এক শহর ভালোবাসা পর্ব ২৭+২৮

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২৭
#সুরাইয়া_নাজিফা

উনি আমার শরীর থেকে সম্পূর্ন ব্লাঙ্কেটটা টেনে নিয়ে ওপাশ হয়ে সুন্দর করে শুয়ে পড়ল। এমন ভাবে শুয়ে আছে যেন বিছানায় উনি ছাড়া আর কেউ নাই।আমি রেগে বললাম,
“এটা কি রকম হলো আপনি দেখলেন না আমি ঘুমাচ্ছিলাম ব্লাঙ্কেটটা সম্পূর্ন নিয়ে নিলেন কেন? ”

উনি কোনো উত্তর দিলো না। আমি আরো দুই তিনবার ডাক দিলাম তারপরও সাড়া নেই। আমি বিরবির করে বললাম,
“ওমা এরই মধ্যে ঘুমিয়ে গেল? ”

আমার এতো ঘুম পাচ্ছিল যে আর কথা না বাড়িয়ে উনার কাছ থেকে ব্লাঙ্কেটটা কিছুটা টেনে নিয়ে নিজের গায়ে দিলাম। দিয়ে শুয়ে পড়লাম ঠিক তখনই আমার ব্লাঙ্কেটে আবার টান পড়ল। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখলাম উনি আগের মতোই শুয়ে আমি কোনো কথা না বলে ব্লাঙ্কেটটা আবারও টেনে আবার গায়ে দিলাম রীতিমতো আবার টেনে নিয়ে নিলো এইবার আর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলাম না আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে ব্লাঙ্কেটটা উনার থেকে টেনে নিয়ে বললাম,

“কি সমস্যা কি আপনার? ”
কথাটা বলতেই উনি হুরমুড়িয়ে উঠে বসল। বসেই আমার দিকে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
“দেখলে তো ঘুমাচ্ছিলাম তাহলে এমন করলে কেন?”
“আপনি যে এতক্ষন টানাটানি করে আমার ঘুমটা নষ্ট করেছেন তার বেলা? ”
“তো আমার গায়ে যদি ব্লাঙ্কেটটা না হয় তাহলে আমার কি করার আছে?এতো দূরে গিয়ে শুয়েছো বলেই এমন হচ্ছে। ”
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“ওমা তাই নাকি?কই এতোদিন তো কোনো প্রবলেম হচ্ছিল না আজই হয়ে গেল?”
শান সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
“তোমার কি মনে হয় আমি মিথ্যা বলছি? ”
“আমি কি করে বলবো সেটা তো আপনি জানবেন?”
কথাটা বলতেই শান অন্যদিকে ফিরে নিজের মাথা চুলকালো। আমি উনার কান্ড দেখে ভ্রু কুচকে বললাম,
“আচ্ছা আপনিই রাখুন এটা আমি অন্য আরেকটা নিয়ে আসছি। ”

বলেই আমি অন্য আরেকটা ব্লাঙ্কেট নেওয়ার জন্য উঠতেই উনি আমার হাত ধরে আবার বসিয়ে দিলেন। আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“কি ব্যাপার? ”
“কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
আমি চোখ মুখ কুচকে বললাম,
“ব্লাঙ্কেট আনতে।”
“কেন আমি বলেছি তোমাকে?”
“আপনাকে বলতে হবে কেন আমি কি এই শীতের মধ্যে ব্লাঙ্কেট ছাড়া ঘুমাবো। আপনার নাকি হচ্ছে না তাই আমি আমারটা জন্য আনতে যাচ্ছি। ”
শান রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,
“একদম না এখানেই এই ব্লাঙ্কেটের মধ্যেই শুয়ে পড়ো। ”
“কিভাবে আপনি না বললেন দুজনের হচ্ছে না। ”
“হবে যদি তুমি আমার গা ঘেসে এসে ঘুমাও তাহলেই। ”
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“আপনার সাথে একসাথে? ”
“হুম আমার সাথেই। শুয়ে পড়ো আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। ”
বলেই উনি শুয়ে পড়ল। আমি কি করব বুঝতে পারছি না তাই বসেই রইলাম। শান আবার ধমক দিয়ে বললো,
“কি হলো ওখানেই সারারাত বসে থাকার ইচ্ছা আছে নাকি? ”
“দেখুন…।”
“নো মোর টক। তাড়াতাড়ি এসো। ”
উনার কথা শুনে আমি উনাকে মুখ ভেঙালাম আর কোনো উপায় না পেয়ে গিয়ে উনার পাশে শুয়ে পড়লাম তবে একটু ফাঁকা রেখে। শান আমারও রাগান্বিত হয়ে বললো,
“মাঝে এতো ফাঁকা রেখেছো কার জন্য।আরো কাছে এসো। ”
আমি উনার আরেকটু কাছে গিয়ে শুলাম। উনি আবারও বলে উঠলো,
“আরো কাছে আসতে পারছো না? ”
এইবার আমি রেগে বললাম,
“অদ্ভুত এইবার কি আপনার বুকের ভিতরে ঢুকে যাবো নাকি?”
শান রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,
“প্রয়োজন হলে তাই। শীতকালে একটু গা ঘেসে শুতে হয় তাহলে শীত কম লাগে বুঝেছো। ”

আমি কোনো কথা না বলে চোখ বুজে নিলাম।ঘুমের জন্য কথা কাঁটাকাঁটি করা দায় হয়ে যাচ্ছে আমার। হঠাৎ মনে হলো আমাকে কেউ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। আমি দ্রুত শানের দিকে ফিরলাম,

