মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -৩+৪

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ০৩
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

নিলয় ইশারা করতেই রুহি ফোনটা কানে ধরে। অপরপাশ থেকে সাথে সাথে কারো গলার আওয়াজ শুনে রুহির চোখ মুখে ভয়ের আকার ধারণ করে। রুহি কাঁপাকাঁপা গলায় বলে
” আপনি?”
অভিদ গম্ভীর গলায় বললো
” তো আর কাউকে আশা করেছিলে নাকি তুমি? কালকের ঘটনার পরও তুমি কোন সাহসে বিয়ে করবে না বলছো? একটা কথা ভালো করে মনে রেখো অভিদ রায়জাদা কখনো তার কথার খেলাপ করে না। আমি যা বলেছি তাই করি। তুমি খাবার খেয়ে চুপচাপ বিয়ের জন্য তৈরি হবে নাকি আমাকে এসে কিছু করতে হবে?”
রুহির কপাল বেয়ে ঘাম পড়তে থাকে ভয়ে। রুহি আটকে থাকা গলায় বলে
” ক..করবো বি..য়ে আমি। আপনি এমন কিছু করবেন না দয়া করে।” অভিদ এবার রুহির কথা শুনে খান্ত হয়। স্বাভাবিক গলায় বলে
” গুড চুপচাপ বিয়েতে বসো একটু এদিক সেদিক হলে কি হবে সেটা আর নাই বললাম। সেটা নাহয় রিয়েল লাইফে লাইভ দেখিয়ে দেবো।” অভিদের কথা শেষ হতেই ফোনে টু টু শব্দ হতে থাকে। অভিদ কল কেটে দিয়েছে বুঝতে পেরে রুহি কান থেকে মোবাইল সরিয়ে নিলয়ের দিকে বাড়িয়ে দেয়। নিলয় মোবাইল নিয়ে চিন্তিত স্বরে বললো
” কি বলেছে?” নিলয়ের প্রশ্ন শেষ হতেই রুহি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। নিলয় রুহির পাশে বসে আলতোভাবে রুহিকে জড়িয়ে ধরে বললো
” কাঁদছিস কেনো পাগলি? অভিদ কিছু করবে না তোদের। দেখবি তোদের বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।” রুহি কাদঁতে কাঁদতে বলে
” আমার সাথেই এমন কেনো হলো ভাইয়া? এসব তো কিছুই হওয়ার কথা ছিলো না। আমার জানা মতে আমি তো কারো সাথে কোনো অন্যায় করিনি তাহলে এমন কেনো হলো?” নিলয় রুহির চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললো
” হুশশ, কিছু হয়নি সব ঠিকাছে। তুই ছোটোবেলা স্বপ্ন দেখতি না? একটা ছোট রাজপুত্র এসে তোকে তার রাজ্যের রানী করে নিয়ে যাবে। ধরে নে আজকেই সেই সময়। সব কিছু ভুলে যা। আমই বলছি বিয়ের পর তোর মনে যতো প্রশ্ন আছে সব প্রশ্নের উত্তর পাবি তুই।” রুহি চোখ মুছে কান্না বন্ধ করে চুপ করে বসে রইলো। নিলয় অনেক কষ্টে রুহিকে খাবার খাইয়ে দেয়। পরে নিলা, মিশু, রাইমাকে পাঠায় রুহিকে তৈরি করার জন্য। রুহি মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বের হলো না চুপচাপ সব সহ্য করতে থাকে।
রুহি আর অভিদের বিয়ের পর্ব শেষ হয়। কিন্তু বিয়ের কিছু কিছু কাজে রুহি অনেক বেশি অবাক হয়েছে। যেমন রুহিদের বিয়েতে পরিবারের বাইরে একটা লোকও উপস্থিত ছিলো না। নিলাকে জিজ্ঞেস করে রুহি জানতে পারে পরিবারের বাইরে কাউকে ইনভাইট করা হয়নি। আবার রুহির জানামতে অভিদের মতো এতো বড় একজন বিজনেসম্যান এতো নরমাল ভাবে বিয়ে করেছে ভাবতেই কিছুটা অবাক লাগলো রুহির। বিয়েতে অভিদের বডিগার্ডরা আর রায়হান ছাড়া না কোনো মিডিয়া বা কোনো কিছুর চিহ্ন ছিলো আর না কোনো পরিবারের কাউকে দেখেছে। বিয়েরনীতি অনুযায়ী কবুল বললেও কোনো কাগজে সাইন করতে হয়নি। বলতে গেলে বিয়ের প্রত্যেকটা স্টেপে রুহি অবাক হয়েছে তবে কাউকে প্রশ্ন করতে গিয়েও রুহি করতে পারেনি কারণ অভিদ রুহিকে একদম তার পাশে বসিয়ে রেখেছে না নড়তে দিচ্ছে আর না কিছু বলার সুযোগ দিচ্ছে। রুহি দাঁতেদাঁত চেপে চুপচাপ বসে আছে। বাড়ির সবার হাসি মুখ দেখে রুহির প্রচণ্ড পরিমাণ রাগ লাগছে। তাকে মূর্তির মতো বসিয়ে রেখে সবাই উৎসব লাগিয়ে রেখেছে। অভিদ রুহির এক হাতের উপর হাত রাখতেই রুহির গায়ে কারেন্ট এর মতো শক খেলো। রুহি চোখ বড়বড় করে সামনে তাকিয়ে থাকে। চোখ বড়বড় করে মাথা ঘুড়িয়ে অভিদের দিকে তাকাতেই অভিদ ঠোঁট বাঁকানো হাসি দিয়ে বলে
