এক বেরঙ চিলেকোঠায় পর্ব -২৫+২৬+২৭

#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-২৫

আরাবকে অফিসে দেখে কিছুক্ষন অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে রইলো মুফতাহির। ও শুনেছিলো আরাব তৌফিক ওয়াহিদের শর্ত মানতে অফিস এসেছিলো একবার। কোনো কাজ না করে শুধু কিছু কাগজপত্র নিয়েই নাকি বাসায় চলে গিয়েছিলো,এমনটাই কানে এসেছিলো ওর। দ্বিতীয়বার ওকে অফিসে দেখবে,আশা করেনি মুফতাহির। ধীর গলায় উচ্চারন করলো,

-আরাব? তুমি?

কোটটা টেনে হাসিমুখে ওর দিকে এগোলো আরাব। মুখোমুখি দাড়িয়ে বললো,

-হ্যালো ভাইয়া। সারপ্রাইজ!

মুফতাহির উৎফুল্লভাবে হাত এগিয়ে বললো,

-হোয়াট আ সারপ্রাইজ আরাব! ফিলস্ গ্রেট টু সি ইউ হেয়ার!

হাতে হাত মিলিয়ে মুফতাহিরকে আলিঙ্গন করলো আরাব। বললো,

-ফিলস্ ওয়াও টু বি হেয়ার! এজ আপকামিং ওনার অফ রংধনু ইন্ডাস্ট্রিজ!

মুফতাহির আবারো বিস্ময়ে তাকালো। আরাব এর আগে কখনোই এ ধরনের কথা বলেনি। আজকে ওরই একের পর এক কথা আর কাজে বিস্মিত না হয়ে পারছে না। আরাব বললো,

-বাবা কোথায় ভাইয়া?

-উনি এখনো আসেননি আরাব। উম..তা তুমি এতো সকালসকাল এখানে?

-কেনো? উচিত হয়নি আসা?

-হোয়াট আর ইউ সেয়িং আরাব? এসব তো তোমারই। ইউ ক্যান কাম,হোয়েনএভার ইউ ওয়ান্ট টু। আমি তো জাস্ট এটা জিজ্ঞাসা করছিলাম আজ বায়োমেডি অফ ডে কি না!

আরাব রহস্যময় হেসে বললো,

-না। আজকে অফ ডে না!

-তাহলে…

-একচুয়ালি অনেক ভাবলাম জানোতো মুফতাহির ভাইয়া। বাবার তো বয়স হয়েছে। আর তোমারও চেম্বার আছে। দুজনে রংধনু আর কতো সামলাবে বলো? তাই ডিসিশন নিলাম এখন থেকে বায়োমেডির অফ ডে না থাকলেও আমি অফিসে আসবো। ইনফ্যাক্ট রেগুলার আসবো। ফ্রম ওনায়ওর্ডস্,বায়োমেডি ইজ গোয়িং টু বি মাই পার্শিয়াল জব কর্নার। আর প্রায়োরিটি হিসেবে থাকবে বাবার বিজনেস!

শেষের কথাটা বেশ শক্তভাবে বলেছে আরাব। মুফতাহির চুপচাপ তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। তারপর হেসে ওর কাধ ধরে হাটা লাগিয়ে বললো,

-ওকে ফাইন। এজ ইউ উইশ। এসো,আমি তোমাকে ডিটেইলস্ দেখিয়ে দিচ্ছি।

আরাব বাধা দিলো না। পা বাড়ালো মুফতাহিরের সাথে। হ্যাঁ দেখবে,ডিটেইলস্ দেখবে। অনেক হিসাব দেখার আছে ওর। অনেক হিসাব মিটানোর আছে।

ভার্সিটির জন্য বাড়ি থেকে বেরোলো দোয়া। সদর দরজায় দাড়িয়ে আশপাশটা দেখে নিলো কয়েকবার। আগেরদিন আরাবের সাথে দেখা করে আসার পর থেকেই অদ্ভুত এক অনুভুতি হচ্ছে ওর। মনেহয় সবসময় কেউ চোখেচোখে রাখছে ওকে। মাহিমকে পড়াতে যাওয়ার সময়,টুইঙ্কেলদের বাসায়,এমনকি মুখার্জীবাড়িতেও মনে হয় ওকে কেউ অনুসরন করছে। সকালবেলা বারান্দায় অনেকগুলো কাঠগোলাপ রাখা ছিলো।

ঘুম থেকে উঠে এগুলো দেখে আরো অজানা ভয় জাপটে ধরতে শুরু করেছে দোয়াকে। এসব কার জন্য? কে হতে পারে ভাবতেই মাথা ফেটে যাচ্ছিলো ওর। চটজলদি সব ফুল তুলে ফেলে দিয়েছে। কোনোমতে নিজেকে সামলে,সকালের কাজ সামলেছে। বেরিয়েছে,ভার্সিটি যাবে বলে। হাটা লাগালো দেখেশুনে। বাস থামার জায়গাটায় এসে দাড়ালো ও। আচমকা বাইক এসে দাড়ালো ওর সামনে। দোয়া চমকে খানিকটা পিছিয়ে দাড়িয়ে গেলো। গ্রে প্যান্ট,হাতে ঘড়ি,নীল শার্ট,বুকপকেটের কাছে আইডিকার্ড লাগানো। ওটা দেখে ব্যাগটা আরেকটু শক্তিতে আকড়ে ধরলো দোয়া। হেলমেট খুলে আরাব বড়সর হাসি দিয়ে বললো,

-গুড মর্নিং!

দোয়া নিরবে তাকিয়ে রইলো। সবসময় এক আলাদা স্নিগ্ধতায় ভরপুর এই মানুষটার চেহারা। সকালসকাল আরাবের চেহারা দেখে রাগ হওয়া উচিত ছিলো ওর। কিন্তু এ কয়দিনের চেনাজানায়,পাল্টে যাচ্ছে সে চিরায়ত নিয়ম। আরাব ভ্রু নাচালো। দোয়া একটু অস্বস্তিতে পরে গেছে। চোখ সরিয়ে নিলো অতি সন্তর্পনে। ওর মনে পরলো সুমনের বিরুদ্ধে জিডির বিষয়ে। আবারো চোখ তুলে কিছু বলার আগেই ওর সামনে একটা কাগজ তুলে ধরে আরাব বললো,

-এই নাও,ওই ডক্টর সুমনের বিরুদ্ধে জিডি করে দিয়েছি। তাহসানুল আরাবের বোনজামাইয়ের নাম ব্যবহার করে মেয়েদের ঠকানো? ওকে দিনে তারা দেখানোর ব্যবস্থা করে দেবে পুলিশ। ডোন্ট ওয়ারি।

কাগজটা হাতে নিলো দোয়া। পুরোটা পড়ে নিলো ওটার। সবকিছুই ঠিকঠাক। কেমন যেনো মানতে কষ্ট হচ্ছে দোয়ার। সবটা এতো স্বাভাবিকভাবে,এতো সহজভাবে কিভাবে হতে পারে? আরাব শান্ত গলায় বলে উঠলো,

-তোমাকে বললাম তো দোয়া। ডোন্ট ওয়ারি। এতো চিন্তিত দেখতে ভালো লাগে না তোমাকে।

দোয়া তাকালো ওর দিকে। এতোক্ষনে বাইক ছেড়ে নামলো আরাব। ওর সামনে দাড়িয়ে বললো,

-খুব দেখার ইচ্ছা দোয়া। নিমীলিত চোখজোড়ার চঞ্চলতা,মলিন বিনুনীতে আবদ্ধ চুলের উচ্ছ্বলতা,নয়তোবা গাজরায় বদ্ধ খোপা,মুঠোতে আটকে থাকা ওড়নার মৃদ্যু বাতাসে উড়োউড়ি,ভাজের পরিবর্তে কপালে কালোটিপ,হাতে সময় ধরে রাখার কঠোরতা ছাপিয়ে ডজন খানেক কাচের চুড়ি,লাল পার সাদা শাড়িতে সরলতার আরেক রুপ। খুব দেখার ইচ্ছা।

-এ্ এসব কি বলছেন আপনি মিস্টার আরাব?

