হিয়ার মাঝে পর্ব ২১+২২

#হিয়ার_মাঝে
২১.
#WriterঃMousumi_Akter

লিফট থেকে নামতেই সুদর্শন এক যুবক আমাকে ভাবী বলে এগিয়ে এলো।আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলাম।ভাবি কার ভাবি কেমন ভাবি তাছাড়া কিছুক্ষন আগেই তো এই ছেলেটাকে সুপ্তি পাত্রপক্ষ ভেবে ভুল ভাল ঠিকানা দিয়ে দিলো।ছেলেটি আমাকে দেখতে পেয়েছিলো না আমি দরজার আড়াল থেকেই দেখেছিলাম ছেলেটাকে।আমি কিছুই বুঝলাম না ছেলেটা কে আমার সাথে এমন বিহ্যাভ করছে যেনো আমাকে অনেক আগে থেকেই চিনে?আমি বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম।আমার পাশে নিরব ও দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমি নিরবের দিকে বোকার মতো তাকাতেই নিরব ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে বলে রিফাত কিরে ভাই এত লেট হলো কেনো?সেই কখন আসার কথা ছিলো না তোর।কোথায় কোথায় ডেটিং করে বেড়িয়ে এত লেট করলি সত্যি করে বল।রিফাত নামের ছেলেটি বলে ভাই সব পরে বলছি আগে ভাবির সাথে পরিচয় হয়ে নেই।

ছেলেটি আমাকে বলে মৃথিলা চৌধুরী রাইট। আর আমার পরিচয় আমি আপনার পাপী হাব্বির নিষ্পাপ বন্ধু মানে আপনার নিষ্পাপ দেবর।মানুষ টা বেশ চমৎকার আর হাস্যকর আর মজার একটা মানুষ। উনার কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে মুখের মাঝে আঙুল দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে দাঁত দিয়ে হাতের নখ কাটতে লাগলাম।রিফাত আমাকে বলে ইয়ে ভাবি আমি কিন্তু আপনাকে দেখেই চিনে ফেলেছি আর ভাবি এ শহরের সেরা সুন্দরী দেখলে যে কেউ ই চিনে ফেলবে যে ভাবে বর্ণনা বিশ্লেষণ শুনেছি আপনার উনার কাছে তাতে আপনাকে নিয়ে এ টু জেড আমার ধারণা হয়ে গিয়েছে ভাবি।

আমি বার বার নিরবের দিকে তাকাচ্ছি যে আসলে কাহিনী টা কি?

আমি ছেলেটিকে বললাম ভাইয়া আমি তো আগে আপনাকে দেখি নি তাই চিনতে অসুবিধা হচ্ছে।

রিফাত বলে দেখেছেন ভাবি আপনার উনি নামক জন্তু টি আমার কথা আমাকে বলে নি।

ইয়ে ভাইয়া উনি টা কে।?

রিফাত নিরব কে ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বললো আমি সব জানি ভাবি।

এমন সময় শিষ দিতে দিতে লিফট থেকে সুপ্তি নামলো।সুপ্তি ছেলেটিকে দেখেই যেনো ওর চোখ কপালে উঠে গেলো দ্রুত বেগে উপরে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করলে রিফাত সুপ্তির ওড়ণা টেনে ধরে বলে দাঁড়ান বলছি ডাকিনী কোথাকার।কি ভেবেছেন আপনাকে আমি ছেড়ে দিবো।

“সুপ্তি এবার রণচন্ডী মুড নিয়ে কোমরে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে বলে ছেড়ে দিবেন না তাহলে কি জড়িয়ে ধরবেন নাকি।কি লুইচ্চা এই বেটা।এই বেটা এই বাসা কই আপনার ইজ্জত হরনের চেষ্টা করছেন,ওড়না নিয়ে টানাটানি করছেন।এক্ষুণি ওড়না ছাড়ুন না হলে প্যান্ট খুলে রাস্তায় ছেড়ে দিবো বলে দিবো। ”

“অস্তাগফিরুল্লাহ!অস্তাগফিরুল্লাহ!এটা কি মেয়ে নাকি শুকনো লঙ্কা।হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে তাইনা আপনার।শুনুন আমাকে দিয়ে এসব হবে না।আমি ভদ্র ছেলে আমাকে টাকা দিলেও জড়িয়ে ধরবো না।ওসব অভ্যাস আমার নেই।।”