” কালকে তো একা একা সাহস দেখিয়ে আমার বাড়িতে চলে গিয়েছিলে আবার আমার কোনোদিন বিয়ে করবে না এটাও বলেছিলে। তো আজকে বিয়েটা আটকাতে পারলে না? ”
রুহি দাঁতেদাঁত চেপে অভিদের হাতের নিচ থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে
” আপনার মতো নিচু মানুষ আমি কখনো দেখিনি। আমার সন্তানকে নিয়ে এতোবড় থ্রেট দিয়ে বিয়ে করেছেন আবার আমার পোড়া গায়ে লবণের ছিটে দিচ্ছেন! আমি কখনো ভাবিনি আপনি এতো নিচু মানসিকতার হতে পারেন।”
অভিদ ঠাট্টার স্বরে হাসলো কিছুক্ষণ। রুহি শক্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অভিদ হাসতে হাসতে বলে
” আজকের পর আরো কতো কি দেখতে হবে!! সেগুলো তো তোমার ভাবনার ধরা ছোয়ার ও বাইরে। সেগুলো শোনার পর তোমার রিয়েকশন কেমন হবে সেগুলোই ভাবছি।”
রুহি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে অভিদের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। এভাবে তাকিয়ে থাকলে তো আর কিছু জানতে পারবে না তাহলে শুধু শুধু তাকিয়ে থাকার কি দরকার লোকটার দিকে? ভেবে রুহি মুখ ভেংচি দিলো।
বিদায়ের সময় বাড়ির সবার চোখে পানি জ্বলজ্বল করছিলো। রুহি নিজেও কাঁদছিল কিন্তু অভিমান করে নিলয়, মিশু, নিলা আর রাইমা ছাড়া আর কারোর সাথে কথা পর্যন্ত বলেনি। চোখে পানি নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে রুহি। অভিদও কিছুক্ষণ পর এসে গাড়িতে উঠে বসে।

অভিদের রুমের গোল বেডের মাঝে অবাক হয়ে বসে আছে রুহি। চোখ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে পুরো রুম দেখতে থাকে। রুমে কোনো সাজসজ্জা নেই বাসর ঘরে নাকি অন্য কোনো রুমে বসে আছে সেটা এখনও বুঝে উঠতে পারলো না রুহি। বেডের সামনে অভিদের একটা বড় ফটো ফ্রেম টাঙানো রয়েছে দেয়ালেও আরও কয়েকটা ফটো ফ্রেম রয়েছে। রুমটা প্রচণ্ড পরিমাণ বড়। বড় হবারই কথা এতোবড় প্যালেসের মতো একটা বাড়িতে নিশ্চই ছোট ছোট রুম থাকবে না। রুহি এসব ভাবনা বাদ দিয়ে অভিদ এখনও না আসায় উঠে বারান্দায় চলে যায়। বারান্দায় আসতেই রুহির মুড চেঞ্জ হয়ে গেলো। এক গাল মিষ্টি হাসি দিয়ে আনন্দিত চোখে মুখে পুরো বারান্দা দেখতে লাগলো। ব্যালকনিটা পুরোই অন্যরকম ভাবে সাজানো। লতাপাতা, ফুলের সাজানো দোলানা দেখে রুহি দৌড়ে গিয়ে সেখানে বসে পরে। দোলনায় বসেই রুহি খুশিমনে বিরবির করে বলে
” লোকটা খারাপ হলেও লোকটার পছন্দ খারাপ না। কি সুন্দর করে সাজানো ব্যালকনিটা। আমার ইচ্ছে করছে এখানেই সারারাত থেকে যাই।”
” মন ভালো হলেই চলবে এই শীতের রাতে এখানে থাকা তোমার চলবে না।” অভিদের কথা শুনে রুহি চমকে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ ব্যালকনির দরজার সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। রুহি অভিদকে দেখে সাথে সাথে উঠে দাঁড়াল। অভিদ হালকা হেসে বলে
” এসব তোমারই সাজানো। তোমার ছাড়া আর কারো অধিকার নেই এখানে বসার।”
রুহি অবাক হয়ে বলে
” আমার সাজানো মানে? আমি কিভাবে, কবে সাজিয়েছি এসব?”
