প্রাণের_চেয়েও_প্রিয় পর্ব ৫৫+৫৬

#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_55
#Writer_TanhaTonu

আরশি বেডের সাথে হেলান দিয়ে কাঁদছে আর রেগে বিড়বিড় করছে….
—”তোর জন্য আজ এসব হয়েছে নীরা।শুধু তোর জন্য..তোর জন্য আজ আমি বাচ্চা একটা মেয়ের সাথে রুড বিহেইভ করেছি।ছিহ কতটা জঘন্য হয়ে গিয়েছি আমি!মাফ করব না আমি তোকে..মরেও শান্তি দিলি না আমায়।”

আরশি দুহাতে নিজের মাথা চেপে ধরে ডুকরে কাঁদতে লাগল…

—”নাহ যা হবার হবে।কিন্তু তোর বাচ্চাকে আমি মানতে পারব না।কিছুতেই পারব না আমার সিদ্রাতকে হারাতে,,ভবিষ্যতে আমার বাচ্চাদের জীবন নরক বানাতে…”
_________________________________
আরশি আর ওইদিন রুম থেকে বেরুলো না।নিজেও খেলো না আর কারও খাওয়ার ব্যবস্থাও করল না।সিদ্রাত নিজে ক্ষুধা সহ্য করতে পারলেও সিহরাত ক্ষুধার চোটে নিজের চিকন কন্ঠে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।সিদ্রাত সিহরাতকে নিজের কোলে নিয়ে হম্বিতম্বি দিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু মেয়েটা চুপ হওয়ার নামই নেই।সিদ্রাত সিহরাতের গালে পাপ্পি দিচ্ছে একটু পর পর।আবারও পাপ্পি দিয়ে বলল…
—”বাবা একটু শান্ত হও না।তুমি এভাবে কাঁদলে আমি কিভাবে তোমার জন্য খাবার বানাতে যাবে বেবি?একটু শান্ত হো না বাবাটা আমার”

সিহরাত যেনো সিদ্রাতের কথা কিছুই বুঝল না।কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটা একসময় ক্লান্ত হয়ে সিদ্রাতের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল।সিদ্রাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিহরাতকে বেডে শুইয়ে এ দিলো।তারপর গেস্টরুমের দিকে একবার তাকিয়ে কিচেনে গেলো।মুরগির হাড় ছাড়া মাংস দিয়ে একদম পাতলা করে খিচুড়ি রান্না করে নিলো।সিহরাতের জন্য অল্প একটু নিয়ে সেটা আবার ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিলো।বাচ্চা মানুষ তো আর খেতে পারবে না।ব্লেন্ড করলে খেতে সুবিধা হবে।সিদ্রাত খিচুড়ি নিয়ে রুমে এসে দেখল সিহরাত ঘুম থেকে জেগে গিয়েছে।বেড সাইড টেবিলে রাখা সিদ্রাত-আরশির কাপল পিকটা নিয়ে বারবার চুমু খাচ্ছে।সিদ্রাত মুচকি হেসে বাচ্চাটার কাছে এগিয়ে গিয়ে বসল আর বলল…
—”পছন্দ হয়েছে বুঝি এটা?”

সিহরাত কি বুঝল কি জানি ফ্যালফ্যাল করে সিদ্রাতের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে খিলখিল করে হেসে উঠল আর আরশির পিকে চুমু দিতে দিতে আধো আধো বুলিতে বলল…
—”আ,,মুমু,,আ,,ম,,মুউ”
সিদ্রাত হেসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল…
—”হুম মা..এটা তোমার আম্মু..আবার বলো তো মা আম্মু..”
সিহরাত সিদ্রাতের বুকে মাথাগুঁজেই শব্দ করতে লাগল…
—”মুমউ,,আম,,উউ,,”

