অতঃপর প্রেমের গল্প পর্ব ৯+১০

#অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤
#কায়ানাত_আফরিন
#পর্ব -৯+১০

বিস্মের চরম শিখার চলে গেলো ফারহান। বৃষ্টিতে সিক্ত এই মেয়েটার কথাগুলো ঝংকারের ন্যায় কর্ণকুহরে বাজছে। আফরার ঠোঁটে স্মিত হাসি। যেন ফারহানকে অবাক করতে পারাটাই ওর জন্য বড় আনন্দের। আফরার এই হাসিতে ফারহানের মাথায় ঝিম ধরে গেলো। এই মেয়েটা শুরু থেকেই ওকে প্রলুব্ধ করে তুলছে। পাগল হয়ে যাবে ফারহান ! এই মেয়ে সত্যিই ওকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে।
.
.
হঠাৎ ফারহান আস্তে করে ছেড়ে দিলো আফরার বাহু। দূরে সরে গেলো সে। আফরার বৃষ্টিতে ভেজা আটঁসাট দেহ থেকে চোখ সরিয়ে মাক্স পরে নিলো ফারহান। শান্ত গলায় বললো,

‘আমার সাথে চলুন আফরা।’

ফারহানের দৃষ্টি শান্ত হলেও মনে হয়তো চলছে অজানা এক ঝড়। তবুও ওপর দিয়ে নিজেকে শক্ত বানিয়ে রেখেছে। আফরা ঠোঁট চেপে সম্মতি জানালো তাই। তারপর দুজনেই এগিয়ে গেলো গাড়ির উদ্দেশ্যে।ফারহান আফরাকে পেছনের সিটে বসতে বলে ড্রাইভিং সিটের দিকে যাচ্ছিলো আফরা কর্ণপাত না করে বসে পড়লো ফারহানের পাশে। ওর আদ্র শরীরে সিট খানিকটা ভিজে যাচ্ছে।ফারহান একনজর আফরার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আমি আপনাকে পেছনের সিটে বসতে বলেছিলাম।’

‘আর আমি পেছনে বসতে চাই না। এবার কি করবেন আপনি?’

আফরার কাট কাট গলা। চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ফেললো ফারহান। এই মেয়েটা যেন ওর উসুল নষ্ট করে ফেলছে। নিজের মুখের ওপর কারও কথা বলা ফারহানের কাছে বরাবরই অসহ্য লাগে। আর এই মেয়েটা শুরু থেকে তাই করে যাচ্ছে। কিন্ত ফারহান কোনোরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারলো না। আফর ওর চাচার আত্নীয়। মেয়েটা উড়নচন্ডী ধরনের হলেও মেয়ে হিসেবে তেমন একটা খারাপ মনে হলো না। আফরার কথার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বললো না ফারহান। রেইনকোর্ট খুলে পেছনে রেখে ইন্জিন স্টার্ট করলো সে। ডেক্স থেকে একটা সাদা মসৃন তোয়ালে বের করে আফরাকে দিয়ে বললো,

‘এই নিন তোয়ালে।’

আফরার হাটুর ওপর রেখে ফারহান ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো। তবে আফরা সরু চোখে তার দিকে তাকালো। জড়ানো গলায় বললো,

‘তোয়ালে দিলেন কেনো?’

‘আপনার শরীর মোছার জন্য।’

আফরার চোখের দৃষ্টি আরও সরু হলো ফারহানের এভাবে ওর দিকে না তাকিয়ে কথা বলাতে। তাই সে বলে ওঠলো, ‘এট এনি চান্স আমি এখানে ভেজা শরীর নিয়ে আছি বলে আপনার অস্বস্তি হচ্ছে না-তো?সমস্যা হলে বলতে পারেন।’

কি নিঃসংকোচ ভাবে বললো সে। তবে আফরার এমন কথাতে বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো ফারহান। সে যে ড্রাইভিং এ আছে এটা একমুহূর্ত ভুলেই গিয়েছিলো । আফরা ভাবহীনভাবে বসে আছে নিজের সিটে। তবে তার সম্পূর্ণ শরীর ফারহানের দিকে ঘোরানো । যেন উত্তর শোনার জন্য অদম্য কৌতুহল জেগেছে মনে। ফারহান এবার কি বলবে ভেবে পেলো না। এই মেয়ের কাজকর্ম যেমন সাংঘাতিক, কথাবার্তাগুলো যেন আরও সাংঘাতিক। এই প্রথম কারও কথা শুনে এত ঘাবড়ে গিয়েছে ফারহান। এমন পরিস্থিতির শিকার সে প্রথম।তবুও ঠোঁটজোড়া চেপে নিজেকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলো সে। তারপর রাস্তার দিকে মনোনিবেশ করে আড়ষ্ট গলায় বললো,