“এটা কি হলো?”
“কি হবে? ”
“এভাবে ধরেছেন কেন?”
শান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
“আমার কোলবালিশ ধরে ঘুমানোর অভ্যাস আজ কোলবালিশ নেই তাই তোমাকে ধরেছি ব্যাস এইবার ঘুমাও। ”
উনার কথা শুনে আমার একটু রাগ হলো,
“মানে আপনি কোলবালিশের পরিবর্তে আমাকে ধরেছেন? এমন অপমান ন। করলে চলছিল না। দেখি ছাড়ুন।”
আমার কথা শুনে শান চোখ বড় বড় করে বললো,
“মানে তুমি কি চাও আমি তোমাকে তুমি ভেবে ধরি। ”
আমি কান্না মাখা কন্ঠে বললাম,
“অবশ্যই আপনি যখন আমাকে ধরেছেন তাহলে আমাকে ভেবেই ধরবেন অন্য কাউকে ভেবে ধরলে তো আমি মেনে নেবো না। ”

শান আমার কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে খানিকটা হাসলো। উনার হাসি দেখে আমার আরো জোরে কান্না পাচ্ছে তাহলে জামাই কি আমার হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে?

“বলছি কোথায় যেন পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে? ”

“পোড়া গন্ধ মানে? ”

“সেটা তোমাকে জানতে হবে না। ঘুমাও তুমি চুপটি করে।”

“আগে ছাড়ুন আপনি আমাকে। ”

আমি উনার হাত নিজের শরীরের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করতে লাগলাম অনেক অভিমান হচ্ছে আমার। শান রেগে বললো,
“লিসেন আর একবার যদি নড়েছো তো হাত পা বেঁধে শুইয়ে রাখব একদম চুপচাপ থাকো। ”

ওনার ধমক শুনে আমি একদম চুপ হয়ে গেলাম। অভদ্র লোক একটা সবসময় আমার সাথেই এমন করে।
শান কিছুটা বিরক্তির সাথে বললো,

“উফ তুমি মনে মনেও এত জোড়ে জোড়ে কথা বলছো যে আমার ঘুমের প্রবলেম হচ্ছে চুপ করে ঘুমাতে পারছো না। ”

আমি উনার কথা শুনে চোখ পিটপিট করে বললাম,
“আপনি জানলেন কি করে আমি কথা বলছিলাম। ”
“তোমার না জানলেও চলবে ঘুমাও। ”
“না ঘুমাবো না আপনি আমাকে ছাড়ুন আগে আমি কারো সাবস্টিটিউশন হিসেবে থাকতে চাই না। ”
শান চোখ ছোট ছোট করে বললো,
“কি বলছো এসব? তোমার সাথে কারো কোনো তুলনাই হয় না সেখানে তুমি কারো সাবস্টিটিউশন হবে কি করে?”
আমি অভিমান করে বললাম,
“আপনিই বলেছেন। ”
শান হেসে বললো,
“আমি তোমাকে তুমি ভেবেই ধরেছি ওকে এইবার ঘুমাও। ”

কথাটা বলেই উনি আমাকে আরো শক্ত করে উনার বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলেন। আমি উনার বুকে মুখ গুজেই খানিকটা হাসলাম। এটাই তো শুনতে চাইছিলাম আমি। আমার মনের মধ্যে অদ্ভুত একটা সুখানুভূতি হলো আর সাথে ভয়ও। আজ প্রথম উনার এতো কাছে। আমিও আস্তে করে কাঁপা কাঁপা হাতে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম। হঠাৎ একটা কথা মাথায় আসতেই আমি উনার বুক থেকে মাথা সামান্য উঠিয়ে বললাম,

“আচ্ছা আজকে যে এত কাহিনী হলো তারপর ওদের বিয়ে হবে কিভাবে?”
শান আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এতো চিন্তা তোমাকে করতে হবে না যখনেরটা তখন দেখবো এখন ঘুমাও। ”

তারপর আমিও উনার বুকে চুপটি করে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।


সকালে ঘুম থেকে উঠতেই শানের মুখটা আমার চোখে ফুঁটে উঠলো। আজ মনে হচ্ছে অনেকদিন পর এতো শান্তিতে ঘুমালাম আমি। আমি পলকবিহীন শানের মুখপানের দিকে তাকিয়ে আছি। একদম বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে। উনার চোখগুলো অনেক সুন্দর বিশেষ করে চোখের পাপড়ি গুলো।গায়ের রং একদম ফর্সা। কি দরকার একটা ছেলের এতো সুন্দর হওয়ার সেটাই বুঝতে পারিনা আমি। কত মেয়ের আমার বরটার উপর নজর পড়ে কে জানে। আমি আমার এক আঙ্গুল দিয়ে উনার কপাল থেকে স্লাইড করতে করতে ঠোঁট পর্যন্ত আনলাম। হঠাৎ উনি খানিকটা নড়ে উঠতেই আমি হাত সরিয়ে নিলাম। আর নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম।

তিনমাস আগেও যখন উনার সাথে আমার বিয়ে হয় তখনও আমি ভাবিনি আমি উনার সাথে থাকব। এমনটা নয় যে উনার জন্য আমার মনে কোনো অনুভুতি ছিল না তাই।উনার জন্য আমার অনুভুতি ছিল প্রয়োজনের চেয়েও বেশী। আর সেটা একদিনের নয় অনেক বছর আগে থেকে।একটু একটু জমিয়ে ছিলাম। তাই তো উনি যখন আমাকে শাসন করতেন আমার ভালো লাগত, উনি আমাকে কোনো জিনিসের জন্য যদি বারণ করত সেটাই আমি বেশী বেশী করতাম কারণ আমি চাইতাম উনি বারবার আমার কাছাকাছি থাকুক। কলেজে পড়াকালিন যখন কোনো ছেলের সাথে কথা বললে উনি বারণ করতো ওই ছেলেকে বকাবকি করত খুব মজা পেতাম উনার জেলাসি দেখে। তাই উনাকে জ্বালানোর জন্যই বারবার ইচ্ছাকৃত একই কাজ করতাম যাতে উনি আমার উপর অধিকার দেখাতে পারে। উনার আমার প্রতি যত্ন, আমাকে আগলে রাখা, আমার উপর অধিকার দেখানোটাই কংন আমার কিশোরী মনে ওনার জন্য ভালোলাগা তৈরী হয়ে যায় বুঝতেই পারিনি। অনেকবার চেয়েছিলাম উনাকে সবটা সত্যি সত্যি বলতে কিন্তু ভয় হতো যদি সে আমাকে ভালো না বাসে। তাই আর কখনো বলা হয়নি।উনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা, উনার সাথে সবসময় কথা বলার জন্য ঝগড়ার আশ্রয় নেওয়া, উনার কাছে থাকার জন্য উনাকে প্রতি মূহূর্তে বিরক্ত করা আরো কত কি নিজের ব্যবহারে নিজেই অবাক হয়ে যেতাম তবে ওনাকে কখনো বুঝতে দিতাম না।

