মেঘের পরে মেঘ-৪

মেঘের পরে মেঘ -৪

“কি বন্ধু, কি খবর?সব ঠিকঠাক আছে?ঘুম হয়েছিল না জেগেই ছিলে?”
হাসতে হাসতে বললো কবির।
বন্ধুদের ঠাট্টায় যোগ দিলো না নাবিল।সোফায় বসে পরলো ধপ করে।একহাতে কপালের একপাশ চেপে ধরে বললো,

“এক কাপ কড়া চা দিতে বল।”

কাজের লোকটাকে ডেকে চায়ের কথা বললো কবির।ততোক্ষনে আশিক, তাপস আর হিমেলও হাজির।
নাবিলের পিঠে চাপড় মেরে বললো,

“ওরে দোস্তের কি মাথা ব্যথা না কি?এতো কড়া লিকারের চা কেনো ভাই?”

“থামবি তোরা।যা ভাবছিস তেমন কিছুই না।”

“কি ভাবছি আমরা?”
বলেই চার বন্ধু একত্রে হেসে উঠলো।

“যাই ভাবছিস সেরকম কিছুই না।”

“কেন ভাবি কি রাগ করে তোকে নিচে শুতে দিয়েছে না কি?”
তাপস বলে উঠলো।

“ঐ শালা।নিচে শুবো কেনো রে।এক সাথেই শুয়েছি। ”

“সে তো জানি আমরা।এতো কাহিনীর পর কি আর…”

হিমেল কে আর কথা শেষ করতে দিলো না নাবিল।

“চুপ।আর একটা কথাও না।এমনিতেই মাথা ধরে আছে।”

“কেন?কোন সমস্যা? আমাদের খুলে বল।”
বললো কবির।গলায় সিরিয়াসনেস এনে।

“এমনিতে তো কোন সমস্যা না।আসলে জানিসই তো কেমন করে ওকে এখানে এনেছি, কিভাবে বিয়ে টা হলো।ও একটু ডিস্টার্ব।”

“এখন হয়েছে কি? তোকে কি টাচ করতে দিচ্ছে না?”

“টাচ ফাচের ব্যাপার না আবার ব্যাপারও।”

“যেমন?

“আমি চাইছি ওকে একটু সময় দিতে।কিন্তু ওর সামনে গেলেই কি যেন হয়ে যায়। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না।রাতে শুয়ে পরেছিলাম।হঠাৎ কেন যেন ঘুম ভেঙে গেছে দেখি ও আমাকে কোলবালিশ করে ঘুমাচ্ছে। আমি সরিয়ে দিতে চাইলাম সরলো না বরং আরো বেশি করে ধরলো।আমার যেন কি হয়ে গেলো। যেই একটু আদর করতে শুরু করেছি এক ঝটকায় উঠে গেছে।তারপর বারান্দায় দৌড়। আমি বুঝতে পারছি ওর একটু সময় দরকার।আমিও দিতে চাইছি।কিন্তু তারপরও গোলমাল লাগছে সবকিছু। ”

“এমন অনেকের ক্ষেত্রেই হয়।”
বললো হিমেল।

“হয়?”

“হ্যাঁ, হয়।একটু ধৈর্য ধর।ঠিক হয়ে যাবে।”

“হবে বলছিস?”

“অবশ্যই হবে তা এজন্যই তোর মাথা ব্যথা?”

“না রে। ওরপর আর ঘুমাইনি। জেগে ছিলাম।যদি আমার ব্যবহারে ও কোন কস্ট পায় নিজেকে মাফ করতে পারবো না।”

“ভাবি কোথায় ছিলো?বারান্দায়? ”

“না।বুঝিয়ে শুনিয়ে ঘরে এনেছি।তারপর আমি বারান্দায় চলে গেছি।”

“ভাবি কোথায় এখন?”

“ঘুমে।”

“যা ডেকে নিয়ে আয়।সবাই মিলে আড্ডা দেই আর নাস্তা খাই।ওনাকে একটু হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে রাখতে পারলে ভালো হবে।চল সবাই মিলে কোথাও ঘুরে আসি তারপর।”

“ভালো প্রস্তাব।তাই হবে। ”

_________

শায়েরী ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়ে নিচ্ছিলো।চোখে মুখে বিষন্নতার হালকা ছাপ আছে।
দরজা খোলার আওয়াজ পেতে শাড়ির আঁচল টা সামনে আনার চেষ্টা করতে লাগলো। ততক্ষনে নাবিল ঢুকে পরেছে।শায়েরীকে এমন আঁচল টানাটানি করতে দেখে বললো,
“আমিই তো।আমাকে দেখে এতো আঁচল টানাটানির কি আছে?”

শায়েরী কিছু বললো না।

“কথা বলছিস না কেনো?”