‘আমি, আমি শুধু আপনার জন্য চিন্তা করেই ওটা দিয়েছিলাম। আষাঢ় মাসের এ বৃষ্টির সাথে এ এলাকার মানুষ অভ্যস্ত হলেও আপনি না। তাই আপনার ঠান্ডা লাগতে পারে।’

ফারহানকে বিব্রত হতে দেখে মজা পেলো আফরা। ছেলেদের গম্ভীরতা ওর অপছন্দ হলেও এই মানুষটার গম্ভীরতা ওকে আকৃষ্ট করেছে। তবুও এমন ঘাবড়ানো মুখ দেখার জন্যই এমন একটা কথা বলেছিলো সে। নিজের কাঙ্খিত জিনিসটা দেখার পর ওর ঠোঁটকোলে ফুটে ওঠলো চাপা হাসি। তবুও আর একটু তো বিব্রত তো করাই যায় ! সেই পরিকল্পনা নিয়ে আফরা আবার বললো,

‘ফারহান আপনার গার্লফেন্ড আছে?’

আচ্ছা বদ মেয়ে তো! বিড়বিড়িয়ে বললো ফারহান। মাথায় ভোঁ ভোঁ যন্ত্রণা হচ্ছে ওর। তবুও নির্বিকরভাবে বললো,

‘এসব ফালতু জিনিসে আমি টাইম পাস করিনা।’

‘প্রেম করা ফালতু জিনিস না বুঝলেন, এটাও একটা আর্ট…………আপনি তা কি বুঝবেন? সারাদিন তো রাজনীতিই করে বেড়ান। আল্লাহ জানে আপনার বিয়ে হলে বউয়ের কি অবস্থা হবে? আনরোমান্টিকের ডিব্বা একটা!’

ফারহান ফট করে গাড়ি থামালো ।আফরা কিছুটা অবাক। এতক্ষণ হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলার ভঙ্গিটা আচমকা থেমে গেলো তাই। ফারহান সিট বেল্ট খুলে তৎক্ষণাৎ আফরার কাছে ঝুকেঁ এলো। আফরার হৃদয় যেন তুমুলবেগে লাফাচ্ছে। চোখের এতটা কাছে ফারহানকে দেখে সে স্তব্ধ। গোল আকৃতির মুখ করে তাকিয়ে থাকলো তাই অতি নজরকাড়া এই মানুষটির দিকে। আফরার উদাসীন কথাগুলো ফারহানের মস্তিষ্কে উথাল-পাতাল কান্ড চালাচ্ছিলো। তাই তপ্ত কন্ঠে বললো,

‘আমার বউয়ের কি হবে সেটা আপনার ভাবতে হবে না কেমন? এসব বিয়ে-বাচ্চাকাচ্চা-জগত সংসার সবই তুচ্ছ আমার কাছে। আপনি নাহয় আপনারটা নিয়ে ভাবুন। অ্যামেরিকায় থাকেন………তাই আপনাদের কাছে রিলেশনে প্যাচআপ ব্রেকআপ সব সিম্পল। কিন্ত আমাদের এখানে এমন না । সম্পর্কের গুরুত্ব অনেক বেশি। কিন্ত হেলা করলে তা ভাঙতে দু’সেকেন্ডও লাগে না।’

ফারহানের শীতল কন্ঠ আফরার অতল মস্তিষ্কে বারি খেলো বারবার। ভেজা শীতল দেহ ইতিমধ্যে শুকিয়ে ঠান্ডা হয়ে গেলও ফারহানের এভাবে কাছে আসাতে ওরা অস্বাভাবিক গরম লাগছে। দেহে নিংড়ে আসছে গরম নিঃশ্বাস। অধরজোড়া কেঁপে ওঠছে বারবার। হঠাৎ ফারহান নিজের অবস্থাটা অবলোকন করতে পেরে সরে আসলো আফরার কাছ থেকে।বাইরে বৃষ্টির গতি কমেছে। কাচটি নামিয়ে দিলো তাই। এসি অফ করাতে বৃষ্টির পরবর্তী বরফ জমা বায়ু অন্যরকম উন্মাদনা সৃষ্টি করছে। আফরা এবার আর কোনো কথা বললো না। ফারহান আড়চোখে আফরার দিকে তাকিয়ে পুনরায় গাড়ি চালানো শুরু করলো ‘নেলসন টি এস্টেট’ এর উদ্দেশ্যে।