তবে হুট করে বাবা একদিন বিয়ে ঠিক করে দিল। উনার বিয়ে আপু সাথে ঠিক হয়েছিল বলে খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম ভিতর ভিতর শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম আমি। মনে মনে একটাই প্রার্থনা করছিলাম যে যেকোনো একটা মিরাক্কেল হয়ে যদি এই বিয়েটা না হতো জানি না আমার প্রার্থনাটা কোনো ভবে আল্লাহ শুনে নিয়েছে। বিয়ের দিনই আপু পালিয়ে যাওয়াতে ওনার সাথে আমার বিয়েটা হয়ে যায়। এতো সহজে যে আমি উনাকে পেয়ে যাবো ভাবতেই পারিনি।এইবার ভাবলাম যে না উনাকে সবটা সত্যি বলে দিবো যে উনাকে আমি কতটা ভালোবাসতাম।তাই ফুলসজ্জার ঘরে উনার জন্যই অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম।

কিন্তু উনি যে ব্যবহারটা করলো তাতে আমার সব আশা, আকাঙ্খা এক নিমিষে শেষ হয়ে গেল। উনার কথাগুলো আমাকে সবচেয়ে বেশী ক্ষত বিক্ষত করেছিল উনার গার্লফ্রেন্ড আছে শুনে। সেদিন থেকেই উনার সাথে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করি সাথে ইগনোর তো আছেই। আমার মনে হতো আমার জন্য উনি হয়তো উনার ভালোবাসার মানুষকে পায়নি। আর ঐশীর সাথে দেখা হওয়ার পর সেটা আরো বেশী শিউর হয়ে গেছিলাম। ঐশীর কথা শুনেই বুঝেছিলাম ও শানকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। কিন্তু আমি শানকে চিনতাম শান হয়তো আমার প্রতি অবিচার করতে পারবেনা বলে উনার গার্লফ্রেন্ডকে ছেড়ে দিয়েছে আর না চাইতেও আমার জন্য নিজের মনে জায়গা তৈরী করছে এটাই ভেবেছিলাম আমি। তাই সবসময় চাইতাম শান যেন আমাকে কখনো ভালো না বাসে।আমি চাইনি দুজন ভালোবাসার মানুষের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে। তারউপর আপুদের বিষয়টা তো ছিলই। সেটাও শানকে বলা হয়নি যদি শান আমাকে ভুল বুঝে। তাই ভেবেছিলাম আপুদের বিষয়টা মিটমাট হয়ে গেলে আমি চলে যাবো শানকে ছেড়ে। কিন্তু সেটা যে এতো সহজ হবে না সেটা শানের সাথে থাকতে থাকতে আরো তীব্র ভাবে অনুভব করলাম। তাই উনার থেকে দরত্ব বাড়াতে লাগলাম। কিন্তু যতোই দূরত্ব বাড়াচ্ছিলাম শান কেমন যেন ততোই কাছে চলে আসছিলো যেটা আমাকে আরো দূর্বল করছিলো। শান আরো বেশী যত্নশীল হয়ে পড়ল আমার উপর, আরো বেশী অধিকারবোধ দেখাতে লাগলো যার জন্য উনার থেকে দূরে সরতে হবে সেটা ভাবিইনি কখনো।

কিন্তু আমি যে এতটা বোকা সেটা আমি বুঝতেই পারিনি। আমি শুধু শুধু নিজের এতো সুন্দর হাজবেন্ডকে ভাগ বাটোয়ারা করতে চাইছিলাম শুধু মাত্র একটা ভুল বুঝে। যার মনে আমার জন্য এতোটা ভালোবাসা ছিল সেটাকে আমি অন্য কারো জন্য ভেবেছিলাম।ভাবতেই নিজের মাথা ফাঁটাতে মন চাইছে। ভাগ্যিস ঐদিন ওনার কাবার্ড থেকে শাড়ি আর চিরকুটের সাথে একটা ছবিও পেয়েছিলাম।ছবিটা দেখে অবাক হয়েছিলাম এই ছবি উনার কাছে এলো কি করে। এটা তখনের ছবি ছিল যেদিন উনি আমাকে একটা ছেলের সাথে কথা বলার জন্য রাস্তায় সবার সামনে বকে ছিলেন।আমি মুখ গোমড়া করে গালে হাত দিয়ে পড়ার টেবিলে বসে ছিলাম। বাট ছবিটা তু্ললো কখন ছবিটা পেয়ে আমার কৌতুহল হলো তাই তাড়াতাড়ি সেটার পিছন উল্টাতে দেখলাম,

“ভালোবাসি বড্ড আমার বেখেয়ালি। খুব তাড়াতাড়ি তুমি শুধু আমার হবে শুধু আমার। সেদিন তোমাকে আদর সোহাগে সব রাগ ভুলিয়ে দিবো প্রমিজ। ”