“এই বেটা এই একদম বাজে কথা বলবেন না কিন্তু।”

“এই যে মিস লঙ্কাবতি আমাকে ভুল ঠিকানা দিয়েছেন কেনো? ঘুরতে ঘুরতে আমার জান জীবন প্রায় বেরিয়েই গেছিলো।”

“নিরব কপাল কুচকে তাকিয়ে বলে কিসের ভুল ঠিকানা।”

“রিফাত বলে এই মেয়ে আমাকে ভুল ঠিকানা দিয়েছে নইলে সেই কখন আমি চলে এসছিলাম।”

“নিরব বলে কি ব্যাপার সুপ্তি ভুল ঠিকানা দিয়েছিলে কেনো? ”

“ইয়ে নিরব ভাইয়া আমি ভেবেছিলাম এই সেই ছেলে যে মিথুকে দেখতে আসবে।”

“নিরব হেসে দিয়ে বলে আচ্ছা আমার হবু শালিকা তাহলে প্রথম দিনেই তোকে জব্দ করে দিয়েছে তাইতো।”

“তোর শালিকার তো খবর আছে। আমার সাথে পাঙ্গা।এই মিস লঙ্কা এই যে পাশেই বাসা নিয়েছি আমার প্যান্ট খোলা হচ্ছে কে কার কি খোলে দেখে নিবো।”

“শুপ্তি মুখ ভেঙিয়ে দিলো রিফাত কে।”

“আমি রিফাত কে বললাম ভাইয়া ভেতরে চলুন চা খেয়ে যাবেন।”

“ভাবি জী আপনি যে মারাত্মক সুন্দর চা কফি রান্না করতে পারেন তা নিরব আমাকে বলেছে।আপনাদের বিয়ের পরে রেগুলার আপনার বাসায় ই খাবো।”

“লজ্জায় উনাকে কিছুই বলতে পারলাম না।কারণ এখনো নিরবের সাথে আমার তেমন কোনো রিলেশন ই হয় নি।”

নিরব রিফাত কে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো।সুপ্তি আর আমি উপরে চলে এলাম।সুপ্তি তো রিফাত কে কফি বানিয়েই খেয়ে ফেলবে এতটা রেগে আছে।

বাড়িতে এসে শুনি গ্রাম থেকে দাওয়াত এসছে আপুর মামাতো বোনের বিয়ে। আপুর মামা বাড়ি খুলনাতে।সাত দিন বাদেই ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশ্য রওনা দিতে হবে।অনেক দিন কোথাও যাওয়া হয় না।আপুর মামা বাড়ির কিছু মানুষ ভাল কিছু মানুষ খারাপ।কেউ কেউ বলে সতীনের মেয়ে ছোট বেলা গালে লবন দিয়ে মারে নি কেনো?কি এমন দায় পড়েছে সতীনের মেয়েকে মানুষ করার।এতিম খানায় রেখে আসে নি কেনো?আবার কেউ কেউ বলে আমার জন্মের জন্য আমি দায়ী নয়।আমি তো নিষ্পাপ। ওখানে যেতে হবে না জানি কত জনের কত প্রশ্নের মুখোমুখি আমাকে হতে হবে।জন্ম ই হয়েছে মানুষের কটূ কথা শোনার জন্য।জানিনা আমার নানু বাড়ি কোথায়?তারাও কি আমাকে ঘৃণা করে কিনা জানিনা।হয়তো তারাও আমাকে ঘৃণা করে।আপুর নানু বাড়ির সবাই আপুকে কত ভালবাসে আর আমাকে সবাই দেখলেই কত বাজে কথা শোনায়।নানু বাড়ির আদর ই হয়তো আলাদা যা আমি কখনো পাই নি।আমার কি কোনো মামা।আছে খালা আছে নাকি আমি এক ভেষে আসা মেঘ।

নিরব ও উপরে চলে আসলো।নিরব এসে যখন শুনলো খুলনা যেতে হবে। খুলনা নাম টা শুনেই নিরব কি যেনো একটা চিন্তা করলো।তারপর ফোন টা বের করলো।নিজের রুমে গিয়ে কাকে যেনো ফোন করলো।

“হ্যালো মুনতাহা কেমন আছো?”