______________

দুপুর গড়িয়ে বিকেল ঢলেছে। আফরা বাড়িতে আসলো এক ঘন্টার মতো হলো। এর মধ্যে একটা হট শাওয়ার নিয়ে নিলো ভালোভাবে।। হয়তো রাতটা নামলেই কাপুনি দিয়ে জ্বর আসবে। শরীরে প্রচন্ড অবসাদ। বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো সে। চোখ বন্ধ করলে অজান্তেই বারবার ফারহানের চেহারা ভেসে ওঠছে। কানের কাছে বাজছে ফারহানের বলা শেষ কথাগুলো। বড্ড রহস্যময় আর বাউন্ডুলে মানুষ সে। কথার মধ্যেই মানুষটার প্রতি যেন কাজ করে টান টান উত্তেজনা। তবে কোনো এক কারনে মিসেস নাবিলা ফারহানকে পছন্দ করেননা এই কারনটি আফরা আদৌ জানতে পারলো না।তাছাড়া সে যখন বাড়িতে ফিরলো মিসেস নাবিলা ইনিয়ে বিনিয়ে বারবার বলার চেষ্টা করেছে ফারহানের সাথে বেশি মেলামেশা করাটা ভালো হবেনা।এসব প্রশ্নের একমাত্র সমাধান দিতে পারবে ওর মম। তাই খাট থেকেই হাত বাড়িয়ে মোবাইল নিয়ে নিলো সে। কল লিস্ট চেক করে মম এর নাম্বারে কল দিলো। বেশ কিছুক্ষণ পর হতাশ হলো আফরা। ওর মা প্রথমবার কল রিসিভ করলো না আর পরেরবার কলই কেটে দিলো। নিশ্চয়ই অফিসে আছে। তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো আফরা। ব্যঙ্গ সুরে বললো,

‘তোমার থেকে এটাই আশা করা যায় মম। এজ অলয়েজ………’

আফরার মনে চরম দুঃখ নেমে আসলো টেনে টেনে দু’বার শ্বাস নিলো সে। মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। বাংলাদেশে আসার আগেই সে পণ করেছিলো কিছুতেই হতাশ হওয়া যাবে না। এখানে ও এসেছে ভ্যাকেশনের জন্য। আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। তাই ভালোমতো বিচরণ করবে শ্রীমঙ্গলের প্রতিটা কোণে। আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে নিলো সে। না, জামাকাপড় ঠিকঠাকই আছে। মোবাইলটা চার্জে বসিয়ে তাই আফরা এবার নিচে চলে এলো।
ড্রইংরুমে এসেই আফরা দেখলো ক্লান্তিতে হেলে পড়া ফাহিমকে। মিসেস নাবিলা খাওয়ার পর দুপুরেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। ইলা এখনও বাসায় ফেরেনি। আর মিঃ ইফাজ দোকান সামলানোর জন্য গিয়েছে। ফাহিম আফরাকে দেখেই বিনয়ীস্বরে বললো,

‘হ্যালো আফরা………….’

‘হ্যালো।’

আফরা একনজর দেখে নিলো ফাহিমকে। ফাহিম নিজের পরনে ডক্টর এপ্রোন খুলে একপাশে রেখেছে। শার্টের ওপরের দুটো বোতাম খোলা। আফরা সোফায় আয়েশ করে বসতে বসতে বললো,

‘তো কেমন গেলো দিন?’

‘দেখে কি মনে হয়?’

ফাহিমের রাশাভরি কন্ঠ। আফরা হেসে ফেললো অবস্থা দেখে। তাই ঠোঁটকামড়ে বললো,

‘মনে হয় হাল চাষ করে এসেছো?’

ফাহিমও হাসিতে যোগ দিলো তাই। আফরার ফাহিমের সাথে কথা বলে মোটামোটি ভালোই লাগছে। কারন এই মানুষটা অতটাও গম্ভীর না। সর্বদাই চোখেমুখে একধরনের প্রাণোচ্ছোল ভাব থাকে। তবুও ফারহান মানুষটা কেমন যেন মনের গহীনে গেঁথে গিয়েছে আফরার। উহুম………এটা কি শুধুই আকর্ষণ নাকি অন্যকিছু?

