সীমাহীন ভালোবাসার নীড় পর্ব -০৫

#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ৫
,
,
,
,
,
পরের দিন সকালে তৈরি হয়ে অফিসের জন্য বের হতে যাবে এমন সময় আদ্রিয়ান এসে আদ্রির হাত ধরে তাকে টানতে টানতে খাবারের টেবিলে বসায় দেয় আদ্রি হতদম্ভ হয়ে যায়।

আদ্রিঃমিস্টার খান কি করছেন আপনি। মিসেস খান দেখলে তুলকালাম বাধাবেন বুঝার চেষ্টা করেন
(চেয়ার থেকে উঠার চেষ্টা করে)

আদ্রিয়ানঃএখান থেকে যদি এক পা ও নড়ায়েছিস তো পা ভেঙ্গে লুলা করে ঘরে বসায় রাখবো বলে দিলাম (ধমক এর সুরে)

আদ্রি আদ্রিয়ান এর ধমক খেয়ে চুপ করে যায়। আর চেয়ারে শান্ত বাচ্চার মতো বসে পরে।

আদ্রিয়ানঃনা খেয়ে না খেয়ে শরীরের অবস্থা কি করেছে উনি মনে বলে থাপ্পড়ায়ে সোজা করে দি
(ভাত মাখাতে মাখাতে)

আদ্রি অবাক চোখে দেখছে তার ভাইকে কতো বছর পরে তার ভাই তাকে শাসন করছে। আজ কতোদিন পরে সে তার ভাইয়ের হাতে খাবার খাচ্ছে যতোই মা আলাদা হোক বাবা তো একই রক্ত তো দুইজনার ই একই।

আদ্রিয়ানঃকি দেখচ্ছিস তাড়াতাড়ি হা কর তো আবার হস্পিটালে যেতে হবে(ভাতের লোকমা আদ্রির মুখের সামনে তুলে)

আদ্রিঃমিস্টার খান বাকিরা সবাই কথায় মিসেস খান আর মিথিলা তো এতোক্ষন থাকেনা ঘরে
(খাবার চিবুতে চিবুতে)

আদ্রিয়ানঃহস্পিটালে গেছে
আদ্রিঃহঠাৎ হস্পিটালে কেনো (পানি পান করতে করতে)
আদ্রিয়ানঃমিথিলা সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিলো(খাবার খেতে খেতে)
আদ্রিঃকিহ কিন্তু কেনো (অবাক হয়ে)
আদ্রিয়ানঃসঠিক জানিনা জানিস ই তো ছোট বেলা থেকেই জেদ্দি আজ পর্যন্ত যা চেয়েছে হাসিল করেই ছেরেছে। কিন্তু নির না কি যেনো নাম ছেলেটা ওকে রিজেক্ট করেছে সে জেদে এই সব।

আদ্রিঃ(হুম ওরকুম মেয়েকে এক্সেপ্ট করবে কে কতো ছেলের জীবন টাই না নষ্ট করলো) মনে মনে কথা গুলো বলে জোড়ে নিশ্বাস ফেললো।

তারপর দুইজনে চলে গেলো নিজ নিজ গন্তব্যেতে

আদ্রি অফিসে ঢুকতেই রিসেপশনিস্ট এর মেয়েটা তাকে একটা আইডি কার্ড দেই। সেটা গলায় ঝুলিয়ে পিয়ন এর সাথে পা বারায় এমডির কেবিনে

আদ্রিঃমে আই কাম ইন স্যার
স্যারঃইয়েস কাম
আদ্রি ভিতরে গিয়ে অবাক হয়ে যায় পরিপাটি একটা রুম। অসম্ভব সুন্দর। কালকে যে রুমে নিয়ে এসেছিলো আজকে অন্য রুমে নিয়ে আসেছে

