ক্রাশ পর্ব -০২

#ক্রাশ
#পর্ব_০২
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
মোহনা তার স্যারের প্রশ্নের কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছে না।
এদিকে মোহনাকে এভাবে চুপ করে থাকা দেখে স্যার তাকে জোরে এক ধমক দিলো।
আর বললো,
কি ব্যাপার মোহনা?
কিছু বলছো না কেনো?

মোহনা তোতলাতে লাগলো আর বললো,

বিশ্বাস করুন স্যার আমি সাগর নামে কাউকে চিনি না।
তাছাড়া আপনি বার বার সাগরের নাম কেনো নিচ্ছেন স্যার?

স্যার মোহনার কথা শুনে উপবৃত্তির ফরম টা তার হাতে দিলো আর বললো,
তাহলে এটা কার নাম্বার?

মোহনা ফরম টা হাতে নিয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছে না।
এতোবড় একটা ভুল সে কি করে করলো?
এইভাবে সে স্যারের কাছে ধরা খাবে স্বপ্নেও ভাবে নি।

মোহনা বুকে সাহস নিয়ে আবার মিথ্যা কথা বললো,

স্যার এই নাম্বার টা কার?
আমি তো লিখি নি এটা?
আর আমি কেনো অন্যজনের নাম্বার নিজের ফরমে লিখতে যাবো?
হয়তো মিসটেক হয়েছে স্যার।

স্যার তখন বললো,
তাহলে তোমার ফোন নাম্বার বলো?
যেটা তুমি ফরমে দিতে চাইছিলে।

মোহনা সেই কথা শুনে বললো,

স্যার আমার তো নিজের কোন ফোন নেই তাই বাবার নাম্বার টা দিতে চাইছিলাম।
এই বলে সে তার বাবার নাম্বার টা বললো।

স্যার তো এখন আরো বেশি অবাক হলো!!!
তিনি ভেবেছিলেন একটা দুইটা সংখ্যা হয় তো ওলটপালট হয়েছে।
কিন্তু সাগরের নাম্বারের সাথে তো তার বাবার নাম্বারের কোন মিল নেই।
স্যার তখন বললো,
এটা আবার কি ধরনের ভুল মোহনা?
আর যে নাম্বার টা ভুল করে লিখেছো সেটা আবার আমাদের স্কুলেরই একজন স্টুডেন্ট এর।।।
এটা কি করে পসিবল!!!!!

মোহনা বললো স্যার আমি বুঝতে পারছি না কিছু।
কেনো যে এ নাম্বার টা লিখেছি????
আর বিশ্বাস করুন স্যার আমি ওনাকে চিনি না।
আপনি ওই ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে দেখেন?
সেই কথা শুনে স্যার মোহনার দিকে তাকালো।
কিন্তু তার কোন রিয়েকশন বোঝা গেলো না।
এদিকে পুরো ক্লাসে হইচই শুরু হয়ে গেলো
স্যার সবাই কে বললো silence please.
দয়া করে চুপ করো সবাই।

কিন্তু হঠাৎ ক্লাসের একটা মেয়ে বলে উঠলো স্যার আপনি কি এবারের এসএসসি পরিক্ষার্থী সাগরের কথা বলছেন?
স্যার সেই মেয়েটার দিকে রাগান্বিত ভাবে তাকালো আর বললো তা শুনে তুমি কি করবে?
কেউ আর এ ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞেস করবে না।
এই বলে স্যার মোহনার কাছে গেলো।
আর তাকে বললো এসব আজাইরা চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দাও।

মোহনা বুঝতে পারলো স্যার তাকে পুরোপুরি সন্দেহ করছে।
হয় তো স্যার অন্যকিছু ভাবছে তাই সে হঠাৎ কাঁদো কাঁদো গলায় বললো স্যার আপনি আমাকে কি খারাপ মেয়ে ভাবছেন?
আমি মোটেও কিন্তু তেমন নই?
আর আমি যাকে চিনিই না তার কথা বার বার কেনো বলছেন?
বিশ্বাস করুন স্যার ওই ছেলের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই।
আমি তো জীবনে তার সাথে কোন কথাই বলি নি।

