মেঘ_বৃষ্টি পর্ব=১৯
❤❤
রোদ_রোদেলা
#তানিয়া_আনিতা
দেখতে দেখতে মেঘবৃষ্টির বিয়ের ৩ মাস অতিক্রম হলো কিন্তু তাদের সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয়নি বরং দিনকে দিন নিজেদের সম্পর্কে আরো সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। মেঘ বৃষ্টিকে অফিসে জ্বালায় আর বৃষ্টি মেঘকে বাসায়। এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে দূরুত্ব আরো বেড়ে গেছে।
,
,
,
,
,
,
অন্য দিকে রোদ রোদেলার সম্পর্ক এখন অনেকটা গভীর হয়েছে। এই ৩ মাসে নিজেদের মধ্যে ফোনালাপ, টেক্সট আর কয়েকবার দেখাও করেছে। রোদেলা তো রোদকে অলরেডি ভালোবেসে ফেলছে।আসলে ভালোবাসতে বাধ্য করেছে। কেননা রোদেলার প্রতি রোদের কেয়ার, যত্ন রোদেলা কে একপ্রকার বাধ্য করেছে ভালোবাসতে।রোদেলা চিন্তা করে রোদের জন্য তার যে ফিলিংস কাজ করে রোদেরও কি একি ফিলিংস কাজ করে। রোদেলা অনেকবার চেষ্টা করেছে রোদকে প্রপোজ করার জন্য কিন্তু মনের বাধার কারনে পারেনি।আসলে কবি মনীষীদের চিন্তা আর যুগ যুগ ধরে যে প্রথা চালু আছে যে ভালোবাসার কথা আগে ছেলেদের প্রকাশ করতে হবে হয়তো সেই কথা মাথায় রেখে রোদেলা কোনোভাবে রোদকে প্রপোজ করতে পারছে না।এভাবে কেটে গেল আরো একমাস।এদিকে রোদেলা দিনকে দিন আরো দূর্বল হয়ে পরেছে রোদের ওপর।।নিজেকে আর আটকে রাখতে না পেরে একদিন রোদেলা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো সে নিজেই রোদকে তার ভালোবাসার কথা জানাবে।তাই নিজেই রোদকে কল দিল
——–হ্যালো রোদ তুমি কি কাল ফ্রী আছো।
——-হুমম কেন কোনো সমস্যা কি
——-না আসলে তোমার সাথে আমার খুব জরুরী কথা আছে তাই কাল যদি আমার সাথে দেখা করতে তাহলে
——-আচ্ছা কোথায় দেখা করতে হবে বলো আমি আসবো।
————–+————–+—————
রোদেলা তাকে ঠিকানা বলে দেয়। তারপর ফোনটা কেটে দেয়।রোদ ফোন হাতে নিয়ে,
——–আমি জানি কাল তুমি কি বলবে।অবশেষে তাহলে আসলো আমার পরিকল্পনার সেই দিনটা।এখন শুধু অপেক্ষা তোমার মুখ থেকে সেই কথা শোনার বলেই হো হো করে হেসে দিল।
।
।
।
।
যথারীতি তারা দুজনে রেস্টুরেন্টে উপস্থিত হলো।দুজনি নিরব কেউ কোনো কথা বলছে না কিন্তু ফোনে কতোনা কথা বলে।এমনিতেও অনেক কথা হয় কিন্তু এখন যেন কোনো কথায় বের হচ্ছে না। নিরবতা ভেঙে রোদ বলল,
——-রোদেলা চুপ করে আছো কেন, তুমি না বললে খুব জরুরি কথা আছে তাহলে।বাসায় কি কোনো সমস্যা হয়েছে।
রোদের কথায় রোদেলা একটু নড়েচড়ে বসলো তারপর
——–না তেমন কিছু না আসলে কথা টা হচ্ছে অন্য কিছু
——–ও তো বলো কি কথা। তুমি কি কাউকে ভালোবেসে ফেলেছো নাকি
রোদের কথা শুনে রোদেলা চোখ বড় বড় করে তাকালো, এরে আমি যে ভালোবাসার কথা বলতে এসেছি রোদ কেমনে জানলো তার মানে কি ও কিছু বুঝতে পেরেছে।
——–আসলে বলতে গেলে ওরকম কিছু আমি একজনকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু বলতে পারছি না, কারণ যদি সে আমাকে ফিরিয়ে দেয় বা তার যদি কোনো জিএফ থাকে।
——–তুমি যখন তাকে ভালোবাসো তার জিএফ আছে কিনা জানো না তাহলে তোমার উচিত তাকে বলে দেওয়া হয়তো সেও তোমার মুখ থেকে শোনার অপেক্ষায় আছে।
রোদেলা রোদের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে
——–তাহলে বলে দি আমি যাকে ভসলোবাসি সে আর কেউ নয় তুমি রোদ। আসলে তোমার সাথে কথা বলতে বলতে তোমার কেয়ার, তোমার কথা, তোমার হাসি সবকিছুতে আমি যে কখন তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি আমি নিজেও জানি না। সত্যি বড্ড ভালোবাসি প্লিজ আমায় ফিরিয়ে দিওনা।
,
,
,
একদমে কথাগুলো বলে রোদেলা থামলো।রোদ এতোক্ষণ বসে নিরবে রোদেলার কথা শুনছিল আর রোদেলা কথা বলে মাথা নিচু করে বসে রইল, কিছুক্ষন পর মাথা তুলে রোদের দিকে তাকিয়ে,
——–কি হলো রোদ কিছু বলছো না কেন তার মানে কি তুমি আমাকে ভালোবাসো না, তোমার জিএফ আছে, কিছু তো একটা বলো।আমি যে তোমার এই নিরবতা মানতে পারছি না।ও তাহলে আমি ভুল করছি। সরি আসলে আমার বলা উচিত হয়নি।
।
।
।
কথা গুলো বলতে রোদেলার গলা ধরে আসছিল মনে হচ্ছে কান্না করে দিবে।রোদ তখন চুপ।রোদেলা আর কিছু না বলে বেরিয়ে যেতে নিলে পেছন থেকে তার হাত আটকে যায় পেছনে তাকাতেই দেখে রোদ তার হাত ধরে আছে আর তার দিকে তাকিয়ে আছে।
——–সবকিছু তো তুমি বলে দিলে এবার না হয় আমারটা শোনো।আসলে সত্যি বলতে আমি ও কাউকে ভালোবাসি।কিন্তু এতোদিন জানতাম না আমাকে নিয়ে তার মনে কি আছে, তাই বলতে পারিনি নিজের মনের কথা কিন্তু ভাবছি তাকে আজ বলবো কিন্তু সেতো কোনো সুযোগ দিল না।
রোদের কথাগুলো শুনে রোদেলার চোখের জল টলমল করছে, তাহলে সত্যি কি তার কোনো জিএফ আছে। তবুও নিরবে রোদের কথাগুলো শুনছে।
——-তবে জানো তো আমি যাকে ভালোবাসি সে খুব মিষ্টি একটা মেয়ে তাই ভাবছি তাকে বলেই দিব আজ আমার মনের কথা।
বলেই পকেট থেকে আংটি বের করলো তারপর রোদেলার সামনে হাটি গেরে বসে আংটি টা ধরে একহাত বাড়িয়ে বলল
——-আমার সেই ভালোবাসার মানুষ আর কেউ নয় রোদেলা সে হচ্ছে তুমি,হুমম আমি তোমাকে ভালোবাসি, অনেক বেশি ভালোবাসি, will u marry me।
.
.
.
.
.
রোদের কথা শুনে রোদেলা পুরো শকড সে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না যে রোদ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে। খুশিতে সে চোখের জল ছেড়ে দিল তারপর রোদকে জরিয়ে ধরে নিজের মনের কথা বহিঃপ্রকাশ করলো।সেদিনের পর থেকে নিজেদের মধ্যে একটা নতুন সম্পর্ক সৃষ্টি হলো।এভাব কেটে যায় আরও এক সপ্তাহ।
হঠাৎ একদিন সকালে বৃষ্টি ঘুম থেকে উঠে দেখে মেঘ রেডি হচ্ছে। বৃষ্টি ঘুমঘুম চোখে মেঘকে জিজ্ঞেস করল,
——-কি ব্যাপার আজ আমার আগে ঘুম থেকে উঠে গেলেন কোথাও যাবেন নাকি
——-তোমার আগে উঠেছি কারণ ঘুমটা ভাঙছে তোমার আগে আর কোথায় যাবো রোজ যেখানে যায় সেখানে যাচ্ছি, অফিসে।
——-অফিসে, এতো সকালে, অফিস তো ১০ টায়।তাহলে এতো তাড়াতাড়ি কেন।
——–তোমার কোনদিকে তাড়াতাড়ি মনে হচ্ছে তুমি কি জানো এখন কয়টা বাজে ৯ঃ৩০ আসলে তুমি নিজেই আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি করেছো।
,
,
,
মেঘের কথা শুনে বৃষ্টির চোখ বড় করে ফেললো। তার মানে আজ বৃষ্টি ঘুম থেকে উঠতে দেরি করেছে।উফফ কালকে রোদেলার সাথে আড্ডা দিতে দিতে অনেক রাত করে ঘুমাতে যায়।তাই আজকে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে। বৃষ্টি রাগে দাঁত কটমট করতে করতে বলে,
——-তো আমায় ডাকলেন না কেন এখন যে আমার অফিসের দেরি হয়ে যাবে।
——–ডাকি নি মানে তুমি জানো কম হলেও ২০ বারের ওপর ডেকেছি কিন্তু তুমি তো নাক ডেকে ঘুমোচ্ছ।
——-এই যে আমি মোটেও নাক ডাকিনা।আমি বুঝতে পেরেছি আপনি ইচ্ছা করে এমনটা করেছেন।এর শোধ আমি নিব।
.