স্যারঃগুড মর্নিং মিস আদ্রিতা খান
আদ্রিঃগুড মর্নিং স্যার।
স্যারঃপ্রথম দিনেই লেট ইম্প্রেসিভ।
আদ্রিঃনা মানে সরি স্যার নেক্সট টাইম হবে না (মাথা নিচু করে)
স্যারঃপ্রথম ভুল মাফ বাট দ্বিতীয় ভুল মাফ করেনা এই নির চৌধুরী মাথায় থাকে যেনো
(শক্ত গলায়)
আদ্রিঃই ইয়েস স্যার(কাপা কাপা গলায়)
নিরঃআপনি যানেন আপনার জব কি
আদ্রিঃজি স্যার আমি আপনার পিএ
নিরঃআর পিএ এর কাজ তাহলে জেনে নেওয়া যাক আমি একবার ই বলবো মাথায় গেথে নিবেন
আদ্রিঃজি স্যার
নিরঃরোজ দিন আমি আসার আগে আপনি এসে পৌছাবেন আর পুরো রুম ক্লিন করাবেন পিয়ন কে দিয়ে।ফাইল কাগজ পত্র সব রেডি করে টেবিলের উপর রাখবেন। রোজ ফ্রেশ ফ্লাওয়ার চাই আমি। এন্ড আমার সিডিউল কখন কার সাথে মিটিং আছে সব কিছু ঠিক ঠাক আমাকে জানাবেন। এন্ড মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট আমি আসার সাথে সাথে স্ট্রং এক কাপ কফি আমার টেবিলে চাই গট ইট

আদ্রি সব কিছু মনোযোগ সহকারে শুনে মাথা নাড়ায় মানে সে বুঝেছে।

নিরঃগুড এবার এই এগ্রিমেন্ট পেপারে সিগনেচার করে ফেলুন পড়ে নিবেন অবশ্যই

আদ্রি এগ্রিমেন্ট পেপার হাতে নিতেই তার চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে যায় ৪০ টার উপরে রুলস এতো গুলা পড়ার ধৈর্য আদ্রির নাই সে প্রথম কয়েকটা পরে বাকি গুলোর পড়ার ভান করে পেপারস গুলোতে সই করে দেয়।

নির সেটা দেখে ডেবিল একটা স্মাইল দেয় সে জানতো আদ্রি চুপচাপ থাকলেও তার চোখ জোড়া দেখেই বুঝা যায় সে অনেক চঞ্চল তাই তো প্রথম কয়েকটা শর্ত নরমাল দিয়েছিলো আর বাকিগুলো সেগুলা ধীরে ধীরে জানবেন

নিরঃসো মিস আদ্রিতা এই যে ফাইল গুলো এগুলো সব চেক করে ৪ ঘন্টার মধ্যে আমাকে ফিড বেক দিবেন এন্ড ওয়ান থিংক আই ডোন্ট লাইক ওয়েস্টিং টাইম। নাউ ইউ কেন গো।

আদ্রি কেবিন থেকে বের হয়ে লম্বা শ্বাস নেয়। আদ্রির বুঝতে বাকি থাকেনা এই বসের রাগ নাকের ডগায় থাকে। কোন প্রকার ভুল করা মানেই বাঘ এর মুখে হাত দেওয়া।

আদ্রি নিজের কেবিনে বসে কাজ করছে। কেবিন টা ছোট হলেও অনেক পরিপাটি যা আদ্রির মন ছুয়ে দিয়েছে

নির কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর আদ্রিকে দেখছে।আদ্রি প্রায় কিছু বুঝতে টাইম নিলেই কলম টা ঠোঁট দিয়ে কামড়ে ধরছে। গোলাপি ঠোঁটের মাঝে রাখা কলম এর উপর প্রচুর রাগ উঠছে। নির এর মন চাচ্ছে কলম টাকে ভেংগে ফেলতে। এমন মাদকের মতো নেশালো ঠোঁটের নেশা যেনো নির কে ধীরে ধীরে গ্রাস করচ্ছে।

_________

হস্পিটাল থেকে নওমির বাসায় এসেছে আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান কে দেখেই নওমি ফ্রেন্ড বলে চিল্লায়ে আদ্রিয়ান এর সামনে যায় আর হাত বারায় দেয় আদ্রিয়ান সেটা দেখে মুচকি হাসে আর পকেট থেকে চকলেট বের করে তার হাতে দেয়