স্যার মোহনার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলো।
আর ক্লাসের স্টুডেন্ট রাও।
তখন স্যার বললো,
তুমি কাঁদছো কেনো?
আমি কখন বললাম তোমরা দুইজনে প্রেম করো?
তোমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে?
আর কে তোমাকে খারাপ মেয়ে বললো?
মোহনা তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো তাহলে বার বার কেনো ওই ছেলের কথা জিজ্ঞেস করছেন?
যাকে আমি চিনিই না।
স্যার এবার রেগে গেলো।
আর বললো,
সাগরের নাম্বার কিন্তু আমি নিজে তোমার ফরমে লিখি নি।
তুমি নিজের হাতে লিখেছো তাই প্রশ্ন করাটাই স্বাভাবিক।
মোহনা স্যারের রাগান্বিত চেহারা দেখে ভয় পেয়ে গেলো।
সে আর একটা কথাও বললো না।

হঠাৎ স্যার মোহনার উপবৃত্তির ফরম টা ছিঁড়ে ফেললো আর বললো,
তুমি কি মেধাবী স্টুডেন্ট?
মোহনা কোন উত্তর না দিয়ে স্যারের দিকে তাকালো।
তখন স্যার বললো,
যা প্রশ্ন করলাম তার উত্তর দাও?
মোহনা তখন কাঁদো কাঁদো গলায় বললো না।
স্যার আবার প্রশ্ন করলো তুমি কি গরীব?
মোহনা বললো না।

তাহলে উপবৃত্তির জন্য ফরম কেনো দিয়েছো?
নোটিশে কি লেখা ছিলো সেটা পড়ো নি?
মোহনা তা শুনে খুবই লজ্জা পেলো।
কারন সে কিছুতেই এই ফরম টা নিতে চাই নি।
তার বান্ধুবীরা তাকে জোর করেই রাজি করিয়েছে,
তারা বললো জমা দিয়ে দেখি,
হলে হবে না হলে না হবে।

তখন স্যার বললো শুধু তুমি না।
অনেকেই দিয়েছে।
কিন্তু কেনো?
তোমরা যদি বড়লোকের ছেলেমেয়েরাই উপবৃত্তি নিয়ে নাও তাহলে গরীব মেধাবী স্টুডেন্ট দের কি হবে?

স্যারের কথা শুনে ক্লাসের সকল স্টুডেন্ট নিচ মুখ হলো।
কেউ আর একটা কথাও বললো না।
এদিকে মোহনা তো লজ্জায় মুখ টা আর উপরেই তুলছে না।
আজ সে কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছে তা উপরওয়ালাই জানে।
এইভাবে সবার সামনে সে অপমানিত হলো ভাবতেই তার নিজের প্রতি ঘৃনা লাগছে।
ইচ্ছে করছে আর সে স্কুলেই আসবে না।
কারন সবাই তাকে নিয়ে এখন হাসাহাসি করবে।
অনেকে এ নিয়ে মজায় মেতে উঠবে।

কিছুক্ষন পর ঘন্টা বেজে উঠলো।
তাই স্যার ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
হঠাৎ স্যার পিছন ফিরে তাকালেন আর মোহনাকে বললেন অফিস রুমে একবার এসো।
মোহনা বুঝতে পারলো না স্যার আবার কি বলবে তাকে?

মোহনা তার স্যারের অফিস রুমে গেলো।
গিয়ে দেখে স্যার একাই বসে আছে।
মোহনাকে দেখে তিনি বললেন চেয়ারে বসো।
মোহনা স্যারের কথা শুনে জড়সড় হয়ে চেয়ারে বসলো।
তার ভীষণ ভয় লাগছে।
স্যার আবার তাকে সাগরের কথাই বলবে নাকি?
সে কি উত্তর দেবে তখন কিছুই বুঝতে পারছে না।

হঠাৎ মোহনার স্যার বললো,
মোহনা তুমি কি জানো তোমার বাবার সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক।
আর আমরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাজারে আড্ডা দেই।
মোহনা সে কথা শুনে নিচ মুখ হয়ে থাকলো।
স্যার তখন বললো তোমার বাবা আমার সাথে যতক্ষন বসে গল্প করে তিনি একবারের জন্যও অন্য টপিক নিয়ে কথা বলেন না।
শুধু তোমার বিষয়েই কথা হয়।
একবার বলেন তোমাকে ডাক্তার বানাবেন।
আরেকবার বলেন তুমি ইঞ্জিনিয়ার হবে।
কোন সময় বলেন প্রফেসর বানাবেন তোমাকে।
আমি সে কথা শুনে কোন উত্তর দেই না।
কারন আমি জানি তুমি তেমন ভালো স্টুডেন্ট না।
কিন্তু তবুও তোমার বাবা তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন।
আর তুমি পড়াশোনা বাদ দিয়ে এসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে পড়ে আছো।
আমি জানি সাগর অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট।
তার ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল।
তার সাথে যে কেউ রিলেশন করতে চাইবে।
কিন্তু আমার মনে হয় এখন এসব চিন্তা বাদ দেওয়াই ভালো।
কারন এতে দুইজনের ই ক্ষতি হবে।

