আধখাওয়া অষ্টভুজ,পর্ব:৩

উপন্যাসঃ
#আধখাওয়া_অষ্টভুজ
#পর্বঃ৩
লেখনীতেঃউম্মে নাদিয়া তাবাসসুম

সায়ান গাছ থেকে টকটকে লাল রঙের সবচেয়ে সুন্দর গোলাপটা ছিঁড়ে সারার চুলে লাগিয়ে দিতে দিতে বলে,”এই যে আমার গোলাপরানী কথা বলেছে তাহলে।”
-সারা সায়ানকে জাপটে জড়িয়ে ধরে বলে আমার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা,সায়ান।কিচ্ছু না!
-আমি জানি তো পাখি।আচ্ছা কিছু ভালো লাগতে হবেনা তুমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো তো,আমি তোমার একটা ছবি তুলি..দেখো তোমায় কেমন লাগছে খোঁপায় গোলাপ সাজে।
-কি সুন্দর গোলাপটা!

সায়ান সারার চুলগুলো আলতো করে সরিয়ে তার মুখটা সারার কাছে নিলো তারপর সারার কানে ফিসফিস করে বলতে লাগল,”গোলাপের চেয়ে আমার গোলাপরানীটা বড্ড সুন্দর!”

-সারা দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলে ধুর!হয়েছে হয়েছে আপনার এখন রঙ-ঢং শুরু,সরো তো।
-না সরবোনা।আমার বউ আমি কাছে থাকবো,আপনি বলার কে হুম?
-এইযে উনার ঢং শুরু হয়েছে।এখন আর থামার নাম নেবেন না।উফ সায়ান,অনেক রাত হয়েছে তুমি এবার বাড়ি যাও।আমি ঠিক আছি।
-শিওর তো পাখি।আর খারাপ লাগছে না তো!
-হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ!আচ্ছা দাঁড়াও, শুনোনা!
-হ্যাঁ পাখি বলোনা।
-পড়ে যাওয়া চকলেটগুলো কই,নিজে খাবে বলে কি পকেটে পুড়ে নিয়েছো নাকি?

আরাদ বিছানায় কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে বারান্দায় চলে গেল।ঘুম আসছেনা।ঐ মায়াবিনী কে বারবার মনে পড়ছে।ওমন পাগল করা মায়া কি আর ভোলা যায়?এতবছর বিলেতে থেকেছে বেশিরভাগ না হয় সাদা চামড়া,কিন্তু কত বাঙালী মেয়েও তো দেখেছে।কই কোনো রূপে তো এমন আবিষ্ট হয়নি,কি আছে এই চেহেরায়?
সত্যি নারীরা একেক আলোকঝর্ণায় একেক রূপে সজ্জিত হয়।টর্চলাইটের আলোয় কান্না বিজরিত নারীর রূপ…

ছিঃছিঃ কি ভাবছে এগুলো সে।পিচ্চি একটা মেয়েকে নিয়ে ইশ!আরাদ আনমনেই বকবক করতে থাকে।এপাশ-ওপাশ করতে করতেই ফজরের আজান দিয়ে দিলো।উঠে ওযু করে নামাজ পড়ে নিল।নামাজে যেন অদ্ভুত শান্তি পায় আরাদ।যত ই যাই হোক না যখন নামাজে থাকে সেই সময়টায় যেন সব ভুলে থাকা যায়।কি পবিত্র একটা সময়,যেন আল্লাহর সাথেই সরাসরি সাক্ষাৎ করছে।

এন্টারহেনা গাছটায় ৫৭ টা কলি এসেছে।গুণতেই যেন কি খুশি লাগছে।ইন্তিকা ক’টা কলি,ক’টা পাতা,ক’টা ফুল সব গুণে গুণে রাখে।গাছ,ফুল নিয়ে তার বেশিই আদিখ্যেতা।প্রচন্ড ভালেবাসে এসব সে।হালকা পার্পল তার উপর যেস স্ট্রবেরি সিরাপ ঢালা পর্তুলিকা গাছটায় ৬৭ টা পর্তু ফুটেছে।সকালের মিষ্টি রোদগুলো পড়তেই কি চকচকে সুন্দর লাগছে।অ্যালোস্টিট সিম্বেডিয়াম অর্কিডগুলো ঝুলে আছে বারান্দা জুড়ে।কি সুন্দর যেন আকাশের তাঁরারা গাছে ঝুলে আছে।
আগাছা গুলো নিতে নিতে পাশের জারবেরা গাছটায় নজর পড়লো গাঢ় ম্যাজেন্টা রঙের জারবেরা ফুটেছে!এই জারবেরার জন্য বিগত দু সপ্তাহ অপেক্ষা করেছে ইন্তিকা।