অভিদ রুহির প্রশ্ন শুনে আমতা আমতা করে বলে
” ম..মানে তোমার জন্য সাজানো হয়েছে সেটা বলতে চাইছি।”
রুহি শান্ত চাহনি দিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার দোলনায় গিয়ে বসে পরে। আড়চোখে অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” আমি ইচ্ছে হয়েছে তাই আমি সারারাত এখানে বসে থাকবো। আপনার কথা কেনো শুনবো আমি?” অভিদের কাছ থেকে রুহি তার প্রশ্নের কোনো উত্তর পেলো না। অভিদ উত্তর না দিয়ে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসতে থাকে রুহির দিকে। রুহি এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে অভিদের দিকে তাকালো। অভিদকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ার্ত গলায় বললো
” আ..আপনি এগ..গিয়ে আসছেন কেনো ??” অভিদ বাকা হেসে বলে
” আজকে আমাদের বাসর ভুলে গিয়েছো জান? তুমি সারারাত এখানে বসে থাকলে তো আজকে আমাদের বাসরটা নাহয় ব্যালকনিতেই হবে। তুমি জানো আমার সবকিছুই ইউনিক তো বাসরটাও যদি ইউনিক জায়গায় হয়ে যায়। তাহলে তো আর কথাই নেই।”
রুহির বুকে ঢিপঢিপ করছে অভিদের কথা শুনে। রুহির হাত-পা কাপঁতে থাকে। অভিদ রুহির গা ঘেঁষে বসে পরে। রুহির গায়ে কাটা দিতে থাকে। অভিদ রুহির কোমড়ে হাত রাখতেই রুহি চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। অভিদের হাত হালকা ঠাণ্ডা হয়ে রয়েছে রুহি শাড়ি খামঁছে ধরে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে অভিদের হাতের ছোঁয়া পেয়ে। অভিদ অন্য হাতে রুহির কপাল থেকে গালে স্লাইড করতে থাকে। রুহির মনে হচ্ছে নিশ্বাসবন্ধ হয়ে যাবে এখনই। এ কেমন ছোঁয়া! রুহিকে পুরো কাঁপিয়ে তুলছে। রুহি গলা দিয়ে কথা বের করতে পারছে না। অভিদ ফিসফিস গলায় বললো
” আজকের এই দিনের জন্য প্রস্তুত তো তুমি?” হঠাৎ রুহির তার সন্তানের কথা মাথায় আসতেই রুহি তার অবশ হাতে অভিদের বুকে ধাক্কা মেরে সরে আসতে নেওয়ার আগেই রুহির মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। রুহি জ্ঞান হাড়িয়ে নিচে পড়ে যায়।
এদিকে অভিদ পুরো কাহিনীতে হতবাক হয়ে গেলো। অভিদ রুহিকে একটু ভয় দেখাতে চেয়েছিলো কিন্তু পুরো ঘটনা উল্টো ঘটে গেলো।
অভিদ ভয় পেয়ে নিচে বসে রুহির মাথাটা নিজের বাহুতে নিয়ে রুহির গালে আলতোভাবে গাল চাপরে ডাকতে থাকে।
” রুহি! এই রুহি! রুহি চোখ খোলো। হঠাৎ কি হলো তোমার?” রুহি চোখ খুলছে না দেখে অভিদের ভয়টা আরো দৃঢ় হতে থাকে। অভিদ রুহিকে কোলে তুলে দ্রুত পায়ে রুহিকে বেডে শুয়ে দেয়। সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে রুহির চোখে মুখে ছিটিয়ে দেয়। অভিদ এক হাতে রুহির হাত চেপে ধরে অন্য হাত রুহির গালে রেখে ডাকতে থাকে।