আরাব চোখ সরালো দোয়ার থেকে। এভাবে বলাটা ঠিক হয়নি ওর। কিন্তু দোয়ার শুধু এইটুক রিয়্যাক্ট ওকে অবাক করেছে। তারপর বুঝলো হয়তো নাম ধরে বলেনি বলে বেশি কিছু বললো না। গলা ঝেড়ে বললো,

-লিভ ইট! আম দোয়া? কাল তো তুমি প্রশ্ন করতে মানা করেছিলে,কিছুই জিজ্ঞাসা করতে পারি এজন্য। আজ করবো?

দোয়ার চেহারায় ভয় স্পষ্ট। ও বেশ বুঝতে পারছে আরাব ওকে সুমনের পরিচয় নিয়েই‌ জিজ্ঞাসা করবে। এটাও জিজ্ঞাসা করবে,সবটা জেনেও কেনো দোয়া নিজেই তাজীনকে বললো না। কেনো ও নিজেই থানায় যায়নি? কি উত্তর দেবে ও এসবের? এসব করতে গেলে তো ওর পুর্নপরিচয় দিতে হতো। এজন্যই তো কিছুই করেনি ও। আমতা আমতা করে বললো,

-জ্ জ্বী মানে…

আরাব স্বাভাবিক গলায় বললো,

-আরে আরে! ঘাবড়ে কেনো যাচ্ছো? সিম্পল কোশ্শেন করবো! এমন তু তু তুতলিয়ে গেলে যে?

কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলো দোয়া। নিজেকে সামলে বললো,

-দ্ দেখুন,আ্ আসলে…

-আ্ আবারো তো তো তোলাচ্ছো?

দোয়া চোখ বন্ধ করে অন্যদিক ফিরলো। রাগ হচ্ছে ওর এবার। আরাব ঠোট কামড়ে হেসে বললো,

-তা তো তো তোতলানো দোয়া? তোমার বান্ধবী কেমন মেয়ে বলোতো?

বড়বড় চোখে তাকালো দোয়া। কেমন মেয়ে মানে? তাজীন কেমন মেয়ে তা দিয়ে ওর কি? আরাব মাথা চুলকে বললো,

-ওমন করে তাকাচ্ছো কেনো?

-মানে? আপনি ঠিক কি বুঝাতে চাচ্ছেন?

-কেনো বোঝোনি? তোমাকে বললাম তাজীন কেমন মেয়ে।আর তুমি এমন লুক দিচ্ছো যেনো কোনো মেয়ে কেমন,এটা জিজ্ঞাসা করা যাবে না আমার!

-যাবে। তবে আমাকে নয়!

কড়া গলায় বলে নিজে নিজেই‌ থেমে গেলো দোয়া। আরাব মাথা নিচু করে সন্দিহান কন্ঠে বললো,

-হুয়াই? তোমাকে জিজ্ঞাসা করবো না তো কাকে জিজ্ঞাসা করবো? তোমার বান্ধবীর খবর তুমি ছাড়া আর কে‌ দেবে হুম?

-ও অনেক ভালো মেয়ে!

-হুহ! কতো ভালো মেয়ে দেখলাম! তারপর শুনি ভালো মেয়েটা কাউকে না জানিয়ে একাএকাই বিয়ে করে নিয়েছে!

আফসোসের স্বরে বললো আরাব। দোয়া শুধু তাকিয়ে রইলো। দুবার ভ্রু নাচালো আরাব। একটা জোরে শ্বাস ফেলে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বিরবিরিয়ে বললো,

-এই বাসটা কেনো আসছে না এখনো?

-বাস মেরে বাসমে হ্যায়। যাবতাক তুম বাসমে না আও,বাস ভি নেহি আয়েগা! হু হা হা!

আরাব নিজেনিজেই হেসে ধীরগলায় বললো। কয়েকবার বাস উচ্চারন করেছে ও,এটা বুঝে আবারো ওর দিকে তাকালো দোয়া। আরাব কথা পাল্টাতে বললো,

-আমি তো নর্মালি জিজ্ঞাসা করছিলাম তাজীন কেমন মেয়ে। আইমিন,এই জিডিটা তোমার বান্ধবীকে দেখিয়ে দিলে তোমার বান্ধবী একটা ফ্রডকে এটলিস্ট বিয়ে করবে না তাইনা?

-না।

সোজা জবাব দিয়ে পাশ ফিরলো দোয়া। ও জানে তাজীন ওর মুখের কথাতেই অনেককিছু বিশ্বাস করতো। এখন জিডিটা যখন দেখাবে,আর কোনো সন্দেহই থাকবে না ওর। তাই বেশ অনেকটাই নিশ্চিন্ত ও। হঠাৎই আরাব ঠান্ডা গলায় বলে বললো,

-ডক্টর সুমনকে কি করে চেনো দোয়া?

শিরদাড়া যেনো হিম হয়ে গেলো দোয়ার। পাশে তাকিয়ে আরাবকে দেখার সাহসও ওর নেই। হাত কচলাতে লাগলো ও। ঠিক তখনই সামনে ভার্সিটির বাস এসে থামলো। পাশ না ফিরে বললো,

-আ্ আমার দ্ দেরি হয়ে যাচ্ছে।

-এ্ এ্ এসো।

দোয়া পাশ ফিরতেই ওকে ইনোসেন্ট একটা হাসি উপহার দিলো আরাব। একটা কথাও না বলে সোজা বাসে চরে বসলো দোয়া। কোনোদিক তাকায় নি ও। বাসে উঠে যাওয়ার পর অসহায়ভাবে তাকিয়ে থেকে নিরব প্রেয়সীর প্রস্থান সহ্য করলো আরাব। বাস ছেড়ে দিলে হাতদুটো মুঠো করে রেখে বললো,

-কেনো এতো আড়াল দোয়া? কেনো এতো বাধা? কেনো তোমাকে কঠোর হতে হলো? আর কেনো আমাকেই বা এতো অসহায় পরিস্থিতিতে পরতে হলো? দোষটা তো কারোরই ছিলো না! শাস্তিটা কেনো এতোদিন তোমাকে আর তোমার পরিবারকে সইতে হলো? আর কেনো অবশেষে আমিও তার শিকার? কেনো দোয়া? পৃথিবীটা এতো নিষ্ঠুর কেনো?

