সুপ্ত অনুভুতি পর্ব ৩+৪

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_৩
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

ভার্সিটিতে গিয়ে দেখলাম আদিল ভাইয়া আর আদনান ভাইয়া মেয়েদের সঙ্গে বসে হেসে হেসে কথা বলছে৷
আজবতে কাল আমি পাত্র পক্ষের সামনে গিয়েছিলাম বলে আমাকে কীরকম মেরেছিলো৷ আর যে নিজে মেয়েদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে এসব কিছুই না৷ যদি আদিল ভাইয়া আমার ছোট হতো তাহলে এখন আমি গিয়েও কয়েক ঘা বসিয়ে দিতাম৷
আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিংকি আর সামান্তা দুজনেই ভ্রু কুচকালো৷

“কী রে এরকম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী দেখছিস৷ ক্লাসে চল৷ (রিংকি)
.
হুম চল৷
.
ক্লাসে অনেক্ষন যাবত বসে আছি আর আড় চোখে রিংকি আর সামান্তাকে দেখছি৷ ওরা আমার দিকে ভ্রু কুচকানোর পাশাপাশি কপাল কুচকেও তাকিয়ে আছে৷ তাকানোর কারন হলো আমি ওদের সাথে কথা বলছিনা৷ ওরা বকবক করছেই কিন্তু আমি পাত্তা দিচ্ছিনা৷ খাতার মধ্যে ইচ্ছে মতো আঁকিবুঁকি করছি৷ সামান্তা আর না পেরে আমার কাছ থেকে খাতাটা কেড়ে নিলো,,,