” রুহি চোখ খোলো দেখো তোমার অভিদ তোমার পাশে বসে আছে।রুহি! কি হলো তোমার? রুহি!!” অভিদ অসহায় চাহনি দিয়ে বসে রইলো কি করবে বুঝতে পারছে না। অভিদ রুহির চোখে মুখে আবারও পানি দিতে থাকে। রুহির চোখের পাপড়ি কিছুটা নড়তে দেখে অভিদ দুই হাতে মুখ ঢেকে বড় একটা শ্বাস নিলো।
পিট পিট করে চোখ খুলে রুহির প্রথমেই অভিদের দিকে চোখ পড়ে। অভিদকে দেখে লাফিয়ে উঠে বসে রুহি। অভিদ রুহির গালে হাত রেখে বলে
” তুমি ঠিকাছো তো? কি হয়েছিলো তোমার?” রুহি অভিদের হাত ছাড়িয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে
” ছোঁবেন না আপনি আমাকে। আমি প্রেগন্যান্ট জস্না সত্ত্বেও আপনি আমার সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক করতে চাইছেন? আপনি মানুষ নাকি অন্য কিছু?”
অভিদের মাথা গরম হয়ে গেলো। রেগে ধমক দিয়ে বলে
” চুপ ! আমাকে কি তোমার এতোটা নিচু মনে হয় যে নিজের সন্তানকে নিয়ে ভাববো না আমি? আমি জাস্ট একটু ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি তো! ” অভিদের ধমক শুনে ভয় পেলেও অভিদের পুরো কথা শুনে রুহি মাথা নিচু করে নিলো। অভিদ বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে বলে
” যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।” রুহি চুপচাপ উঠে চলে গেলো ওয়াসরুমে। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে আসতেই অভিদ রুহিকে জোড় করে একপ্রকার বেধেই নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিলো। রুহি ঘুমিয়ে পড়ার পর অভিদ রুহির কপালে চুমু বসিয়ে রুহির হাত জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে। কতোদিন পর আবার এই প্রিয় মানুষটাকে কাছে পেলো ভেবেই অভিদের মন ভালো হয়ে গেলো।

সকাল হতেই রায়জাদা বাড়িতে মিডিয়া, প্রেসের হামলা পড়েছে। রুহি ঘুমিয়ে থাকায় এতোক্ষণ পর্যন্ত কোনো কিছুই টের পেলো না কিমতু ঘুম ভাঙতেই চিৎকার চেঁচামেচির শব্দে সিরির কাছে এসে দাঁড়ায়।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ০৪
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

সকাল হতেই রায়জাদা বাড়িতে মিডিয়া, প্রেসের হামলা পড়েছে। রুহি ঘুমিয়ে থাকায় এতোক্ষণ পর্যন্ত কোনো কিছুই টের পেলো না কিন্তু ঘুম ভাঙতেই চিৎকার চেঁচামেচির শব্দে সিরির কাছে এসে দাঁড়ায়। বাড়ির সদর দরজা একদম হা করে খুলে রয়েছে। রুহি সিরিতে দাঁড়িয়েই সব দেখতে পারছে। বাইরে প্রচুর পরিমাণ প্রেস মিডিয়ার লোক রয়েছে। প্রত্যেকের চিৎকারে এখন বাড়িটাকে রুহি পুরোই চিড়িয়াখানা মনে হচ্ছে। সবাই একই সঙ্গে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে অনেক প্রশ্ন করে যাচ্ছে কিন্তু চেঁচিয়ে বলার কারণে রুহি কারো প্রশ্ন স্পষ্টভাবে বুঝতে সক্ষম হলো না। অভিদ আর রায়হানকেও এখানে দেখতে পেলো না রুহি। অভিদের সব বডিগার্ডরা মিডিয়াদের আটকে রেখেছে কোনো রকমে কিন্তু সবগুলো মিডিয়ার লোক ঠেলে ঠেলে ভেতরে ঢুকতে চাইছে। রুহি ওদের কাজ দেখে দাঁতেদাঁত চেপে ধরে বিড়বিড় করে বলে
