয়ে অফিসে যায়।
প্রতিদিনের মত আজও ভোরে উঠে নিজের শার্ট খুলে সোফায় রেখে তোয়ালে নিয়ে গোসল করতে গেল। গোসলখানা টা এমন যে একপাশে হাই কমোড অন্য দিকে শাওয়ার অর্থাৎ গোসল করার বাথটাব সব আছে। এই দুইয়ের মধ্যে প্লাস্টিকের মত পর্দা দেওয়া। শাওন বাথরুমে ঢুকে লাইটের সুইচ চাপতেই দেখল বাথরুমের লাইট জ্বলছে না। যদিও লাইট ছাড়া অত অন্ধকারও না। লাইট টা কমোডের দিকে সেট করা। শাওন একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল মনে মনে বলল, লাইটার কি হলো। বলে পর্দার এইপাড়ে এসে লাইট টা নামালো। লাইট টা ঠিকই মনে হচ্ছে। নড়ে গেছে হয়ত।



এদিকে আমি ঘুম থেকে উঠে রুমে শাওনকে না দেখে মনে করলাম গোসল টা সেরে নিলেই ভাল। চট করে বেডরুমের দরজা আটকে শুধু তাওয়াল ব্লাউজ আর পেটিকোট নিয়ে ঢুকলাম বাথরুমে। ঢুকে দরজা আটকে দিলাম । কারন বাথরুমে শাড়ি পড়া অনেক ঝামেলা। একবারে গোসল করে বের হয়ে শাড়ি পড়া যাবে। শাড়ি খুলে বালতির পানিতে রাখলাম। শাওয়ার ছেড়ে দিলাম। একদম বৃষ্টির মত পানি পরে বলে আমার খুব ই ভাল লাগে। হাত দিয়া পড়ন্ত পানিগুলো ধরতে ভালো লাগছিল। ব্লাউজের পিছনের ফিতা খুলতে যাব হঠাৎ লাইট জ্বলে উঠল। আমি চমকে উঠলাম। শাওন পর্দা সরিয়ে এপাশে এলো। শাওনকে দেখে আমি ভুত দেখার মত অবস্থায় পরলাম। শাওনের গায়ে শার্ট নেই। এতে পরিস্থিতি আরো অন্য রকম লাগছে। শাওনও আমাকে দেখে অবাক হলো। শাওনকে দেখে দুই পা পিছানোর কারনে শাওয়ারের পানিতে আমার গা ভিজে যাচ্ছে। কি লজ্জাজনক অবস্থা। ভাগ্যিস শুধু শাড়ি টাই খুলেছিলাম। আমি দুই হাত দিয়ে নিজের গা ঢাকার চেষ্টা করে জোরে বলে উঠলাম,
– আপনি কি করছেন এখানে? বের হন প্লিজ। খুব ই খারাপ আপনি।

শাওন তিক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বলল, What? তুমি আমার শাওয়ারের সময় বাথরুমে কেন ঢুকেছ?

ওনার কথায় কান দিলাম না।

“বের হন প্লিজ।” চোখ নিচের দিকে নামিয়ে আমি বললাম।

রীতিমত ভয়ে গা কাপছে আমার। উনার বাথরুমে উনিই থাকুক আমিই যাই। ভেবেই বের হতে যাব তখন শাওন আমার হাত ধরল।
আমি ভয়ে শিউরে উঠলাম। ” কি করছেন আপনি ছাড়ুন আমাকে । লজ্জা করেনা আপনার?!” ভয়ে ও দ্বিধাতে পরে বলে উঠলাম।

আমি নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। আর এক হাত গায়ের উপরই দিয়ে রাখলাম।
হাত ছাড়াতে পারলাম না।

“লজ্জা আমার কেনো করবে?” স্বাভাবিক চোখে তাকিয়ে শাওন বলল।

আমি লজ্জায় ওনার চোখের দিকেও তাকাতে পারছি না। সেদিন রাতের মত কিছু হবে না ত। না না। ভেবেই আমি ভয়ে বলে উঠলাম, দেখুন আমি কিন্তু চিৎকার করব, ছাড়ুন আমার হাত।

– করো (শাওন)
একথা শুনে আমি শাওনের চোখের দিকে তাকালাম। শাওন তীক্ষ্ম চোখে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “করো চিৎকার।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here