“অনেক হয়েছে রুহি৷ আমাদের সাথে এমন করছিস কেনো তুই৷ কী হয়েছে তোর৷ আচ্ছা রুহি একটা কথা বলতো কাল বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তো সবকিছু ঠিকই ছিলো কিন্তু আজ সকাল থেকেই তোকে একদম ঠিক লাগছেনা৷ আমি জানি তুই রিফাতের ব্যাপার নিয়ে একদমি আপসেট নস৷ তাহলে কী নিয়ে আপসেট তুই (সামান্তা)
.
“হ্যাঁ আমিও লক্ষ করছি৷কী হয়েছে বলতো৷ তুই তো এমন চুপচাপ থাকিস না৷ (রিংকি)
.
কাম অন ইয়ার আমার কিছু হয়নি৷ জাস্ট ভালো লাগছিলোনাা তাই একটু আকিঁবুকিঁ করছিলাম৷ কিন্তু তোরা তো শান্তিতে এটাও করতে দিলিনা৷
.
কথা ঘুরাস না রুহি তোকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি কিছুটা একটা হয়েছে তোর৷ প্লিজ বল৷(সামান্তা)
.
বলবো তাহলে শুন!!! তোর ভাই কাল রাতে আমায় বেল্ট দিয়ে পিটিয়েছে৷ বোনকে কেউ এভাবেও মারতে পারে সেটা আমার দৃষ্টির অগোচরে ছিলো কিন্তু কাল প্রাকাশ্যে চলে এসেছে৷ দোষ কী ছিলো আমার জানিস শুধু তোর ভাইয়ের কথা অমান্য করে রিফাতের সামনে গিয়েছিলাম বলে৷ মানছি আমি রিফাতের ক্যারেক্টার ভালোনা৷ আমি তো আর আগে জানতাম না৷ বাবার কথা অমান্য করতে পারছিলাম না তাই আমি রিফাতের সামনে গিয়েছিলাম৷ ছোট বোন হিসেবে একটা চড় ওতো মারতে পারতো, তা না করে আমায় বেল্ট দিয়ে মেরেছে৷ বেশি হলেও দশটা বারি তো দিয়েছেই এখনও আমার পিঠ ব্যাথা করছে৷ জানিস আবার হিরোদের মতো ব্যালকনি দিয়ে এসে মলমও লাগিয়ে দিয়েছে৷ কী পেয়েছে আমাকে তোর ভাই আমি ওতো একটা মানুষ নাকি৷ এরকম অমানুষিক অত্যাচার কেউ করে নাকি৷ সি ইয়ার তোর ভাই বোনকে যেভাবে মেরেছে না জানি তার বিয়ে হলে নিজের বউকে কীভাবে পেটায়৷ তবে এরকম যদি হয় তাহলে তোর ভাইকে নিষেধ করবি এমন যাতে না করে খুব ব্যাথা করে রে বেল্ট দিয়ে মারলে৷বুঝতে পারছিস আদনান ভাইয়া আর আদিব ভাইয়া যদি শুনে তাহলে এক মুহুর্তের জন্য ভুলে যাবে যে ওরা একে অপরের ভাই হয়৷ তোর ভাই নব্বই দশকেই পড়ে আছে৷ দেখতিনা তখন বেত বেল্ট দিয়ে যে মারতো৷ তোর ভাইও সেম৷ কি হতো এভাবে না মারলে৷ আমি মানছি আদিল ভাইয়ার রাগ বেশি তাই বলে রাগ কন্ট্রোল করবেনা৷ দেখ সামু এটা আকস্মিক হয়েছিলো তাই আমি তোর ভাইকে আমাকে মারা থেকে আটকাতে পারিনি৷ কিন্তু এরপরও যদি এমন করে তাহলে আমিও তার গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হবো৷ আমি ভুলে যাবো যে সে আমার বড় ভাই হয়৷ নারী নির্যাতন আমি এমনিতেই সহ্য করিনা আর সেটা কিনা নিজের সাথেই ঘটলো৷
এক নাগারে কথাগুলো বলে থামলাম আমি৷ মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা কথাগুলো বলে দিলাম৷
.
এসব কী বলছিস রুহি!!!ভাইয়া তোকে এভাবে মেরেছে চিৎকার তো নিশ্চয় করেছিলি তাহলে আমরা কেউ তোর চিৎকার শুনিনি কেনো৷
.
প্রথমে এটা নিয়ে আমিও চিন্তিত ছিলাম আফটার মনে হলো আমাদের রুম তে স্পেশাল সাউন্ড প্রুফ করা যার জন্য আমার চিৎকার কারো কানে পৌঁছায়নি৷
.
ছিঃ!!!আদিল ভাইয়া এতোটা চিপ৷ আমার ভাবতেই কেমন লাগছে৷ এই জন্যেই আমার আহিল ভাইয়াকে ভালো লাগে৷ ভাইয়ার মেজাজ একেবারে ঠান্ডা৷ যা করবে একশোবার ভেবেচিন্তে করবে৷ রাগকে কোন সময়ই প্রাধান্য দেয়না৷ আদিল ভাইয়া একেবারে আহিল ভাইয়ার বিপরীত৷ ওরা সিবলিংস বাট কেউ দেখলে বুঝবেই না৷
.
এক্সেক্টলি,,তাইতো আমার আহিল ভাইয়া কে এতো ভালো লাগে৷ হি লাইক এ ইনোসেন্ট বয়!!
.
রিংকির কথা শুনে আমি আর সামু দুজনই ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছি ও যখন আহিল ভাইয়ার কথা বলছিলো তখন মনে হয়েছিলো যেন অন্য এক জগতে হারিয়ে গেছে৷ আমাদের দুজনকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,,,

“আব আমি এভাবে বলতে চাইনি৷ আসলে আহিল ভাইয়া ভালো এটাই বলেছি৷ নাথিং এল্স৷
.
হুম আমরা কী তোকে কিছু বলেছি নাকি৷(আরুহি)

রিংকি একটা ভেংচি কেটে বই মেলে বসে রইলো এমন ভাবে বই পড়ছে মনে হচ্ছে এক মিনিটেই সে বিদ্যাসাগর হয়ে যাবে৷ আমার মনে হয় ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও এরকম মনোযোগ দিয়ে বই পড়েননি৷৷ সামান্তা ও বাইরে গেছে৷ বেশ কিছুক্ষন পর সামান্তা এলো ওর চোখ ছলছল করছে৷