________________

মিঃ ইফাজ আর মিসেস নাবিলা বসে আছেন নিজ কক্ষে। ঘরে হলুদ বাল্পের আভায় কেমন যেন ভুতুড়ে মনে হচ্ছে পরিবেশটা। জানালাটি কেঁপে ওঠছে অবিন্যস্তভাবে। রাত নেমেছে অনেক। আর আধঘন্টা পরই ঘড়ির কাটা ১২ তে স্পর্শ করে ডং ডং শব্দে বেজে ওঠবে মধ্যস্থ ঘরের গ্রান্ড ফাদার ক্লকটা। সেই ১৯৩৭ সালে বেলজিয়াম থেকে আনা হয়েছিলো ঘড়িটা। আদৌ কিভাবে যে ঠিকঠাকমতো চলছে তা যেন এক বিস্ময়।

‘আসতে পারি?’

শক্ত পুরুষালি কন্ঠ শুনে শয়ন কক্ষের দরজার দিকে তাকালেন মিঃ ইফাজ আর মিসেস নাবিলা। ফারহান দাঁড়িয়ে আছে। ওর মুখের মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই। নাই কোনোপ্রকার কোনো উদ্বেগ। মিসেস নাবিলা বালিশটুকু ঠিক করে ইশারায় বললো,

‘আসো।’

ফারহান প্রবেশ করলো ঘরে। রুম স্প্রে এর গন্ধে ঘরটি মৌ মৌ করছে। মিঃ ইফাজ ফারহানকে সামনে দেখিয়ে বললেন,

‘চেয়ারে বসে পড়ো।’

‘হঠাৎ এ সময়ে আসতে বললেন যে?’

মিঃ ইফাজের মুখোমুখি চেয়ারে বসতে বসতে বলল ফারহান। মিসেস নাবিলা অদ্ভুত হাসি দিয়ে বললেন,

‘তুমিতো আমাদের থেকেও ব্যস্ত মানুষ। এ গ্রাম ও গ্রাম…..-এ বাজার-ও বাজার টৈ টৈ করে ঘুরো। রাজনীতি-টাজনীতি করো বলে কথা। আর তাইতো এসময়ে না ডাকা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় আছে?’

মিসেস নাবিলার চোখে মুখে ব্যঙ্গতার আভাস। ফারহান উনার দিকে একটা তীক্ষ্ণ চাহিনী দিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। মিসেস নাবিলার এ ধরনের ব্যবহার ওর কাছে নতুন না। বাবা-মায়ের থেকে ভাগ্যের পরিহাসে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিলো অল্পবয়সেই। তাই বাধ্য হয়ে থাকতে হয় নিজের চাচু-চাচির কাছে। কিন্ত মিসেস নাবিলা মোটেও কিশোর ফারহানের দায়িত্ব খরচের ভরন পোষণ নিতে রাজি নন।সেটা তিনি বারবার ইশারা ইঙ্গিতে নিজের শ্বশুড়মশাই ওরফে ফারহানের দাদার কাছে বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্ত ফারহানের দাদা প্রতিবারই তা এড়িয়ে দিয়েছেন বিচক্ষণতার সাথে। তখন থেকেই মিসেস নাবিলার ক্রোধের শিকার হয় ফারহান। ফাহিম ফারহান থেকে ছয় মাসের ছোট…….বলতে গেলে পিঠাপিঠি বয়সেরই হবে। তবুও নিজ সন্তানকে মিসেস নাবিলা যেভাবে লালন-পালন করেছেন, প্রয়োজন পূরন করেছেন , ফারহানের ক্ষেত্রে তা আংশিকও করেনি। চাচু কিছু করতে চাইলেও মিসেস নাবিলার ক্ষোভের জন্য রয়েছিলেন মৌনভাবে। ফারহান এর জন্য আগে কাদতো,প্রচুর কাদতো।মনে হতো যেন এই সুবিশাল পৃথিবীতে সে নিঃস্ব একজন মানুষ। তারপর থেকেই শুরু হয় ফারহানের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। সে পরিবারের ভালোবাসা না পেলে কি হবে , মানুষের ভালোবাসা অর্জন করবে। তাই কলেজ জীবনেই শুরু হয় ফারহানের যাত্রা। নিজের কয়েকজন কাছের মানুষদের নিয়ে একটা ইউনিয়ন তৈরি করে স্টুডেন্টদের জন্য। পরীক্ষার ফি সংক্রান্ত বার্তা, অতিরিক্ত বেতন, স্টুডেন্টসদের আর্থিক সমস্যা, কলেজে রাজনীতির বিরোধ সবকিছুতেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে ফারহান।