সিদ্রাত হেসে উঠল।তারপর সিহরাতকে ভালো করে বসিয়ে দিয়ে একটু একটু করে খাইয়ে দিতে লাগল।সিহরাত খাচ্ছে আর আরশির ছবির দিকে তাকিয়ে একটু একটু করে খিলখিলিয়ে হেসে দিচ্ছে।বাচ্চাটার হাসি দেখে সিদ্রাতও হাসছে।সিদ্রাত আরেক লোকমা এগিয়ে দিলো সিহরাতের মুখের দিকে।সিহরাত মুখ বাড়িয়ে দিলো।যেই সিদ্রাত খিচুড়িটা মুখের ভিতর পুরে দিতে নিবে ওমনি মেয়েটা মুখ ঘুরিয়ে ফেলল।আর এতে পুরো খিচুড়ি মুখে এসে লাগালাগি। একদম মুখ ভিরে যায় খিচুড়িতে।আবারও খিলখিল করে হেসে দেয়।সিদ্রাত সরু চোখে তাকিয়ে বলে…
—”এতো দেখি ভারী ফাজিল হয়েছে!কোথায় শিখেছো এমন দুষ্টুমি মা?”
—”চা,,চা,চু,,চুচু,,,”
—”চাচ্চু?তোমার রুহান চাচ্চুর ক্লাস তো পরে নিচ্ছি।আগে মা-টা আমার খিচুড়িটা শেষ করো তো”

ছলেবলে প্রায় চল্লিশ মিনিট পর সিহরাতের খাওয়া শেষ হলো।প্রথম প্রথম বাচ্চাটাকে সামলাতে সিদ্রার হিমশিম খেলেও এখন আর খারাপ লাগে না।বরং ভালোই লাগে বাচ্চা সামলাতে।আফটারল বাচ্চাদের মধ্যে আল্লাহ একটা আলাদা সৌন্দর্য,মায়া
দিয়েছে…
সিদ্রাত এসব এসব ভাবতে ভাবতে প্লেটটা নিয়ে নিচে নেমে আসে।নিচে আসতেই ওর চোখজোরা আটকে যায় ডায়নিং টেবিলে বসে থাকা রমণীর দিকে।খাওয়ায় ব্যস্ত রমণী কি জানে ভেজা চুলে তাকে দেখে একজনের পাগল হওয়ার মতো অবস্থা!সিদ্রাত মৃদু হেসে মাথাটা ঝাঁকিয়ে কিচেনে চলে গেলো।আরশি আড়চোখে সেদিকে তাকিয়ে ভেঙচি কাটল।একটু পর সিদ্রাতও এক প্লেট খিচুড়ি নিয়ে আরশির পাশাপাশি বসল।আরশি সাথে সাথে বলে উঠল…
—”কি সমস্যা?এখানে বসেছেন কেন?”
সিদ্রাত ভ্রু কুচকে বলল…
—”এই টেবিলটা কি তোমার নামে লিখা আছে নাকি যে আমি বসতে পারব না?”
—”আপনার সাথে কথা বলাই বেকার”
আরশি আবারও খাওয়ায় বিজি হয়ে গেলো।সিদ্রাত মুচকি হেসে নিজেও খেতে লাগল।আরশি খেতে খেতে বলল….
—”তা খিচুড়ি নিয়ে কি যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন?শার্টে এভাবে খিচুড়ি মাখামাখি কেন?”

সিদ্রাত হাসল আরশির কথায়।নিজেও খেতে খেতে বলল…
—”আরে জানো না বাচ্চা সামলানো যে কি কঠিন আর ধৈর্যের ব্যাপার!আমরা যা খাই দশ মিনিটে তা খেতে ওদের লাগে পঞ্চাশ মিনিট।তারপর তো আবার আছেই তাদের দুষ্টুমি!”