“কী রে সামু তোর আবার কী হয়েছে৷(আরুহি)
.
রুহি আদনান ভাইয়া একটা মেয়েকে প্রপোজ করেছে৷ আমি দেখেছি৷(সামান্তা)
.
হ্যাঁ এটতো গুড নিউস৷ আমরা ভাইয়ার কাছ থেকে এর জন্যে ট্রিটও চেয়ে নিবো৷ কিন্তু তোর কী হলো???
.
না কিছুনা৷
.
আরে বুঝতে পারছিস না রুহি, তোর ভাই যে মেয়েটাকে প্রপোজ করেছে সেটা সামু মেনে নিতে পারছেনা৷ ওর মনে অলরেডি আদনান ভাইয়ার জন্য লাড্ডু ফুটছে৷(রিংকি)
.
“কী যা তা বলছিস এসব একদমি না৷
.
হ্যাঁ সেটাতো দেখতেই পারছি৷
.
ওকে ওকে এখন ঠিক হয়ে বসেন ঘন্টা পড়ে গেছে স্যার চলে আসবেন৷ (আরুহি)

🍁🍁🍁🍁🍁

বাড়িতে এসে শাওয়ার সেরেই আমি আদনান ভাইয়ার রুমে গেলাম৷ ভাইয়া তখন শার্টের বোতাম লাগাচ্ছেন৷ আমাকে দেখে বললেন,,,
.
কী রে কিছু আনতে হবে নাকি??
.
উহু,,একটা কথা জানতে এসেছি৷
.
কী কথা??
.
তুমি নাকি ভার্সিটির একটা মেয়েকে প্রপোজ করেছো? তা কে সে??
.
ওটা প্রপোজ ছিলো নাকি৷
.
তাহলে কী ছিলো??
.
আমার এক ফ্রেন্ড একটা মেয়েকে প্রপোজ করবে এখন কীভাবে প্রপোজ করবে সেটা বুঝতে পারছেনা৷ তাই তাকে একটু অভিনয় করে দেখালাম৷
.
তা মেয়েটা যদি সত্যি মনে করে যে তুমি তাকে প্রপোজ করেছো৷ সত্যি ভালোবাসো৷
.
না এমন মনে করবেনা৷ কারন ওর বয়ফ্রেন্ড আছে৷ আর জানে আমরা যে অভিনয় করেছি৷
.
আরেহ বাহ,,তুমিতো খুব শেয়ানা হয়ে গেছো৷ কিভাবে প্রপোজ করতে হয় সেটাও জানো দেখি৷
.
ওই একটুই৷ আচ্ছা আমি বেড়োচ্ছি আসার সময় তোর জন্য চকলেট আনবো৷
🍁🍁🍁🍁
আমি ভাইয়ার রুম থেকে এসে সামান্তার রুমে গেলাম৷ বেচারি ভার্সিটি থেকে এসে শাওয়ার সেরে আর বাইরেই যায়নি৷ খাটে উপুর হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুজে রেখেছে৷

“আদনান ভাইয়া মেয়েটিকে প্রপোজ করেনি৷”
.
আমার কথা শুনে মুখ তুলে তাকালো সামান্তা৷ মুখে বালিশের চাপ পরে মুখ লাল হয়ে গেছে৷

“মানে৷ তাহলে আমি তখন যা দেখলাম সব কী ভ্রম ছিলে নাকি৷
.
না ভ্রম ছিলোনা৷ তুই যা দেখেছিস ওইটা অরিজিনাল প্রপোজ ছিলোনা৷ ভাইয়ার এক ফ্রেন্ড প্রপোজ করতে চিনেনা তাই ভাইয়া শিখিয়ে দিয়েছিলো৷ এ ছাড়া আর কিছুইনা৷
.
ওহ৷
.
কেনো তুই খুশি হসনি,ভাইয়া যে মেয়েটাকে অরিজিনাল প্রপোজ করেনি৷
.
খুশি হওয়া না হওয়ার কী আছে আজব৷
.
হুম সেটাই৷