মোহনা সেই কথা শুনে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো স্যার আপনি এখনো বিশ্বাস করছেন না কেনো?
সাগরের সাথে আমার জীবনেও কথা হয় নি।।।
আর সাগরও আমাকে চেনে না।
এটা সত্যি একটা ভুল ছিলো।

স্যার দেখলো মোহনা কে সাগরের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করতেই সে কেঁদে ফেলছে
তাই তিনি আর কথা বাড়ালেন না।
তখন তিনি বললেন আচ্ছা ঠিক আছে।
তোমার কথাই বিশ্বাস করলাম।
তবে এখন থেকে পড়াশোনায় অনেক মনোযোগী হতে হবে।
কারন তুমি এখন ক্লাস নাইনে উঠেছো।
আবার সায়েন্স বিভাগ নিয়েছো।
সেজন্য প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে।
মোহনা মাথা নাড়ালো।
কিছুক্ষন পর সে স্যারের অফিস রুম থেকে বের হয়ে এলো।

মোহনা বুঝতে পারলো স্যার এখনো তার কথা গুলো বিশ্বাস করে নি।
আর তিনি ধরেই নিয়েছেন সাগরের সাথে তার রিলেশন চলছে।
মোহনা এসব ভাবতেই লজ্জা পাচ্ছে।
তার ভয় লাগছে যদি তার বাবার কানে এই কথা টা যায় কি হবে তার?
মোহনা রাগ করে সাগরের ফোন নাম্বার টা যে খাতায় লিখেছিলো সেটা ছিঁড়ে ফেলে দিলো।
আর প্রতিজ্ঞা করলো জীবনেও আর সে সাগরের কথা ভাববে না।
তার কথা চিন্তাও করবে না।
কারন এই সাগরের কারনে তাকে অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছে।
এই সাগরের কারনে সে বার বার সবার হাসির পাত্র হয়েছে।
অথচ সাগর মোহনা নামের কোন মেয়েকেই চেনে না।
মোহনা নামে যে কেউ একজন আছে,
মোহনা নামে কোন মেয়ে যে তার জন্য পাগল সে এসবের কিছুই জানে না।
মোহনা রাগ করে সাগর কে এক্স ক্রাশ বানিয়ে দিলো।
আগে সাগর তার ক্রাশ ছিলো।
বর্তমানে সে তার এক্স ক্রাশ হলো।

এখন ঘুরে দেখা যাক সেই দিনগুলি।
যে দিনগুলিতে মোহনা দিনের বেলাও তার ক্রাশ সাগর কে নিয়ে স্বপ্ন দেখতো।
সাগর তাকে একটিবার দেখবে সেই আশায় তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করতো।
কিন্তু সে সাগর কে একবারের জন্যও তার দিকে তাকাতে দেখে নি।

মোহনা তখন ক্লাস সিক্সে ছিলো।
দুইমাস ক্লাস করার পরই তাদের স্কুলে ২৬ শে মার্চ উপলক্ষে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো।
মোহনাদের স্কুলে প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে অনেক বড় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপজেলার এম,পি কে ইনভাইট করা হয়।
যিনি নিজের হাতে বিজয়ীদের পুরুষ্কার দেন।
সাথে আরো গন্যমান্য মানুষ থাকে।

তাদের ক্লাসের অনেকেই সেই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলো।
কিন্তু মোহনা না পারে গান,
না পারে নাচ,
তাই সে কোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলো না।

সাগর তখন ক্লাস এইটে ছিলো।
সাগর যখন বার বার পুরুষ্কার নেওয়ার জন্য স্টেজে উঠছিলো তখনই তাকে দেখে মোহনার ভালো লেগে যায়।
সবাই একবার করে স্টেজে উঠে তাদের পুরুষ্কার নেয়।
কিন্তু সাগর কে চারবার স্টেজে উঠতে হয়।
কারন সে খেলাধুলা,গান,এবং রচনা প্রতিযোগিতায় ফাস্ট হয়।
এবং সে আরো একটা পুরুষ্কার পায় সেটা হলো ক্লাসে এক রোল করার জন্য।

