শ্রাবণ রাতের বর্ষণ পর্ব ১৭

#শ্রাবণ_রাতের_বর্ষন ❤
#’লেখিকাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা❤
#’পর্বঃ ১৭

.
—” আপনি এতটা নির্লজ্জ আর বেহায়া তা আমি কল্পনাও করি নি সম্রাট। এগুলো কিরুপ অসভ্যতা?”

রুদ্র আপেলে কামড় বসিয়ে তা ঘোরাতে ঘোরাতে স্থির দৃষ্টি রাখলেন আপেলটিতে। আপেলের কামড় দেওয়া অংশ খানিক্ষণ চিবুতে চিবুতে বলে উঠলেন,

—” তুমিই তো বললে আমি নির্লজ্জ। নির্লজ্জরা অসভ্যতামিই করে, সভ্যতামি তো নিশ্চয়ই করে না।”

বলতে বলতে আবারও আপেলে কামড় বসিয়ে দিলেন রুদ্র। চন্দ্রা রাগী দৃষ্টিতে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলেম কিছুক্ষণ। কিন্তু এতে বিশেষ ভাবগতি হলো না রুদ্রের। রুদ্র তার মতোই আপেল খেতে ব্যস্ত। যা আরও তীব্রভাবে রাগিয়ে তুলছে চন্দ্রাকে। কিছু না বলে চন্দ্রা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে যান স্নানাগারের দিকে। চন্দ্রার আগোচড়েই রুদ্র বাঁকা হাসি দিলেন একটা। অত:পর আবারও লেগে গেপেন আপেল খেতে!

____________________

চন্দ্রা স্নান শেষে কক্ষের শয্যায় বসতেই রুদ্র ধীর পদে এগিয়ে যান স্নানাগারে। চন্দ্রার বুঝতে বাকি রইল না রুদ্র এখন স্নান করবেন। কিছু একটা ভেবে চন্দ্রা রুদ্রকে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলে উঠলেন,

—” আপনি স্নান করতে যাচ্ছেন নিশ্চয়ই!”

রুদ্র ডান ভ্রু কুঁচকে চন্দ্রার পানে তাকান। পরপরই বাঁকা হেসে এগিয়ে যান চন্দ্রার দিকে। চন্দ্রার মুখশ্রীর অগ্রে খানিকটা ঝুঁকে বলে উঠেন,

—” হঠাৎ এই প্রশ্ন? আবার স্নান করার ইচ্ছে হচ্ছে নাকি? আমার সাথে!”

চন্দ্রার দাঁত কটমট করে রুদ্রের দিকে তাকান। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠেন,

—” আমার ইচ্ছে এতটাও নোংরা নয় সম্রাট।”

এরুপ কথায় রুদ্র হেসে সোজা হয়ে দাঁড়ান। বলে উঠেন,

—” তাহলে জিজ্ঞেস করছো কেন?”

—” আপনার চরিত্র সম্পর্কে জানতে মন চাইছে।”

রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বললেন,

— ” অর্থাৎ? ”

রুদ্রের চোখে চোখ রেখে চন্দ্রা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে আবারও বলে উঠলন,

—” অর্থাৎ আপনি স্নান করতে যাচ্ছেন। নিশ্চয়ই নোংরা সম্রাটদের মতো শত শত দাসীদের নিয়ে নিজের স্নান সম্পন্ন করবেন। তাই বলছিলাম!”

রুদ্র এবার ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন। চন্দ্রাকে টেনে নিজের অগ্রে দাঁড় করালেন। চন্দ্রার পেছনে দাঁড়িয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” এতটাও নোংরা নই আমি রাণী চন্দ্রপ্রভা। নিজের কর্ম নিজ দায়িত্বে করতে ভালোবাসি৷ অন্যের দ্বারা নয়।”

এতটুকু বলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও বললেন রুদ্র,

—” কিন্তু তুমি চাইলে আমাকে স্নান করিয়ে দিতে পারো। আমি রাগ করব না!!”