সামান্তার রুম থেকে চলে আসার পর দেখা হলো আদিল ভাইয়ার সাথে, কানে ইয়ারফোন গুজে ছাঁদের দিকে যাচ্ছে৷ আদিল ভাইয়াকে এখন এক মুহুর্তের জন্যও সহ্য হয়না আমার৷
#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_৪
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

বাড়িতে তোরজোড় চলছে৷ আজ নাকি বাড়ির সবচেয়ে বড় মেয়ে অদ্রিতা আপুকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে৷ যেহেতু আমার বিয়েটা হয়নি তাই বড় আব্বু অদ্রিতা আপুর বিয়ের ব্যবস্থা করছেন৷ আমাদের তো আবার বোনের অভাব নেই একটা একটা করে আস্তে আস্তে সবকটাকে বিদায় করতে হবে৷ আমি শুধু বসে বসে সামান্তাকে দেখছি৷ বেচারি সকাল থেকে সাজা শুরু করেছিলো এখনও সাজতেছে৷ আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা ভেংচি কেটে বললো,,,

“কী রে এভাবে কী দেখছিস??
.
“তোকে দেখছি৷তোকে খুব বান্দর লাগছে ইয়ার আমিতো প্রেমে পড়ে গেছি৷ না জানি আজ পাত্র পক্ষ তোকে দেখে ভয়ে না পালিয়ে যায়৷
.
“তুই তো আমার প্রশংসা জীবনেও করিস না৷ কী বলতে চাস সেটা বল৷ আমি জানি তুই কিছু বলতে চাস৷
.
“রিংকিকে তো আসার জন্য বললি না সেদিকে খেয়াল আছে৷
.
ওহ্ তাইতো৷ প্লিজ ওকে একটু ফোন করে বলে দে যাতে ও তারাতাড়ি চলে আসে৷ আমার একটুও মনে ছিলোনা৷
.
“মনে থাকবে কী করে৷ আমি পারবোনা ফোন দিতে৷ পারলে নিজে দে আর না দিলে নাই৷ আমি যে স্মরণ করে দিয়েছি সেটাই অনেক৷
.
“তুই সব সময় আমার সাথে এমন করিস৷ ঠিক আছে আমিই ফোন দিচ্ছি৷ তা তুই সাজবি না??
.
বিয়ে তো আর আজই না৷ আমার ড্রেস পড়ে আরেকটু লিপস্টিক লাগালেই সাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে৷ তোর মতো এত সাজ না সাজলেও চলবে৷আমরা তো আর নিজেকে হিন্দি নায়িকা মনে করিনা৷
.
তুই সবসময় আমাকে টিজ করিস৷ না করলে তোর পেটের ভাত হজম হয়না৷
.
না হয়না৷
কথাটা বলে সামান্তার রুম থেকে চলে আসলাম৷ সকাল থেকে চাচীমনি আর আম্মুকে হেল্প করে যাচ্ছি৷ আর উনি সকাল ৯টায় উঠেছেন তারউপর আবার কাউকে হেল্প না করে সাজায় বসে পড়েছে৷ আমার কী ট্যাকা পড়ছে নাকি৷ এখন আবার যেতে হবে গিয়ে ছাঁদ ঝাড়ু দিতে হবে৷ এতো বড় ছাঁদ আমার পক্ষে একা ঝাড়ু দেওয়া সম্ভব নয়৷ রিংকি আসুক তাকে নিয়েই না হয় ছাঁদ ঝাড়ু দিবো৷ বাকি সবাই তো কাজে ব্যাস্ত৷ আর সামুতো সেজে সেজে মডেল হচ্ছে৷ আরে ইয়ার কাজ সেরে তারপর রেডি হস তখন দেখিস আমি তোকে টিজ করি কী না৷

ছাঁদে অনেক্ষন বসে রইলাম একা একা৷ একটা ব্রেঞ্চে বসে রেলিঙয়ে মুখ দিয়ে রেখেছি৷ গেটের দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম রিংকি ওর চুল ঠিক করতে করতে আসছে৷ আমি ওকে দেখে মুখ তুলতেই থুতনিতে ব্যাথা অনুভব করলাম৷ এতোক্ষন রেলিঙে মুখ দিয়ে রাখার ফলে থুতনিতে ব্যাথা করছে৷ আমি থুতনি ডলতে ডলতে নিচে গেলাম৷ গিয়ে দেখলাম ও সোফায় বসে আছে৷ কিচেনে গিয়ে ওর জন্য এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস বানিয়ে ওর সামনে ধরলাম৷ রিংকি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,,