” কি রকম বেহায়া হলে এমন করে বুঝতে পারছি না আমি। সবাইকে বের করে দিচ্ছে তাও মিডিয়া গুলো বেহায়ার মতো ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। আত্মসম্মান বলতে কিছু নেই ওদের। Shameless people. ”
অভিদ আর রায়হান রুমে কথা বলার জন্য যাচ্ছিলো কিন্তু রুহির দেখে দুজন রুহির পেছনেই দাঁড়িয়ে থাকে। রুহির বিড়বিড় করে বলা কথা শুনে রায়হান মুখে হাত রেখে হাসতে থাকে। অভিদও মুখ টিপে হাসে। অভিদ হাসি থামিয়ে ধীর গলায় রুহিকে ডাক দিলো পেছন থেকে। রুহি সাথে সাথে পেছনে ঘুরে তাকালো। অভিদ আর রায়হানকে দেখে অবাক হয়ে বললো
” আপনারা এখানে?” অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” কেনো আর কোথায় থাকার কথা আমাদের?” রুহি মিনমিন স্বরে করে বললো
” মানে আপনাদের তো নিচে থাকার কথা এখন। মিডিয়ার লোকরা এসেছে তো তাই।” অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” সেটা আমি দেখে নিচ্ছি তুমি রুমে যাও আর গিয়ে আলমারি থেকে একটা শাড়ি পড়ে…” কিছু একটা ভেবে অভিদ থেমে আবার বললো
” নাহ শাড়ি না একটা ড্রেস পরে এসো। এই সময় শাড়িতে পা বেজে পড়ে গেলে ক্ষতি হতে পারে।”
রুহি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভিদের কথা শুনে। অভিদ তাকে নিয়ে এখনই চিন্তা করছে! ভাবতেই রুহি কিছুটা অবাক হলো তবে সেটা বুঝতে না দিয়ে রুহি কপাল কুঁচকে বলে
” মাত্র ঘুম থেকে উঠেছি এখনই ড্রেস চেঞ্জ করবো কেনো?” অভিদ বিরক্তিকর চাহনি দিলো রুহির দিকে। অভিদ ভ্রু বাকা করে মিডিয়ার লোকদের দিকে ইশারায় দেখিয়ে বলে
” ওদেরকে কি তোমার চোখে পড়ছে না? ওরা কোনোভাবে আমাদের বিয়ের কথা ব্যাপারেই জানতে পেরে হামলা করেছে এভাবে। তাই ওদের সাথে তোমার ইন্ট্রডিউস করাতে হবে। বুঝেছো নাকি আরো বুঝাতে হবে?” রুহি মাথা নাড়িয়ে এক পলক রায়হানের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেলো। রুহি চলে যেতেই অভিদ নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” এদের কাছে কিভাবে আমাদের বিয়ের খবর গিয়েছে? তোকে এটার দায়িত্ব দিয়েছিলাম আমি। বিয়ের সবকিছু গোপন রাখার কথা ছিলো তাহলে এসব হচ্ছে কেনো?”
রায়হান চিন্তিত হয়ে বলে
” আমি তো সব ব্যবস্থাই করেছিলাম কোনো ত্রুটি রাখিনি। নিশ্চই গোপন থেকে কেউ এসব কথা ট্রান্সফার করেছে নাহলে সবগুলো একসাথে ক্ষুধার্ত পশুর মতো হামলা চালাতো না।”
” হুম তা ঠিক। ঠিকাছে তুই নিচে গিয়ে ওদের উপর কিছুটা খাবারা ছিটিয়ে শান্ত কর আমি রুহিকে নিয়ে আসছি।” রায়হান সায় দিয়ে নিচে চলে যায়। রায়হান নিচে নামতেই সবাই আবারও হামলে পড়ে। রায়হান কোনোরকমে মিডিয়াদের শান্ত করে বসিয়ে কথা বলা শুরু করে। অভিদ হালকা হাসি দেয়। এই ছেলেটার উপর ভরসা করেই নিশ্চিন্তে সব কিছু ছেড়ে দিতে পারবে অভিদ। রায়হানকে প্রাণের থেকেও বেশি বিশ্বাস করে অভিদ। রায়হানের প্রাণ চলে গেলেও কোনোদিন অভিদকে ঠকাবে না। অভিদ মুখে হাসি নিয়ে রুমে চলে এলো। রুমে ঢুকতেই দেখে রুহি তৈরি হয়ে ড্রেসিংটেবিলে হাতের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে৫ত৫চ বসে আছে। অভিদের বুক ধক করে উঠে রুহিচ ৫চকে এভাবে দেখে। অভিদ দ্রুত পায়ে রুহির কাছে এগিয়ে যায়। রুহির কাধে হাত রেখে ভীতু গলায় ডেকে উঠলো
