এবং তুমি, পর্ব:৮+৯

গল্পের নাম— #এবং_তুমি♥
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব– ৮

সেদিনের ভয়ংকর স্বপ্নের বিশেষ প্রভাব আমার উপর পড়েছিলো। ইশান এক পলকের জন্য চোখের আড়াল হলেই আমার বুক কাঁপে। নিঃশ্বাস আটকে যায়। সে যতক্ষণ বাসায় থাকে তাকে ততক্ষণ আমি চোখে চোখে রাখি। বারবার তার আশেপাশে ঘুরঘুর করি। সে যখন চলে যায় তখন তার শার্ট আর টিশার্ট গুলো গায়ে জড়িয়ে নেই। চোখ বন্ধ করে ঘরময় পায়চারী করি। বারবার হাতে নিয়ে নাকে লাগিয়ে শুকে শরীরের ঘ্রাণ নিই। কি অদ্ভুত মাতাল করা সুভাস। আমি অন্যরকম হয়ে গেলাম। সারাক্ষণ তাকে নিয়েই ছিলো চিন্তা-ভাবনা। বিষয়গুলো আমি নিয়মের মধ্যে ফেলে দিলাম। ইশান হয়তো খেয়াল করেন না। তিনি আমার সাথে কথাবার্তাও বলেন না। প্রথম দু-দিন ঠিকমতো ঘরে আসলেও এরপর আর সময় মতো আসেন না। রাত -বিরাতে আসেন। কখনও ১ টা কখনও ২ টা এমনকি ৩ টায়ও আসেন। বাড়ীর কারো এ নিয়ে তেমন ম্যাথাব্যাথা নেই। ইশান নাকি আগেও এমন রাত করে আসতো। তার যখন ঘরের চাপ বেশি পড়ে যায় তখন। কিন্তু আমি জানি ইশান এখন কাজের চাপের জন্য নয় বরং আমার উপর রাগের কারণেই এত দেরীতে আসেন। ইশান আমার উপর রেগে আছেন। রীতিমত ভয়ংকর রাগ। তার এই রাগের একমাত্র কারণ হলো চিঠি। ইশান সেদিন বাবার কাছ থেকে জেনেছিলেন আমি চিঠি টা রেখেছি। কিন্তু এ কথা আমি জানতাম না।
তাই সে যখন জিজ্ঞেস করেছিলো তখন আমি জবাব দিয়েছিলাম, –না, আমি কোনো চিঠি রাখি নি। তখন ই ইশানের আমার উপর থেকে বিশ্বাস চলে গিয়েছিলো। সে হা হা হা করে হেসে বললো,— তোমাদের স্বভাব ই বোধ হয় মিথ্যা বলা তাই না?
আমি চমকে বললাম,– আমি মিথ্যা বলবো কেনো?

— এত চমকানোর তো কিছু নেই? এটা তো স্বাভাবিক বিষয়, তাই না? তুমি চিঠি রাখতেই পারো। এটা তো তোমাদের প্ল্যানেরই অংশ তাই না।

আমি জবাব দিলাম না। শুধুই আমতা আমতা করছিলাম। ইশান আবারো বললো, —তা চিঠিতে কি নতুন পরিকল্পনা ছিলো? আমাকেও জানাও।

—আমি জানি না।

—ওহ,মাই গড! তাই নাকি?

—আমি সত্যি জানি না। বিশ্বাস করুন, আমি খুলেও দেখি নি। বাবা যেভাবে দিয়েছিলেন ওভাবেই আছে।

ইশান হাসতে হাসতে বললো,

— আমার কপালে কি বোকা লেখা। না মানে তুমি বলছো আর আমি বিশ্বাস করবো। এটা ভাবলে কি করে?

— স্যার,আমি সত্যি কথা বলছি। বিশ্বাস না হলে দেখুন এখনো চিঠিতে আঠা লাগানোই রয়েছে।

ইশান হেসে উড়িয়ে দিলেন। আমি জেদ করে তাকে এনে দেখালাম। সে দেখলো সত্যিই আমি দেখি নি। ইশান চিঠি টা খুললেন। দু এক লাইন পড়েই ভাজ করে ফেললেন। বেশ কিছুক্ষণ খামটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বসেছিলেন। আমি বললাম, — কি লেখা ওখানে?