“আজ অরেঞ্জ জুস দিচ্ছিস যে!!
.
আগে খা তারপর বলবো৷
.
আচ্ছা
.
রিংকি জুস খাওয়ার পর ওকে নিয়ে ছাঁদে গেলাম৷ তারপর হাতে একটা শলার ঝাড়ু ধরিয়ে দিলাম৷

“একি রে এটা তো ঝাড়ু এটা দিয়ে কী হবে৷ কী করবো আমি৷
.
বোন এটা দিয়ে আমাকে মার৷ মেরে তারপর তোর ব্যাগে পুরে নিয় যাস৷
.
তোকে মারবো তো বুঝলাম৷ কিন্তু আবার ব্যাগে করে নিয়ে যাবো কেনো৷
.
এটা দিয়ে ছাঁদ ঝাড়ু দিবো ছাগলনি৷ এই জিনিসটা বুঝতে তোর এতো সময় লাগে৷ নে এবার কাজে লেগে পর পাত্র পক্ষ এই এলো বলে৷
.
রিংকি ছাঁদ ঝাড়ু দিতে দিতে বললো,,
“পাত্র পক্ষ কী আজ রাত্রে ঘুমায়নি নাকি৷ যে সকাল এগারোটায় চলে আসবে৷ সব নাহয় বুঝলাম কিন্তু সামু কোথায় ওকে তো দেখতে পাচ্ছিনা৷
.
আমিও ঝাড়ু দিতে দিতে বললাম,,ওতো রুমে, সেজে সেজে মডেল হচ্ছে৷ সামু থাকলে কী আমি আর তোকে কাজে লাগাই নাকি৷কিছু মনে করিসনা হে,বিপদে পড়েই কাজে লাগিয়েছি৷
.
ধুর তোরা তো আমার বোনের মতোই৷ আর এই বাড়িকে আমি আমার নিজের বাড়িই মনে করি৷
.
ঝাড়ু দিয়ে ময়লা ছাঁদের এক কোনায় রাখতেই আহিল ভাইয়ার আগমন৷ ভাইয়াকে দেখে রিংকি তারাতাড়ি নিজের ওরনা জরিনার মতো যে দিয়েছিলো সেটা তারাতাড়ি এখন আধুনিকার মতো দিলো৷ আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে আহিল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,

“আরে তুমি এখানে৷
.
তোকে খুঁজতেই এসেছিলাম৷
.
কী দরকার৷
.
আসলে আমার কয়েকটা ময়লা টি-শার্ট আর প্যান্ট ছিলো ওগুলো যদি একটু ধোয়ে দিতি৷
.
আজ সবাই আমাকে কী পেয়েছে হ্যা৷ প্রথমে মা আমাকে দিয়ে পেয়াজ কাটালো৷ চোখ থেকে আনলিমিটেড পানি ঝরছিলো তখন৷ তখন যদি কোনো সাংবাদিক আমাকে দেখতোনা একটা নিউজ বানিয়ে ফেলতো সাথে সাথে৷ যেমন,,এই দেখুন বাংলাদেশের সবচেয়ে অভাগী নারী৷ যিনি কষ্টে কেঁদে কেটে গঙ্গা যমুনা বহিয়ে ফেলছেন৷মানে তখন সাংবাদিকেরও আমার জন্য কষ্ট হতো৷ কিন্তু আমার মায়ের হয়নি৷ আমার মা আমাকে মোট পাঁচ থেকে ছয় কেজি পেয়াজ কাটিয়েছে৷ এখনও আমার চোখ জ্বলতেছে৷ তার উপর আবার চাচীমনি আমাকে সবজি কাটায় বসিয়ে দিয়েছেন৷ আজ বসতে বসতে আমার কোমড় গেছে৷
.
কেনো আয়েশা কোথায়??
.
আয়শু আপু সারা বাড়ি পরিষ্কার করছে৷
.
আর সামান্তা সে কোথায়??৷
.
সে তো মডেল হচ্ছে৷
.
আাচ্ছা আমার এগুলো ধোয়ে দিস বাজার থেকে আসার সময় পেস্ট্রি আনবো৷
.
তাহলে ঠিক আছে৷
.
“আহিলেরটা ধোয়ে দেওয়ার সময় আমারও কতগুলো শার্ট আছে ওগুলো ধোয়ে দিস৷”
আদিব ভাইয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে গেছি আমি৷ এরা কী পেয়েছে কী আমাকে৷

