মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -০১+২

” আমি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমি এখনও পর্যন্ত জানতে পারিনি আমার সন্তানের বাবা কে? আর সেখানে আপনি এতোবড় একজন বিজনেসম্যান হয়ে আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন কেনো মিস্টার অভিদ রায়জাদা ? আপনি আমার সম্পর্কে এতোবড় একটা সত্যি জেনেও বিয়েতে এতো এক্সাইটেড, হাউ ইজ ইট পসিবল! যেখানে আমি এসব শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছি সেখানে আপনার কাছে কি নিজের ব্যবহার গুলো আশ্চর্যজনক লাগছে না?” এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে অভিদের দিকে দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে রুহি।
কিন্তু অভিদের মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখতে না পেয়ে মনের ভেতরে থাকা রাগটা আরো দ্বিগুণ হয়ে গেলো রুহির। অভিদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে কোল্ড ড্রিংক্স খেয়ে যাচ্ছে। অভিদকে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকতে দেখে রুহির মাথার রক্ত গরম হয়ে গেলো।
রুহি রেগে বলে উঠে
” আপনি কি শুনতে পারছেন না আমার কথা? আপনি কেনো আমাকে বিয়ে করতে চাইছে? আমি কিছুতেই এই বিয়ে করবো না মিস্টার অভিদ রায়জাদা।”
অভিদ এবার হাতে থাকা গ্লাসটা সামনের টি টেবিলে রেখে রুহির বরাবর দাঁড়িয়ে ঘন চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে লিভিং রুম পর্যবেক্ষণ করে নিলো। সব সার্ভেন্টরা রুহির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আর রুহির পেছনে রায়হান চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
অভিদ গম্ভীর গলায় সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠে
“তোমাদের কি দাঁড়িয়ে থেকে তামাশা দেখার জন্য কাজে রাখা হয়েছে? যাও! যার‍ যার কাজে যাও!” অভিদের ধমক শুনে প্রত্যেকে ভয়ে কাপঁতে কাপঁতে ছুটে চলে গেলো। আর রুহির কলিজা শুকিয়ে গেলো অভিদের ধমক শুনে।
অভিদ এবার রুহির দিকে তাকালো। শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত গলায় বলে উঠে
” কথা বলা শেষ তোমার? নাকি আরো কিছু বলবে?” অভিদের কথা শুনে রুহির গায়ে কাটা দিতে লাগে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রুহি কাঁপাকাঁপা গলায় বলে
” আমি আমার মতামত জানিয়েছি এবার আপনি এই বিয়ে যে করেই হোক বন্ধ করুন।”
অভিদ চোখের ইশারায় কিছু একটা বললো রুহি বুঝতে না পেরে পেছনে তাকায়। পেছনে তাকাতেই রায়হান একবার রুহির দিকে তাকিয়ে চুপচাপ সেখান থেকে প্রস্থান করে। রুহি এবার ঢোক গিলে অভিদের দিকে তাকায়। রুহি কিছু বুঝে উঠার আগেই অভিদ রুহির হাত চেপে ধরে টান দিয়ে সোফায় বসিয়ে দেয়।