ইশান রেগে বললো,
—নাটক কম করো। তোমরা দুবোন কীভাবে এত নাটক করো আমার জানা নেই। ভাবতেই অবাক লাগে, আমার আন্ডারে এত দিন কাজ করেও তোমাকে আমি চিনতে পারি নি।

আমি অত্যন্ত শান্তস্বরে বললাম,— আমি সত্যিই চিঠির ব্যাপারে কিছুই জানি না।

ইশান থামলেন। ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। আমি তার দিকেই তাকিয়েছিলাম। সে চিঠি নিয়ে উঠে যেতে যেতে বললো, — এভাবে তাকানোর তো কোনো কারণ নেই। প্রেমপত্র নিশ্চই দিবে না। তোমার আর তোমার বাবার যেনো খেয়াল রাখি সেটাই লিখেছে।

—আর কিছু লিখে নি? এত লম্বা চিঠিতে শুধু এ কথা?

— লিখেছে তো। তার প্রেমের কাহিনী। যা পড়ার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছা আমার নেই। তাই এটা এখন আমি ছিঁড়ে ফেলে দিবো।

ইশান ততক্ষণে বেরিয়ে গিয়েছিলো। আমি তখনও ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আপা এইসব কথা তো মুখেও বলতে পারতো। চিঠিতে বলার কি দরকার ছিলো। কথাগুলো বিশ্বাস করতে না পারলেও ইশানের বলার ভঙ্গি দেখে বিশ্বাস করে নিলাম। অদ্ভুতভাবে সেদিন থেকে আমার ভেতরে ইশানকে হারানোর ভয় বাসা বেঁধে যায়। অথচ সে আমার কেউই ছিলো না। নাম মাত্র স্বামী ছিলো। যাকে আমি বুঝতেও পারতাম না। ক্ষণে ক্ষণে তার রুপ বদলাতো। কখনো কথা বলে, কখনো কথা বলে না, কখনো কেয়ার করে আবার কখনো ফিরেও দেখে না। আমার মনে হচ্ছিলো, ইশান কোনো দ্বিধায় ভুগছে যার ফলে সে একেকবার একেক রকম আচরণ করছে। তার প্রতি এত মায়া জন্মানোর কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শুধু স্বামী বলেই কি এ টান নাকি অন্য কোনো কারণ। এটা ঠিক, বিয়ের পূর্বে তাকে আমি পছন্দ করতাম। পছন্দ টা ঠিক ‘মোহ’র মতো ছিলো। আমার ধারনা টিভি-সিরিয়ালের নায়কদের যেমন পছন্দ করতাম তাকেও ঠিক সেরকম পছন্দ করতাম। শুধু আমি নয়, অফিসের আরো দুজনও পছন্দ করতেন। স্যারের বিয়ের খবর শুনে তো তারা রীতিমত স্ট্রোক করার মতো রিয়েকশন দিয়েছিলেন। আমার অবশ্য তেমন কোনো রিয়েকশন আসে নি। তবে সুচ ফোঁটার মতো একটুখানি সুক্ষ্ম যন্ত্রণা অনুভূত হয়েছিলো।

আজ মাদার-ইন-লো হাইপার হয়ে আছেন। বসার ঘরে সোফায় পা মেলে বসেছেন। আমাদের সবাইকেও বসিয়ে রেখেছেন। শশুড়মশাই এর কপালে চিন্তার ভাজ। আমার ধারনা গুরুত্বর কোনো ঘটনা ঘটেছে। আমার মেঝ ভাসুর এ নিয়ে সাত বার পানি খেয়েছেন। তার অস্থিরতা দেখে মেঝ ভাবী অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তিনি ফিসফিস করে কতবার যে জিজ্ঞাস করেছেন,-কি হয়েছে? তার কোনো ইয়াত্তা নেই। মেঝ ভাসুর বোধ হয় শুনেন নি। উনার কানে সমস্যা। কম শুনেন। ঠোঁট নাড়তে দেখলে নিজের মতো ধারনা করে কথা বলেন। বেচারি মেঝ ভাবীর কথা কি আর বলবো? তিনি নিজেদের রুমে কথা বললে রাস্তার মানুষ পর্যন্ত শুনেন।
সেদিন আমি ইতস্ত কন্ঠে বললাম,– ভাবী রাতে আপনি একটু আস্তে কথা বলিয়েন। আসলে আমার রুমে সব শুনা যায়।