“হ্যালো নিরব কেমন আছো?
বাংলাদেশে এসে আগে আমার সাথে দেখা করার কথা ছিলো কিন্তু করলে না।”

“সো সরি আমি একটু বিজি ছিলাম।”

“তোমার মন খারাপ মনে হচ্ছে।”

“হুম মন একটু খারাপ ই বলতে পারো।আমার বাবারা দুই ভাই বোন ছিলো ফুফি হারিয়ে গিয়েছে তাকে আর কখনো খুজে পাওয়া যায় নি।শুনেছি কেউ কিডন্যাপ করে ফুফির নামের সব সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে হয়তো মেরে ফেলেছে।ফুফি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়তো।আর ভার্সিটির হলেই থাকতো।বাবার খুব আদুরে বোন ছিলো।আজকে দাদু খুব কাঁন্না কাটি করছে ফুফির জন্য তাই আমার ও মন খারাপ।ফুপিকে কয়েকবার ছবিতে দেখেছি।দেখে ফুপির জন্য মন টা কেমন করছে।”

“দুনিয়াতে কত খারাপ মানুষ আছে মুনতাহা।কষ্ট পেও না তুমি আমার আম্মুকেই ফুপ্পি ডেকো।”

“নিরব তুমি কি নামেই নিরব নাকি মানুষ টাই নিরব।সোস্যাল মিডিয়াতে আমাদের পরিচয় কখনো কি তোমার জানতে ইচ্ছা হয় নি আমার মন কি চাই।”

“মুনতাহা তুমি সত্যি একটা লক্ষি মেয়ে।বিলিভ মি তোমার মতো ভাল বন্ধু আমি রিয়েল লাইফেও পাই নি।”

“ভাল বন্ধুর থেকে কি আর কিছুই হয় না নিরব।”

“মুনতাহা তোমাকে কষ্ট দিয়ে কথা আমি বলতে পারবো না তবে এটুকু বলতে পারবো মুনতাহা আমার জীবনে অনেক বড় দায়িত্ব এসে পড়েছে।সে দায়িত্বর নাম মৃথিলা আমার ভালবাসা।”

“ওর নাম বুঝি মৃথিলা।”

“হুম ওর নাম ই মৃথিলা যার গল্প এতদিন শুনেছো।”

“মেয়েটা খুব সুন্দর তাইনা।”

“ও আমার রাজ্যর রাজকণ্যা।জানো ওর মাঝে এক চমৎকার ম্যাজিক আছে যা দিয়ে ও আমাকে পাগল করে ফেলেছে।তবে ও আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো না।ওর জীবনে অনেক জটিলতা আছে।দেখা হলে বলবো সব।খুলনা যাচ্ছি তোমার বাসা তো নড়াইলে তাই মনে পড়লো সম্ভব হলে দেখা করো।”

“আপনার বান্ধবী ছিলো ফোনে।”

“ইয়ে তুমি যেমন ভাবছো তেমন না কিন্তু।”

“মেয়েটা কি আপনাকে ভালবাসে।”

“তুমি রাগ করবে নাতো।মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে তবে আমার বন্ধু সে।”

“আমি রাগ করবো কেনো শুনি?”

“তুমি রাগ করবে না কেনো?”

“কেনো করবো?”

“তুমি রাগ করোনি ভেবেই আমার রাগ হচ্ছে।”

“অদ্ভুত কেনো বলুন তো।”

“আমি চাই আমার গুলুমুলু টা রোজ রাগ করুক আর আমি রাগ ভাঙাবো পরম আদর আর ভালবাসায়।তুমি কথায় কথায় রাগ করবে আর আমি বার বার রাগ ভাঙানোর অজুহাতে বেশী বেশী আদর করার সুযোগ পাবো।”

“ক্যানো আপনি আমার কি হন শুনি।”

“আমি আপনার বর্তমান হবু প্রেমিক ভবিষ্যতের হবু বর সামঝে। ”

“মুখ ঘুরিয়ে বললাম হুহ প্রপোজ করার নামে খবর নেই আবার প্রেমিকা।”

“ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার প্রপোজ করা হয় নি বলে বাবুর আম্মু ভাবছে আমি তার বাবুর আব্বু হতে পারবো না।বী এনি চান্স বাবুর আম্মু কি ভাবছে আমি কি পুরাই আনরোমান্টিক টাইপ।রোমান্টিকতা বুঝি না।যার জন্য প্রপোজ করতে পারছি না।তাহলে শুনুন ম্যাডাম মানুষ একটা মেয়েকে দেখে ভীষণ ভাবে ক্রাশ খেয়ে যায় তারপর তার পিছে কয়েক বছর ঘুরে তাকে ইমপ্রেস এর সব চেষ্টা করে।আইডি তে তাকে নিয়ে ঘন ঘন স্টাটাস মারা।”

“আমি বললাম আর কি কি? ”

“এই যে প্রফাইল পিকচার দিয়ে ক্যাপশন দিবে বোঝে না সে বোঝে না।বা ব্ল্যাক কালারের পাঞ্জাবী পরে পিকচার আপলোড দিয়ে ক্যাপশন দিবে কলিটার পছন্দের ব্ল্যাক কালার।বা স্টাটাস দিবে ক্রাশ আজকে আমার পোস্ট এ রিয়্যাক্ট দিয়েছে।আরো অনেক টেকনিক আছে হাতে টমেটো সস লাগিয়ে ফেসবুকে পিকচার পোস্ট দিয়ে আরেক বন্ধুকে দিয়ে ফোন করায় যে অমুক রোমিও আজ হাত কেটেছে ব্লা ব্ল ব্লা”।

“বাট নিরব এগুলোর ধার ধারে না।নিরব ডিরেক্ট হার্টে টার্গেট করে।আর নিরব এখন সাকসেস ম্যাডাম।আপনার হৃদয়ের চারপাশে এখন নিরবের নাম ই ঘুরপাক করে।”

“আমি নিরবের কথা গুলো হা করে গিললাম শুধু মানুষ টা যে কিভাবে মন ভাল করতে পারে বলার বাইরে।”

“কেমন যেনো হটাত ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম।রুম থেকে দ্রুত বেরোতে গেলাম।”

“পেছন থেকে আমাকে থামিয়ে দেওয়া যাদুকরী কন্ঠ আমাকে ডাক দিলো।”

“বাবুর আম্মু!”

“আমি থমকে গেলাম।”

“পেছনে তাকিয়ে দেখি দুই ঠোঁট এক জায়গা করে ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিয়ে বললো আই লাভ ইউ বাবুর আম্মু।”

“আমি লজ্জায় দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললাম ইস কি লজ্জা।”

আমার চোখে মুখে কি ভীষণ লজ্জা।বেখায়ালে আপুর সাথে ধাক্কা খেলাম।আপু আমার হাত ধরে বললো এদিকে কোথায় গেছিলি তুই।ইদানিং খুব রং ফুটেছে তোর চোখে মুখে।কি চলছে তোর মনে।আর নিরবের রুমে কেনো গেছিলি তুই।

আমি শান্ত কন্ঠে বললাম আপু উনি আমাকে ডেকেছিলো।

উনি নিরব ভাইয়া তোর কোন জন্মের উনি হয় মিথু।

সরি নিরব ভাইয়া হবে।

খুলনা যাওয়ার জন্য সবাই ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিলাম জানিনা কপালে কি আছে।ওখানে গিয়ে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।জানি অনেক নতুন বিপদ এর সম্মুখীন হতে হবে।দুই দিন বাদেই আমরা রওনা হবো খুলনার দিকে।

হঠাত নিরব আমার জন্য একটা গিফট কিনে এনেছে।বিয়েতে পরার জন্য ডায়মন্ডের একটা সেটা।নিরব সুন্দর একটা চিরকুট লিখে গহনা টা নিজের টেবিলে রেখে গোসলে যায়।এরই মাঝে আপু এসে চিরকুট টা পড়ে গহনা টা আপুর জন্য আনা ভেবে রুম থেকে নিয়ে আসে।নিরব গোসল করে বেরিয়ে এসে কোথাও গহনা টা না পেয়ে হন্য হয়ে খুজতে থাকে।অবশেষে নিরব গহনা টা আপুর গলায় দেখে অবাক হয়ে যায়।নিরব আপুকে বলে গহনা টা কোথায় পেয়েছো নবনিতা।