রুহির দিকে ঝুকে দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” আমি কি তোমার মতামত জানতে চেয়েছি?” রুহি চোখ বড় বড় করে অভিদের দিকে তাকায়। ভয়ে মনে হচ্ছে হার্ট লাফিয়েই বেড়িয়ে যাবে। অভিদ এর রক্তিম চোখ জোড়া দেখে রুহির গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের করতে পারলো না।
অভিদ রুহিকে চুপ দেখে প্রচণ্ড রেগে গেলো জোড়ে ধমক দিয়ে বললো
” আন্সার মি ড্যাম!! আমি তোমার কোনো ডিসিশন জানতে চেয়েছি?” রুহি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। ভয়ে কিছু বলতেও পারছে না কাঁদো কাঁদো হয়ে শুধু মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। অভিদ উত্তর পেয়ে রাগি গলায় বলে
” তাহলে কেনো এসেছো এখানে তুমি? বিয়ের আগে বিনা অনুমতিতে তুমি বাড়ি থেকে বের হয়েছো কেনো? তাও আবার কাউকে না জানিয়ে আমার বাড়িতে আসার অনুমতি কে দিয়েছে তোমাকে ?” রুহি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো
” আ-আমি তো আপনার সাথে কথা বলার জন্য এসেছি। আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। প্লিজ আপনি নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে আমাকে বিয়ে করতে চাইবেন না। আমাকে এভাবে বিভ্রান্ত করলে আমি পুলিশের সাহায্য নিতে বাধ্য হবো।”
অভদি রুহির উপর থেকে সরে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। রুহির সামনের টি টেবিলে বসে পড়লো অভিদ। রুহি ঢোক গিলে গুটিশুটি মেরে বসলো।
অভিদ ফলের উপর থেকে ছুরিটা হাতে নিয়ে সেটা দেখতে দেখতে বলে
” কে বলেছে তোমাকে আমি ক্ষমতা দেখিয়ে তোমাকে বিয়ে করতে চাইছি? আগে বলো তুমি এই বিয়েতে রাজি না কেনো? ”
রুহি একবার ছুরির দিকে তাকালো আবার অভিদের দিকে তাকালো। রুহির ইচ্ছে করছে জোড়ে জোড়ে কাঁদতে। অভিদ এভাবে তাকে ভয় দেখাচ্ছে কেনো সেটা বুঝে উঠতে পারছে না রুহি। রুহি জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শক্ত করতে চাইলো। কিছুটা শক্ত হয়ে বসে শক্ত গলায় বললো
” আমি আমার বাবাকে খুব ভালো করে চিনি। আপনি ক্ষমতার জোড় না দেখালে বাবা আমার এই অবস্থায় বিয়েতে কিছুতেই রাজি হতো না। আমি প্রেগন্যান্ট সেটা ভালো করেই জানেন। কিন্তু আমি এখনও জানি না এই সন্তানের বাবা কে? আমি তাকে খুঁজে বের করতে চাই। তাকে খুঁজে বের করবো এমন কোনো ক্লু পাচ্ছি না সেখানে আপনি এসে আরেক ঝামেলা বাধিয়ে রেখেছেন। আমি বিয়ে করবো না মানে করবো না।”
অভিদ অট্টহাসিতে মেতে উঠে।
রুহি অভিদকে এভাবে হাসতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। হাসির মতো কি এমন বলেছে যে অভিদ এভাবে হাসছে? রুহি আবার তার কথাগুলো পুনঃরায় ভেবে দেখলো। হাসির মতো তো কিছুই বলেনি তাহলে লোকটা এভাবে হাসছে কেনো?
রুহির ভাবনার মাঝে অভিদ হাসতে হাসতে থামিয়ে বলে উঠে
” লাইক সিরিয়াসলি?? তুমি কি বলছো জানো তো নাকি?? তুমি এতো ভালো জোকস বলতে পারো আমি জানতামই না। আমার খুবই ভালো লাগছে আমার হবু বউ অনেক ভালো জোকস বলতে পারে এটা ভেবে। আচ্ছা একটা কথা বলো! যেখানে তোমার গত দেড় বছর আগের কথা মনেই নেই সেখানে তুমি কি করে তোমার সন্তানের বাবাকে খুঁজে পাবে? মানে আমাকে একটু বুঝিয়ে বলো আমিও একটু তাকে খুঁজে বের করতে হেল্প করবো তোমাকে।”