লেখাটা দেখেই আমার মনের মাঝে যেই অনুভুতি গুলো সুপ্ত করে রেখেছিলাম এক মূহূর্তে সেটা আবারও জেগে উঠলো। আবার মন বললো উনাকে ভালোবাসতে। আমি যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। তবে হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ শুনেই আমি দ্রুত ছবিটা সরিয়ে রেখেছিলাম বাট চিরকুট আর শাড়িটা সরানোর টাইম পাইনি। সেটাই উনি আমার হাতে এসে দেখেছিলেন। তবে উনার উপর আমি খুব রেগে আছি উনি এখনো আমাকে প্রপোজ করেনি। যদিও বেচারা নিজের কাজের মাধ্যমে সেটা অনেকবার বুঝিয়েছে বাট যতক্ষন উনি নিজের মুখে না বলবে ততোদিন পর্যন্ত আমিও কিছু বলব না।

এতক্ষনে তিনমাস আগের কথা গুলো ভাবতেই আমার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। আর লজ্জায় আমি আমার মুখটা নিজের দুইহাত দিয়ে ডেকে নিলাম। ভাবতেই পারছি না এখন এই বদমেজাজি, এরোগ্যান্ট, কিউট, সুইট ছেলেটা শুধু আমারই আমার বর।

“হুম আজকাল আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমাকে এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাওয়া হচ্ছে জানতাম না তো।”

উনার কথা শুনে আমি দ্রুত আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেখলাম উনি জেগে আছে।আমি অবাক হয়ে বললাম,
“আপনি না ঘুমাচ্ছিলেন? ”
“হুম ঘুমাচ্ছিলাম তো ভাগ্যিস ঘুমটা ভাঙলো নাহলে তো দেখতেই পেতাম না। ”
“হুম আর ঘুম ভেঙেই উল্টা পাল্টা দেখেছেন শুধু শুধু অশ্লীল কথা বার্তা না বলে ছাড়ুন আমাকে লেইট হচ্ছে। ”
“অশ্লীল কথা এখনো বললাম কই?আমি কি তোমার বডি পার্ট নিয়ে কথা বলেছি না সি…..।”
উনার সম্পূর্ন কথা বলার আগেই আমি লজ্জা পেয়ে উনাকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত উঠে গিয়ে বললাম,
“আপনি সত্যিই অসভ্য। ”

আর একমিনিটও দাঁড়ালাম না। যা বলেছি এরপর না সত্যি সত্যি অসভ্যতামি শুরু করে তাই সরে গেলাম উনার সামনে থেকে। ”


উনি অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলেন তখনই আমি উনার জন্য কফি নিয়ে রুমে ডুকলাম,

“আপনার কফি।”
“টাইম নেই আজ লেইট হয়ে গেল শুধু তোমার জন্য। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“আমি কি করেছি? ”
“কি করোনি তাই বলো আমাকে তোমার নেশায় মাতাল করে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছো তাই তো উঠতে পারলাম না।”
“ওমনি আমার দোষ না। এমন হলে আমাকে ধরে না ঘুমালেই হয়।আমি অন্য রুমে চলে যাই। ”
“স্যরি সুইটহার্ট সেটা পসিবল নয়। আমার ঘুমপরী ছাড়া আমার ঘুম হবে না তাই ভুলেও এই কাজ করবে না তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে। ”
“হুম। ”
“আচ্ছা তুমি টাই বাঁধতে পারো?”
“না। আমার ভালো লাগে না স্কুলে যখন যেতাম আম্মু পড়িয়ে দিতো আর তারপরে তো আর লাগেওনি। ”
“আচ্ছা প্রবলেম নেই আমি শিখিয়ে দিচ্ছি। আমার টাইটা বেঁধে দেও। ”
“আপনি তো পারেন তাহলে আমি কেন?”
“আমি বলছি তাই।কথা না বলে এগিয়ে এসো। ”

আমি আর কথা না বলে উনার কাছে গিয়ে টাইটা নিয়ে নিলাম উনি আমার কোমড়টা শক্ত করে ধরে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন আর বলে দিচ্ছিলেন কিভাবে কি করতে হবে। টাই বাঁধা শেষ হলেও উনি এখনো আমাকে দেখে যাচ্ছে আমি গলা একটু খাঁকারি দিয়ে বললাম,

“বলছি এখন লেইট হচ্ছে না আপনার? ”
“ক্ষতি নেই বরং লাভই হচ্ছে। ”
“কিসের লাভ? ”
“সেটা তোমার মোটা মাথায় ডুকলে তো হয়েই যেত। ”

আমি উনাকে মুখ ভেঙালাম। শান একটু মুচকি হেসে বললো,
“আজ রাতে প্রস্তুতি নিয়ে রেখো কোথাও যাবো। ”
“কোথায়? ”
“পরেই দেখতে পাবে।নাউ বাই ”

কথাটা বলেই উনি আমার গালে একটা ডিপ কিস করে চলে গেলেন।উনি যাওয়ার পরই আমি গালে হাত দিয়ে লজ্জা পেয়ে আয়নার সামনে থেকে সরে গেলাম।
.#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২৮
#প্রোপোজ_স্পেশাল_১
#সুরাইয়া_নাজিফা

“আমি যে তোমার সাথে এভাবে একসাথে একবাড়িতে থাকছি এতে তোমার বাবা কিছু মনে করবে না তো আফটার অল আমরা উপযুক্ত ছেলে মেয়ে। ”

