#তৃতীয়_ব্যক্তি
লেখা: শরাবান তহুরা চৌধুরী
পর্ব: ১
আলমারী ভর্তি অগোছালো পাঞ্জাবি, শার্ট আর টি-শার্টে ভর্তি। সবকিছু এলোমেলো করে রাখা। এক তাকের কাপড় আরেক তাকে রাখা। সবগুলো কাপড়ই নোংরা। প্যান্ট একটাও আলমারিতে অবশিষ্ট নেই। গোটা কয়েক টি-শার্ট আছে মাত্র।
সামিয়াই সবসময় সবকিছু সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে। ময়লা কাপড়, ঝুড়িতে রাখে ধোয়ার জন্য। গত কয়েকদিন ব্যাপার বাড়িতে থেকে আসার ফলস্বরূপ আলমারির এই হাল হয়েছে। আলমারির কাপড়গুলো গোছাতে গোছাতে সে মনে মনে বলল,
“লোকটা আজও নিজের কাজ নিজে করতে শিখলো না।”
সামিয়া নোংরা কাপড়গুলো মেঝেতে রাখছে, আর পরিষ্কারগুলো নতুন করে ভাঁজ করছে। পাঞ্জাবিগুলো ভাজ করার জন্য সে বিছানার উপর রাখলো।
সবকিছু গুছিয়ে, আলমারিতে রাখতে যাবে ঠিক তখন-ই সে দেখলো; আলমারির তাকের শেষ কোণায় একটি কালো সূতি শাড়ী রাখা আছে। পাতলা কাগজের প্যাকেট হওয়ায়, সে দ্রুতই বুঝতে পেরেছে প্যাকেটের মধ্যে কালো শাড়ি আছে।
প্যাকেটটা দেখে সামিয়া কিছুটা বিস্মিত হলো। সাথে কিছুটা খুশির ঝিলিক তার চোখেমুখে ফুটে উঠল। সে শাড়ির প্যাকেটটা হাতে নিতেই লক্ষ্য করল, সেখানে আরো একটু ছোট্ট খাম রাখা। শাড়ির প্যাকেট নেবার আগেই সে খামটা হাতে নিলো। স্ব-যত্নে খামটা খুলতেই একটা চিরকুট, সাথে কিছু গোলাপের পাঁপড়ি পেলো। চিরকুটটা হাতে নিয়ে আলতো করে স্পর্শ করল সে। খামটা নাকের কাছে নিয়ে গোলাপের ঘ্রাণ উপভোগ করল খানিক্ষণ। তারপর চিরকুটটা পড়তে শুরু করল। সেই চিরকুটে খুব ছোট্ট করে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে,
“খুব বেশি ভালোবাসি।”
সামিয়া মুচকি হেসে আস্তে করে বললো,
“পাগল একটা! আমিও তো তোমায় ভালোবাসি।”
পিছনে কারো পায়ের শব্দ পেয়ে, পিছু ফিরে তাকালো সে। নিলয় আসছে। নিলয় কে দেখেই সে উৎফুল্ল হয়ে উঠল। হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললো,
“কী হে মহারাজ, আজকাল দেখি খুব রোমান্টিক হয়ে গেছেন! শাড়ী রাখা, সাথে আবার চিরকুট! ব্যাপার খানা কী? হুম।”
সামিয়ার কথা শুনে নিলয় যেনো চমকে উঠলো। সামিয়ার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছে না সে। কীসের শাড়ি? কীসের চিরকুট? কোনোকিছুই বুঝতে পারছে না সে। কিন্তু, সামিয়ার এই হাস্যোজ্জ্বল মুখখানা তার ভীষণ ভালো লাগছে। কেমন মায়াময়! এই হাসিটা সে কিছুতেই নষ্ট করতে চাইছিলো না। তাই সে সামিয়াকে কিছু বুঝতে না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো,
“কেনো? তুমি খুশি হওনি?”
সামিয়া ছুটে এসে নিলয় কে জড়িয়ে ধরে বললো,
“তুমি আমাকে এত ভালোবাসো, এর থেকে খুশি আর কী আছে পৃথিবীতে?”
নিলয় একহাতে সামিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।
সামিয়ার কপালের উপরে আসা চুলগুলোকে আলতো করে সরিয়ে দিয়ে, ওর কপালে নিজের ঠোঁট কে অঙ্কিত করলো। বাঁকা চোখে সামিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কিছুই নেই?”
সামিয়া উচ্চস্বরে বললো,
“উহু, কিছুই নেই। কিছু থাকতে পারেও না।”
নিলয় দুই হাতের বাহু বন্ধনীতে অবৃষ্ট করলো সামিয়াকে। সামিয়া পরম তৃপ্তিতে নিলয়ের বুকে মুখ গুঁজে রইলো। আর নিলয় মনে মনে ভাবতে থাকলো,
“কিন্তু, আমি তো ওকে কোন শাড়ী দেইনি। কোন চিরকুটও রাখিনি। তবে?
বিকেলের দিকে দুজনে ব্যালকনিতে বসে চা আড্ডা দিচ্ছে। সচারচর, এমন সময়ে নিলয় বাসায় থাকে না। অফিসে থাকে। সামিয়া একাই এই সময় পার করে। একাই এই ব্যালকনিতে বসে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। আজ শুক্রবার বলেই নিলয় ওর পাশে। এতে অবশ্য খুব একটা খারাপ লাগছে না, উল্টো বেশ ভালোই লাগছে। তার উপর এতদিন পর বাপের বাড়ি থেকে এসেছে, আজকে মনেহয় রোমান্টিকতাটা একটু বেশিই বেড়ে গেছে!
সামিয়ার মনে রোমান্টিকতা থাকলেও, নিলয়ের মনে এখন সন্দেহের বীচ বপন হচ্ছে। সে তখনকার ঘটনাকেই মনে মনে আওড়াচ্ছে।
“কে সেই ব্যাক্তি? যে সামিয়াকে গোপনে এত্ত ভালোবাসে! মাঝে মাঝে চিঠি রেখে যায় বারান্দাতে। সাথে ফুলের বুকে, চকলেটও থাকে। সামিয়ার প্রিয় ক্যাটবেরি থাকে, প্রিয় ফুলের বুকে থাকে। আজ আবার শাড়ী! সেটাও সামিয়ার প্রিয় রঙের! এসবের আসল রহস্য কী? ছেলেটা কী ওর কোন বন্ধু? ঘনিষ্ট বন্ধু? আরেহ না, কীসব ভাবছি আমি! কিন্তু, ঘনিষ্ট কেউ না হলে এসব করবেই বা কেনো? আচ্ছা, কোনভাবে কী ছেলেটা আসিফ?”
নিলয় আর কিছুই ভাবতে পারছে না। তার প্রিয় বন্ধু সম্পর্কে এসব বাজে ভাবনা সে মাথায় আনছে কী করে!
নিলয়ের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। আর এদিকে সামিয়া পরম তৃপ্তিতে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে।
অন্যদিকে তৃতীয় সেই ব্যক্তিটি হয়তো, সামিয়াকে সরাসরি ভালোবাসার কথাটা না বলতে পারার আগুনে ঝলসে যাচ্ছে..!
চলবে….