“আপনাকে দেখে আঁচল টানাটানির অনেক কিছু আছে।”

“যেমন?দু একটা উদাহরণ দে শুনি।”

শায়েরী কিছুক্ষণ ইতস্তত করলো।তারপর আস্তে আস্তে বললো,

“ব্লাউজ টা অতিরিক্ত ঢিলা।কাঁধ বেয়ে পরে যায়।”

কথা গুলো বলার সময় শায়েরীকে দেখতে লাল টমেটোর মতো লাগছিলো।নাবিলের মজা লাগছিলো ওকে এতো লজ্জা পেতে দেখে।দুস্টু বুদ্ধিরা একটু উঁকি দিলো ওর মাথায়।ওকে আরেকটু লজ্জা দিতেই বললো,

“তো? পরে যাক না।সমস্যা কোথায়?আমার জিনিস আমি না হয় একটু দেখলাম।”

শায়েরীর মনে হলো ও বুঝি মাটিতেই মিশে যাবে।এ লোক এতো দুস্ট আগে তো কখনো বোঝা যায় নি।
শায়েরীকে চুপ থাকতে দেখে নাবিল আর কথা বাড়ালো না।

“চল। সবাই ওয়েট করছে।নাস্তা করে আমরা ঘুরতে বেরুবো।”

“আমি কোথাও যাবো না।আমার ভালো লাগছে না।”

“শরীর খারাপ? ”

“না।”

“মন খারাপ? ”

“কেনো?”

“আপনি জানেন না কেন?কাল কে থেকে আমি বাড়ির কোন খবর পাই নি।কি হলো কিছুই জানি না।সবাই কেমন আছে কে জানে?”
বলতে বলতে গলা ধরে এলো শায়েরীর।

“সবাই ভালো আছে।আমাদের বিয়ের খবর শুনেছে। কিছু বলেনি।”

“কিছু বলে নি?মেনে নিয়েছে? ”

“না।তুই কি বোকা?এতো তাড়াতাড়ি কেউ মেনে নেয়?এখন তো সবাই রেগে আছে। রাগ টা একটু পরুক।তখন সবাই মেনে নেবে।”

“সত্যি বলছেন?”

“আমাকে মিথ্যা বলতে দেখেছিস কখনো?”

“না।”

“এবার মনটা একটু হালকা কর।চল ঘুরে আসি।ভালো লাগবে।এবারই একটু বেশি সময় দিতে পারবো ঘোরাঘুরির জন্য। এরপর কিন্তু চাইলেও বেশি সময় দিতে পারবো না।গুনা কিছু দিন ছাড়া।”

“কেন?”.

” কেন মানে?এখান থেকে ফিরে গিয়েই তো আবার জয়েন করতে হবে।আমি যে একটা চাকরি করি সেটা কি ভুলে গেছিস?”

শায়েরী আর কিছু বললো না।নাবিলের সাথে গিয়ে সবার সাথে নাস্তা পর্ব শেষ করলো।সিদ্ধান্ত হলো আজ সবাই মিলে জাফলং যাবে।হিমেল ওর বৌ কে কল করে দিলো রেডি হয়ে থাকার জন্য। যাওয়ার সময় ওকে তুলে নেবে।

_________

“আপনি যে আমাকে বলেন যাওয়ার জন্য আমি কি এভাবেই যাবো?এই ব্লাউজ নিয়ে?আপনি কি দেখে এটা আমার জন্য আনলেন?এতোদিন ধরে দেখছেন তবু বুঝলেন না আমি এতো মোটা নই?”

“যখন সামনে আসতি তখন তো তোর মুখ দেখেই কুল পেতাম না।শরীর দেখার সময় আছে? এখন সময় হয়েছে ধীরে সুস্থে দেখে নেব।আর মাপে ভুল হবে না।”

শায়েরী কটমট করে তাকালো।
“যান।আমি কোথাও যাবো না।সবসময় শুধু বাজে কথা। ”

“ব্যাগে একটু হাত দেন ম্যাডাম।সেখানে আপনার প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস আছে।হয়তো একটু লুজ হবে ও পরে ঠিক করে দেব।”

শায়েরী কথা না বাড়িয়ে ব্যাগ ঘাটতে থাকলো।একটা ড্রেস হাতে নিয়ে ও থমকে গেলো।এই জামাটা এখানে?মনে পরলো গত তিন মাস আগে মার্কেটে গিয়ে এই জামাটা ওর ভীষণ পছন্দ হয়েছিল। হাতে টাকা ছিলো না।তাই নিতে পারেনি।কিন্তু এটা এখানে আসলো কি করে?নাবিল তো আর ওর সাথে ছিলো না যে জানবে।

“এই ড্রেস টা?”

“আমিই কিনেছি তোর জন্য। আরো তিন মাস আগে থেকে ওটা আমার আলমারিতে ছিলো।”

“কিন্তু এই ড্রেস টা তো……. ”

“হ্যাঁ,ইস্টার্ন মল্লিকায় দেখেছিলি।”

“আপনি জানেন কি করে?”

“কারন আমি ওখানে ছিলাম।তুই জানতি না।এমন কত দিন গেছে আমিও তোর পিছু পিছু ঘুরেছি তুই জানিস না।”

শায়েরী খুব আবেগ নিয়ে নাবিলের দিকে তাকালো।নাবিল আগে থেকেই ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো তাই চোখাচোখি হতেই শায়েরী একটু লজ্জা পেলো।

চলবে……

মুনিরা মেহজাবিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here