সিদ্রাতের কথায় আরশি মুখ বাঁকালো।সিদ্রাত আড়চোখে তা দেখে হাসল।খাওয়া শেষে আরশি গেস্ট রুমে চলে গেলো।সিদ্রাতও উপরে চলে গেলো।আরশি রুমে এসে কিছুক্ষণ ফেইসবুকে ঘুরাঘুরি করে পড়তে বসল।রাতে প্লেটে খাবার বেড়ে রুমে বসেই খেলো।উদ্দেশ্য সিদ্রাতের সামনে যাবে না…
একইরীতিতে চলতে লাগল দিনগুলো।কেটে গেলো বেশ কয়েকটা দিন।এরকমই একদিন….
আরশি বিকালে মেডিকেল থেকে এসে রেস্ট নিয়ে সন্ধ্যার পরে কিচেনে গেলো।উদ্দেশ্য ডিনার তৈরি করা।সিদ্রাত ফোন দিয়ে জানিয়েছে অফিসে মিটিং আছে।বাসায় আসতে আসতে নয়টা বাজবে।আরশি জবাবে কিছুই বলেনি।শুনেছে তারপর কেটে দিয়েছে।অতঃপর মন দিয়ে রান্না করতে লাগল।হঠাৎ উপর থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসল।আরশির ভ্রুজোরা কিঞ্চিত কুচকে গেলো।এবার কান্নার আওয়াজটা আরও জোরে জোরে আসছে।আরশি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না।চুলোর ভলিউম কমিয়ে দিয়ে দৌড় লাগালো উপরে।রুমে এসে দেখল সিহরাত ফ্লোরে উপুড় হয়ে পড়ে আছে আর কাঁদছে।আরশি দৌড়ে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে নিলো।ঠোঁট আর থুতনী কেটে রক্ত বেরুচ্ছে।এদিকে বাচ্চাটা ব্যথায় কেঁদেই যাচ্ছে।আরশির নিজেরও চোখ ছলছল করে উঠল বাচ্চাটাকে এভাবে ব্যথায় কাঁদতে দেখে।আরশি বুঝতে পারল বেড থেকে হয়ত পড়ে গিয়েছে। কপালের এক পাশেও ফুলে আলু হয়ে গিয়েছে।আরশি সিহরাতকে বেডে বসিয়ে ঠোঁট আর থুতনীর ব্লাড ক্লিন করে ওষুধ লাগিয়ে দিলো।সিহরাত আবারও কেঁদে উঠল…
—”উউউ,,,বিতা,,বিতা,,, ”
আরশি বাচ্চাটার কপালে চুমু দিয়ে বলল…
—”একটু পর আর ব্যথা করবে না”
সিহরাত টলমল চোখে আরশির দিকে তাকিয়ে রইল।পরক্ষণে লাফিয়ে আরশির কোলে উঠে গলা জড়িয়ে আওয়াজ করতে লাগল….
—”মুউ,,মুমু,,আম্ম,,,মুম্মু”
আরশি অবাক হয়ে বলল…
—”আম্মু??”
সিহরাত খিলখিল করে হাসল।তারপর আরশির গালে ঠোঁট আর নতুন গজানো দুয়েকটা দাঁত দিয়ে কামড় দেয়ার চেষ্টা করল।এবার আরশি নিজেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।পরক্ষণেই নীরার কথা মনে পড়তেই মুখ মলিন হয়ে গেলো।সিহরাতকে বেডে শুইয়ে দিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে…
চলবে…
#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_56
#Writer_TanhaTonu