কথাটা শুনে ঐশীর এতক্ষনের হাসি খুশি মুখটা বেজার হয়ে গেল।আজকে ঐশী অফিসে যায়নি সাথে তিমিরও তাই দুজনে মিলে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। তিমিরের সাথে প্রতিটা সময় কাঁটাতে খুব ভালোলাগে ঐশীর আসলে ব্যাপারটা শুধু সময় কাঁটানোর না ও বুঝতে চাইছে তিমির ওকে ভালোবাসে কিনা নাকি শুধুই বন্ধুত্বের খাতিরে করছে ওর জন্য এতোসব। কিন্তু হুট করেই তিমির এমন একটা কথা বলে দিলো যে ঐশীর মনটা আবারও খারাপ হয়ে গেল।

ঐশী মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বললো,
“হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছো কেন? তোমার কি আমার সাথে থাকতে কোনো সমস্যা হচ্ছে? সমস্যা হলে যেতে পারো আমার এতো উপকারের দরকার নেই। ”

“সমস্যা হবে কেন ঐশী আমি তো শুধু একটা প্র্যাকটিক্যাল প্রশ্ন করছি। এভাবে একটা উপযুক্ত মেয়ের ঘরে একটা উপযুক্ত ছেলে দিনের পর দিন থাকছে যেখানে তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই সেটা সমাজও তো ভালো চোখে দেখবে না। তাই বললাম তোমার বাবা কিছু মনে করবে না তো। ”

“দেখো তিমির সমাজের কথা আমি ভাবিনা। তাদের মুখ আছে তারা বলবেই। কই কখনো তো তারা আমার কষ্টে বা বিপদে এগিয়ে আসেনি তাহলে কেন ভাববো তাদের কথা।আমি আমার কাছে ঠিক থাকলেই হলো। তোমার আর আমার মধ্যে এমন কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই যে কারো কথায় কিছু যাবে আসবে আর বাকি রইল বাবা! উনি কখনোই আমার প্রতি কোনো আগ্রহ দেখাননি সেটা তোমাকে আমি আগেই বলেছি তাই উনার কথা বলো না। আমার লাইফে আমি কি করব সেটা আমি ভাববো। সারাজীবন খোঁজ খবর না নিয়ে এইবেলা এসে যদি হম্ভিতম্ভি করে আমি তো মানবো না। ”

তিমির ঐশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সমানের টি-টেবিল থেকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো,
“ওকে কুল। নেও পানি খাও তুমি সব কথায় এতো রেগে যাও কেন? বাবা মা যেমনই হয় বাবা মা হয়। তাই তুমি এভাবে বলতে পারো না। উনি যদি কোনো বিষয়ের জন্য বারণ করে তাহলে তোমার শুনতে হবে। তোমার বাবার সাথে সম্পর্কটা ভালো করার চেষ্টা করো হয়তো সব আবার আগের মতো হতে পারে। ”

ঐশী বিরক্তি হয়ে বললো,
“প্লিজ তিমির তুমি যেটা জানো না দয়া করে বলো না। বাবা আর আমার সম্পর্ক কখনে ভালো ছিলই না যে আজ ভালো হবে। তারপরেও শান অনেক চেষ্টা করেছিল বাট সেও ব্যার্থ হয়েছিল তাই প্লিজ তুমি এই বৃথা চেষ্টা করো না। আমার বাবা থেকেও নেই আমি এতিম সেদিনই হয়ে গেছি যেদিন আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। ”

বলেই ঐশী হুহু করে কেঁদে উঠল। তিমির ঐশীকে জড়িয়ে ধরল। উফ কি দরকার ছিল কথা গুলো বলার না চাইতেও ঐশীকে বারবার কষ্ট দিয়ে দেয়। কিন্তু ও ভেবেছিলো হয়তো ঐশীর বাবার সাথে সব ঠিক হলে ঐশীই ভালো থাকবে বাট হয়ে গেল উল্টা।

তিমির ঐশীকে শান্তনা দিয়ে বললো,
“আচ্ছা দেখো স্যরি আমি আর কখনো বলবো না প্লিজ এভাবে কেঁদো না প্লিজ।তোমাকে এভাবে কাঁদতে দেখলে আমারও অনেক কষ্ট হয়। ”

তিমিরের কথা শুনে ঐশীর কান্নাটা বন্ধ হয়ে গেল।ঐশী নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
“আচ্ছা তুমি বসো আমি একটু আসছি।”

“কোথায় যাচ্ছো?”
“রান্নাঘরে। ”
“হঠাৎ রান্নাঘরে কেন?”
“রান্না করব তাই। ”
তিমির অবাক হয়ে বললো,
“তুমি রান্না করতে পারো কখনো বলোনিতো? ”
“তুমি তো জিজ্ঞেস করোনি কখনো বলবো কি করে?”
“তাও ঠিক বাট আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে তুমি রান্না জানো?”
ঐশী চোখ ছোট ছোট করে বললো,
“কেন?”
“বর্তমান মেয়ে গুলো এমনিতেও তেমন একটা রান্না জানে না।সময় থাকলেও করতে চায় না। তারউপর তুমি একজন বিজন্যাস ওমেন হয়ে রান্না জানাটা একটু অস্বাভাবিক ব্যাপার সারাদিন তো এসব নিয়েই ব্যাস্ত থাকো সুযোগ কখন পাও। ”
ঐশী হেসে বললো,
“যে রাধে সে চুলও বাঁধে। রান্নাটা একটা আর্ট বুঝেছো। সেটা ভালোবেসে করতে হয়। যাদের ভালো লাগে না তারা করেনা। কিন্তু আমার অনেক ভালো লাগে তাই কাজের ফাঁকে সময় পেলে নিজের রান্ন। নিজেই করেই খাই কি বলো সবসময় তো আর অন্যের হাতের রান্না ভালো লাগে না। ”
“হুম তাহলে আজকে আমাকে রান্না করে খাওয়াও দেখি কেমন রান্না পারো। ”
ঐশী একটি ভাব নিয়েই বললে,
“ওকে। রান্না খেয়ে প্রশংসা না করেছো তো আমার নামও ঐশী না। ”
তিমির হেসে বললো,
“আচ্ছা দেখা যাবে। ”


আরশ অভিমান নিয়ে বললো,
“কালকে যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেলে না কেন?”