অভিদের কথা শুনে রুহি মাথা নিচু করে নিলেও আবার চমকে তাকিয়ে বলে
” দেড় বছর মানে? আপনাকে দেড় বছরের কথা কে বলেছে? মা বাবা বলেছে আমার গত চার থেকে পাচঁ মাসের কথা মনে নেই। আপনি মিথ্যা কথা বলছেন কেনো? ”
অভিদ তার অধর জোড়া ভিজিয়ে বলে
” দেড় বছর হোক আর চার-পাঁচ হোক সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। সেই সময়ের কথা না তোমার মনে আছে আর না তোমার মা বাবা কিছু বলছে তাহলে কি করে খুঁজে পাবে তুমি? আর চাইলেও এতো সহজে খুঁজে বের করতে পারবে না তুমি। যাই হোক কালকে আমাদের বিয়ে এখন চুপচাপ বাড়িতে যাও।”
রুহি রেগে দাঁড়িয়ে বললো
” বিয়ে মানে কি? আপনাকে আর কতোবার বলবো আমি বিয়ে করবো না আপনাকে? আচ্ছা আপনিই বলুন আপনি আমার এই সন্তানকে কোনোদিন নিজের সন্তান বলে মেনে নিতে পারবেন? শুধুশুধু কেনো নিজের আর আমার জীবনটা নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন? ”
অভিদ হাতের ছুরিটা নিয়ে এগিয়ে আসে। রুহি সেটা দেখে ভয়ে চিৎকার দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই অভিদ ছুরিটা দিয়ে রুহির গালে স্লাইড করতে করতে শীতল কন্ঠে বলে
” আমি আমার কাজ নিয়ে কৈফিয়ত কাউকে দেই না। আমি কি করছি, কেনো করছি সেটা তোমার জানার প্রয়োজন নেই। এমনও হতে পারে তুমি তোমার বাচ্চার বাবার খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারলে যে সেই বাচ্চাটা অববৈ…যযাই হোক। আমি কি বলতে চেয়েছি নিশ্চই বুঝতে পেরেছো। তাই চুপচাপ বাড়িরতে গিয়ে কালকের বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নাও। আমার হবু সন্তানের যাতে কোনো প্রবলেম না হয়। আর একটা কথা বললে
না তোমার জন্য ভালো হবে আর না তোমার পরিবারের জন্য। গেট আউট ফ্রম হেয়ার!!”
অভিদের ধমক শুনে রুহি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। চোখ খুলে দেখে অভিদ তার ঠোঁটের কোণে বাকা হাসি নিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। রুহি এই বাকা হাসি দেখে আর কিছু বলার সাহস যোগাতে পারলো না। কাঁপতে কাপঁতে অভিদের দিকে তাকিয়ে থাকে। অভিদ ছুরি দিয়ে দরজার দিকে ইশারা করে। রুহি ছলছল চোখ জোড়া নিয়ে সেদিকে এগিয়ে যেতে থাকে। অভিদ জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে আবারও রুহির পেছন গম্ভীর গলায় বলে উঠে
” যাওয়ার আগে আরেকটা কথা শুনে যাও। আমার আরো একটা পরিচয় রয়েছে যার বিষয়ে অনেকেই অবগত নয়। তুমি বিয়ের পর জানতে পারবে সেটা। তাই এখন সাবধান করছি। তুমি যদি বিয়েতে কোনো ঝামেলা করার চেষ্টা করো তাহলে…. তোমার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখার আগেই তোমার থেকে বিছিন্ন করতে আমার দুই সেকেন্ডও লাগবে না। So, be careful.”