আদ্রিয়ানঃফ্রেন্ড আমার সাথে বাহিরে যাবে ঘুড়তে
নওমিঃকিন্তু আমার তো বাহিরে যাওয়া মানা
(মুখটা ছোট করে)
আদ্রিয়ানঃআমার ফ্রেন্ড কে আমি নিয়ে যাবো মানা করার সাহস আছে কার হুম তুমি ঝটপট রেডি হয়ে নাও আমি তোমার নানিকে বলছি ওকে
(নওমির গাল টেনে দেয়)

নওমিও আদ্রিয়ান এর নাক টেনে দেয় দৌড় আদ্রিয়ান নওমির পাগলামিতে হেসে উঠে। নওমি যেতেই মিসেস নিহারিকা বের হয়ে আসেন তিনি দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।

নিহারিকাঃআদ্রিয়ান বাবা নওমিকে বাহিরে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে ওর কান্ডিশান যেমন
(আমতা আমতা করে)
আদ্রিয়ানঃট্রাস্ট মি মিসেস রেজওয়ান। এরকুম পেশেন্ট কে যতো মানুষের ভীড়ে রাখবেন ততো তার জন্য ভালো হবে তাহলে ধীরে ধীরে ওর ব্রেন সচল হওয়া শুরু হবে। নিউরন গুলা কাজ করতে থাকবে।
নিহারিকাঃআই ট্রাস্ট ইউ মাই বয়
আদ্রিয়ানঃথ্যাংক ইউ মিসেস রেজওয়ান

________

আদ্রিয়ান নওমিকে নিয়ে এসেছে নরমাল একটা পার্কে যেখানে বেশি ভীড় না থাকলেও মোটামুটি মানুষ জন আছে। নওমি ঘুড়ে ঘুড়ে সব কিছু দেখছে আর বার বার আদ্রিয়ান কে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে। আদ্রিয়ান ও হাসি মুখে নওমির সব প্রশ্নের উওর দিচ্ছে।

নওমি এদিক ওদিক ঘুরছে আর সব কিছু দেখছে হঠাৎ করে তার চোখ পড়ে একটা ফ্যামিলির উপর যেখানে একটা বাচ্চা মেয়ে কান্না করছে আর তার আব্বু বিভিন্ন ভাবে তাকে হাসানোর চেষ্টা করছে। নওমির সামনে হঠাৎ করে আবছা আবছা কিছু ছবি

ভাসে উঠে সেটা পরিষ্কার দেখার চেষ্টা করতেই মাথায় অসহ্যকর ব্যাথা শুরু হয়

নওমি দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে মাটিতে বসে পড়ে এমন সময় আদ্রিয়ান নওমির সামনে একটা আইস্ক্রীম নিয়ে আসে নওমির সামনে রাখে নওমিকে ডাক দেয় নওমি আইস্ক্রীম দেখে তার মাইন্ড ডাইভার্ট হয়ে যায় আর মাথা ব্যাথাটাও কমে যায়।

_______

নির এর সামনে দাঁড়ায় আছে আদ্রি মাথা নিচু করে ভয়ে হাত পা কাপাকাপি অবস্থা। প্রায় ৫ মিনিট হলো গম্ভির মুখে ফাইল গুলোর দিকে চেয়ে আছে নির।আর সে জন্যই আদ্রির ভয় লাগিচ্ছে মনে হচ্ছে এই বুঝি নির কোন ভুল ধরতে পেরেছে আর ওকে সে জন্য হয়তো জব থেকে বের করে দিবে।

নির বেশ কিছুক্ষন মনোযোগ দিয়ে ফাইল গুলো চেক করে সেগুলো হাতে নিয়ে উঠে পড়লো আর হাটা ধরলো কেবিনের বাহিরের উদ্দেশ্য।

আদ্রিকে ওইখানে ঠাই দাড়ায় থাকতে দেখে নির একবার মাথা ঘুড়ে পিছনে তাকায়

নিরঃএই যে মিস আদর ফলো মি

নির এর মুখে আদর শুনে অবাক হলো এই নামে এর আগে কেউ তাকে ডাকে নি। হঠাৎ করে বুকের বাম পাশটাই আলাদা ভালো লাগার বাতাস বয়ে গেলো।

চলবে!!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here