স্তব্ধ দুপুর। ক্যাম্পাসের এক বড় গাছের নিচে দাড়িয়ে দোয়া আর তাজীন। তাজীন শান্ত দৃষ্টিতে হাতের কাগজটার দিকে তাকিয়ে। শুকনো ঢোক গিললো দোয়া। ডক্টর সুমন যে ওকে ভুল পরিচয়ে ঠকাচ্ছে এটা বলে দিয়েছে ও তাজীনকে। আরাবের দেওয়া জিডির কাগজটাও দেখিয়ে দিয়েছে। এখন বুঝে উঠতে পারছে না তাজীন কি বলবে,তার বিপরীতে ওই বা কি বলবে। দোয়া একপা এগিয়ে তাজীনের কাধে হাত রেখে কাপাকাপা গলায় বললো,

-ত্ তাজ?

ভাষাহীন দৃষ্টিতে তাজীন দোয়ার দিকে তাকালো। দোয়া ব্যস্তভাবে বললো,

-তাজ? তাজ উনি…ডক্টর সুমন…উনি…

-আমার বিয়ে হয়ে গেছে দোয়া।

বিস্ফোরিত চোখে তাজীনের দিকে তাকালো দোয়া। ওকে ছেড়ে দু পা পিছিয়েও গেছে। যা শুনলো,তা কি ঠিক শুনলো ও? যদি তাই হয়,তবে তা কি করে সম্ভব? তাজীনের মাটির দিকে স্থির চাওনি। দোয়া জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে আবারো এগোলো ওর দিকে। বললো,

-ম্ মানে? তাজ…

তাজীন মাথা তুলে তাকালো। নাকটা টেনে শক্ত গলায় বললো,

-গতকাল রাতেই আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-২৬

-প্রথমবারের মতো যাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম,যাকে…যাকে আস্তেআস্তে নিজের সবটুকো দিয়ে ভালোবাসতে শুরু করলাম,সেই আমাকে এতো বাজেভাবে ঠকালো দোয়া। এতো বাজেভাবে ঠকালো। সে…সে কিনা একটা ঠকবাজ,একটা বহুরুপী। যার সবটা…সবটা নাটক ছিলো,আমাকে বলা প্রতিটা কথা মিথ্যে ছিলো,আমার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত ছলনা ছিলো। সে ভালোবাসেনি আমাকে দোয়া। কোনোদিনই ভালোবাসেনি সে আমাকে। আমার সাথেই কেনো এমন হলো বলতে পারিস? আমার সাথেই কেনো? আর…আর একজন ঠকিয়ে চলে যাবে বলে ঠিক সেই মুহুর্তেই আরেকজনকে তার জায়গাটা দিয়ে দিতে হবে,এমন সিচুয়েশন কেনো হলো দোয়া? কেনো হলো? কেনো হলো?

দোয়াকে জড়িয়ে ফুপাচ্ছে তাজীন। শব্দ করর কাদছে না একদমই ও। স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে দোয়া। ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। বেশ অনেকটা সময় কাদলো তাজীন। একসময় ওকে আস্তেধীরে ছাড়িয়ে ওর দু কাধ ধরে দোয়া বললো,

-কি হয়েছে তাজ? খুলে বলো আমাকে সবটা।

চোখ মুছলো তাজীন। একটা শুকনো ঢোক গিলে শান্তভাবে বলতে লাগলো,

-আমি ঠকে গেছি দোয়া। ঠকে গেছি। কাল ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরেই দেখি বাবা খুবই অসুস্থ্য। কারন? কারন নাকি ওই ছদ্মবেশি। সে… সে নাকি ছলচাতুরী করে বাবার কাছ থেকে কিসের সাইন আদায় করিয়ে নিয়েছে,আর তাতে আমাদের কোম্পানি ডুবতে বসেছে। আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো এসব। বিশ্বাস করিনি। বাবাকেও অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু বাবা মানেনি। বারবার ফোন করে যাচ্ছিলাম ওই মানুষটাকে। পাইনি। বাবা নানুভাইকে অনেক কথা শুনিয়ে দেয়ই লোকটার পরিচয় নিয়ে। তারপর পুলিশ কমপ্লেইন করতে গিয়ে জানা যায় ওই লোকটা ডক্টর সজল মুফতাহিরের নাম ব্যবহার করে আসছে এতোদিন হলো। থানায় তার নামে জিডিও করা আছে। ঠিক যেটা এখন তুই এনেছিস।

দোয়া অবাক। ও কিছু করার আগেই এতোকিছু ঘটে যাবে,ধারনায় ছিলো না ওর। বিস্ময়ে কথা বেরোচ্ছে না ওর। তাজীন বললো,

-মানুষ চিনতে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আমি দোয়া। অনেকবড় ভুল করে ফেলেছি। আর সে ভুলের মাশুল সারাজীবন দিতে হবে আমাকে।

নিরবতা। দোয়া চেয়েছিলো বিয়েটা না হোক,কিন্তু তাজীনের এরকম বিধ্বস্ত দশা নিয়েও ভয় ছিলো ওর। আর সেটাই হলো। তাজীন স্থির দৃষ্টিতে মাটির দিকে তাকিয়ে। ওর দিকে এগিয়ে আবারো ওর এক কাধে হাত রাখলো দোয়া। কিছু বলতে যাবে তখনই,

-তাজীন?

পুরুষালি কন্ঠে তাজীনের নাম শুনে দোয়া পাশ ফিরলো। শার্ট,প্যান্ট পরা বেশ মার্জিতবেশের এক লোক দাড়িয়ে। তাজীন চোয়াল শক্ত করে দাড়িয়ে রইলো। লোকটা একপলক দোয়ার দিকে তাকালো। তারপর ইতস্ততবোধ নিয়ে তাজীনের দিকে এগিয়ে বললো,

-আপনি এভাবে না বলে ভার্সিটি চলে এলেন?

-আপনার ক্লাস কি শেষ? না মানে,বাসায় ফিরবেন কখন?

তাজীন ঠান্ডা আওয়াজে বললো,

-জ্বী। ক্লাস শেষ আমার। এখনই ফিরবো।

লোকটা আবারো দোয়ার দিকে তাকালো। লোকটার পরিচয় না জানলেও দোয়া এটুকো বুঝলো,উনি তাজীনকে কিছু বলতে চাচ্ছেন এখন। ওকে দেখিকে লোকটা তাজীনকে বললো,

-আপনার ফ্রেন্ড?

