আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে পর্ব -১৩

#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(13)

আদাভানের বুকেই এক সময় ঘুমিয়ে পরে অরুনিকা। ডান হাত দিয়ে অরুনিকাকে জড়িয়ে ধরেই কিছু একটা টাইপ করে চলেছে ল্যাপটপে আদাভান। নিজের কাজ শেষ করেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অরুনিকার দিকে। কলেজে বি*ধ্ব*স্ত অবস্থায় অরুনিকাকে দেখে কিছু মুহূর্তের জন্য হার্টবিট থেমে গিয়েছিলো তার। এতদিনে এটুকু বুঝে গেছে আদাভান যে এই মেয়েটাতে তার প্রাণভোমরা আছে। অরুনিকার কিছু হলে সে নিজেও শেষ হয়ে যাবে।

অন্ধকার রুমে জানালা থেকে আশা আবছা আলোতে আরো বেশি মোহনীয় লাগছে অরুনিকাকে। দুজনে এতটা কাছাকাছি আজ প্রথম। অরুনিকার প্রতিটা নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে আদাভানের বুকে। এক অদ্ভূত ভালোলাগা অনুভব করছে আদাভান। প্রেয়সীর ওঠা নামা নিঃশ্বাসের সাথে তার মাঝেও তোলপাড়ের ঝড় উঠেছে। আবেগে হারিয়ে গেছে এক অন্য জগতে, যেখানে এই দুটো প্রাণী ছাড়া আর কেউ নেই। বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে হালকা করে স্লাইড করে অরুনিকার মুখে। এমন শিহরনী স্পর্শে ঘুমের মাঝেও কেঁপে কেঁপে ওঠে অরুনিকা। অরুনিকাকে হালকা নড়াচড়া করতে দেখে মুচকি হাসে আদাভান। মুখের সামনে পড়া কিছু চুল কানের পিছে গুঁজে দিয়ে অধর ছোঁয়ায় অরুনিকার কপালে।

“অতীতের মুখোমুখি কিভাবে হবে তুমি প্রাণপাখি? সহ্য করতে পারবে তো সেই অতীত? তোমার সুন্দর জীবনটাতে
আমি একটুও কালি দেখতে চাইনা যে প্রাণপাখি। আমাকে ভুল বুঝোনা প্লীজ। আমার থেকে দূরে সরে যেওনা। সহ্য করতে পারবোনা যে।”

দুইহাতে অরুনিকাকে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে নিজের মনেই বিড়বিড় করে কথাটা বলে আবারো অধর ছোঁয়ায় অরুনিকার চুলের ভাঁজে। সাথে মুছে ফেলে কিছু বেদনার অশ্রু।

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর জন্য খুব ভোরেই ঘুম ভেংগে যায় অরুনিকার। ঘুম ভাঙ্গতেই প্রথমে মাথাটা ভীষণ ভার অনুভূত হয়, সাথে কানের কাছে দ্রিম দ্রিম করে কিছু একটার শব্দ শুনতে পায়। চমকে ওঠে সে। মাথাটা ওঠাতে গিয়ে বুঝতে পারে কারোর হাতের শক্ত বাঁধনে আঁতকে আছে সে। পিটপিট করে চোখ খুলেই দেখতে পায় আদাভানের ঘুমন্ত মুখখানা। বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে ঘুমাতে দেখে ফিক করে হেসে ফেলে অরুনিকা। বুকের কাছে কান দিয়ে আবারো শোনে সেই দ্রিম দ্রিম শব্দ। মন বলছে একটু ছুঁয়ে দিতে তার প্রেমিক পুরুষকে। আবার মস্তিষ্ক তাতে ঘোর প্রতিবাদ জানায়। মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধে অবশেষে মনকে জয়ী করে ডান হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেয় আদাভানের লোমশ বুকে। ঘুমের কারণে শার্টের বেশ কয়েকটা বোতাম খোলা থাকায় বেশ সুবিধে হয়েছে তার। এই যে হুট করেই যদি আদাভান জেগে যায় তাহলে বলবে ঘুমের ঘোরে ছিলো। নাহলে নাজানি কি ভেবে বসে আদাভান। বুকের থেকে মুখ তুলে থুতনিতে থেকে দিয়ে অরুনিকা তাকায় আদাভানের দিকে আবারো। কেমন যেনো ঘোর লেগে যাচ্ছে তার। যতোই মুখে বলুক ভালোবাসেনা আসলে তো সেও ভালোবাসে তাকে, ভীষন ভালবাসে। ভালোবাসার মানুষটা এভাবে কাছে থাকলে হয়তো সব প্রমিকাই একটু আদতু বেহায়া হয়ে পড়ে। অরুনিকার ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।