ভাবী কপাল চাপড়ে দ্বিগুন স্বরে বললেন,– আমি কি সাধে জোরে কথা বলি? তোমার ভাসুর ই তো শুনে না। কাল আমি তাকে বললাম কাছে আসো, সে বলে,– মুতে আসো, আরে আমি তো মাত্রই মুতে এসেছি। আমি আবারো বললাম,— আরে না,কাছে আসো। সে বলে, — না বলো ক্যান? তুমি কি বাথরুমে ডুকে দেখছো আমি মুতি নাই। আমি বললাম,– আরে বাল, বলছি কাছে আসো। সে চিল্লিয়ে বলে, — কাল কখন মুতে আসতো বলছো? কেমন লাগে বলো? তখন রাগে আমি চিল্লিয়ে বলছিলাম,—কাছে আসতে বলছি, শুনছোস। কাছে আসতে বলছি। সে এইবার বুঝলো। কিন্তু বুঝে কি লাভ বলো তো? ততক্ষণে তো আমার রোমান্টিক মুডের বারোটা বেজে গেছিলো।

আমি ভাবির কথায় ভীষণ দুঃখ প্রকাশ করলাম। বেচারির মুখভঙ্গি দেখে হাসার সাহস করলাম না। অথচ তখন আমার দম ফাটা হাসি আসছিলো।

#চলবে….

গল্পের নাম— #এবং_তুমি
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব– ৯

ঘন্টাদুয়েক বসিয়ে রাখার পরেও মাদার ইন- লো এর মিটিং করা হলো না। কারণ হলো ইশান। তিনি বাড়ীতে ফিরে আসেন নি। শাশুড়ি মা ১১ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন। আরো অপেক্ষা করতেন, কিন্তু বাচ্চাদের জন্য হয়ে উঠলো না। তিন টা বাচ্চার কান্নাকাটিতে অসহ্য হয়ে মিটিং ক্যান্সাল করা হয়েছে। ভাবীরা হাফ ছেড়ে বাঁচলো। বড় ভাবী তার মেয়েকে নিয়ে তৎক্ষণাৎ চলে গেলেন। আমি মেঝ ভাবীর সাথে উনার দুই ছেলের এক ছেলেকে কোলে নিয়ে রুমে পৌঁছে দিলাম। বাচ্চা দুটো খুব দুষ্টু। যেখানে সুই ডুকবে না তারা সেখানে কুড়াল ডুকিয়ে দেয়। হাটার সময় যদি কেউ তাদের পাশ দিয়ে যায়, তারা দুজন কনুই দিয়ে গুতিয়ে সরিয়ে দিবে। বড় ভাবীর বাচ্চা মেয়েকে একা বসতে দেখলে দুজনে আস্তে করে চিমটি কাটবে। বেচারি তিথি গলা ফাটিয়ে কাঁদতে থাকে। আর বাঁদর তখন দুটো থাকে লাপাত্তা। ঘরে কোনো মেহমান আসলে বলবে, ‘–আমাদের ঘরে কোনো খাবার নেই, আপনারা এখন চলে যান। ‘ মেঝ ভাবি কি শরম ই না পান। ঘরের ভেতর বা আশেপাশে কোনো চিপস বা চকলেটের প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখলে কাম সারে। যাকে সামনে পাবে তার পেছন পেছন ওই খালি প্যাকেট হাতে নিয়ে বলতে থাকবে,– এটা কে খাইছে? এটা কত? এটার ভেতর কি ছিলো? এটা কই পাওয়া যায়? ইত্যাদি। যতক্ষণ পর্যন্ত জবাব না দিবেন ততক্ষণ পেছন ঘুরতে থাকবে। ঘরের কোনো জিনিস দেখলেই তারা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যায়। মেঝ ভাবী অবশ্য তাদের খুব মারে এসবের জন্য। কিন্তু তারা দুটো এর পুরো ফায়দা লুটে। কাঁদতে কাঁদতে শাশুড়িমার কাছে যেয়ে বলে, —দাদী দাদী, কাল আম্মা ফোনে আপনারে বুড়ি বলছিলো। আবার আমাদের জন্য চিকেন ফ্রাই ও এনেছিলো। আমরা দরজা লাগিয়ে খেয়েছিলাম। জানো, মোটা লাঠি এনে আমাদের সামনে ধরে বলেছিলো আপনাকে যেনো না বলি।