“আমি পারবোনা তোমরা গিয়ে সামান্তাকে বলো৷ আমি সব কাজ একা একা করবো নাকি৷
.
আদিবঃ সে তো সাজছে তাই তোকে বলেছি৷ প্লিজ বোন আমার রাগ করিস না৷ একটু কষ্ট কর৷ বাজারে যেতে হবে তা নাহলে নিজেই ধোতাম৷
.
ঠিকাছে৷ধোয়ে দিবো তার আগে তোমরা ওই যে কোনায় ময়লা রাখা আছে ওগুলো ফেলে আসো৷
.
আহিলঃ কী আমাদের মতো হ্যান্ডসাম ছেলেরা এসব করবো৷
.
তোমরা নিজেকে হ্যান্ডসাম,ডেশিং,স্মার্ট ভাবতেই পারো কিন্তু আমার কাছে তোমরা মোটেই এসব না তাই টাইম ওয়েস্ট না করে তারাতাড়ি ময়লা ফেলে দাও৷
.
আদিবঃ চল আহিল ময়লা গুলো ফেলে দেই৷
আমি আর রিংকি ছাঁদ থেকে এসে সোজা আহিল ভাইয়ার রুমে ঢুকলাম খাটের মধ্যেই সব কাপড় রাখা৷ ঘড়ির দিকে চোখ পরতেই দেখলাম ১২ঃ১০ বাজে৷ হায় আল্লাহ্ ওরাতো চলে আসবে৷ রিংকি তুই গিয়ে রেডি হয়ে নে৷ আমি কাপড় কেচে তারপর রেডি হবো৷
.
“তুই এতো কাপড় নিজে কাচবি৷ চল আমিও হেল্প করি৷
.
যথেষ্ট হেল্প করেছিস এবার গিয়ে রেডি হো যা৷ যদি তোর মতো সামুও আমার একটু দরদ বুঝতো৷
.
রিংকি চলে গেলো৷ আমি আদিব ভাইয়ার কাপড় এনে দুজনের কাপরই কাচতে লাগলাম৷ অনেক গুলো কাপড়৷ বেশ কিছুক্ষন পর কেমন অচেনা অচেনা কন্ঠ শুনছি৷ তারমানে ওরা চলে এসেছে৷ আমি তারাতাড়ি করে কাপড় গুলো ধুতে থাকলাম৷ কাপড় ধোয়ে বালতি হাতে ড্রয়িং রুমে তাকাতেই দেখলাম ছোট বড় কতো সদস্য বসে আছে৷ আমি আর না দাঁড়িয়ে সিড়িতে পা রাখতেই পিছন থেকে কে যেন বলে উঠলো,,

“আপনাদের বাড়ির কাজের মেয়েটা কিন্তু খুব সুন্দর৷ এতো সুন্দর কাজের মেয়ে পান কই থেকে৷
.
ছিঃ ছিঃ কী লজ্জা কী লজ্জা৷ শেষে কী না কাজের মেয়ে হতে হলো৷
আমি আর দেড়ি না করে তারাতাড়ি ছাঁদে গেলাম৷ কাপড় রোদে দিয়ে নিজের রুমে গেলাম তারপর একটা ড্রেস বের করে সেটা পড়ে একটু সাজুগুজু করলাম৷ একেবারে রেডি হয়েই নিচে গেলাম৷ সামু আমাকে দেখে ফিসফিসিয়ে বললো,,