কাঁপা কাঁপা হাতে স্পর্শ করে আদাভানের ঠোঁট। আনমনেই ভাবে, ছেলেদের ঠোঁট এতো গোলাপি হয় নাকি? ওনার সবকিছুই এতো সুন্দর কেনো? ভালোবাসি মিষ্টার আদা! ভীষন ভালোবাসি আপনাকে। ভালোবাসি বলেই তো আপনাকে কারোর সাথে সহ্য করতে পারিনা। ভালোবাসি বলেই তো এতো অভিমান জমে আপনার উপর। কারণ #আমার_অভিমান_তোমাকে_ঘিরে। মনে পড়ে যায় প্রাপ্তিকে যেদিন প্রথম কলেজে আদাভানের সাথে দেখেছিলো সেদিনের কথা। ভাই বোনের সম্পর্কে এভাবে জড়িয়ে ধরাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সে না বুঝেই কতই না কান্নাকাটি করেছিলো। আনমনে হেসে ঠোঁট ছোঁয়ায় আদাভানের কপালে। দীর্ঘ এক চুমু এঁকে উঠে পড়ে জীবনের নতুন এক শুরুর দিকে।

গোসল সেরে আলমারি খুলে বের করে একটা লাল শাড়ী সাথে কালো চওড়া পাড়, লাল ব্লাউজ, লাল কালো কাঁচের চুড়ি। আজকে নতুন বউয়ের মতো সাজবে অরুনিকা। বিয়েটা কয়েকদিন আগে হলেও এতদিন নিজেকে বউ বউ বলে মনে হয়নি। তবে আজ হচ্ছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতে রাখা বক্সটা উল্টে পাল্টে দেখছে অরুনিকা। আলমারি থেকে শাড়ী বের করতে গিয়ে চোখে পড়া এই বক্সটা। আলমারীর একটা তাকে শাড়ী আর একটাতে থ্রিপিস খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা থাকতে দেখেছিলো বিয়ের পরের দিনই। এগুলো যে আদাভানের কাজ সেটা সম্পর্কেও অবগত। এই কয়দিন শাড়ী না পড়ার দরুন চোখে পড়েনি হয়তো তার এই বক্সটা। খুলবে কি খুলবেনা ভাবতে ভাবতেই খুলে যা দেখলো তাতে সে বেশ অবাক। হুবহু তার পছন্দমতো একটা স্বর্ণের আংটি সাথে একটা কোমরবিছা। আংটিটা দেখে মনে পড়ে যায় অতীতের সেই দিনের কথা।

“বর্ষা আপু দেখো ওই আংটিটা কত্তো সুন্দর।”

“বাহ পুষি! তোর পছন্দ দেখি একদম আমার মতই। দেখ আংটিটাও আমার সাইজের। তুই অন্যটা নিয়ে নে আমি এটাই নেবো।”

“আপু এটা কিন্তু ঠিক না। আমি তো আগে পছন্দ করেছি। আমাকে দাও।”