তাজীন মাথা তুলে তাকালো। দোয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

-হুম।

-বেশ আপনারা কথা বলুন। আমি গাড়িতে আছি।

লোকটা চলে যাচ্ছিলো। তাজীন পেছন থেকে বললো,

-জাস্ট এক মিনিট মিস্টার নিরব।

তাজীনের সম্বোধন শুনে দাড়িয়ে গেলো নিরব। এই মেয়েটার সাথে এতো আকস্মিকভাবে ওর জীবন জড়িয়ে গেছে যে সবটা বুঝে ওঠার সুযোগও পায়নি। তাই তাজীনের কাছেও স্বাভাবিক ব্যবহারে আশাবাদী নয় ও। ওদের মতো একেবারে অচেনা দুজন মানুষের মাঝে স্বামী স্ত্রী নামক পবিত্র সম্পর্ক জুড়ে গেছে। ভাবতেও অবাক লাগছে প্রতিবার। দোয়া একবার নিরবের দিকে,একবার তাজীনের দিকে তাকালো। তাজীন দোয়ার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যে বললো,

-সময় আর পরিস্থিতি কতোটা বাজেভাবে বদলায় দেখ দোয়া! তোকে দুদিন আগে একজনের সাথে আমার ফিয়ন্সে হিসেবে দেখা করালাম। আর আজ দেখ,অন্য একটা মানুষকে দেখিয়ে বলতে হচ্ছে,ইনি আমার বর!

দোয়া বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। তাজীন কড়া গলায় বলে উঠলো,

-মিট মাই হাসবেন্ড,ডক্টর নিরব চৌধুরী। এক্সপেরিমেন্ট স্পেশালিস্ট,বায়োমেডি রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

চারপাশ ঘুরতে লাগলো দোয়ার। তাজীনের কথা কিছুতেই মানতে চাইছে না ওর মস্তিষ্ক। বিস্ময় নিয়েই বলে উঠলো,

-মানে?

-মানে কাল তাজীন আর নিরবের শুভ বিবাহ সম্পন্ন হইয়াছে।

আরাবের গলা শুনে ধরফরিয়ে পাশ ফিরলো দোয়া। আরাব একদম পেছনেই দাড়িয়ে ওর। দোয়া হতভম্বের মতো বললো,

-আপনি এখানে?

-তুমি যেখানে,আমিও সেখানে।

-মিস্টার আরাব!

-কিডিং! আসলে ঘটনা হলো,কলিগ ফোন করে বললো,বিয়ের পরদিনই বউ খুজে পাচ্ছে না। তাই তার বউ খুজতে এখানে চলে এলাম!

-মানে? ক্ কে আপনার কলিগের বউ?

-তোমার বান্ধবী,তাজীন।

আরেকদফা ধাক্কা খেলো দোয়া। আরাব ওর সেই বিখ্যাত ইনোসেন্ট হাসি নিয়ে এগিয়ে এসে বললো,

-সত্যি বলছি ইয়ার! ইট ওয়াজ লাইক টিপিক্যাল বেঙ্গলী ফিল্ম! হিরোইনকে ধোকা দিয়ে ভিলেন বিয়ে বিয়ে করতে চায়,লাস্ট মোমেন্টে ম্যাজিকের মতো বিয়েটা ভেঙে যায়,হিরোইনের বাবার হার্ট এটাক,বারবার তার আত্মীয়স্বজনরা কল,হবু জামাই নাকি সবকিছু নিজের নামে লিখে নিয়েছে,হবু জামাই নাকি ঠকবাজ,হবু জামাই নাকি ধোকাবাজ,হবু জামাই ‌এটা,হবু জা‌মাই ওটা এইসব শুনাতে থাকা। আর ঠিক তখনি নিরবের বাবার হিরোর মতো,আইমিন হিরোর বাবার মতো এন্ট্রি! এক বিজনেস পার্টনারই তো অন্য পার্টনারের দুঃসময়ের সঙ্গী,অতঃপর বিজনেস রিলেশনকে আত্মীয়তার সম্পর্কে বদলে দেওয়া এন্ড অল! অবশ্য এমনটাই তো হওয়া উচিত ছিলো। তাইনা দোয়া?

দোয়া দম মেরে দাড়িয়ে রইলো। ওর মাথায় কিছুই ঢোকেনি যেনো। মুচকি হেসে আরাব তাজীনকে বললো,

-হাই তাজীন! আমি নিরবের সিনিয়র। তাহসানুল আরাব।

….

-দেখো তাজীন? আমি তোমার বড় ভাইয়ের মতো। ভাই হিসেবে একটা এডভাইস দেবো?

তাজীন মাথা নিচু করে চুপ রইলো। আরাব বললো,

-নিরবের সাথে বাসায় চলে যাও। কাল ওভাবে বিয়েটা হয়ে গেলো তোমাদের। আর আজই এভাবে কাউকে না জানিয়ে ভার্সিটি চলে আসাটা কিন্তু একদমই ঠিক হয়নি তোমার। বাসায় তোমার মা বাবা,নিরবের বাবা সবাই টেনশন করছে।

তাজীন দোয়ার দিকে তাকালো। আরাব বললো,

-তোমার বান্ধবীকে আমি আগে থেকে চিনি তাজীন। ওকে না হয় বাকিটা আমি বুঝিয়ে বলছি? তোমরা এসো। কি দোয়া? শুনবে তো?

চুপচাপ দোয়াকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো তাজীন। নিরবও ওর পিছনেই চলে গেলো। আরাব পকেটে দুহাত গুজে মুচকি মুচকি হাসছে। দোয়া ওভাবেই শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো। আর কিছুই শোনার নেই ওর। শেষ মুহুর্তে পারিবারিক চাপে পরে যে তাজীন আর বিরবের বিয়ে হয়েছে,সেটা পরিষ্কার ওর কাছে। কিন্তু তারচেয়ে বড় চিন্তা! সুমন,নিরব,আরাব-এ সবগুলো নাম বায়োমেডির সাথে জড়িয়ে আছে। যা থেকে এতোগুলো দিন পালিয়ে বেরিয়েছে ও,চারপাশ থেকে ওকে সেই বায়োমেডিই ঘিরে ধরছে বারবার! এ সবটা কি শুধুই কাকতালীয়? নাকি আরো বড় কোনো ঝড়ের পুর্বাভাস?

অফিস থেকে তৌফিক ওয়াহিদের সাথে সোজা রংধনুতে পৌছালো মুফতাহির। টুইঙ্কেল দৌড়ে এসে বাবার কোলে উঠে বললো,

-আব্বু এসে গেছো? আম্মুও আজকে তাড়াতাড়ি ফিরেছে হসপিটাল থেকে!

মুফতাহির টুইঙ্কেলের গাল টিপে‌ দিয়ে‌ বললো,

-তাই? ওকে তাহলে আজকে আমরা সবাই মিলে আউটিংয়ে যাবো কেমন?

-ইয়েএএএ! কি মজা! আউটিং! ঘুরতে যাবো আমরা!

-হুম। ঘুরতে যাবো! তা তোমার আম্মু কোথায় টুইঙ্কেল?

-আম্মু তো নানুর সাথে কথা বলছে। আরাব মামার ঘরে।

-তোমার আরাব মামার ঘরে? মামা আছে ঘরে?

-না। মামা তো সারাদিনই বাসার বাইরে। জানোতো আব্বু,আজ সারাদিন মামাকে দেখিনি।

-কোনো ব্যাপার না টুইঙ্কেল। ঘুরতে গেলে মামাও তো যাবে টুইঙ্কেলের সাথে তাইনা?