মোহনা মনে মনে ভাবতে লাগলো অন্য মানুষের কত প্রতিভা!!!
আর তার মাথায় কি আছে????
কোন কাজেই পারে না সে।
আর এই ছেলেটা খেলায় ফাস্ট,
আবার গান গেয়েও ফাস্ট হয়েছে,
রচনা প্রতিযোগিতায় ও ফাস্ট,
আবার এক রোলের জন্যও পুরুষ্কার পেলো।
সেই দিন থেকে মোহনা সাগরের উপর নজর দিতে থাকে।
সাগর কে এক নজর দেখার জন্য তার ক্লাসের আশেপাশে ঘুরতো।
স্কুল ছুটি হলে সাগরের সাথে রুম থেকে বের হতো।
সাগর যখন জাতীয় সংগীত গাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াতো সেও একই লাইনে দাঁড়াতো।
এইভাবে ক্লাস সিক্স পার করে মোহনা ক্লাস সেভেনে উঠলো।
আর সাগর উঠলো ক্লাস নাইনে।
তবুও একদিনও সাগর তার দিকে তাকায় নি।
অথচ মোহনা সবসময় সাগরের আশেপাশেই ঘুরতো।

মোহনাদের স্কুলে পরের বছর আবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো।
মোহনা এবার ও কোন প্রতিযোগিতায় নাম দেয় নি।
তবে তার বান্ধুবীরা দিয়েছে।
সাগর এবার ও অনেক গুলো পুরুষ্কার পেলো।
মোহনার আনন্দ দেখে কে?
সাগরের চাইতে সে বেশি এক্সসাইটেড ছিলো।
খুশির ঠেলায় হাততালির বদলে শিষ দিতে থাকে।
পরে তার বান্ধুবীরা তাকে থামিয়ে দেয়।
কিন্তু হঠাৎ করেই তার আনন্দ টা মাটি হয়ে গেলো।
যখন দেখলো প্রতিটা ক্লাসের এক রোল কে স্টেজে ডাকা হলো।
আর তারা সবাই মিলে প্রধান অতিথি এবং বাকি সকল গেস্টদের ফুলের তোরা দিয়ে শুভেচ্ছা জানালো।
মোহনার খুব খারাপ লাগলো।
কারন আজ যদি তার এক রোল হতো সেও সাগরের সাথে একসাথে একই স্টেজে উঠতে পারতো।
আর সাগর তাকে দেখতো।
সেও সাগর কে কাছ থেকে দেখতো।
মোহনার নিজের উপর খুব রাগ হলো।
সে রাগ করে সেদিন অনুষ্ঠান না দেখেই বাসায় চলে গেলো।
আর বাসায় গিয়ে বই হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো।
অসময়ে এভাবে বই হাতে নেওয়া দেখে তার মা খুব অবাক হলো।
যে মেয়ে স্কুলের প্রোগ্রাম দেখবে বলে সকালে না খেয়েই বাসা থেকে বের হয়েছে।
আর সে কিনা প্রোগ্রাম দেখা বাদ দিয়ে বাসায় এসে বই হাতে নিয়ে পড়ছে!!!!!
তার মা মোহনার কাছে এগিয়ে এলো আর বললো কি হয়েছে মা?
শরীর ঠিক আছে?
মোহনা তখন বললো ডিস্টার্ব করো না আমাকে।
দেখছো না পড়ছি।
মোহনার মা তাই আর কোন কিছু জিজ্ঞেস করলো না।

মোহনা ক্লাস সেভেনে অনেক পড়াশোনা করেছে।
এরকম পড়াশোনা সে কোন ক্লাসেই করে নি।
প্রতিদিনের ক্লাসের পড়া ভালো করে পড়েই তবে স্কুলে যায় সে।
কারন তার টার্গেট ছিলো এক রোল করার।
যাতে সাগর তাকে চেনে।

মোহনা অনেক চেষ্টা করেও ক্লাস এইটে এক রোল করতে পারলো না।
তবে ১-১০ এর মধ্যে রোল আনতে পারলো।
ক্লাস এইটে তার রোল হলো ০৯.
তবে আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে তার।
কারন ক্লাস সেভেনে ছিলো ১৭ রোল।
এবার সে তার ফ্রেন্ডের মধ্যে সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করলো।