মেঝ ভাবী তখন চিৎকার দিয়ে এসে বলে, — আম্মা এরা মিথ্যা বলতাছে। টিভির রিমোট ভেঙ্গে ফেলছে দেখে আমি মারছিলাম। তাই এসব বানাইয়া বলতেছে।

মেঝ ভাবীর ছোট ছেলে আবীর তখন দৌড় মেরে রুম থেকে, চিকেন ফ্রাই এর প্যাকেট নিয়ে এসে বলে, —এই দেখো,দাদী আমরা খাইছিলাম। দেখছেন আম্মা মিথ্যা বলে।

মেঝ ভাবী দুজনকে চোখ রাঙ্গিয়ে শাসায়। তখন তারা উল্টো বলে,– বলছি না মেরো না,দাদী রে বইলা দিমু। তখন না বললা, যা যা গিয়ে বল। এখন কি হ্যা?

মেঝ ভাবী অসহায় কন্ঠে আমার কাছে এসে বলে, —-দেখছোস, দুইটা কত বড় শয়তান। আম্মা এসব দেখলে বকাবকি করেন তাই বলছিলাম আম্মারে না কইতে। বলতেন এসব খেলে নাকি অসুখ হয়। এখন আমার ভাই কাল আবীরের বাপকে বাজারে পেয়ে তার ভাগ্নেদের কিনে দিছিলো, এতে আমি কি করবো বল?
অথচ দেখ আম্মা, ‘আজ আমারে বললো, শুনো বউমা আমার নাতির খাবার দেখে হিংসা করার মতো দাদী না আমি। তুমি যেসব শিখাচ্ছো তা ছোটলোকদের স্বভাব। ‘ বিশ্বাস করো আমার মনে এসব কোনো কিছুই ছিলো না। ইশশ, আম্মার মনে কত কষ্ট গিয়েছে।
মেঝো ভাবী কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে রুমে চলে যান।

আবীরকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলাম। বাহিরে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। আমি জানালার পাশে দাড়ালাম। আজ মনটা খারাপ। ভীষণ খারাপ। কারণ হলো ফুফিমা চলে গিয়েছেন। কালকেই ফ্লাইট,তাই আজ রওনা দিয়েছেন। উনার সাথে দাদী শাশুড়িও গিয়েছেন। ফুফিমার সাথে লন্ডনে তিনিও থাকেন। এই কয়দিনে উনার প্রতি আমার আলাদা মায়া জন্মে গিয়েছিলো। আমার মনে হয়েছে সত্যিকার অর্থেই মা পেয়েছি। অথচ কপাল দেখো পেতে না পেতেই হারিয়ে ফেলেছি। যাবার সময় কি কান্না টা ই না করেছিলাম। আমার জীবনে ভালো মানুষের স্থায়ীত্ব কাল রৌদ্দুরের বৃষ্টির মতো। তাদের ক্ষণিকের জন্য আসা হয়। বাহিরের বৃষ্টিফোটা গুলো আমায় চম্বুকের মতো টানছে। হঠাৎ করেই অদ্ভুত ইচ্ছা দেখা দিলো। এই মাঝ রাতে বৃষ্টিতে ভেজার। অথচ এমন ইচ্ছা আমার স্বপ্নেও ভাবা উচিত নয়। কিন্তু আমি নিজেকে আটকালাম না। দু হাত প্রসারিত করে ভিজতে লাগলাম। আজ নির্ঘাত জ্বর সর্দি বাঁধিয়ে ফেলবো। আমি জ্বর টর একদম সহ্য করতে পারি না। জ্বর হলে নাক দিয়ে পানি পড়ে, কোনো কিছু মুখে দিলে তেঁতো লাগে। ছিঃ,কি বিশ্রি ব্যাপার!

ভেজা জুবুথুবু শরীর নিয়ে রুমে আসলাম। ইশান আয়নার সামনে দাড়িয়ে শার্ট বদলাচ্ছেন। মাত্রই ঘরে এসছে। অথচ একবারও খেয়াল করে নি বাহিরেই আমি বৃষ্টিতে ভিজছিলাম। আমি সরাসরি ইশানের সামনে যেয়ে দাড়ালাম। ইশান তৎক্ষণাৎ চোখ বন্ধ করে বললো,

—তুমি এখানে কেনো? ওয়াশরুমে যাও। তোমার পোশাক খুবই এলোমেলো হয়ে আছে।

আমি শুনলাম না। ঠাঁই দাড়িয়ে রইলাম। ইশান চোখ খুলে আমায় একই ভঙ্গিতে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,