রুহি পাথরের মতো জমে গেলো। অভিদ কি করে এই কথাগুলো বলতে পারলো সেটা রুহি ভাবতে পারলো না। লোকটা এতোটা নিষ্ঠুর!! এই লোকটার সাথে কিভাবে থাকবে সে? ভাবতে ভাবতেই রুহি চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। কিছুক্ষণ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থেকে কাঁদতে কাদঁতে ছুটে বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে। রুহির যাওয়ার পথ চেয়ে তাকিয়ে থাকে অভিদ।
কাধে কেউ হাত রাখতেই অভিদ একটা ঢোক গিলে পেছনে ফিরে তাকায়। পেছনে রায়হানকে দেখে চোখের কোণের অবাধ্য পানি গুলো গড়িয়ে পরে।
রায়হান শক্ত হাতে অভিদের দুই কাধ ধরে বলে
” পরিস্থিতির স্বীকার তোরা এইটুকু তো মেনে নিতেই হবে তোকে। এতো সহজে হার মানলে চলবে না অভিদ। এই পথের যাত্রা যখন শুরু হয়েছে তাহলে দেখ কতো দূড় যায়। তোর মাফিয়া আর বিজনেসম্যান হতে কম সময় লাগেনি। বছরের পর বছর যাওয়ার পর আজকে তোর এই রাজত্য। সেখানে তুই এখনই হার মানলে তোর এতো বছরের সব চেষ্টা বৃথা যাবে। অভিদ রায়জাদা হয়ে এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না শক্ত কর নিজেকে।” অভিদ জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে মাথা নেড়ে গম্ভীর গলায় বলে
” হুম। বিয়ের সব কাজ শেষ করে আমাদের সবচেয়ে বড় কাজটা শুরু করতে হবে। তুই স্টেপ বাই স্টেপ বাকি কাজ গুলো শেষ করেনে।” রায়হান মাথা নেড়ে ঠিকাছে বললো। অভিদ হনহন পায়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।

রুহি নিজের বাড়িতে ঢুকেই প্রথমে বাবাকে দরজার সামনে বাবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। রুহি মাথা নিচু করে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
আনিল আহমেদ গম্ভীর গলায় বলে
” কোথায় গিয়েছিলে তুমি আমাদের কাউকে কিছু না বলে?” রুহি উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। আনিল আহমেদ রুহিকে চুপ দেখে বলে
” কি হলো চুপ করে আছো কেনো ?? ভেতরে এসে বলো কোথায় গিয়েছিলে।”
আনিল আহমেদ রুহির রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াতেই রুহি ধীর পায়ে লিভিং রুমে গিয়ে বসে। চারদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো সবাই তার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। রুহি গুটি মেরে বসে রইলো।
রুহির মা সানিয়া বেগম চিন্তিত হয়ে বলে
” কোথায় গিয়েছিলি তুই? এই অবস্থায় তোকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেছিলাম আমি। আমার কথা শুনিসনি তারউপর গাড়িও না নিয়েই চলে গিয়েছিস। আমরা যে চিন্তা করছি সেই কথা খেয়াল আছে তোর ??” রুহি অভিদের সব কথা ওদের বলবে বলে ঠিক করলো। রুহি সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নেয়। বাড়ির লোক ছাড়া বাইরের কোনো মানুষই নেই এখানে তাই অভিদের ভয় দেখানো সব কথা একে একে বলে দেয় রুহি।
সব কথা বলার পর দেখলো পরিবেশটা একদম নিরব হয়ে আছে। রুহি তার বাবার দিকে আকুতি ভরা চাহনি দিয়ে বলে
” আব্বু দয়া করে আপনি এই বিয়েটা বন্ধ করুন!! আপনি কেনো রাজি হিয়েছিলেন? যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছেন সেই লোকটাই আজকে এতোবড় একটা হুমকি দিয়েছে। তার সাথে আমি কিভাবে কাটাবো সারাজীবন?”
আনিল আহমেদ এর বড় মেয়ের এরকম আকুতি দেখে খুবই মায়া লাগলো কিন্তু সেটা একদমই প্রকাশ করলো না। বিয়েটা না হলে যে তার মেয়ের জীবন এমনি ধ্বংস হয়ে যাবে। বাবা হয়ে কি করে সেটা হতে দেবে!!