মোহনা যখন দেখলো সে কিছুতেই এক রোল করে তার ক্রাশ সাগরের নজরে আসতে পারছে না তাই সে এবার অন্যভাবে ট্রাই করলো।
যদিও সে কোন কিছুই পারে না।
তবুও সে ঠিক করলো সব গুলো প্রতিযোগিতায় সে নাম দেবে।
একটা না একটাতে তো নিশ্চয় ফাস্ট হবে।
আর ফাস্ট হলেই তাকেও তো মঞ্চে গিয়ে পুরুষ্কার আনতে হবে।
আর তখন সাগর তাকে নিশ্চয় দেখবে।

ফাস্ট খেলাধুলার প্রতিযোগিতা হলো।
সে দৌড় প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে।
তার বান্ধুবীরা তা দেখে হাসতে লাগলো।
আর তাকে ভয় দেখাতে লাগলো যে তুই যদি একবার দৌঁড়াতে গিয়ে পড়ে যাস তখন কিন্তু সবাই হাসাহাসি করবে।
মোহনা কারো কথা শুনলো না।
সে দৌঁড় প্রতিযোগিতায় নামলো।

মোহনা মনোযোগ দিয়েই দৌঁড়াচ্ছিলো হঠাৎ করে কোন মেয়ে জানি তার স্কুল ড্রেসের বেল্ট ধরে দিলো এক টান।
সাথে সাথে মোহনার স্কুল ড্রেসের ওড়না খুলে গেলো।
তাই সে দৌঁড় থামিয়ে দিয়ে ওড়না টা ঠিক করে নিলো।
এদিকে বাকি সবাই দৌঁড়াতেই আছে।
তাই সে আর দেরী না করে মাঠ থেকে বেরিয়ে এলো।
মোহনার খুব লজ্জা লাগলো।
মোহনার এই অবস্থা দেখে অনেক ছেলেই হাসতে লাগলো।
সে লজ্জায় আর কারো দিকে তাকাতে পারলো না।
কিন্তু সে মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দিলো।
কারন যদি পড়ে যেতো তখন এর চেয়েও আরো বেশি লজ্জা লাগতো।
মোহনা আসার সাথেই তার বান্ধুবীরা বললো কত করে বললাম এসব খেলায় নাম দিস না।
তুই পারবি না।
দেখলি তো কেমন অপমান হলি?
মোহনা সে কথা শুনে কোন রাগ দেখালো না।
সে পরবর্তী খেলায় নামার জন্য প্রস্তুত নিলো।

পরবর্তী প্রতিযোগিতা হলো দড়ি খেলা।
কে কতক্ষন দড়ি নিয়ে লাফাতে পারে।
কিন্তু মোহনা যেহেতু দৌঁড় প্রতিযোগিতায় নেমেছিলো সেজন্য তার পা টা ভীষণ ব্যাথা করছিলো।
তাই একবার প্রতিযোগিতায় নামতে চাচ্ছে আর দশবার পিছিয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ করে মাইকে ঘোষণা দিলো যে প্রতিযোগিরা মাঠে চলে এসো।
মোহনা সে কথা শুনে মাঠে গেলো।
আর মনে মনে ভাবলো যা হবার হবে।
খেলা শুরু হয়ে গেলো।
সে কারো দিকে খেয়াল না করে দড়ি নিয়ে লাফাতেই আছে।
এদিকে এখনো কয়জন টিকে আছে আর কয়জন আউট হয়েছে সে একবার ও তাকিয়ে দেখে নি।
হঠাৎ স্কুলের ম্যাডাম এসে মোহনা কে থামিয়ে দিলো।
মোহনা এতোক্ষনে কথা বললো,
সে বললো কি করছেন ম্যাডাম?
আমাকে থামিয়ে দিচ্ছেন কেনো?
ম্যাডাম তখন বললো সবাই আউট হয়ে গেছে।
মোহনা তাকিয়ে দেখে মাঠে কেউ নাই।
সে একাই দাঁড়িয়ে আছে।
তারমানে সে ফাস্ট হয়েছে।
মোহনা অনেক বেশি খুশি হলো।
কারন সে স্বপ্নেও ভাবে নি এই দড়ি খেলায় সে ফাস্ট হবে।
কারন তার পায়ে ভীষণ ব্যাথা ছিলো।