“ক্ষেপেছো কিভাবে বলতাম যে মিথ্যা কথা বলেছি তার উপর সবাই ওখানেই উপস্থিত ছিল একবার যদি ধরা পড়ে যাই সব শেষ।”

“তাই বলে ইশারায়ও বলা যেত না। ”

“না যেত না। তোমার মতো আমার এতো সাহস নাই। অনেক কষ্টে সব ঠিক হয়েছে আর কোনো ভুল করতে চাই না। ”

“হুম আমিও বাট অনেক মিস করছি তোমাকে কালকে দেখা করি? ”

স্মৃতি মজা করে বললো,
“শান ভাইয়া কি বলেছে ভুলে গেছ এখন নো দেখা দেখি একবারে বিয়ের পর দেখা হবে। ”

আরশ উত্তেজিত হয়ে বললো,
“হোয়াট? বিয়ে কোন বছর হবে তার কোনো ঠিক নেই এতোদিন আমি তোমাকে না দেখে থাকতে পারবো না।আমি জানি না কালকেই দেখা করব। ”

“বাবা এতো উতলা হচ্ছো কেন বলোতো তিনমাস তো একসাথেই ছিলাম এখনো একদিনও হয়নি তারপরও এতো মিস কি ব্যাপার মিস্টার। ”

“সিরিয়াসলি একসাথে ছিলাম বলেই হয়তো তোমাতে এতো আসক্ত হয়ে গেছি।তোমাকে ছাড়া এখন কিছুই ভালো লাগছে না।দিনকে রাত মনে হয় আর রাতকে দিন। মনে হয় পাগল হয়ে গেছি। এখন আর তোমাকে ছাড়া থাকা সম্ভব না প্রিয়তমা। ”

আরশের কথা শুনে স্মৃতি খিলখিলিয়ে হাসলো। আর টোন কেঁটেই বললো,
“বাবা কবি কবি ভাব কবিতার অভাব। ”
“আমি কিন্তু মন থেকে বলেছি। এই বলোতো ওই কথাটা। ”
ঐশী না বুঝার ভান করে বললো,
“কোন কথাটা? ”
“যেটা তুমি সবসময় বলো।”
স্মৃতি মজা করেই বললো,
“কি বলি আমি সবসময়? ”
আরশ রাগ করে বললো,
“এখন ডং করছো তাই না। ”
“কিসের ডং। ”
“একদম না বুঝার ভান করবে না তাড়াতাড়ি বলো ঐ থ্রি ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ড। ”

“আমার তো মনে পড়ছে না। ”
আরশ রাগান্বিত হয়ে বললো,
“আচ্ছা তাহলে রাখি শুধু একবার তোমাকে হাতের কাছে পাই হচ্ছে তোমার। ”
আরশ ফোন কাঁটতে যাবে তার আগেই ঐশী বললো,
“এই ওয়েট ওয়েট ওয়েট এতো রাগ করছো কেন আমি তো মজা করছিলাম। ”
“আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।। ”
ঐশী মন খারাপ করে বললো,
“প্লিজ স্যরি তো। ”
“চাই না আমার কোনো স্যরি। ”
হুট করে ঐশী বলে উঠল,
“আই লাভ ইউ।এইবার তো শুনবে। ”
“কি বললে ভালো করে শুনতে পেলাম না একটু জোরে বলো।”
“আই লাভ ইউ। ”
“আরেকটু জোরে? ”
“আরশ আম্মু বাসায় যেকোনো সময় শুনে নিবে কি শুরু করেছো বলোতো।প্লিজ এইবার রাগটা কমাও। ”
স্মৃতির কথা শুনে আরশ হো হো করে হেসে উঠলো আর হাঁসতে হাঁসতে বললো,
“আমি রাগ করেছি সেটা তোমাকে কে বললো?”
স্মৃতি অবাক হয়ে বললো,
“এক্ষুনি তো তুমি রেগে কথা বলছিলে। ”
“ওটা তো তোমার মুখ থেকে ঐ কথাটা শুনবো বলে। একটা কথা বলো কেউ কখনো তার আত্মার সাথে রাগ করতে পারে তাহলে আমি কি করে করব? ”
স্মৃতি রেগে বললো,
“ইউ চিটার। ”
“হুম নিজের পাওনা আদায় করার জন্য একটু চিটিং করলে তাতে দোষের কিছু না। ”
“তুমি না অনেক খারাপ বুঝেছো তো। ”
“প্রেমিকরা একটু খারাপই ভালো এতে প্রেম জমে ক্ষীর হয়ে যায় বুঝলে প্রিয়া। ”

আরশ ফোনের উপর থেকে ঐশীকে একটা কিস করল। আরশের কর্মকান্ডে স্মৃতি লজ্জা পেয়ে গেল। এই ছেলেটাও পারে বটে একবারে তো মারবে না এভাবে তিলে তিলে মারবে। আরশ বললো,
“কি ব্যাপার স্মৃতি তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? ”
স্মৃতি কোনো কথা বললো না। আরশ ঐশীর চুপ থাকতে দেখে আবারও হেসে ফেললো,
“ফোনের ওপারেও এতো লজ্জা পাচ্ছো।তাহলে সামনা সামনি হলে কি হতো। আমার তো তোমার মুখটা এখনি দেখতে খুব ইচ্ছা করছে লজ্জামাখা মুখ খানি। ”

আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সেই কখন থেকে উদ্ভট কথা গুলো শুনে যাচ্ছি। লজ্জা কান থেকে ধোয়া বের হচ্ছে ভাবা যায় নিজের দুলাভাই আর বোনের প্রেম ও আজকাল দাঁড়িয়ে দেখতে হচ্ছে। আমও আর শুনতে পারছিলাম না তাই দরজায় জোরে টোকা দিয়ে একটু গলা খাঁকারি দিলাম। আমার গলার আওয়াজ শুনে আরশ ভাইয়া তাড়াতাড়ি ফোনটা কেঁটে দিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলাম,

“আরে ভাবিজি আপনি এখানে? ”

“ডিসটার্ভ করলাম বুঝি মিস্টার দেবর?কি করবো বলো ভাবী আর শালীদের রাইট আছে তাদের দুলাভাই আর দেবরদের বিরক্ত করার আর সেইদিক থেকে আমার তো আরো বেশী অধিকার কারণ তোমার সাথে তো আমার দুটো সম্পর্কই আছে তাই না? সেদিক থেকে দেখতে গেলে এমন একটি ডিসটার্ভ তুমি ওলওয়েজই পাবে ধরে রাখো। ”

বলে আমি একটু হাসলাম। আরশ ভাইয়া একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“আসলেই তোমার আর আমার সম্পর্কটা এতো কনফিউজিং আর মজবুত না যে আমি না চাইলেও তুমি আমাকে জ্বালাতে এক পাও পিছু ছাড়বে না। ”

এইবার আমি একটু খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম,
“ইয়ে হুই না বাত। আশা করি এরপর থেকে আর বিরক্ত হবে না। ”

“চাইলেও না আফটার অল বড় ভাবী বলে কথা। তা এই টাইমে আমার রুমে কি ব্যাপার? ”

“তোমার চা দিতে আর একটা কথা বলতে এসেছিলাম। ”

“তাই বলে এমন ভুলবাল টাইমে। ”

“আমি কি করে জানবো তোমরা এই টাইমেও প্রেম করছো।এজন্য তো আমাকে এতো কষ্ট করে উপরে আসতে হলো তোমার খাবার দিতে। আফটার অল আবার দেবর আর জিজু বলে কথা বা খাইয়ে তো রাখতে পারি না। ”

আরশ ভাইায়াও কিছুটা মজা করে বললো,
“আহা কতো যত্ন করে আমার। এমন শালী পেলে আর বউয়ের কি প্রয়োজন। ”

“হয়েছে হয়েছে অভিনয় ছাড়ো। এখন কথাটা শোনো। ”

আরশ ভাইায়া একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
“বলছিলাম কি আমার কথা বাকি আছে এখনও কথাটা শেষ করেনি। তুমি ততোক্ষণ ঘুরে আসো। ”

আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম,
“আমার এতো ঠেঁকা পড়ে নাই। কথাটা আপুর সম্পর্কে ছিল শুনলে তুমি নাচতে শুরু করতে। বাট তুমি না শুনতে চাইলে কি আর করার আমি আসি তাহলে। ”

বলেই যেতে নিবো তখনই আরশ ভাইয়া আমার সামনে এসে বললো,
“এটা কি বলছো ভাবীজি আমার কোনো তাড়া নেই প্লিজ বলো। ”

“না না তুমি কথা বলো শুনে কাজ নেই তোমার। ”

“স্যরি কিউটিপাই এইবার বলো। ”
“ভুলে গেছি। ”

“আরে মেরি মা স্যরি বললাম তো প্লিজ বলে দে। ”

কথাটা শুনে আমি মুখ চেঁপে হেসে দিলাম,
“আচ্ছা যাও এইবারের মতো মাফ করলাম। কিন্তু নেক্সট থেকে এমন করলে খবর আছে।”

আরশ ভাইয়া মাথা নাড়ালো। আমি আবারও বললাম,
“আজকে আমরা আমাদের বাড়ি যাচ্ছি ।পারলে শান তোমাদের বিয়ের কথাটা তুলবে হয়তো। ”

কথাটা শুনেই আরশ ভাইয়া খুশিতে আত্মহারা হওয়ার উপক্রম।খুশিতে তো বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করছে। উনার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। আমি নিজের হাসি থামিয়ে বললাম,

“এতো লাফালাফি করার কিছু নেই এখনও এই বিষয়ে কেউ রাজি হবে কি না বলা যাচ্ছে না। ”

“প্লিজ এমনটা বলো না সব ভালো ভালো হোক। ”

“হুম তবে আপুকে বলার দরকার নেই আমরা যাচ্ছি।এটা আমাদের তরফ থেকে ওর জন্য সারপ্রাইজ। ”

“ওকে বলবো না। ”


ঐশী দুপুরে রান্না করে সেটা সার্ভ করে দিলো। তারপর চেয়ার টেনে তিমিরের পাশে বসে পড়ল হাত দুটো টেবিলে ভাজ করে রেখে।
“খাও। ”

“হুম খেতে তো হবেই দেখতে হবে না শুধু মুখেই বড় বড় কথা নাকি কাজেও। ”

ঐশী তিমিরকে মুখ ভেঙালো। তিমির এক লোকমা মুখে দিল কিন্তু মুখ আর তুললো না। ঐশী ভয় পেয়ে গেল। ঐশী তিমিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি হলো ভালো হয়নি?”

তিমির মুখ উপরে তুললো। ঐশীর দিকে কিছুক্ষন তাকালো।ঐশী ভ্রু কুচকে বললো,
“কি হলো কথা বলছো না কেন?”