আনিল আহমেদ নিজেকে শক্ত রেখে বললো
” তোমাকে যা বলা হয়েছে তাই করতে হবে। এর বাইরে কিছু করবে না এটা আমার আদেশ। একটা কথা মনে রেখো আমরা যা করছি সব তোমার ভালোর জন্যই করছি এবং করবো। তাই এসব নিয়ে ভাববে না। আর তাও যদি তোমার কোনো কথা থাকে তাহলে বলবো তোমার সন্তান এর কথা চিন্তা করে আমাদের মান-সম্মানের কথা ভেবে বিয়েটা করো।”
আনিল আহমেদ তার কথা শেষ করে দ্রুত পায়ে সেখান থেকে প্রস্থান করেন। রুহি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। তার বাবার কথাগুলো ও তার মনে এক বাধা সৃষ্টি করেছে।
রুহি কাঁদতে কাঁদতে এবার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে
” আম্মু তুমি এখনও কিছু বলবে না আমাকে? বলো না আম্মু আমার চার-পাঁচ মাসের কথা মনে নেই কেনো? আমার এই সন্তানের পরিচয় কি? কিছু তো বলো!! এভাবে চুপ থাকলে আমি আমার ভেতর এতো দ্বিধা নিয়ে কি করে থাকবো?”
সানিয়া বেগম শান্ত চাহনি দিয়ে রুহির দিকে তাকিয় বলে
” এতোগুলো প্রশ্নের একটাই উত্তর। তোমার সন্তানের পরিচয় হলো তোমার আর অভিদের সন্তান আর কোনো প্রশ্নের উত্তর নেই আমার কাছে।”
সানিয়া বেগমও তার স্থান ত্যাগ করে। রুহি এবার কাঁদতে কাঁদতে দুই হাত দিয়ে নিজের মাথা চেপে ধরে। মিশু, নিলা ভয় পেয়ে এগিয়ে আসার আগেই রুহি নিজের রুমে ছুটে চলে গেলো। রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে। মিশু আর নিলা এসে দরজায় বারি দিতে থাকে।
মিশু চেঁচিয়ে বলে
” রুহি দরজা খোল প্লিজ!! এভাবে কাঁদলে তুই অসুস্থ হয়ে পরবি তো!! তোর বাচ্চার কথা তো একবার চিন্তা করতে হবে তো !!” মিশু নিলা এভাবে প্রায় ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে পরে। আধ ঘন্টা পর রুহি দরজা খুলেই নিলাকে জড়িয়ে ধরে ঢুকরে কাঁদতে কাঁদতে বলে
” আপু দেখেছো কেউ আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না। তুমি আমাকে বলবে কি হয়েছিলো প্লিজ? আপু !!” নিলা ঢোক গিলে মিশুর দিকে তাকালো। মিশু প্রচুর আশংকা নিয়ে তাকিয়ে আছে। ডানে, বায়ে মাথা নেড়ে কিছু বলতে নিষেধ করে। নিলা রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” সব বলবো আগে তুই শান্ত হয়েনে তারপর বাকি সব।”
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ০২
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

মিশু প্রচুর আশংকা নিয়ে তাকিয়ে আছে। ডানে, বায়ে মাথা নেড়ে কিছু বলতে নিষেধ করে। নিলা রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” সব বলবো আগে তুই শান্ত হয়েনে তারপর বাকি সব।” মিশু আর নিলা রুহিকে রুমে এনে বসিয়ে দিলো। নিলা রুহির চোখ মুছিয়ে দেয়। রুহি এখনও হিচকি তুলছে। নিলা চোখ মুছতেই আবার চোখে পানি ভরিয়ে তোলে। কাঁদোকাঁদো গলায় বললো
” বলো আপি!! তোমরা তো সব জানো তাই না?” নিলা মুচকি হাসি দিলো। রুহির হাত জোড়া নিজের কোলে রেখে বলে