পরের দিন স্কুল তাড়াতাড়ি করে ছুটি দিলো।
কারন আজ নাচ,গান,কবিতা আবৃতির মোহরা হবে।
যারা যারা প্রতিযোগিতায় নাম দেবে শুধুমাত্র তারাই থাকবে আর বাকিরা বাসায় চলে যাবে।
কারন যাদের নাচ,গান,আবৃত্তি ভালো হবে তাদের মধ্যে থেকে দশজন কে চুজ করা হবে।
শুধুমাত্র এই দশজন ফাইনাল অনুষ্ঠানের দিন মঞ্চে উঠবে।
আর এদের মধ্যে থেকে ফাস্ট সেকেন্ড খুঁজে বের করা হবে।

মোহনার বান্ধুবীদের মধ্যে পলি নাচের প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে।
কারন সে খুব সুন্দর নাচতে পারে।
দিয়া গান গাইবে।
আর মিতু করবে কবিতা আবৃতি।
কিন্তু মোহনা নাচ,গান,কবিতা আবৃতি তিনটাতেই নাম দিয়েছে।
যদিও সে একটাও পারে না।
তবুও এই কয় দিন ধরে অনেক প্রাকটিস করেছে।

মোহনা আর তার বান্ধুবীরা সেই রুমে গেলো যেখানে সকল প্রতিযোগি উপস্থিত হয়েছে।
মোহনা এতো স্টুডেন্ট দেখে ভয় পেয়ে গেলো।
এতোগুলোর মধ্যে মাত্র দশজন করে নেবে।
হঠাৎ মোহনা সাগর কে দেখতে পেলো।
কারন সাগর ও প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে।
সাগর কে দেখামাত্র তার কেমন জানি অনুভূতি হতে লাগলো।
তার হাত পা এক্ষুনি কাঁপতে লাগলো।
সে যা প্রাকটিস করেছিলো সব ভুলে গেলো।

প্রথমে কবিতা আবৃতির প্রতিযোগিতা শুরু হলো।
এক এক করে সবাই কে ডাকা হচ্ছে।
কিন্তু স্যার রা বেশি শুনছেন না।
দুই এক লাইন শুনেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
আর কারো কারো তো দুই এক লাইনও শুনছেন না।
কবিতার নাম শুনেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
আর কাউকে জোরে এক ধমক দিয়ে বলছেন এটা কবিতা আবৃতি না বইয়ের পড়া পড়ছিস?
কারো কারো কবিতা আবৃতি তো গানের মতো সুরেলা হয়ে যাচ্ছে।
আর স্যারেরা তাদের ধমক দিয়ে বের করে দিচ্ছে।
স্যারদের এমন ধমকানি শুনে মোহনা ভয় পেয়ে গেলো।
এতোগুলো স্টুডেন্ট দের মধ্যে যদি তাকেও ধমক দেয় তখন মানসম্মান একেবারে শেষ হয়ে যাবে।

হঠাৎ করে স্যার মোহনার ক্রাশ সাগর এর নাম ঘোষণা করলো।
সাগর তার নাম শোনামাত্র দৌঁড়ে সামনে গেলো।
আর সুন্দর করে কবিতা আবৃতি করলো।
সে একটুও ভয় পাচ্ছে না।
তার হাত পা ও কাঁপছে না।
কারন সে প্রতিবারই এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
সাগরের কবিতা আবৃতি শুনে সবাই হাততালি দিতে লাগলো।
কিন্তু মোহনা কি করে সবার সামনে গিয়ে কবিতা আবৃতি করবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।

কিছুক্ষন পরে স্যার মোহনার নাম ঘোষণা করলো।
মোহনা নাম শোনামাত্র মোহনার বুকের ধড়ফড়ানি বেড়ে গেলো।
সে স্যার দের সামনে যাওয়া বাদ দিয়ে বেঞ্চেই বসে থাকলো।
স্যার আবার মোহনার নাম জোরে জোরে ঘোষণা করলো।।
তখন মোহনার বান্ধুবীরা তাকে বললো কি হলো যাচ্ছিস না কেনো?
স্যার তোকে ডাকছে।
মোহনার সেই লেভেলের হাত পা কাঁপছে।
সে কি কবিতা আবৃতি করবে সেটাই ভুলে গেলো।

চলবে,,,,,,,,,,
ভালো লাগলে অবশ্যয় লাইক কমেন্ট করবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here