তিমির চোখ মুখে উত্তেজিত হয়ে বললো,
“অনেক ভালো হয়েছে। আমি জাস্ট ভাবতেই পারছি না তুমি এতো ভালো রান্না করতে পারো। ”
ঐশী খুশি হয়ে বললো,
“হুম তাহলে আমি জিতে গেলাম তো? ”
“সেটা তো অবশ্যই। ”
ঐশী নিজের এক পাশের চুল ফু দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো,
“এরপর আমার সাথে চ্যালেঞ্জ নিও না। ”

তারপর ঐশী বসে নিজের প্লেটে খাবার বেড়ে নিলো। ঐশী এক চমচ মুখে দিল তখনই ঐশী বললো,
“তাহলে কি বলো তোমার জন্য ছেলে দেখা শুরু করি। তোমার মতো এতো গুনি মেয়েকে যে ছেলে পাবে সে ধন্য হয়ে যাবে। ”
ঐশী দাঁত দাঁত চেপে রইল এতো রাগ লাগছে। শয়তান ছেলে একটা আসছে আমার জন্য ছেলে খুজতে? কেন তুই বিয়ে করলে কি ক্ষতি হবে।তাহলে কি তিমির আমাকে পছন্দ করে না। ভাবতেই ঐশীর কান্না এসে যাচ্ছে চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে এই বুঝি কান্নারা নামবে ঝমঝমিয়ে। ঐশীর রাগে নাকের পাটা ফুলে যাচ্ছে। ঐশী রেগে তিমিরের কথায় তালে তাল মিলিয়ে বললো হাসার চেষ্টা করে বললো,

“তাই নাকি? ”

“অবশ্যই। ”

“কে বিয়ে করবে আমার মতো এমন রগচটা মেয়েকে সামলাতে পারবে কখনো?”

“হুম কেউ না কেউ তো আছেই তোমাকে সামলাতে পারে এমন? ”

ঐশী আনমনে নিচের দিকে তাকিয়ে নখ দিয়ে টেবিলে আছড় কাঁটতে লাগল
“ওহ আমার কথা ছাড়ো তুমি কেন বিয়ে করছো না? ”

“বিয়ে করবো ভাবছি কিন্তু যে মেয়েকে ভালোবাসি মনে হয় না সেই মেয়ে আমার ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিবে। ”

তিমিরের কথায় এইবার ঐশীর হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে মন চাইছে। তাহলে তিমির অন্য কাউকে ভালোবাসে? আমার সাথেই কেন বারবার এমন হয়। ঐশী নিজের ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করতে লাগলো। তিমির ঐশীর অবস্থা বুঝতে পেরে ঐশীকে বললো,

“ঐশী কি হয়েছে তোমার? কান্না করছো কেন?”

ঐশী কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
“কই না তো?”
“মিথ্যা বলছো কেন? ”

ঐশী কথা এড়ানোর জন্য বললো,
“কত বছর ধরে পছন্দ করো?”

তিমির হেসে বললো,
“বছর না মাস। তিন মাস তবে এই তিনমাসে আমি তাকে এতোটা ভালোবেসেছি যে তারজন্য নিজের জীবন বিলিন করতেও একটুও কষ্ট হবে না।”

ঐশী না চাইতেও খানিকটা হাসলো,
“আচ্ছা তাহলে তুমি যে মেয়েটাকে ভালোবাসো এতো না ভেবে বলে দেও যে তুমি তাকে ভালোবাসো আশা করি তোমার মতো এতো ভালো একটা মানুষকে সে ফেরাবে না। ”

তিমির জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“বলছো?”

ঐশী মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়ালো। তিমির বললো,
“তাহলে বলেই দেই বলো?”

ঐশী পারবে না নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যকে প্রোপোজ করার জন্য টিপস দিতে। তাই পালানোর জন্য বললো,
“আচ্ছা আমি রান্নাঘর থেকে আসছি। ”

কথাটা বলে ঐশী উঠে যেতে নিতেই তিমির ঐশীর হাত চেপে ধরলো পিছন থেকে। ঐশী পিছন ফিরে তাকালো আর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তিমিরের দিকে। তিমির নিজের পকেট থেকে একটা আংটি বের করলো ঐশীর সামনে হাটু গেড়ে বসে বললো,

“তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি সেদিন থেকেই তেমার মাঝে অদ্ভুত একটা টান অনুভব করি। না চাইতেও তোমার সাথে ঝগড়া করতে ভালো লাগতো। তোমার রাগ দেখতে বালো লাগতো তাই আবল তাবল কথা বলে তোমাকে রাগাতাম তখনে বুঝতে পারিনি আমি তোমার জন্য কি ফিল করি। কিন্তু যেদিন তুমি এক্সিডেন্ট করো তোমার রক্ত মাখা মুখটা দেখে মনে হয় আমি মরে যাচ্ছিলাম। আমার অন্তর থেকে রক্তক্ষরণ হতে শুরু করলো। পাগলে মতো ছুটলাম তোমাকে নিয়ে।আর ভাবছিলাম যেভাবে হোক তোমাকে বাঁচাতে হবে।অন্তত আমার ভালো থাকার জন্যও তোমাকে বাঁচতে হবে। কারণ তুমি আমার ভালো থাকার ঔযুধ। তখন অনুভব করলাম যে তোমার জন্য আমার মনে যে অনুভুতি সেটা নিছক কোনো বন্ধুত্বের অনুভিতি নয় সেটা হলো ভালোবাসার অনুভুতি। আজ আমি জোর গলায় বলতে পারি আমি তোমাকে ভালোবাসি ঐশী। আই লাভ ইউ। উইল ইউ মেরি মি? ”

ঐশীর হার্টবিট যেন থেমে গেছে ও কি নিজের কানে ঠিক শুনছে? তিমির ওকেই প্রোপোজ করলো। ঐশী আর নিজের কান্না গুলো আটকে রাখতে পারলো না। ধুম করে নিচে হাটু গেড়ে বসে তিমিরের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে একটা চুমু দিলো। তারপর তিমিরের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আজ প্রথম নিজেকে ভাগ্যবতী বলে মনে হচ্ছে যে ও তিমিরের ভালোবাসা পেয়েছে।
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here