রামিসাআআ!
কিরে মহারানী,ওঠ না প্লিজ প্লিজ প্লিজ।স্প্রে বোটল দিয়ে পানি স্প্রে করে দিল রামিসার চোখে।
“আহ বুবু!তুমি যাও তো,আমি উঠবোনা এখন।”গুঙিয়ে গুঙিয়ে বলতে থাকে রামিসা।
হ্যাচকা টান দিয়ে রামিসাকে তুলে নিয়ে আসে ইন্তিকা,রামিসা চোখ কচলাতে কচলাতে বলে,” বুবু কি হয়েছে?”
-এই দেখ জারবেরা ফুটেছে!প্রথম জারবেরা আমার গাছের।
-ও আচ্ছা, আমি ঘুমোতে গেলাম টাটা!
বলেই রামিসা বিছানায় আবার ধপাস করে পড়ে শুয়ে থাকে।

কোনোভাবেই চোখ থেকে সরছেই না পিচ্চিটার মায়া।ধড়ফড় করে সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়েই চিৎপটাং আরাদ।

ইন্তিকা আর রামিসার হাসি আর কে দেখে!হো হো করে হাসতে হাসতে যেন মাটিতে হুটোপুটি খাবে।
আরাদ কোনোমতে নিজেকে সামলে চোখ তুলতেই দেখে আরে পিচ্চিটা!মান ইজ্জত তো সব শেষ।সেদিন এমন করে কাঁদতে থাকা মেয়েটা হাসতেও জানে?দাঁতগুলো কি সুন্দর! আগে দেখেনি তো,নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম..পিচ্চির মতোই পিচ্চি পিচ্চি দাঁতের হাসি।উফ এখনই যেন পড়ে যাবে মাথা ঘুরে!
রামিসাও হাসছে, পাগলের মতো।ফরসা পিংকিশ চেহারা,বড় বড় কি সুন্দর চোখ,গালগুলো সদ্য পেকে ওঠা টমেটোর মতো লাল লাল..চুলগুলো সিল্কি কত লম্বা!কিন্তু আরাদের রামিসাকে দেখতে মন চাইছেনা,ওর চোখ যেন আটকে যায় ইন্তিকার মায়ায়।এত সুন্দর একটা মেয়েকে তার এক ফোটা ও সুন্দর লাগছেনা,লাগছে ঐ মায়াবিনী কে।কিন্তু কেন?
রামছাগলের মতো হা করে তাকিয়ে আছে ইন্তিকার দিকে।

“এই যে মিঃ ধপাস!বলেই হাহা করে হাসতে থাকে রামিসা,একটু সাইড দিন।চিৎপটাং হয়ে তো দেখি রাস্তা-ই ব্লক করে রেখেছেন।” দু হাত দিয়ে মুখ চেপে হাসতে থাকে রামিসা।
আরাদ থতমত খেয়ে যায়।ফট করে উপরে চলে যায় আবার।
যাওয়ামাত্রই রামিসা,আর ইন্তিকা আর হাসি চেপে রাখতে পারেনা।হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে যেন।

কোন এঙ্গেলে পড়েছে দেখেছো বুবু?তারপর যা মুখটা হয়েছিল,এত বড় ছেলে কিভাবে যে পড়ল হাহাহা..বলেই রামিসা হাসতে থাকে।
-রামিসা জানিস,ছেলেটা না ভারি অদ্ভুত! সেদিন ছাদে আমার মুখে আলো ফেলছিলো,আমি সরাতে বলছি এতকিছু বলছি তবু হা করে কি ভাবছে কে জানে।পুরোই আজব!

আকাশ ছেয়ে মেঘেরগুঞ্জন এই বুঝি বৃষ্টি নামবে।
বলতে বলতেই ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি নেমে গেল।ইন্তিকা আর রামিসা ভিজে একাকার।
-বুবু হুট করে কেমন বৃষ্টি এলো বলোতো,ছাতা ও তো আনিনি।
-কিন্তু বৃষ্টি টা মন্দ লাগছেনা।ভিজতে ভিষণ ভালোই লাগছে।ভিজেছিলাম শেষ ২১ শ্রাবণে চৌদ্দটা বছর আগে।বৃষ্টি তো তারপর থেকে আর ভালোলাগেনা।এই বৃষ্টিই তো সব কেড়ে নিলো আমার কাছ থেকে।
-কি হয়েছে বুবু?কে কি কেড়ে নিলো তোমার?এই বুবু!

চল আর ভেজা লাগবেনা,ঐ যে ঐ দোকানটার ছাউনির নিচে দাঁড়ায় গিয়ে চল।ইন্তিকা ভিষণ চাপা স্বভাবের।কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি যেন চাপা কষ্ট বের করে দিলো।

আফা আফা!
কে?ধরা গলায় বললো ইন্তিকা,পেছন ফিরেই দেখলো..

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here