সিহরাত খিলখিল করে হাসল।তারপর আরশির গালে ঠোঁট আর নতুন গজানো দুয়েকটা দাঁত দিয়ে কামড় দেয়ার চেষ্টা করল।এবার আরশি নিজেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।পরক্ষণেই নীরার কথা মনে পড়তেই মুখ মলিন হয়ে গেলো।সিহরাতকে বেডে শুইয়ে দিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে…
________________________________________
সিদ্রাত একটু দেরি করেই বাসায় ফিরল।রুমে এসে দেখে সিহরাত গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে।সিদ্রাত মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে একটা অফ হোয়াইট শার্ট আর ব্ল্যাকিশ ব্রাউন থ্রি কোয়ার্টার পড়ে নিচে নেমে এলো।গেস্ট রুমের দিকে তাকিয়ে দেখল রুমের দরজা লক করা কিন্তু ভিতরে লাইট অন করা।সিদ্রাত বাঁকা হেসে দরজার কাছে এগিয়ে যায়।প্যান্টের পকেট থেকে চাবি বের করে রুমের লক খুলে ভিতরে ঢুকে।তারপর দরজা ভিতর থেকে লক করে বেডে গিয়ে পা ঝুলিয়ে বসে।ওয়াশরুমের ভেতর থেকে শাওয়ারের আওয়াজ আসছে।প্রায় দশ মিনিট পর আরশি শরীরে একটা টাওয়াল প্যাঁচিয়ে বেরিয়ে আসে।বেডের দিকে তাকাতেই ওর চোখ চড়কগাছ।সিদ্রাত আরশিকে দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসছে।আরশি একবার সিদ্রাতের দিকে তাকালো আর একবার নিজের দিকে।তারপর দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে নিলেই সিদ্রাত এসে খপ করে হাত ধরে ফেলে আর ভ্রু নাচায়…
—”কোথায় যাচ্ছো?”

আরশির লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে চাচ্ছে।লজ্জামাখা কন্ঠে আরশি নিচের দিকে তাকিয়ে বলল…
—”প্লিজ ছাড়ুন।আমি ভিতরে যাবো”

সিদ্রাত বাঁকা হেসে আরশির কোমরে হাত চেপে ধরে।আরশির শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে।ও আড়চোখে সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।লজ্জায় মেয়েটার গাল দুটো লাল হয়ে গিয়েছে।সিদ্রাত আরশির কাছে এগিয়ে গিয়ে ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।তারপর কপালে কপাল ঠেকিয়ে মাতাল করা কন্ঠে বলল…
—”খুবই আবেদনময়ী লাগছে তোমায়”

আরশির শরীর জুড়ে যেনো শিহরণ বয়ে গেলো সিদ্রাতের এমন নেশাধরা কন্ঠে।আরশি চোখ বন্ধ করে ফেলে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে….
—”কি চান?চলে,,,যান,,প্লিজ”

সিদ্রাত আরশিকে জড়িয়ে ধরল গভীরভাবে।আরশি চেয়েও কেন যেনো চাচ্ছে না নিজেকে ছাড়াতে।এই মানুষটাতেই যে মিশে আছে তার অস্তিত্ব।আরশি হঠাৎ ফিল করল ওর ঘাড় ভিজে যাচ্ছে।ও অবাক হলো।তাড়াতাড়ি সিদ্রাতকে সোজা করিয়ে দাঁড় করিয়ে সিদ্রাতের মুখের দিকে তাকালো অবাক হয়ে।তারপর দুহাত দিয়ে সিদ্রাতের দুগাল আলতো করে ধরল।সিদ্রাতও অশ্রুসিক্ত নয়নে আরশির দিকে তাকালো।আরশি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল…
—”কাঁদছেন কেন হুম?আপনি বাচ্চা মানুষ?”

সিদ্রাত আবারও আরশিকে জড়িয়ে ধরল।ধরা গলায় বলল….
—”তোমাকে ছাড়া থাকতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে প্রিয়তমা।এতো রাগ কোথায় পাও?প্লিজ আর রেগে থেকো না।তোমার রুমে তুমি ফিরে আসো”

আরশির চোখ বেয়েও পানি গড়িয়ে পড়ল।সিদ্রাতকে খুবই শক্ত করে ও নিজেও জড়িয়ে ধরল।কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল….
—”আপনি নিজেই দায়ী এসবের জন্য।কেন আনলেন সিহরাতকে বাসায়?ওকে দেখলে আমার নীরার কথা মনে পড়ে।আমারও কষ্ট হচ্ছে..অনেক বেশিই কষ্ট হচ্ছে আপনাকে ছাড়া থাকতে”