আপনার রুমে।এটা আমার জন্যই তো আনা তাইনা ভাইয়া।

ওটা খুলে আমার হাতে দাও বলছি।

আপু খুশি মনে হার টা খুলে নিরবের হাতে দিয়ে দিলো।

নিরব আপুর সামনেই হার টা আমার গলায় পরিয়ে দিয়ে বলে সরি টু সে নবনিতা এটা মৃথিলার জন্য।
#হিয়ার_মাঝে
২২.
#WriterঃMousumi_Akter

আপুর গলা থেকে আমার গলায় হার পরিয়ে দেওয়াটা আপু মোটেও ভাল ভাবে নিলো না।অপমানে আপুর শরীর পুড়ে যাচ্ছে।আপুর চোখ দিয়ে ঝরছে অগ্নিকুন্ড যা দিয়ে আমাকে এক্ষুনি পুড়িয়ে ছাই করে দিবে।আমি তো ভয়ে আপুর দিকে তাকাতেই পারছি না।না জানি এক্ষুণি আমার গলা টিপে ধরে।নিরব এটা কিভাবে পারলো আরেকজনের গলা থেকে খুলে নিতে।আমি হলে তো মানবতার খাতিরেও পারতাম না। আমি নিরব কে বললাম আপনি কি ডেয়ার গেম খেলছেন যে আপুর গলা থেকে হার নিয়ে আমার গলায় পরিয়ে দিবেন আর তারপর বলবে৷ ডেয়ার ডান।।নিরব ভ্রু কুচকে সন্দিহান ভাবে প্রশ্ন করলো এটা ডেয়ার গেম হতে যাবে কেনো?এটা আমি সিরয়াসলি নবনিতার জন্য আনি নি এটা আমি তোমার জন্য এনেছি। রাগ কন্ট্রোল করতে কষ্ট হচ্ছে আপুর।আমি কি করবো এই সিসুয়েশন এ ঠিক বুঝতে পারছি না।নিরবের এমন কাজ দেখে নিজেও ভীষণ লজ্জা পাচ্ছি।

নিরব আবার বলে উঠলো নবনিতার জন্য হলে তো আমি সেটা নবনিতাকেই দিতাম তাইনা।আর আমি কখন বললাম এটা নবনিতার।আমি নিরব কে বললাম ইয়ে ভাইয়া এটা আমার লাগবে না আপুকে দিন না এটা।নিরব আপুর দিকে তাকিয়ে বললো নবনিতার অনেক গহনা আছে আমি দেখেছি।তাছাড়া এটা আমি তোমাকে খুশি হয়ে দিয়েছি। আমি এখানে এসেই বলেছিলাম মৃথিলা অনেক ব্রিলিয়ান্ট যার জন্য একটা গিফট পাওনা আছে আমার আছে।নবনিতা এবার রেজাল্ট ভাল করলে নবনিতাকেও দিবো।আর শোনো নবনিতা হাত দাও আপু হাত বাড়ালো না রাগে।নিরব আপুর হাত টা ধরে বললো নবনিতা মিথু বাচ্চা মানুষ তাই শান্ত্বনা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।তোমার জামাই তোমাকে গহনার দোকান ধরে কিনে দিতে পারবে তোমার বাবা এমন জামাই দেখে বিয়ে দিবে।আমি তো নিজ কানে শুনেছি তোমার জন্য জামাই ও ঠিক করে ফেলেছে।আপু এবার হেসে দিয়ে বললো বাবা আমার জন্য জামাই দেখেছে এটা আপনিও জানেন।নিরব চুলের পানি ঝাড়তে ঝাড়তে বললো ইয়েস নিরবের সব ই জানা। আপু হাসতে হাসতে মুখে একটা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

“আমি হাতের নখ দাঁত কাটতে কাটতে বললাম কি ব্যাপার বলুন তো।আপনি যা বলছেন আপু তাতেই খুশি আর লজ্জা পেয়ে যাচ্ছে।”