” রুহি কি হয়েছে তোমার? ঠিকাছো তো?” রুহি নিভু নিভু ভাবে অভিদের দিকে তাকালো। সোজা হয়ে বসে নিচু স্বরে বললো
” হুম একটু মাথা ঘুরছিলো ঠিকাছি আমি।” অভিদ রুহির হাত ধরে বললো
” ঠিকাছে তাহলে রেস্ট করো নিচে যাওয়া লাগবে না। আমি মিডিয়াদের জন্য বিকেলে কনফারেন্স মিটিং এর টাইম বলে দেবো। এখন কিছু জানার দরকার নেই।” রুহি চমকে দাঁড়িয়ে বললো
” আরে! আপনি শুধু শুধু এমন করছেন আমি ঠিকাছি এখন। আমি নিচে যেতে পারবো।” অভিদ রাশভারী গলায় বলে
” আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে আমার মুখের উপর কথা বলবে না।”
অভিদের একরেখা কথা শুনে রুহির, অভিদের ভয় দেখানো কথা গুলো মনে পড়লো। তাই রুহি রাগি গলায় বললো
” হ্যা আপনার কথাই তো শেষ কথা। অন্য কারোর স্বাধীনতা নিয়ে কখনো ভাবেন নাকি ভাবতে দেন?”
অভিদ রুহির কথা শুনে ধমক দিয়ে বলে
” চুপ! একটাও কথা বললে না। তোমার আর আমার বাচ্চাই হেলথ কান্ডিশন ছাড়া আর কোনো কিছুই আমার কাছে ইম্পরট্যান্ট নয়। কিছু নিয়ে ভাবতে চাই না আমি। চুপ করে রেস্ট করো।”
রুহি ধমক শুনে ছলছল চোখে অভিদের দিকে তাকিয়ে জোড়ানো গলায় বললো
” ঠিকাছে যা ইচ্ছে করুণ। আমি তো আপনার হাতের পুতুল মাত্র। তাহলে কেনো বিয়ে করেছেন আমাকে?” রুহি বেডে গিয়ে উল্টো মুখ ফিরিয়ে বসে পড়লো। অভিদ দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো একটা। নিজেকে শান্ত করে অভিদ রুহির সামনে গিয়ে বসে। রুহি চোখের পানি মুছে মুখ ঘুড়িয়ে নেয়। অভিদ রুহির হাত টেনে ধরে বলে
” চলো তাহলে। তুমি যা বলবে তাই হবে। তুমি আমার একমাত্র প্রিয় মানুষ তোমার জন্য সব কিছু বরাদ্দ, চলো।”
রুহি কিছুটা অবাক হয়েই তাকালো। রুহি শুধু শুধু জেদ ধরেছিলো অভিদ কি করে সেটা দেখার জন্য। অভিদ সত্যি সত্যি রাজি হয়ে যাবে রুহি ভাবেনি। অভিদ সযত্নে রুহির হাত আকড়ে ধরে নিচে নিয়ে যেতে থাকে। রুহি অভিদের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও মনের এক অজানা বাধার কারণে আর হাতটা ছাড়িয়ে নিলো না রুহি।

মিডিয়ার সবাই ক্যামেরা নিয়ে রায়হানের দিকে ঘুরে ছিলো একজন অভিদ আর রুহিকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে বাকিদের ডাকলো। বাকিরাও অভিদের দিকে তাকাতেই সবার ভূত দেখার মতো চমকে তাকিয়ে রইলো। অভিদ রুহির হাত ধরে সামনে এসে দাঁড়াল। মিডিয়াদের লোকেদের মধ্যে থেকে একজন অবাকের রেশ কাটাতে না পেরে বলে উঠলো
” মিসেস অভিদ রায়জাদা!”