বলেই হালকা হাসলেন রুদ্র। এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও রুদ্রের এরুপ কথায় চন্দ্রা নিজেকে ছাঁড়াতে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। রুদ্র বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন,

—” উহু! নড়ো না। চুপ করে দাঁড়িয়ে অনুভব করো আমায়।”

চন্দ্রা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,

—” সরুন আমার কাছ থেকে। নতুবা কিছু করে ফেলবো আমি।”

—” কি করবে? আঘাত করবে? আমি তো তোমাকে প্রথম দেখাতেই ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গিয়েছি চন্দ্রা। আবার নতুন করে আঘাত দিলে কোনোরুপ পরিবর্তন পাবে না আমার ভালোবাসার!”

চন্দ্রা এবার করুণ এবং কঠিন কণ্ঠ মিশ্রিত স্বরে বলে উঠলেন,

—” আপনি অতিরিক্ত করছেন সম্রাট। আমার আপনাকে পছন্দ নয়। কেন বুঝতে পারছেন না? কেন আটকিয়ে রেখেছেন আমাকে?”

রুদ্রের চোখে-মুখে এক কঠিনতা ভর করল মুহুর্তেই। চোয়াল শক্ত করে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন তিনি,

—” পছন্দ করতে হবে না তোমার। ভালোবাসলেই চলবে।”

আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালেন না রুদ্র। দ্রুত পদে চলে গেলেন স্নানাগারে। চন্দ্রা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মাত্র। দর্পনের অগ্রে কেদারায় বসতেই কোত্থেকে কিরণ এসে হাজির হলো তার কাছে। মাথা নিচু করে অভিবাদন জানিয়ে বলে উঠল,

—” দিন আমাকে রাণী। আমি আপনার কেশ আঁচড়ে দিচ্ছি।”

চন্দ্রা খানিকটা কঠর কণ্ঠে বললেন,

—” লাগবে না। তুমি যেতে পারো। আর হ্যাঁ, আমাকে রাণী ডাকবে না, আমি একজন রাজকুমারী। কূঞ্জনরাজ্যের রাজকুমারী। মনে থাকে যেন।”

কিরণ মাথা নাড়িতে আমতা আমতা করে বলল,

—” ক্ষমা করবেন রাজকুমারী। মনে থাকবে আমার।”

অতঃপর কিরণ বেড়িয়ে গেল কক্ষ থেকে। চন্দ্রা চক্ষুজোড়া হঠাৎ-ই ভিঁজে উঠল। আজ তার কিরণ বেঁচে থাকলে কতই না আনন্দ করত সে। কত যত্ন করে চন্দ্রার কেশ আঁচড়ে দিতো সে! চন্দ্রার যে কিরণকে খুব মনে পড়ছে। আচ্ছা, কিরণ কি তাকে ওপর থেকে দেখছে? তার কি চন্দ্রার কথা মনে পরে? হয়তো! আবার হয়তো না!

_______________________

বিকেলে চন্দ্রা কিরণকে নিয়ে বাগানের দিকে যান। হরেক রকমের ফুলের প্রজাতি আছে এই বাগানে। যা এক এক করে ছুঁয়ে দিচ্ছেন চন্দ্রা। সম্রাট রুদ্রদীপ এ পথ দিয়েই মন্ত্রীকে নিয়ে রাজকারাগারের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে চন্দ্রাকে বাগানে দেখে থমকে দাঁড়ান। ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ চন্দ্রার কান্ড গভীর মনোযোগে পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। এর মধ্যে কিরণ সম্রাট রুদ্রকে দেখে চন্দ্রাকে ডাকতে নিলেই রুদ্র চোখের ইশারায় তাকে চলে যেতে বলেন৷ আদেশ অনুযায়ী কিরণও চলে যায় বাগান থেকে। রুদ্র মন্ত্রীকে রাজকারাগারে যেতে বলে নিজে ধীর পায়ে চন্দ্রার পার্শ্বে এসে দাঁড়ান। চন্দ্রা রুদ্রকে খেয়াল করেন নি তখনও। আনমনেই একটা ফুলে হাত ছুঁইয়ে বলে উঠেন,