“এখন তোমার আপু যদি মারাত্মক লজ্জাবতি হয় তাতে আমার কি দোষ।।।। ”

“বাই এনি চান্স আপু আবার আপনাকে লাইক করে নাতো।”

“ভাব ভঙ্গি দেখে তো মাঝে মধ্য তাই মনে হয়।যদিও ওইটা নিয়ে কখনো ভেবে দেখি নি।ওই সব থার্ডক্লাস চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুরে মাথা নষ্ট করা আমার পক্ষে পসিবল নয় মিসেস নিরব।নিরবের উপর অনেক মেয়ে ক্রাশ কিন্তু নিরব একজনের প্রতি ক্রাশড।নানুর মেয়ে আমাকে এমন যাদুকরী জিনিস দেখাবে আমি তো ভাবতেই পারি নি।”

“নানুর মেয়ে আবার কি করলো শুনি। ”

“আহ সেই সিক্রেট ই তো বলে দেই তাইনা।ওগুলো সিক্রেট বলা যাবে না। ”

নিরব চলে যেতেই মা আমাকে রান্নাঘরে ডাকলো।আমি হাসতে হাসতে রান্নাঘরে গেলাম।রান্নাঘরে গিয়ে যে এত জঘন্য কথা শুনবো ভাবতে পারি নি আমি।

মা অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে আমার গলার দিকে তাকিয়ে আছে সাথে আপুও।মা হেচকা টানে গলা থেকে হার টা খুলে নিলো।আর নিরব কে আড়াল করে জঘন্য গালিগালাজ শুরু করলো।

নিরব তোকে ফোন দিচ্ছে,হার দিচ্ছে তোর প্রতি এত দরদ কি দেখে আসছে শুনি।ছেলেটার মাথা খেয়েছিস তাইনা।নাকি তোর মা শিখিয়ে গিয়েছে কিভাবে ছেলেদের হাতে রাখতে হয়। আপু বললো মা নিরবের কোনো দোষ নেই। ও সারাক্ষণ নিরবের কাছে গিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করে ওর এ নেই তা নেই।যা দেখে নিরব দিতে বাধ্য হয়।এমন সময় বাবা এগিয়ে এসে বলেন বাড়িতে একটা ছেলে এসছে সারাক্ষণ তার সাথে কি তোমার।দিন নেই রাত নেই তার ঘরে যাতায়াত করছো।রাস্তার মেয়েদের মতো কি শুরু করেছো।আমার ফ্যামিলিতে অশান্তি তোমার মাকে বিয়ে করার জন্য।আমার অনিচ্ছায় জন্ম তোমার।ছোট বেলায় মেরে ফেললেই ভাল হতো কুলাঙ্গার পয়দা হয়েছো।তোমাকে মেয়ে বলতেও ঘৃনা লাগে।

আমি জানিনা আমার কি হয়েছে, এই শক্তি আর সাহস আমি কোথায় পেলাম।খুব জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম কেনো জন্ম দিয়েছিলেন আমাকে।আপনার ফূর্তির জন্য জন্ম হয়েছে আমার।আমার মা যদি খারাপ চরিত্রর মহিলা হয় তাহলে আমি কি ধোয়া তুলসী পাতা।আমার মতো একটা নিষ্পাপ শিশুকে জন্ম দিয়ে আমার পুরা জীবন টা নষ্ট করেছেন আপনি।আপনি আমাকে মেয়ে বলে কি পরিচয় দিবেন ঘৃণা তো আমার করে আপনাকে বাবা বলতে।আপনি আজ ও বলেন নি আমার মা কে ছিলেন।কোথায় তার বাবার বাড়ি সে কে ছিলো।কিসের এত গোপনীয়তা আপনার।কি লুকাচ্ছেন আপনি।জেনে রাখুন একদিন না একদিন এই সত্য প্রকাশিত হবেই।দিনের আলোর মতোই বেরিয়ে আসবে।আপনি চাইলেও সেদিন আর কিছুই লুকোতে পারবেন না।আজ যে মেয়ে বৌ এর জন্য আমি আর আমার মাকে চরিত্রহীনের বদনাম দিচ্ছেন আল্লাহ না করুন এই মেয়ের কাছে আপনাদের মাথা নত করতে হয়।আপনাদের কি মনে হয় আমি খাওয়া পরার জন্য এখানে পড়ে আছি মোটেও না আমার মায়ের পরিচয় জানার জন্য।