অভিদ হালকা হেসে বলে
” ইয়েস সি ইজ মাই ওয়াইফ মিসেস অভিদ রায়জাদা। এন্ড এভরিওয়ান ইটস নো ভ্যারি উইল।”
মিডিয়াদের একজন বলে উঠে
” কিন্তু কিভাবে? আর আমাদের তথ্য অনুযায়ী আপনি কালকে কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন আমরা তাকে দেখতে চাই।”
অভিদ রুহির কোমড়ে হাত রেখে রুহিকে নিজের সাথে মিশিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে
” হুম কালকে আমরা আবারও বিয়ে করেছি। আপনারা চাইলে কালকে আমাদের ওয়েডিং ফটো দেখতে পারেন।” রুহি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে অভিদের দিকে। অভিদ আলতো হাতের ছোঁয়া রুহির গায়ে শিহরণ বইয়ে দিচ্ছে কিন্তু রুহি এখন সেদিকে খেয়াল না দিয়ে সবার কথা শুনতে ব্যস্ত। রুহি ওদের কথার কোনো কিছুই বুঝতে পারছে না। সবাই তাকে দেখে এমন রিয়েকশন দিচ্ছে যে রুহির মনে হচ্ছে সবাই তাকে চিনে। আবার অভিদের আবারও বিয়ের কথার মানে বুঝলো না। রুহির ভাবনার মাঝে খেয়াল হলো অভিদ বলছে
” আশা করছি রুহিকে আর প্রয়োজন হবে না। কালকের ফাংশনে রুহি কিছুটা অসুস্থ হয়ে গিয়েছে তাই আপনারা পারমিশন দিলে আমি রুহিকে রেস্ট এর জন্য সময় দিতে চাই।”
একজন বললো
” স্যার এটা আপনার বাড়ি। আপনি যা বলবেন তাই হবে। আপনি আমাদের কাছে পারমিশন চেয়ে লজ্জা দেবেন না।” অভিদ রুহিকে বললো
” যাও রুমে গিয়ে রেস্ট করো। এখন আর নিচে আসবে না।” রুহি মাথা নেড়ে বাধ্য মেয়ের মতো উপরে চলে গেলো। অভিদ এবার তার রাজকীয় চেয়ারে বসে পরে। সব মিডিয়ার লোক তার সামনে বসে আছে। অভিদ গলা ঝেড়ে বলে উঠলো
” তো কি জেনো বলছিলেন? আপনাদের থেকে কেনো পারমিশন চাইছি? উত্তরটা তো আপনাদের কাছেই রয়েছে। আমি একজন বড় বিজনেসম্যান বলে কি আমি আমার পারসোনাল লাইফ লিড করতে পারিনা? সব পারসোনাল বিষয় কি মিডিয়ার সামনে প্রেজেন্ট করতে হবে? রুহির ইচ্ছে ছিলো আমাদের বিয়ের ম্যারিজ এনিভার্সিরিতে আমরা পারিবারিক ভাবে আবারও বিয়ে করবো তাই কালকের বিয়ের অনুষ্ঠান কিন্তু আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমি নিজের পারসোনাল লাইফ লিড করতে পারবো না। আপনারা ঠিকই খবর পেয়ে ক্ষুধার্ত পশুর মতো হামলে পড়েছন আমার বাড়িতে। আমার তো মনে হচ্ছে আমাদের রোমেন্টিক মোমেন্ট এর ফটোও আপনাদের সামনে প্রেজেন্ট করতে হবে। আপনাদের প্রশ্নের কোনো শেষই নেই। আপনাদের এতো আটকানোর পরও সবাই আমার বাড়িতে হামিলা চালিয়েছেন। তো আপনারাউ বলুন পারমিশন না নেওয়ার কোনো কারণ আছে কি?”
অভিদের কথা শুনে প্রত্যেকে অপমান বোধ করলো। সবার মাঝে পিনপিন নিরবতা বিরাজ করতে থাকে। প্রায় অনেক্ষণ পর তাদের মধ্যে একজন আবার বলে উঠে
” কিন্তু আমরা তো জানতাম মিসেস রুহি রায়জাদা মারা গিয়েছে তাহলে তিনি কিভাবে আমাদের সামনে। আমরা সবাই বিস্মিত হয়েছি। উনি কি সত্যি রুহি রায়জাদা নাকি অন্যকেউ?”
অভিদ আচ করতে পেরেছে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তাকে। অভিদ শান্ত গলায় বললো
” কি কি প্রমাণ চাই আপনাদের? কি কি প্রমাণ দেখলে আপনারা বিশ্বাস করবেন যে, ওই আমার রুহি?”

চলবে~ইনশাল্লাহ……..
চলবে~ইনশাল্লাহ……..

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here