— ” কিরণ? এটা কি ফুল? নাম কি? ”

রুদ্র গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

— ” জবা! ”

— ” ওহ্! ”

কথাটা বলেই চমকে যান চন্দ্রা। ইহা তো কিরণের কণ্ঠ নয়। পুরুষালি কণ্ঠ! অনেকটা সম্রাট রুদ্রের মতো। কথাগুলো ভাবতেই পেছনে ফিরে তাকান চন্দ্রা। তার ধারণা ঠিক! রুদ্র তার পার্শ্বে দাঁড়িয়ে বুকে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছেন। মুখে মুচকি হাসি। আজ প্রথম চন্দ্রা খেয়াল করলেন হাসলে রুদ্রের গালের বাম দিকে টোল পরে। ছোট ছোট চোখ আরও ছোট হয়ে যায়। চোখগুলোও যেন হাসে তার। রোদের মিষ্টি আলো সরাসরি রুদ্রের মুখে পরায় ফর্সা মুখশ্রী লাল হয়ে আছে। খানিকটা ঘেমে গেছে তার মুখ। অথচ দেখতে খারাপ লাগছে না। অপরুপ লাগছে তাকে। সুন্দর থেকেও সুন্দরতম!

চন্দ্রার ভাবনার মাঝে কখন যে রুদ্র তার দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়েছেন তার খেয়াল নেই চন্দ্রার। রুদ্রের দুষ্টুমি ভরা কণ্ঠে চেতনা ফিরলো তার। রুদ্র চন্দ্রার কানে ফিসফিসিয়ে মুখে বাঁকা হাসি রেখে বলে উঠলেন,

—” আমাকে কি বেশি সৌম্য লাগছে চন্দ্রপভা? এভাবে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো কেন? প্রেমে পরে যাচ্ছো বুঝি? শোনো! এভাবে তাকাবে না। আমার বুঝি লজ্জা করে না। নির্লজ্জ রাণী!”

বলেই সরে দাঁড়ালেম রুদ্র। চন্দ্রা ‘হা’ করে তাকিয়ে আছেন রুদ্রের দিকে। তার কথা তাকেই ফেরত দিচ্ছেন রুদ্র। তাকে নির্লজ্জ বলছেন? ভাবতেই চোখ বড় বড় করে রুদ্রের দিকে তাকালেন চন্দ্রা। রুদ্র লজ্জা পাওয়ার ভাঙ্গিমা করে বলে উঠলেন,

—” এভাবে নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছো কেন? লজ্জা লাগছে তো আমার!”

চন্দ্রা এবার বিরক্তি প্রকাশ করলেন। রুদ্রের কাছ থেকে সরে বাগানের অন্য দিকে যেতে লাগলেন। তার পিছু পিছু রুদ্রও যেতে লাগলেন। তবে তা আর হওয়ার! বাগানের অন্য পাশেই রুদ্রের বোন পদ্ম তার দাসীকে নিয়ে কিছু ফুল সংগ্রহ করছেন। তা দেখে রুদ্র আর এগোলেন না সেদিকে। চন্দ্রাও পদ্মকে দেখে আর সেদিকে গেলো না। ফিরে আসতে চাইলে হঠাৎ-ই পদ্ম ডেকে ওঠে তাকে।

.
_____________চলবে_____________
(বাসায় মেহমাম এসেছেন। তাউই গল্প কালকে দিতে পারিনি। আজকেও আছেন তারা। তাই তারা হুরো করে লিখেছি। রি-চেক করি নি। ভুল-ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখিবেন। আর আরেকটা কথা, কেউ কি বলবেন আদি কালে ভাবিকে কি ডাকতো? নাকি ভাবিই ডাকতো তারা?)
Tahsina Khan Saima, Jodha Akbar, Afrin Shuvra, Arrushi A সহ সবার মন্তব্য দারুণ ছিল❤
Ishanur Tasmia

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here