মা বলে উঠল দেখলে ওর আসল রূপ বেরিয়ে এসছে।এটাই ওর আসল রূপ।হবে না কেনো?মায়ের মতো যে।ও সব সময় এমন ই তর্ক করে আমার সাথে।

বাবা রেগে গিয়ে আমার গলা টিপে ধরলো স্বজোরে।আমার দম বন্ধ হওহার উপক্রম প্রায়।বাবা বলেই যাচ্ছেন আমাকে সে মেরেই ফেলবে।আমিও মরার জন্য প্রস্তুত হয়ে বললাম মারুন আমাকে মারুন।একটা সময় জিভ বের হয়ে গেলো আমার হালকা কাশতে শুরু করলাম।এমন সময় নিরব আঙ্কেল আঙ্কেল করতে করতে এলো নিরবের কন্ঠ শুনে ছেড়ে দিলো বাবা আমায়।আমাকে ছেড়ে দেওয়ার সাথেই এতক্ষণ আটকে থাকা নিঃশ্বাস স্বজোরে৷ চলতে শুরু করলো হাঁপাচ্ছি আমি আর বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছি।

বাবা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিরব কে বলে কি হয়েছে বাবা।নিরব বলে আঙ্কেল টিকিট নিয়ে এসছি কাল সন্ধ্যায় আমরা রওনা হবো।রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।কাউকেই কিছুই বললাম না।নিজের বাবা তার অন্যপক্ষের মেয়ে স্ত্রীর জন্য আমাকে গলা টিপে খুন করার চেষ্টা করলো।সারারাত কেঁদে বালিস ভেজালাম আমি।নিরব কেও কিছু বুঝতে দিলাম না।

সন্ধ্যার বাসে রওনা হলাম আমরা।আপু গিয়ে নিরবের পাশে বসলো।মা আর বাবা এক সিটে বসলো।আমি গিয়ে খানিক টা পেছনে বসলাম।আমার পাশে নিরবের বয়সী একটা ছেলে বসেছে।নিরব সেটা ভাল চোখে দেখছে না।ইস ইচ্ছা হচ্ছে নিরবের পাশে বসে পুরাটা রাস্তা যায় কিন্তু সে কপাল আমার নেই।আর নিরব টা কিভাবে আপুর পাশে বসে দিব্বি সুন্দর যাচ্ছে।নিরব বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে নিরবের মন টা খুব দুঃখি দুঃখি লাগছে। আমাকে অন্য কোথায় বসতে দেখেই মনে হয় ওর এই দুঃখ।নিরবের ভাব ভঙ্গি সুবিধার লাগছে না।মনে হচ্ছে এক্ষুনি কিছু একটা করবে। হঠাত কিছুক্ষণ পরে নিরব সিট ছেড়ে উঠে এসে ছেলেটার কলার ধরে বলে ওঠ ওঠ এখান থেকে।মেয়ে মানুষ দেখলে হাত চুলকায় তাইনা।এই ড্রাইভার বাস থামান থামান বলছি।ড্রাইভার বাস থামালে বলে এইসব কুলাঙ্গার বাস এ তুলেছেন কেনো?ছেলেটি বলে ভাই আমি কি করেছি আর আপনি বা এমন করছেন কেনো?মেয়েদের পাশে ছাড়া বসা যায় না তাইনা।বলেই ছেলেটির গালে স্ব জোরে কয়েক টি চড় থাপ্পড় মেরে দিলো।

ছেলেটি রিতীমত অবাক আসলে সে করেছে টা কি।বাসের সবাই উঠে দাঁড়ালো সবাই ভাবছে ছেলেটি অসভ্যতা করেছে।আমি নিজেই অবাক আমার পাশে বসা ছেলেটি তো আমার সাথে কিছুই করে নি।ড্রাইভার বলে ভাই উনি কিছু করেছে।নিরব বলে না করলে কি হুদাই চিল্লাইতেছি।উনাকে আপনার পাশে বসান।ছেলেটি কে ড্রাইভার তার পাশে বসালো আর নিরব এসে আমার পাশে বসে পড়লো।