আরশি কাঁদতে কাঁদতে একসময় থেমে গেলো।কিন্তু সিদ্রাতকে ছাড়ল না।সিদ্রাতও আরশিকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে রাখল।অনেক্ষণ পর সিদ্রাত আরশিকে ছাড়ল।আরশি মাথাটা নিচু করে ফেলল।সিদ্রাত আরশির থুতনী ধরে উঁচু করে বলল…
—”শশশ,,,আর না।অনেক কেঁদেছো।আর না….যাও ড্রেস চেইঞ্জ করে আসো।আমি এখানে বসলাম…”

আরশির তবুও নড়াচড়ার নাম নেই।ও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর নাক টানছে।সিদ্রাত কিছু একটা ভেবে বাঁকা হেসে আরশির কানের লতিতে ঠোঁট ছোঁয়ায়।আরশি শিউরে উঠে সিদ্রাতের দিকে তাকায়।সিদ্রাত ফিসফিস করে বলে…
—”তুমি যদি ড্রেস চেইঞ্জ করতে না চাও তাতে কিন্তু আমার আপত্তি নেই।ইনফেক্ট শুধু টাওয়ালেই তোমাজে অত্যাধিক সেক্সি লাগছে”

আরশির চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো।ও রেগে সিদ্রাতের দিকে তাকালো।সিদ্রাত চোখ টিপুনি দিলো।আরশি দাঁতে দাঁতে চেপে বলল…
—”অসভ্য!”

সিদ্রাত দাঁত কেলিয়ে হাসল।আরশি রেগে কাবার্ডের দিকে এগিয়ে গেলো।চকোলেট কালারের একটা কুর্তি বের করতেই সিদ্রাত বলল…
—”ওয়েট..”
আরশি ভ্রু কুচকে তাকালো।সিদ্রাত আবারও বলল….
—”আমি বাইরে যাচ্ছি।ইচ্ছে হলে আজ একটা শাড়ি পড়তে পারো”

সিদ্রাত কথাটা বলে মুচকি হাসল।আরশির বুকে গিয়ে যেনো লাগল হাসিটা।মানুষটার হাসি বরাবরের মতোই যে নজরকাড়া। সিদ্রাত বাইরে চলে গেলো।আরশি রুমটা লক করে লজ্জামিশ্রিত হাসি দিলো।তারপর কাবার্ডের কাছে এগিয়ে গিয়ে অনেক খুঁজে মেরুন কালার পাড়ওয়ালা ব্ল্যাক কালারের একটা জর্জেটের শাড়ি নিলো।মেরুন কালার ব্লাউজটাও খুবই গর্জিয়াস।আরশি সুন্দর করে শাড়িটা পড়ে নিলো।তারপর হালকা মেকাপ করে ঠোঁটে মেরুন কালার লিপ্সটিক আর চোখে আইলাইনার আর কাজল লাগালো..ব্যাস এটুকু।আরশি আয়নায় তাকিয়েই নিজেই মুচকি হাসল।ব্ল্যাক শাড়ির সাথে ফর্সা গলায় সোনার চেইনটা বরাবরের মতো খুবই সুন্দর লাগছে।আরশির এবার নিজেরই লজ্জা লাগছে সিদ্রাতের সামনে দাঁড়াতে।ও ধীর পায়ে দরজার কাছে গিয়ে আস্তে করে লকটা খুলে দরজাটা ওভাবেই রেখে বারান্দায় চলে গেলো।মৃদু ঠান্ডা বাতাসেও যেনো আরশির শরীরে কাঁপুনি ধরে যাচ্ছে।কে জানে এটা ঠান্ডার কাঁপুনি নাকি অন্যকিছু!