ফলে ওপরমহলের অনেকেরই নজর কেড়ে নেয় সে। কলেজের বিভিন্ন চিফ সেক্রেটারি রাজনীতির জন্য আহবান জানালে সাফ মানা করে দেয় ফারহান। তার ভাষ্যমতে , ‘সে মানুষদের হয় কাজ করবে , কোনো রাজনীতি দলের হয়ে না।’তখন থেকেই সবাই ওকে লিডার কম , ‘কমরেড ফারহান’ নামে বেশি চিনে থাকে। তবে মিসেস নাবিলার সমস্যা এতে ছিলো না। সমস্যা হয়েছিলো অন্যজায়গায়। ফারহানের দাদার মৃত্যুর সময় উনি সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ ফাহিম আর ইলার নামে আর বাকি সম্পূর্ণটা ফারহানের নামে করে দেন। উনি জানতেন যে উনার মৃত্যুর পরই ফারহানকে এ সম্পত্তি থেকে বেদখল করাতে মিসেস নাবিলা মোটেও সময় নিবেন না। তাই ক্রোধে মিসেস নাবিলা জর্জরিত হয়ে যান। তিনি বারবার বলেছেন ফারহানকে যে অংশটুকু নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে নিজের সন্তান ফাহিম আর ইলার নামে করতে। কিন্ত ফারহান প্রতিবারের মতোই নির্বিকার ছিলো।

ফারহান এবার মিসেস নাবিলার প্রতিউত্তরে বললো,

‘আমি যে ব্যস্ত মানুষ সেটা জানলে এবার বলে ফেলুন তো কেনো ডেকেছেন আমায়? আমি এখন ডিনার করিনি। তাই জলদি বলুন।’

মিসেস নাবিলা ফারহানের বরাবর বসে পড়লো। তীক্ষ্ন গলায় বললো,

‘আমরা তোমায় বিনিময়ে ৫ কোটি টাকা দেবো এই টি এস্টেট আমাদের কাছে বিক্রি করে দাও।’

‘আমি এর আগেও বলেছি………..এখনও বলবো। দুঃখিত! এই টি এস্টেট আমি কখনোই বিক্রি করবো না।’

মিসেস নাবিলার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ফারহানের প্রতি। তবুও নিজেকে শান্ত করে রাখলেন তিনি। আড়ষ্ট গলায় বললেন,

‘কি করবে তুমি এই সম্পদ দিয়ে? তোমার বিয়ে শাদী করারও শখ নেই তাই যে পরে বউ বাচ্চা নিয়ে থাকবে এমনও তো না। এর থেকে ভালো টাকা দিয়ে একটা ভালো লাইফ লিড করতে পারবে।’

আয়েশ করে বসলো ফারহান। মিসেস নাবিলার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত করে বললো,

‘আমার আন্ডারে এই চা শ্রমিকদের জীবন চলে । তাহলে আপনি ধারনা করলেন কিভাবে যে এটা আমি ব্রিক্রি করবো? আমার দাদুর দেয়া শেষ উপহার এটা। এখানেই আমি বড় হয়েছি। ওই ছোট্ট ঘরের পূব আকাশের মেঘালয় রাজ্য আমার দৃষ্টি সঙ্গী।আপনি দরকার পড়লে বাজারের দোকানগুলো নিয়ে নিন তবুও এই টি এস্টেট আমি কিছুতেই দেবো না। আর একটা কথা………..এই টি এস্টেট এর অর্ধেক টাকা আমি দান করলেও এর এক অংশ দিয়েই আমি চলাফেরা করি। এখানে যা প্রফিট হয়েছে সব আমার পরিশ্রমে। আপনারা এক আনাও দেননি।’

বলেই নীরবে প্রস্থান করলো ফারহান। মিসেস নাবিলা ফারহানের তিক্ত কথাগুলো স্মৃতিচারণ করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। মিঃ ইফাজ হাসলেন মলিনভাবে। এটাই যে উনার স্ত্রীর প্রাপ্য ছিলো !
.
.
.
.
#চলবে………ইনশাআল্লাহ

নোটবার্তা: পড়ালেখার চাপ একেবারেই ঘিরে ধরেছে আমায়। ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, নোটস এগুলো সব পুরোদমে চলছে। নিঃশ্বাস ফেলার মতো সময়টুকুও নেই। এমতাবস্থা গল্প লিখাটা একটু দুষ্কর। তাই নিয়মিত না দিলেও আমি একসাথে দুটো পর্ব দেয়ার চেষ্টা করি। কেমন হয়েছে জানানোর জন্য অনুরোধ থাকবে……..।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here