” আচ্ছা রুহি তুই অভিদ রায়জাদার বাড়ির ঠিকানা কোথায় পেয়েছিস? মানে তুই তো অভিদ ভাইয়ার পূর্ব পরিচিত না আবার তোর কাছে ফোনও নেই যে তুই নেট থেকে বের করবি। কোথায় পেয়েছিস তুই?” রুহি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে নিলার দিকে। মিশু রুহির মুখের সামনে চুটকি বাজিয়ে বলে
” কিরে তুই এভাবে তব্দা মেরে বসে আছিস কেনো? আপু কি জিজ্ঞেস করেছে শুনেছিস?” রুহি অবাক স্বরে বলে
” আমি জানি না। ভুলে গিয়েছি আমি কিভাবে গিয়েছিলাম? আমি তো সত্যি চিনতাম না ওই এলাকা। আমি অজান্তেই এক টেক্সি নিয়ে সেখানে চলে গিয়েছি। জানো আপু বাড়িটা দেখে আমার কেমন জেনো লাগছিলো।” নিলা একবার মিশুর দিকে তাকিয়ে আবার রুহির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেসু স্বরে বলে
” আর অভিদ ভাইয়াকে দেখে? ওনাকে দেখে তোর কি পরিচিত লেগেছে ??” রুহি বিরক্তকর স্বরে বলে
” আর পরিচিত !! বাড়িতে এতোগুলো বডিগার্ড সার্ভেন্ট দেখেই আমার মাথা ঘুরছিলো। আর ওই অভিদ রায়জাদাকে দেখে তো আমার রাগে মাথা টগবগ করছিলো।” রুহি তার কথা শেষ করে ফুঁসতে লাগলো। নিলা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলে
” ঠিকাছে এবার একটু রেস্ট কর। কালকে তোর বিয়ে তাই কম ধকল যাবে না তোর উপর, আজকে ভালো করে রেস্ট নে।” রুহি তাড়াহুড়ো করে বলে
” কিন্তু তুমি তো বলেছিলে আমাকে সব বলবে!!”
নিলা রুহির কথা শুনেও না শোনার ভান করে রুহির মেডিসিন বের করে সেগুলোতে একটা স্লিপিং পিলও এড করে রুহির হাতে দিয়ে কড়া গলায় বলে
” এখনই এগুলো খাবি।” রুহি নিলার কথা শুনবে বলে তাড়াতাড়ি সব মেডিসিন খেয়ে নিলো। পানির গ্লাস রেখে কিছু বলতে নিলে নিলা রুহিকে টেনে বিছানায় শুয়ে মাথায় বুলিয়ে দিতে থাকে। রুহি বারবার একই কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ে। নিলা আর মিশু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রুহি ঘুমিয়ে যাওয়ায়। মিশু নিলাকে বলে
” আপু তুমি তোমার রুমে চলে যাও আমি রুহির কাছে থাকবো।” নিলা সম্মতি জানিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। মিশু ল্যাপটপ এনে রুহির পাশে বসে থাকে।
নিলা নিচে এসে দেখলো তার বাবা মাত্রই অভিদের সাথে কথা বলে ফোন রাখে। নিলা আনোয়ার এহসান এর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে
” বাবা কালকে কি সত্যি ওদের বিয়ে হবে?” আনোয়ার এহসান ভ্রু কুঁচকে বলে
” তোমার কি মনে হয়? এতো সব কিছু এমনি ঘটছে? কালকে অভিদের হাতে আমরা আমাদের মেয়েকে তুলে দেবো।” নিলা আর কোনো কথা বারালো না। আনোয়ার এসহান আর আনিল আহমেদ দুজন কালকের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে থাকে। সানিয়া বেগম আর নয়না বেগম রান্নাঘরে চলে যায়।