-হুম।

টুইঙ্কেলকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো মুফতাহির। টাইটা টেনে সিড়ি বেয়ে উপরে যাচ্ছিলো,টুইঙ্কেল পেছন থেকে চেচিয়ে বলে উঠলো,

-আব্বু? আমি বেরাতে যাবো না!

খানিকটা অবাক হলো মুফতাহির। বললো,

-কেনো?

-বেরাতে গেলে তো ও বাসায় যাওয়া হবে না। আর উইশমামকেও দেখা হবে না। এমনিতেও সারাদিন আরাব মামাকে দেখিনি,উইশমামকে না দেখলে আরো কষ্ট হবে আব্বু!

টিউটরের পরিবর্তে টুইঙ্কেলের মুখে বেশিরভাগ সময়ই এই‌ উইশমামের নাম লেগে থাকে এটা মেনে নিয়েছে মুফতাহির। কিন্তু আজ টুইঙ্কেলের মুখে আরাবের নামের সাথে উইশমাম কথাটা জুড়তে দেখে একটু অন্যরকম ভাবনা ভাবতে বাধ্য হলো ও। এমনিতেও তৌফিকার সাথে বাকিসব বিষয়ে কথা হলেও,মেয়ের টিউটরকে নিয়ে তেমন কোনো কথাই বলেনি তৌফিকা। মুফতাহির টুইঙ্কেলের সামনে এসে হাটু গেরে বসে বললো,

-দুজনের জন্য সেইম সেইম ফিলিংস্ কেনো হচ্ছে আমার মামনিটার? আরাব মামা আর উইশমাম কি এক হলো টুইঙ্কেল?

-হ্যাঁ হলোই তো! আরাব মামা,মামা! আর উইশমাম হবে মামী! মামা বলেছে,স্পেলিং ছাড়া বাকিসওওওব এক! বুঝেছো?

বড়বড় চোখ করে বসে রইলো মুফতাহির। টুইঙ্কেল যতটুকো বলেছে,তা ওর বাকিটুক বোঝার জন্য যথেষ্ট। আরাব যে টুইঙ্কেলের ম্যামকে পছন্দ করে,সেটা বুঝতে বাকি রইলো না ওর। তৌফিকা নিজেই টুইঙ্কেলের পড়াশোনা নিয়ে বেশি সেন্সিটিভ আর অফিসিয়াল ব্যস্ততায় ও বলতে গেলে কিছুই জানে না দোয়ার বিষয়ে। কিন্তু এবার হুট করে তৌফিকার টিউটর খোজা,বাসা পাল্টানো সবটা পরিষ্কার হতে লাগলো ওর কাছে। প্রথমবারের মতো কোনো কথা লুকিয়ে গেছে তৌফিকা ওর থেকে। টুইঙ্কেলকে ছেড়ে মুফতাহির উঠে দাড়িয়ে বললো,

-ওকে টুইঙ্কেল,আমরা যাবো না আউটিংয়ে। তুমি খেলো,আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

-ওকে!

টুইঙ্কেল খুশিমনে চললো। তিক্ত চেহারায় মুফতাহিরও উঠে দাড়ালো। সোজা আরাবের রুমের দিকে গেলো ও। ছেলের ঘর গোছাতে গোছাতে চরম বিরক্তি প্রকাশ করছেন মিসেস ওয়াহিদ। মুফতাহির বাইরে থেকে সালাম দিয়ে বললো,

-আসবো মা?

কাজ ছেড়ে পেছন ফিরলেন মিসেস ওয়াহিদ। সালামের উত্তর নিয়ে হাসিমুখে বললেন,

-আরে মুফতাহির? এসো এসো! ভেতরে এসো!

ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছিলো মুফতাহির। দরজায় এসে বুকে হাত দিয়ে হেলান দিয়ে দাড়ালো তৌফিকা। বললো,

-মহাশয় আজ অফিস থেকে এতো জলদি?

-হ্যাঁ আসলাম। কেনো?

মুফতাহিরের সোজা কথায় মুডটা পাল্টে গেলো তৌফিকার। ওর কোটটা ঠিক করে দিয়ে বললো,

-কোনো ঝামেলা হয়েছে অফিসে?

-না। তবে বাসায় করবো ভাবছি।

তৌফিকা ভ্রুকুচকে তাকালো। মুফতাহির ভেতরে ঢুকে গরগর করে বলতে লাগলো,

-মা? আপনার দুই ছেলেমেয়ে মিলে রংধনুতে বউ আনার প্লানিং প্লটিং করছে,সেখানে আপনি ঘর সামলাতে আর আমি বাবা মিলে অফিস সামলাতে ব্যস্ত! এতোবড় ধোকা কি মানা যায়? আপনিই বলুন ?

বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো তৌফিকা। মিসেস ওয়াহিদ ভ্রু নাচিয়ে ওকে জিজ্ঞাসা করলো মুফতাহিরকে জানায় নি কেনো এ বিষয়ে। মুফতাহির মিসেস ওয়াহিদের চাওনি লক্ষ্য করে বললো,

-ও? তারমানে আপনিও জানেন,আরাব মেয়ে পছন্দ করে রেখেছে। শুধু আমার আর বাবার ক্ষেত্রেই যতো লুকোচুরি? বাহ্,বেশ ভালো!

তৌফিকা হেসে দিলো ওর কথায়। বললো,

-এতোবড় হয়ে গেলে মুফতাহির,এখনো গাল ফুলানোর অভ্যাসটা তোমার গেলো না। এইটা কিন্তু টুইঙ্কেল তোমার থেকেই শিখেছে।

-এসব কথায় আমি ভুলছি না।

মিসেস ওয়াহিদ,তৌফিকা দুজনেই‌ হেসে দোয়ার বিষয়ে বললো মুফতাহিরকে। সবটা শুনে মুফতাহির বললো,

-আরাবের পছন্দই শেষ কথা হবে মা। বাবাকে আমি বলবো,দোয়ার আর্থিক অবস্থা নিয়ে যেনো কোনোরকম দ্বিমত না করে। আপনারা আরাবের বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিন। আজ আসুক‌ শালাবাবু! ওর ডুবেডুবে জল খাওয়া আর চলছে না!

তৃপ্তিতে হাসলো তৌফিকা আর মিসেস ওয়াহিদ। আরো টুকিটাকি কথা বলে বেরিয়ে গেলো মুফতাহির। মিসেস ওয়াহিদ তৌফিকাকে বললো,

-মুফতাহির যখন বলেছে,আমার মনে হয় ও ঠিক তোর বাবাকে…এই তৌফিকা? একদিন মেয়েটাকে দেখাতে নিয়ে যাবি আমাকে? একটু দেখতাম ওকে? আরাব কি মানা করবে?