সামান্তাঃতুই এতো ফাস্ট!!
.
আরুহিঃতোমার শান্তি হয়েছে তো৷ নিজে তো মেহমানের সামনে মডেল,নায়িকার পরিচয় পেলে আর আমি কাজের মেয়ের৷
.
সামান্তাঃসোয়াগ সে কারিঙ্গে সাবকা সোয়াগাত৷
.
আরুহিঃতুই গান গাইছিস৷
.
সামান্তাঃএকচুয়েলি নট৷ আমি মেহমানদের বরন করার কথা বলছি৷

আরুহিঃওদেরকে বরন করা হয়ে গেছে অলরেডি৷

সামান্তা আর আমার ফিসফিসানি দেখে আম্মু আমাদের ড্রয়িং রুম থেকে বিদায় করে দিয়েছেন৷
আমি, রিংকি, সামান্তা আমার রুমের খাটে বসে আছি৷ বেশ কিছুক্ষন পর একটা ছেলে এলো৷ আমরা কেউ ওই তাকে চিনতে পারছিনা৷ তার দিকে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি৷তারপরও নিজেকে ঠিক করে সৌজন্যতার খাতিরে বললাম,,

“আরে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো বসুন?
.
ছেলেটা ধপ করে সোফায় বসে পরলো তারপর বললো,
আপনারা আমাকে চিনতে পারছেননা আমি বুঝতে পারছি৷ আসলে আমি পাত্রের ভাই আকাশ৷ আপনাদের পরিচয়টা কী জানতে পারি৷
.
“হ্যা নিশ্চয়, আমি আরুহি,ও আমার কাজিন সামান্তা আর ও আমার বেস্টফ্রেন্ড রিংকি এন্ড আমরা তিনজন একসাথেই লেখাপড়া করি৷এটাই আমাদের পরিচয়৷
.
তা একটা কথা জিজ্ঞেস করি??
.
হ্যাঁ নিশ্চয়৷
.
আপনাদের বয়ফ্রেন্ড নেই৷
.
আছে তো আমাদের তিনজনেরই বিএফ আছে৷
.
ছেলেটা কিছু না বলে মোবাইল ঘাটতে শুরু করলো৷ আরও কিছুক্ষন বসে তারপর চলে গেলো৷

সামান্তাঃতুই মিথ্যা বললি কেনো?ইশ ছেলেটা কতো কিউট ছিলো৷
.
আরুহিঃতুই চুপ কর ছেলে দেখলেই শুরু হয়ে যায় তোর৷ বল আমি ছেলেটিকে আবার ডেকে আনছি৷
.
রিংকিঃএই আদিল ভাইয়াকে তো দেখছিনা৷
.
সামান্তাঃহ্যাঁ আমি ও দেখতে পারছিনা৷ ভাইয়া কোথায় গেছে বলতো৷
.
আরুহিঃজাহান্নামে যাক তোর ভাই৷
.
সামান্তাঃরুহি!!!তুই ভাইয়াকে জাহান্নামে পাঠাচ্ছিস৷
.
আরুহিঃহ্যাঁ পাঠাচ্ছি৷ তোর ভাই আমাকে নির্যাতন করেছে তারপর তার জায়গা তো জাহান্নামেই হবে৷ যদি আমি ক্ষমা না করি৷ আর আমি জানিও না তোর ভাইকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবো কী না৷

চলবে♥️
চলবে♥️♥️

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ অনেকেই দেখছি গল্প এক পর্ব পড়েই পরের পর্ব কেমন হবে সেটা বিচার করা শুরু করে দিয়েছে৷ সব গল্প যে এক হবে এমন তো কোনো কথা নয়৷ এক পর্বেই সব কিছু ক্লিয়ার করা সম্ভব নয়৷ কিন্তু কিছু মানুষেরা আছে তারা এক পর্ব পড়েই যা নয় তাই কমেন্ট করে গেছে৷ আই হোপ আপনাদের কাছে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়েছে৷ কারও মনে আঘাত দিয়ে থাকলে মাফ করবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here