আপু নিরব কে ডাকলো ভাইয়া ওখানে বসলেন যে এখানে আসুন।নিরব বললো এখানে মিথু একা আছে আবার কি সমস্যা হবে আমি এদিকেই আছি।

আমি নিরবের দিকে তাকিয়ে বললাম ছেলেটিকে মারলেন কেনো? কি করেছে সে।

তোমার পাশ ঘেষে বসে ছিলো যেটা আমার হজম হচ্ছিলো না।

আর আপনি যে ওপাশে ঘেষে বসে ছিলেন।

আমি মোটেও বসি নি আমার মন এই সিট টায় ছিলো।

আচ্ছা ছেলেটাকে উঠানোর জন্য এত প্লান।

জ্বী ম্যাম।

বাস চলতে চলতে এক সময় যাত্রীরা একতা বাজার দেখে গাড়ি থামাতে বললো।
ড্রাইভার একটা বাজারের কাছে এসে গাড়ি থামালো।সবাই বাইরে নাস্তা করতে গেলো।

আপু আমাকে বললো মিথু চল না একটু কফি খেয়ে আসি আজ তোর সাথে কফি খেতে ইচ্ছা হচ্ছে বাট নিরব কে নিবি না।আমি আর তুই শুধু।আপুর কথা শুনে মারাত্মক খুশি হলাম।আপুর সাথে বসে কফি খাচ্ছি।এই দিক টা রেস্টুরেন্ট টা ভালোই উন্নত দেখা যাচ্ছে।নিরব ও আশে পাশে আছে।আমরা খানিক টা দূরেই এসছি।আপুকে বললাম আপু ওয়াশ রুম যাচ্ছি।আমি ওয়াশ রুমে ঢুকতেই বাইরে থেকে কেউ দরজা লাগিয়ে দিলো।এইদিকে বাস ও ছেড়ে দিয়েছে।আমি আর বেরোতে পারলাম না।খানিক ক্ষণ পরে কেউ একজন খুলে দিলো।আমি ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে দেখি বাস ছেড়ে চলে গিয়েছে।

নিকশ কালো অন্ধকার রাত,সম্পূর্ণ অপরিচিত জায়গা।ভয়ে হৃদপিন্ড থর থর করে কাঁপছে চারদিকে বাগান শুধু।এখন কোথায় যাবো আমি সাথে ব্যাগ ও নেই।এখান থেকে বাসায় যাবো কিভাবে কোথায় বা যাবো কোথাও তো চিনিও না।সারাজীবন বিপদ শুধু আমাকেই ঘিরে ধরে।ফাঁকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।এখন আমি কি করবো।রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেঁদেই যাচ্ছি।কে এখন সাহায্য করবে আমায়।আশে পাশে শেয়াল ডাকছে।আবার কি সেই রেস্টুরেন্টে যাবো।ওখানে তো পরিচিত কেউ নেই।গিয়ে কি বা বলবো কাছে টাকা ও নেই।

রেস্টুরেন্টের থেকে দুইজন ছেলে আমার দিকেই আসছে আমাকে দেখে বলে কি ব্যাপার মামুনি এত রাতে কাস্টমার খুজছো নাকি।রেট কত?যা সুন্দর তুমি যা চাইবে তাই পাবে।ছেলে দুইটা আরো কয়েকজন ছেলেটে ফোন দিয়ে বললো চাইনিজ ডল পেয়েছি দ্রুত চলে আয়।আমি ভয়ে কাঁপছি হাত পায়ের বল পড়ে গিয়েছে।ভয়ে দৌড় ও দিতে পারছি না।বল শাক্তি নেই।হৃদপিন্ড এ স্বজোরে কাঁপছে।দেখতে দেখতে আরো কয়েকজন ছেলে চলে এলো।।।।

আমি চেচামেচি করতে গেলে আমার হাত বেঁধে দেই ওরা।

এরই মাঝে ওদের যে বস সে বলে এত সুন্দর মেয়ে আমি কখনো দেখি নি।আমি এই মেয়েকেই বিয়ে করবো কাজি ডাক এক্ষুণি।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here