মুচকি হেসে মোবাইলে থাকা দোয়ার ছবিটা বের করে মায়ের সামনে ধরলো তৌফিকা। বললো,

-তোমার হবু বউমা।

আপ্লুত হয়ে ফোনটা হাতে নিলেন মিসেস ওয়াহিদ। কিন্তু ছবি দেখতে নিমিষেই মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো তার। আরাব যাকে পছন্দ করেছে,সে অন্য কেউ নয়,সেদিন রাস্তায় দুর্বিসহ অবস্থায় যাকে পেয়েছিলেন উনি,সেই মেয়েটাই। ওই মুহুর্তে দোয়ার যা অবস্থা ছিলো,তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো,ওর সাথে কোনো অঘটন ঘটেছে। শ্লীলতা হারিয়েছে এমন একটা মেয়ের সাথে নিজের ছেলের বিয়ের বিষয়ে কোনো মা-ই ভাবতে পারে না। আরাব হয়তো জানে না বিষয়টা। কিন্তু সবটা জেনেশুনেও এমন মেয়েকে ছেলের বউ করে কিভাবে আনবেন মিসেস ওয়াহিদ? কিভাবে?
#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-২৭

নিরব চুপচাপ ড্রাইভ করছে। তাজীনও কোনো কথা বলেনি গাড়িতে উঠে। একধ্যানে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে শুধু। চারপাশটা তিক্ত লাগছে ওর। কোনোমতে কান্না আটকে রেখেছে বলাই যায়। গাড়ির সামনে রাখা তাজীনের সাইলেন্ট ফোনটা জ্বলছে দেখে নিরব একপলক ওর দিকে তাকালো। সে খেয়াল একদমই নেই তাজীনের। নিরব বললো,

-আপনার ফোন বাজছে তাজীন।

পলক ফেলে নিজেকে সামলালো তাজীন। ফোন হাতে নিয়ে বাবা নামটা দেখে আরো কান্না পাচ্ছিলো ও। নিজেকে শক্ত করে কল রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে জাফর আহমেদ অস্থিরচিত্তে বললেন,

-কোথায় ছিলি তুই মা? তোকে সবাই কতো খুজছে! নিরব,নিরবের বাবা,আমরা…

-আমি মিস্টার নিরবের সাথে আছি।

-জানি। তোকে ভার্সিটিতে দেখেই নিরব কল করেছিলো আমাকে।

-নিরবদের বাসায় ফিরছিস তো?

-আর কোনো উপায় রেখেছো তুমি বাবা?

-তাজ?

-কথা বলতে ভালো লাগছে না বাবা। নিজের যত্ম নিও। খোদা হাফেজ।

কল কেটে দিলো তাজীন। একপলক নিরবের দিকে তাকালো ও। নিজের মতো ড্রাইভে ব্যস্ত সে। তাজীন ধীর গলায় বললো,

-সরি।

নিরব কিঞ্চিত ভ্রুকুচকে বললো,

-ফর হোয়াট?

-আপনাদেরকে না জানিয়ে ভার্সিটি আসা উচিত হয়নি। আঙ্কেল নিশ্চয়ই…

নিরব হেসে বললো,

-ইটস্ ওকে। আমি বাবাকে কল করে বলেছি আপনি ভার্সিটিতে আর আমি আপনাকে নিতে এখানেই এসেছি। এখন আর সে টেনশনে নেই।

নিরবের হাসি দেখে চোখ সরিয়ে নিলো তাজীন। এতো স্বাভাবিকতা মানায় না নিরবকে। বিয়েটা তো স্বাভাবিক ছিলো না। চোয়াল শক্ত করে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো ও। নিরব ড্রাইভিংয়ের ফাকে তাজীনকে লক্ষ্য করে বললো,

-একটা কথা বলবো?

-বলুন।

-আমি জানি বিয়েটা আপনার অমতে হয়েছে। ইভেন আমিও প্রস্তুত ছিলাম না এটার জন্য। কিন্তু কি বলুনতো? আপনার সাথে তো এর আগেও একবার দেখা হয়েছিলো আমার। আপনার কথা জানিনা। কিন্তু আমাদের সেদিনের কনভার্সেশন আমি বেশ এন্জয় করেছিলাম।

তাজীন নিরবের দিকে ফিরে বললো,

-আপনি ঠিক কি মিন করতে চাইছেন?

-দেখুন তাজীন,সেদিন আমরা অচেনা ছিলাম। তবুও আপনার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছিলো। কারন আপনি খুশিমনে কথা বলেছিলেন আমার সাথে। আজ আমরা স্বামী স্ত্রী সম্পর্কে আবদ্ধ দুজন মানুষ। ধর্মমতে আজীবনের চেনা। সেটা আজীবন স্থায়ী হোক বা না হোক। আপাতত যতোক্ষন একসাথে আছি,সব অস্বাভাবিকতার ভিড়ে,আপনার বন্ধুসুলভ আচরন তো এক্সপেক্ট করতেই পারি তাইনা?

বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো তাজীন নিরবের দিকে। গত রাতে ওদের দুজনের কোনো কথাই হয়নি। তাজীন চুপচাপ এককোনে বসে ছিলো সারাটা রাত। সকালে নিরবকে ব্যালকনির বিনব্যাগে ঘুমন্ত পেয়েছে। কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে আসে বাসা থেকে। এরই মাঝে এই লোকটা এতো ফ্র্যাংকলি কথা বলবে,আন্দাজে ছিলো না ওর। তাজীন নিজেও সোজা কথা বলাটাই শ্রেয় মনে করলো। বললো,

-যে মেয়েটা অন্য কাউকে ভালোবাসতো,তাকে নিয়ে এতোদুর ভাবা উচিত মনে হলো আপনার?

-ভালোবাসতেন। এটা আপনার জন্য ফ্যাক্ট। আপনি কতোদিন সে অতীতকে মনে রেখে মুভ অন করবেন না। আমার জন্য কোনো ফ্যাক্ট না এটা!

তাজীন আরো বিস্ময়ে তাকালো নিরবের দিকে। নিরব ওর মতোই ব্যস্ত। তাজীনের এবার অস্থির লাগছে। তার বউ হয়েও ও অন্য কাউকে নিয়ে ভাববে সেটা জেনেও লোকটা এতোটা স্বাভাবিক কি করে? এদিকওদিক তাকিয়ে ইতস্তত করতে লাগলো। কি মনে করে আড়চোখে নিরবের দিকে তাকিয়ে বললো,

-আর আপনার গার্লফ্রেন্ড?

ব্রেক কষে গাড়ি থামিয়ে দিলো নিরব। বিস্ফোরিত চোখে তাকালো ও তাজীনের দিকে। বিয়েটা হঠাৎ করে হয়ে গেলেও তাজীনের প্রতি ওর কোনো অভিযোগ নেই। সবকিছুর মুলে যে ডক্টর সুমন,সেটা ওউ জানে। আরাব বারবার করে বলে দিয়েছিলো ওকে,তাজীনের যেনো কোনোভাবেই এটা মনে না হয় নিরব ওকে বিয়ে করে খুশি না। সত্যিই বিয়েটাতে যে ও‌ দুঃখী এমনটাও নয়। তা বাবার ইচ্ছা,বা যে কারনেই হোক। তাই ওউ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সম্পর্কটাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবে বলে। কিন্তু তাজীনের কাছে গার্লফ্রেন্ড শব্দ শুনে হিসাবই উল্টে গেলো ওর। হতভম্বের মতো বললো,

-কিহ্? গার্লফ্রেন্ড মানে?