পিছন থেকে একজোরা হাত আরশিকে বাহু ডোরে অাবদ্ধ করে নিলো।মেয়েটা লাজুক হাসল।নিজের কাঁধে প্রিয় মানুষের নাকের অনবরত ঘষা লাগতেই পুরো শরীর একবার ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল।আরশি শাড়ি খামচে ধরে দাঁড়িয়ে রইল আর সিদ্রাত ব্যস্ত প্রিয়তমার ঘাড়ে ঠোঁট আর নাকের স্পর্শ আঁকতে।আরশির নিশ্বাস যেনো ভারী হয়ে যাচ্ছে।ও কাঁপা গলায় বলল…
—”একটু বেশিই হচ্ছে,,,”

সিদ্রাত নেশাধরা গলায় বলল…
—”উহু..আমার যে একটু না বরং অনেক বেশি করতে মন চাচ্ছে।ঘায়েল হয়ে গিয়েছি তোমাতে”

আরশির নিশ্বাস আরও ঘন হয়ে গিয়েছে।এবার কথাও বলতে পারছে না মেয়েটা।সিদ্রাত আরশিকে নিজের দিকে ফেরালো।আরশি চোখ বন্ধ করে আছে।সিদ্রাতের চোখ দুটো যেনো মুগ্ধতায় ছেঁয়ে গেলো প্রিয়তমার এহেন রূপ দেখে।সিদ্রাত আরশির কপালে সময় নিয়ে গভীরভাবে চুমু খেলো।আরশি সিদ্রাতের কোমরের সাইডের শার্ট দুহাত দিয়ে খামচে ধরল।দুজনের মাঝে একদমই ফাঁকা নেই।দুজন দুজনাতে লেপ্টে আছে।সিদ্রাতের নিশ্বাসও বেশ ঘন।সিদ্রাত আরশির মাথাটা নিজের বুকের মাঝে রেখে মেয়েটাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।আরশিও সিদ্রাতের বুকে মাথা রেখে নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখল সিদ্রাতকে।সিদ্রাত আস্তে করে বলল…
—”খাওয়া-দাওয়া করেছো?”

আরশিও লো ভয়েসে জবাব দিলো…
—”হুম.. কেন?”

সিদ্রাত মুচকি হেসে বলল…
—”আজকে রাতে তোমাকে ঘুমোতে দিবো না।নতুনত্বের শহরে ঘুরতে নিয়ে যাবে যেই শহরে তুমি এর আগে কখনো পা রাখোনি।আমিও রাখিনি।দুজন একসাথে সারা রাত সেই শহরে ঘুরব।আর সেজন্য প্রচুর শক্তি প্রয়োজন।নাহলে আমার সাথে তাল মিলিয়ে ঘুরতে পারবে না।মাঝ পথেই ক্লান্ত হয়ে যাবে”

আরশির পুরো শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল সিদ্রাতের কথা শুনে এবং এর মানে বুঝে।লজ্জায় কান দিয়ে যেনো ধোয়া বের হচ্ছে মেয়েটার।ও আমতা আমতা করে বলল…
—”মমানে,,,ককী বলছেন?আমি,,কোথাও,,ঘুরব না,,,”

সিদ্রাত বাঁকা হেসে বলল…
—”বারোটার সময় রুমে আসব।যাচ্ছি এখন….”

সিদ্রাত আরশির নিচের ঠোঁটে ছোট্ট করে কিস করে হেসে চলে গেলো।আরশি ছোট্ট সোফাটায় বসে পড়ল।ওর মাথা ঘুরাচ্ছে।
—”কি বলে গেলো এসব উনি?তাহলে কি আজ সত্যিই…!! “উফ নাহ..”

লজ্জায় আরশি একদম নুইয়ে গেলো।ওর শরীরের লোমগুলো পর্যন্ত দাঁড়িয়ে গিয়েছে।কি হবে একটু পর ভাবতেই শিরদাঁড়া বেয়ে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে…
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here