আনিল আহমেদ এখানকার ভার্সিটির সম্মানিত একজন প্রিন্সিপ্যাল স্যার।প্রায় দশ বছর ধরে এই ভার্সিটিতে রয়েছেন তিনি। আনোয়ার এহসানের কয়েকটা নিজস্ব ফ্যাক্টরি রয়েছে। রুহি আর রাইমা আনিল আহমেদ আর সানিয়া বেগমের দুই মেয়ে। রাইমা কলেজের স্টুডেন্ট। নিলা, নিলয়, মিশু আনোয়ার এহসান আর নয়না বেগমের তিন ছেলে মেয়ে। নিলা অনার্স কম্পলিট করে এখন একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করছে আর নিলয় একজন ডক্টর । নিলয় কয়েকদিন আগে ক্যাম্পিং এ গিয়েছে। মিশু এখনও তার স্বপ্নের ফ্যাশন ডিজাইনার নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।

অন্ধকার সিক্রেট রুমে অভিদের ল্যাপটপের আলোটা বেশ ছড়িয়ে রয়েছে। অভিদ সামনের চেয়ারে বসে রাশভারী চাহনি দিয়ে ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে রয়েছে একমনে। ল্যাপটপের স্ক্রিনে কারো অসহায়ের মুখশ্রী দেখে অভিদের মনে জ্বালা থাকা প্রতিশোধের আগুন হিম শীতল হয়ে আসছে। সিক্রেট রুমের দরজা খুলে রায়হান সেখানে প্রবেশ করে। অভিদের ঠোঁটের কোণে বাকা হাসি লেগে রয়েছে যেটা দেখে রায়হানও বাকা হাসি দিয়ে এগিয়ে আসে। রায়হানের উপস্থিতি টের পেয়ে অভিদ গম্ভীর গলায় বললো
” ফুপির কোনো খোঁজ পেয়েছিস ??” রায়হানের মুখ মলিন হয়ে গেলো। নিচু গলায় বলে
” নাহ এখনও কোনো খোঁজ পাইনি।” অভিদ দাঁতেদাঁত চেপে বসে থাকে। এতোবছর ধরে একটা মানুষকে খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই মানুষের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পেলো না। অভিদ আঙুল দিয়ে জোড়ে জোড়ে নিজের কপাল ঘষতে থাকে। কিছুক্ষণ পর নিজেকে শান্ত করে হাসিমুখে বলে
” মিস্টার সিনিয়ার রায়জাদা কবে আসছে?” অভিদের কথা শুনে রায়হানের চোখে মুখে চরম বিরক্তি আর রাগ প্রকাশ পেলো। রাগে কিড়মিড় করতে করতে বলে
” ওই লোকটাকে কিভাবে সহ্য করিস তুই ?? ওই জানোয়ারকে দেখলেই আমার মাথা গরম হয়ে যায়। ইচ্ছে করে ওকে মেরে ফেলি আমি। ওকে মেরে আমি নিজে মরে গেলেও কোনো কষ্ট থাকবে না আমার।”
অভিদ চোয়াল শক্ত করে চোখ রাঙিয়ে রায়হানের দিকে তাকায়। রায়হান মুখ বাকিয়ে আস্তে করে বলে
” ঠিকাছে আর বলবো না। খবর পেয়েছি তোর সিগারেট থুক্কু সিনিয়ার মশাই আগামী মাসে বিডিতে আসার প্লেন করছে।” অভিদ এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভাবতে থাকে। রায়হান গভীর চাহনি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেও কিছু ধরতে পারলো না। অভিদ কিছুক্ষণ পর গম্ভীর গলায় বলে
” কালকে সকালে অফিসে যাবো তৈরি থাকিস।” বলেই অভিদ তার লাইব্রেরি সমান এক স্তুপ থেকে কয়েকটা ফাইল বের করতে থাকে। রায়হান বিস্ময় নিয়ে বলে
” কি! কালকে তোর বিয়ে আর তুই কালকে অফিসে যাবি ?? অবিশ্বাস্য !!” অভিদ বিরক্তকর চাহনি দিয়ে রায়হানের দিকে তাকালো। রাশভারী কন্ঠে বলে
” আমি কাজ ফেলে রাখতে চাই না। কালকে অফিসে যেতেই হবে নাহলে আবার এক বিপদ আসবে।” রায়হান মাথা চুলকে বলে
” তাই বলে বিয়ের দিন?? এটা কি ঠিক ??” অভিদ তার দরকারি ফাইল নিয়ে বেড়িয়ে যেতে যেতে বলে