তাজীন অন্যদিক তাকিয়ে বললো,

-হ্যাঁ। আপনি আমার কাছে বন্ধুসুলভ আচরন এক্সপেক্ট করছেন। আর আপনার প্রেমিকা? তার কি?

-হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ টকিং আবাউট?

রাগ উঠলো তাজীনের। নিরবের দিকে ফিরে রাগী আওয়াজেই বললো,

-কেনো? আমাকে বিয়ে করে ভুলে গেছেন নাকি তার কথা?

নিরব‌‌ মাথা চেপে ধরে বললো,

-কার কথা? কার কথা বলছেন আপনি?

-সেদিন আপনার গাড়ি আটকে দিয়েছিলো যে!

বাপ্পারাজের ‌মতো বিরহের একটা লুক দিলো নিরব। স্যারের জীবনের এই জারা নামক ঘুর্নিঝড় ওর উঠতি সম্পর্কেও আঘাত হানতে ভুললো না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে হতাশার স্বরে বললো,

-উনি আমার গার্লফ্রেন্ড নন তাজীন।

তাজীন কিছুটা হচকিয়ে গেছে। সেদিন নিরব বলেনি মেয়েটা কি হয় তার,এটা নিতান্তই ওর ধারনা ছিলো। সেই ধারনা থেকেই কথাটা বলে ফেলেছে ও। বললো,

-জ্বী মানে…

নিরব গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললো,

-ও জারা। আরাব স্যারকে পছন্দ করে। কিন্তু স্যার ওকে দু চোখে সহ্য করতে পারে না। সেদিন আরাব স্যারের খোজ নেওয়ার জন্যই জারা আমার গাড়ি আটকে দিয়েছিলো। কোনো গার্লফ্রেন্ড টার্লফ্রেন্ড না ও আমার!

তাজীন আর কিছু বললো না। চুপ করে মাথা‌ নিচু করে রইলো। নিরব বলতে লাগলো,

-কলেজে এক মেয়েকে ভাল্লাগতো। কিন্তু তা বলার আগেই বিদায় অনুষ্ঠান হয়ে গেলো। ভার্সিটিতে একজনকে দেখে ভাবলাম এবার বুঝি টুরু লাব। সে মেয়ে লাভ ইউ বলার সাথে সাথেই ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিলো। অতঃপর তার শো অফের চক্করে আমার তিনদিনের প্রেমের ব্রেকাপ হয়ে গেলো। তারপর আর গার্লফ্রেন্ড শব্দটা স্বপ্নেও ভাবিনি। যদি কিছু থেকে থাকে,তা ছিলো রিয়জেন্টের সাথে কেমেস্ট্রি আর ল্যাবের যন্ত্রপাতির সাথে ফিজিক্স। নাথিং এলস্!

তাজীন বুঝলো ওকে হাসানোর জন্যই কথাগুলো বলছে নিরব। হয়তো কথাগুলো ছিলোও হাসার মতো। তবুও চুপই রইলো ও।‌জানালায় মাথা ঠেকিয়ে স্থির‌দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো শুধু। বলতে বলতে তাজীনকে‌ আরো নিশ্চুপ হয়ে যেতে দেখে‌ নিরবও বলা বন্ধ করে দিলো। ওর একতরফা চেষ্টায় এ সম্পর্কটা কি আদৌও স্বাভাবিক হবে কোনোদিন?

বাসস্ট্যান্ডের ফাকা ছাউনিটার নিচে দাড়িয়ে প্রায় ফাকা রাস্তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দোয়া। কাধে ঝোলানো পাঠের ব্যাগটা আকড়ে ধরে রেখেছে শক্ত করে। ভার্সিটির বাস পায়নি ও আজ। লোকাল বাস রায়নগর কমই যায় এ সময়। কে জানে বাস পাবে কি‌না আদৌও? আকাশটা বেশ মেঘলা। শীতের এ অসময়ী বৃষ্টি একসময় কতো সুখময় ছিলো ওর কাছে। মায়ের বকা শুনে বাবার সাথে হয় বাগান,নয় ছাদে চলে যেতো প্রতিবার বৃষ্টিতে। ভিজতো বাবা মেয়ে মিলে। আর আজ? এ মেঘলা আকাশ শুধু প্রতিবার ওকে সে অতীত মনে করিয়ে দিয়ে কষ্ট দেয়। আর কিছুই না!

দোয়ার একদম পেছনেই প্যান্টের পকেটে দুহাত গুজে আরাব দাড়িয়ে। মনেমনে বলে চলেছে,আজ বৃষ্টি হোক,তুমুল বর্ষন হোক। আজকের বৃষ্টি ওর সামনে ওর প্রেয়সীর জন্য হোক,আজকের মেঘলা আকাশ ওর প্রেয়সীর ঘন কালো চুলের রঙকে হার মানাক। আজকে নাইবা হলো দোয়ার সে কাঙ্ক্ষিত বাসের আগমন। সুন্দর সে কল্পনাগুলোর মতো আজ দোয়া ওর হাত ধরে সিক্ত পিচঢালা পথ খালিপায়ে পাড়ি দিক। কখনো হিমশীতল বাতাস ছুইয়ে দিয়ে শিহরনে ভাসাক দোয়াকে। আর ও? ও‌ না হয় আলতোভাবে দোয়াকে জড়িয়ে ধরে বলুক,উপেক্ষা করো ও হাওয়া। তারচেয়ে একটাবার আমায় অনুভব করো? আরাবের বাসার সামনের রাস্তাটায় যেমন কাঠগোলাপের চাদোয়া বিছানো থাকে,ওমনি অজস্র ফুলে ভরে যাক দোয়া আর ওর একসাথে চলা সে পথ!

মেঘের গুরুম গুরুম ডাকে হুশ ফিরলো আরাবের। ও সবটা যে এখনো শুধুও ওর কল্পনা। তাজীন ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর একটা কথাও আর বলেনি দোয়া। আরাব একপা সামনে এগিয়ে একদম দোয়ার বরাবর দাড়িয়ে ‌গিয়ে বললো,

-নিরব আর তাজীনের বিয়েতে তুমি খুশি নও দোয়া?