“দেখ পুষি এটা তোর হাতে অনেক বড় হবে তুই অন্যটা নিয়ে নে। এটা আমিই নেবো। একদম জেদ করবিনা।”

বর্ষা আর অরুনিকা গেছিলো মেলাতে ঘুরতে। বর্ষা আদর করে অরুনিকাকে পুষি বলেই ডাকতো। কারন অরুনিকা যখন হয়েছিলো তখন ছিল একদম ধবধবে ফরসা আর ছোটো ছোটো হাত পায়ের। বর্ষাও বেশ ছোটই ছিলো। তাই আদর করে পুষি নাম দিয়েছিলো অরুনিকার।
____________

হুবহু একই রকম আংটি। এটা কি আসলেই কাকতালীয় নাকি অন্য কিছু রহস্য আছে এর পিছনে?

শেষ রাতের দিকে ঘুমানোর জন্য বেশ বেলা করেই ঘুম ভাঙ্গে আজ আদাভানের। ঘুম থেকে উঠে পাশে অরুনিকাকে না পেয়ে কপাল কুঁচকে সামনে তাকাতেই মুখটা হা হয়ে যায় তার। তারাহুরো করে বেড থেকে উঠে দুই হাতে চোখ ডলে আবারো তাকায় সামনে, নাহ এটা মনে হয় স্বপ্ন দেখছে সে। লাল পরি হয়ে বসে থাকার মেয়ে তো অরুনিকা নয়।

“উহুম উহুম! মিষ্টার আপনি স্বপ্নে নেই, বাস্তবেই আছেন। এভাবে হ্যাং আউট হওয়ার মতো অবস্থা কেনো আপনার?”

“অরুনিকা তুমি! মানে আম্মু কি তোমাকে কিছু বলেছে? এসব পরতে বলেছে?”

“উহু একদমই নাহ। আণ্টি তো আমাকে কিছুই বলেনা এসব নিয়ে। এই বাড়ির সবাই অনেক ভালো। এই কয়েকদিনেই আমাকে অনেক আপন করে নিয়েছেন। মনে হয় যেনো কোনো বছর ধরে চিনি তাদের।”

“তাহলে তুমি এসব পরেছো কেনো?”

“কেনো আমাকে ভালো লাগছেনা নাকি? নতুন বউ শাড়ী না পড়লে কেমন যেনো খালি খালি লাগে তাই ভাবলাম শাড়ী পরে একটু সেজে গুজে বেরোতে। খুব খারাপ লাগছে বুঝি আমাকে?”

অরুনিকার মুখে নতুন বউ শুনে যেনো আরো একদফা অবাক হয়ে গেলো আদাভান। খুশিতে কিছু বলতেও ভুলে গেছে। তার মানে অরুনিকা আমাকে মেনে নিয়েছে? আমাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে?

“ওই বলুন না খুব খারাপ লাগছে আমাকে? খুলে দেবো শাড়ি?”

“এই না না, একদমই নাহ।”

বলতে বলতেই বেড থেকে উঠে অরুনিকার একদম কাছে চলে আসে। কানের কাছে মুখ নিয়ে লো ভয়েসে বলে,

” তুমি নিজেও জানোনা কতোটা সুন্দর লাগছে তোমাকে। আমি তো ভেবেছিলাম আকাশ থেকে কোনো লাল পরি নেমে এসেছে আমার ঘরে।”

দুই হাতের মাঝে পিষতে থাকা শাড়ির আঁচলটা অরুনিকার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঘোমটা টেনে দেয় সেটা দিয়ে আদাভান। মোহময়ী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অরুনিকার দিকে বেশ কিছু সময়। তারপর মিনমিনিয়ে বলে,

“পাগল হয়ে যাচ্ছি তো।”

আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। লজ্জায়, আবেশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে অরুনিকা। সারা অঙ্গে ছেয়ে যাচ্ছে ভালোলাগাময় প্রেমানুভূতি।

চলবে?
#Fiza_Siddique

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here