” সবই ঠিক। কালকে বিয়ের ব্যস্ততায় এক ঘণ্টার জন্য অফিসে গেলে আই থিংক কেউ টের পাবে না। এইটা আমাদের জন্য সঠিক সময়। এবার তুই রুম থেকে বেড়িয়ে আয়।” রায়হান মাথা নেড়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। অভিদ সিক্রেট রুম লক করে পাশ থেকে বইয়ের কেবিনেট টেনে সেই দরজার সামনে এনে কেবিনেটের একটা সুইচে টিপ দিতেই কেবিনেটের নিচের দুই চাকা গুলো আর দেখা গেলো না মানে লুকিয়ে গেলো যার কারণে পুরোটা রুমকে সমান মনে হচ্ছে। রুম দেখে এখানে কোনো সিক্রেট রুম আছে বলে কেউ ধরতে পারবে না। অভিদ স্টাডি রুম থেকেও বেড়িয়ে লক করে নিজের রুমে চলে গেলো।

————

সকালে ঘুম থেকে উঠার পর আজকে সারাদিন রুহি কারোর সাথে কথা বলেনি। রুহির মনে প্রচণ্ড অভিমান জড়ো হয়েছে কালকে কেউ কিছু না বলায়। রুহিকে সকাল থেকে কেউ কিছু খাওয়াতে পারেনি। রুহি তার রুমের দরজা বন্ধ করে তব্দা মেরে বসে রয়েছে। এদিকে বিয়ের সময়ও ঘনিয়ে আসছে অথচ রুহি এখনও তৈরি হয়নি। বাড়ির প্রত্যেকে রুহির রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই যতো কথাই বলুক না কেনো রুহির একটাই কথা সে এই বিয়ে করবে না। প্রায় অনেক্ষণ পর দরজার বাইরে আর কারো ডাক শুনতে না পেয়ে রুহি বিছানায় মাথা এলিয়ে দেয়।
” রুহি!! বোন দরজা খোল দেখ আমি এসেছি।” বাইরে থেকে নিলয়ের গলার শব্দ পেয়ে রুহি আবার লাফিয়ে উঠে বসে। দৌড়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে
” ভাইয়া তুমি কখন এসেছো ??” নিলয় দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রুহির কথা শুনে হাসলো। হেসে বলে
” তুই দরজা লাগিয়ে বসে থাকলে জানবি কিভাবে আমি কখন এসেছি? এবার দয়া করে দরজা খুলুন ম্যাম আমার পা ভেঙে যাবে আরো দাঁড়িয়ে থাকলে।” রুহি দরজা খুলতে নিলেও আবার আটকে যায়। রাগি গলায় বলে
” তুমি একা তো? এখানে তোমার সাথে আর কেউ থাকলে কিন্তু আমি দরজা খুলবো না।” নিলয় অভয় দিয়ে বলে
” নারে আর কেউ নেই আমি একা রয়েছি। এবার খুলবি নাকি চলে যাবো।” রুহি চটজলদি দরজা খুলে দেয়। নিলয় রুহিকে দেখে মুচকি হেসে এক হাতে রুহিকে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে রুহির মাথায় হাত রেখে বলে
” কেমন আছিস পিচ্ছি??” রুহি জড়ানো গলায় বলে
” আমি ভালো নেই ভাইয়া। তুমি দেখছো তো সবাই আমাকে জোড় করে বিয়ে দিতে চাইছে। আমি ওই লোকটাকে বিয়ে করতে চাই না। ভাইয়া প্লিজ তুমি কিছু করো না !!” নিলয় হালকা হাসি দিয়ে রুহিকে নিয়ে বেডে বসিয়ে দেয়। অন্যহাতে থাকা খাবারের প্লেট সাইড টেবিলের উপর রেখে রুহির পাশে বসে পড়নে জ্যাকেট থেকে মোবাইল বের করে কিছু একটা করে রুহির হাতে ধরিয়ে দেয়। নিলয় ইশারা করতেই রুহি ফোনটা কানে ধরে। অপরপাশ থেকে সাথে সাথে কারো গলার আওয়াজ শুনে রুহির চোখ মুখে ভয়ের আকার ধারণ করে।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..
চলবে~ইনশাল্লাহ……..

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ সূচনা
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here