—কি হলো যাও বলছি।

আমি গেলাম না। ইশানের হাত থেকে শার্ট টা কেড়ে নিয়ে ফেলে দিলাম। শরীর থেকে শাড়ী টা ফেলে দিয়ে ব্লাউজের দু তিনটা হুক খুলে ফেললাম। ইশান আতঙ্কিত গলায় বললো,

— তুমি পাগল হয়ে গেছো প্রভাতি। এক্ষুণি ওয়াশরুমে যাও।

আমি এবারও শুনলাম না। জেদ দেখিয়ে পুরো ব্লাউজ খুলে ফেললাম। ইশান তখন জোর করে আমায় কোলে নিয়ে রাথরুমে ডুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। আমি অনেকবার দরজা খুলতে বললাম, কিন্তু সাড়া পেলাম না। ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরে বসে পড়লাম। আমি শান্ত হতেই সে দরজা খুলে দিলো। বেশ কয়েক মিনিট ভেতরে কাটিয়ে বেরিয়ে আসলাম। ইশান রুমে নেই। বোধহয় বাহিরে গিয়েছেন। আমি ভেজা কাপড়সহ বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আমার এত পরিমাণ লজ্জা লাগছিলো যা বলার বাহিরে। ছিঃ,কি করতে গিয়েছিলাম আমি। স্যারের সামনে কীভাবে যাবো? তিনি নিশ্চই আমায় বাজারের মেয়েছেলে ভাবছেন। লজ্জায় কেঁদে ফেললাম। মনে মনে ঠিক করলাম ইশানের সামনে যাবো না।

সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গতেই রান্নাঘরে চলে আসলাম। আজ নাস্তা বানাবো। রান্নাঘরে পড়ে থাকলে নিশ্চই ইশানের সম্মুখীন হতে হবে না। এ ই ঢের। বড় ভাবী এসে দেখলেন রুটি বানানো শেষ। চায়ের লিকার ও চুলোয় করে রাখা। তিনি ভীষণ খুশি হলেন। আনন্দিত গলায় বললেন, — ওমা সব হয়ে গেছে। খুব ভালো করেছিস রে। কাল মিথির বাবার সাথে কথা বলতে বলতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো। বেচারা ডিউটি করে আজ একটু সময় পেয়েছিলো, বুঝিস ই তো। তাই আজ উঠতে দেরী হয়েছে। বাবা নিশ্চই এক্ষুণি এসে নাস্তা চাইবেন। টেনশনে আমার কান্না পাচ্ছিলো। থ্যাংকইউ রে।

— থ্যাংকইউ দিচ্ছো কেনো? এসব কি আমার কাজ নয়? আমাকে নতুন বলে তোমরা সব কাজ করে ভালো সাজো।

— তুই ভুল ভাবছিস। আমাদের মনে কেনো কল্পনায়ও এসব আসে নি। তোর নতুন বিয়ে হয়েছে, আর এ সময়ে নতুন বউদের সকালে উঠতে দেরী হয়। তোর আবার ডায়বেটিস। ঠিকঠাক না ঘুমালে অসুস্থ হয়ে যাস। এসবের জন্যই বারণ করেছি রে। বিশ্বাস কর আমরা এসব কোনোকিছুই ভাবি নি।

বড় ভাবীর চোখ ছলছল হয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে এক্ষুণি কেঁদে দিবেন। আমি দুই হাতে তাকে ঝাপটে ধরলাম। মাথাটা উনার বুকে মিশিয়ে বললাম, — তুমি থ্যাংকইউ বলেছো দেখে আমি মজা করে বলেছিলাম। এত্তগুলো, সরি!
তুমি, তোমরা সবাই এত ভালো কেনো? কেনো এত এত ভালো? সবাই কেনো আমাকে এত ভালোবাসো? আমি এসবের যোগ্য?

খুশিতে আমি কেঁদে ফেললাম। বড় ভাবী হাত উঠিয়ে বললেন,
— এবার কিন্তু আমি মেরে দিবো? চোখের পানি মুছো বলছি। এক্ষুণি মুছো! খবরদার আমার সামনে আর কোনোদিন যাতে কাঁদতে না দেখি।

#চলবে…

®সোনালী আহমেদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here