-যতোদিন না তাজীন সম্পর্কটা মানতে পারছে,ও‌ খুশি না মিস্টার আরাব।

-হ্যাঁ। কিন্তু নিরব অনেক ভালো ছেলে। আমি পার্সোনালি চিনি ওকে।

-হবে হয়তো। কিন্তু তাজীনের জন্য বিষয়টা সহজ হবে না। ডক্টর সুমনকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলো ও।

ঝুমঝুম করে বৃষ্টি পরতে লাগলো। আরাব পিছিয়ে দাড়ালো খানিকটা। ছাউনিতে ছিটেফোটা লাগছে বৃষ্টির। কিন্তু দোয়া অনড়। ভিজে যাচ্ছে মেয়েটা। তবুও পেছোচ্ছে না। দোয়ার হাতের দিকে হাত বারিয়েও থেমে গেলো আরাব। বললো,

-বৃষ্টি গায়ে লাগছে তোমার দোয়া।

দোয়া পেছন ফিরলো। ওর চোখ লাল হয়ে আছে। কপালের সামনে থাকা কিছু ছোট চুল কানে গুজে দিয়ে আবারো রাস্তার দিকেই তাকিয়ে রইলো ও। আরাব বললো,

-ডোন্ট ওয়ারি। তাজীন অনেক হ্যাপি থাকবে নিরবের সাথে। ওকে ভালো রাখবে নিরব।

ডোন্ট ওয়ারি! আরাবের এই কথাটা শুনলে চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে হয় দোয়ার। কারো বুকে মাথা রেখে চেচিয়ে বলতে‌ ইচ্ছে হয়,আই ওন্ট ওয়ারি। ইউ আর দেয়ার ফর মি! আই উইল নেভার বি ওয়ারিড্! নেভার এভার! চোখ বন্ধ করে রেখে দোয়া বললো,

-তাই যেনো হয়।

আরাব আবারো এগুলো সামনে। এবার ওর গায়েও বৃষ্টি লাগছে। দোয়া ওর দিকে না তাকিয়ে বললো,

-যাচ্ছেন না কেনো আপনি?

-বৃষ্টিতে কিভাবে যাবো?

-ডক্টর সুমন কোথায়?

-বাস্টার্ডটা এবারো পালিয়ে গেছে!

দাতে দাত চেপে বলে উঠলো আরাব। দোয়া বড়বড় চোখ করে ওর দিকে তাকালো। কি বলেছে সেটা বুঝ আসতেই চোখ বন্ধ করে দুবার শ্বাস ফেললো আরাব। দোয়া বিস্ময় নিয়েই বললো,

-এ্ এবারো মানে?

পুরোপুরিভাবে দোয়ার দিকে ঘুরলো আরাব। একদম ওর চোখে চোখ রেখে বললো,

-আগেও এভাবেই পালিয়েছে ও। অনেককে ঠকিয়ে!

-আ্ আপনি…

বাস এসে থামলো। অনেকেই নামলো বাসস্ট্যান্ডে। জায়গাটা ভরে উঠলো মানুষের আনাগোনায়। আরাব শান্ত গলায় বললো,

-বাসায় যাও।

মাথা নিচু করে বাসে উঠে গেলো দোয়া। আরাব চরে বসলো ওর বাইকে। দোয়া জানালা দিয়ে দেখলো,বাস ছাড়ার আগেই‌ বৃষ্টির মধ্যেই ভিজতে ভিজতে বাইক নিয়ে চলে গেলো আরাব।
কাকভেজা হয়ে বাসায় ফিরে সোজা নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো আরাব। টুইঙ্কেল দৌড়ে এগিয়ে এসে বললো,

-মামা? একা একাই ভিজলে‌ বৃষ্টিতে? আমাকে‌ নিলে না? আড়ি তোমার সাথে!

আরাব চুপ রইলো। তৌফিকা বললো,

-টুইঙ্কেল? আগে মামা চেন্জ করে নিক,তারপর আড়ি দেখিও? এখন মামা রুমে যাক হুম?

ক্লান্ত লাগছে আরাবের। কোনো কথা না বলে নিজের ঘরে চলে এলো ও। চেন্জ করে মাথা মুছতে মুছতে বেরোলো ওয়াশরুম থেকে। ঘরে বোন,বোনজামাই দুজনই উপস্থিত। কিছুটা অবাক হয়ে বললো,

-তোমরা সবাই? এখন এখানে?

তৌফিকা এর ওর দিকে তাকিয়ে এগোলো ওর দিকে। ইতস্তত করে বললো,

-তোকে দোয়ার বিষয়ে কিছু বলার ছিলো আরাব।

আরাব মুফতাহিরের দিকে তাকালো। তৌফিকা বললো,

-মুফতাহির জানে সবটা।

আরাব মৃদ্যু হেসে বোনকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,

-বল কি বলবি।

-তুই রিয়্যাক্ট করবি না তো আরাব?

আরাব ভ্রু কুচকে তাকালো। হাসিতে শঙ্কা ফেলনা করে বললো,

-এতো ফর্মালিটিজ কেনো দেখাচ্ছিস বলতো আপু? কি হয়েছে ক্লিয়ারলি বল না!

তৌফিকা চরম অস্বস্তি নিয়ে বললো,

-দ্ দেখ আরাব,আমি মাকে আজ দোয়ার ছবি দেখিয়েছি। মা বলছিলো…

-কি? পছন্দ হয়নি মেয়ে এই টাইপ‌ কিছু? এটা বলে মজা নিতে এসেছিস?

বলেই হেসে‌ দিলো আরাব। তৌফিকা ভাইয়ের বিশ্বাসের হাসিটার দিকে তাকিয়ে রইলো খানিক্ষন। তারপর একটা জোরে শ্বাস নিয়ে বলে উঠলো,

-মা নাকি দোয়াকে একদিন অনেক রাতে,রাস্তায় অনেক বাজে অবস্থায় পেয়েছিলো। কোনো এক গাড়ি থেকে নাকি রাস্তায় ওমন দুদ্ধর্স অবস্থায় ফেলে যায় ওকে। ম্ মায়ের ধারনা,ও্ ওর সাথে কোনো না কোনো অঘটন ঘটেছে।

আরাব দম মেরে বসে রইলো বোনের কথা শুনে। তৌফিকা ওর দুগাল ধরে বললো,

-ব্ বিশ্বাস কর আরাব? আমি…আমি মাকে অনেক বুঝিয়েছি,দোয়ার সাথে কিছুই ঘটেনি। তুই নিজে খোজ নিয়েছিস ছেলেটার। ও কিছুই করেনি দোয়ার সাথে। তবুও মায়ের এক কথা! দোয়া নিজের সম্মান বাচাতে মিথ্যে বলছে। ওই ছেলেটাও তোর ভয়ে মিথ্যে বলেছে। দ্ দোয়ার…দোয়ার সে রাতে…

-স্টপ ইট আপু! জাস্ট স্টপ ইট!

চিৎকার করে উঠে দাড়ালো আরাব। লাথি মেরে কাচের ছোট সেন্টার টেবিলটাও ভেঙে ফেলেছে ও। ওর চিৎকারে কেপে উঠেছে তৌফিকা,মুফতাহির। হাত মুঠো করে চোয়াল শক্ত করে দাড়িয়ে রইলো আরাব। রাগে কাপছে ও সমানে। মুফতাহির উঠে দাড়িয়ে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

-তোমার বা কারো কোনো কথাতেই সত্যিটা মিথ্যে বা মিথ্যেটা সত্যি হয়ে যাবে না আরাব। আর মা যখন নিজচোখে দোয়াকে ওই অবস্থায় দেখেছে,ওর সুস্থতার ক্লিনিক্যলি প্রুভ দরকার। মেডিক্যাল টেস্ট ছাড়া ও এ বাসায় বউ হয়ে আসবে না মানে আসবে না!

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here