.
.
.
.
বলে রেগে ওয়াশরুমে চলে গেল আর মেঘ বৃষ্টির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে নিচে চলে গেল। এদিকে বৃষ্টি ওয়াশরুমে ঢুকে দেখে সে কোনো কাপড় আনেনি।তার ওপর নিজের গায়ের কাপড় ও ভিজিয়ে ফেলেছে তাই আস্তে করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে দেখে রুমে মেঘ আছে কিনা।দেখে মেঘ কোথাও নেই তাই সে কোনোরকম বাথটাওয়াল টা গায়ে জরিয়ে বের হয়ে নিজের ডেক্স থেকে কাপর নিয়ে ফিরতেই সামনে তাকিয়ে বড় একটা হা করে, কারণ তার সামনে মেঘ দাঁড়িয়ে আছে। আর তার দিকে চেয়ে আছে।
মেঘ ভালো করে খেয়াল করতে দেখলো বৃষ্টির শরীরে কোনো কাপড় নেই শুধু একটা টাওয়াল ছাড়া তাও সেটা হাঁটুর ওপরে। মেঘ বৃষ্টিকে এমনভাবে দেখে পুরো থ মেরে আছে আর বৃষ্টি নিজেকে হাত দিয়ে ডাকার চেষ্টায় আছে সে কোনোভাবে দৌড় ও দিতে পারছে না কারন মেঘ একদম তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ আস্তে আস্তে করে বৃষ্টির কাছে যখন যাচ্ছে বৃষ্টি ততো পিছিয়ে যাচ্ছে। ড্রেসিং টেবিলে গিয়ে বৃষ্টি আটকে গেলে মেঘ তার মুখোমুখি হয়ে দাড়ায় তারপর আস্তে আস্তে নিজের হাত বাড়াতে থাকে বৃষ্টির দিকে। বৃষ্টি সেটা দেখে চোখ বন্ধ করে একটা চিৎকার দেয়,
———প্লিজ আমাকে ছোবেন না নাহলে কিন্তু
বলে চোখ খুলে দেখে মেঘ দাঁড়িয়ে নিজের ঘড়ি ঠিক করছে আর বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিচ্ছে।
———কি মনে করেছো আমি তোমায় ছুতে যাচ্ছি, আসলে তাড়াহুড়ো করে চলে যেতে নিলে দেখি আমি ঘড়ি পরিনি তাই রুমে এসে দেখি সেটা ড্রেসিংটেবিলের ওপর তাই সেটাই নিচ্ছিলাম।
ঘড়িটা ঠিক করে মেঘ বেরিয়ে যেতে নিলো আর বৃষ্টি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।যাক কিনা কি ভেবেছে।হঠাৎ মেঘ ফিরে এসে বৃষ্টির কানেকানে বলল,
——–আজ হয়তে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পেরেছি, পরেরবার হয়তো সেটা আর সম্ভব হবে না, তাই ভুল করেও কখনো এভাবে আমার সামনে আসবে না, তাহলে কি যে হবে বলে একটা দুষ্টমির হাসি দিল। বাই দা ওয়ে ইউ লুকিং সো হট।
বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেল আর বৃষ্টি তার দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মনে মনে বল্ল
——-অসভ্য একটা😡।
,
,
,
,
তারপর দ্রুত তৈরি হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেল। যাওয়ার ১০ মিনিট পর কেবিনে তার ডাক পরে।কেবিনে ঢুকতেই,
——–কি হলো মিস বৃষ্টি আজ আপনি এতো দেরি করলেন কেন, এটা কি আপনার বাসা বা পার্ক নই যে নিজের ইচ্ছা মতো কাজে আসবেন বলুন কেন দেরি করলেন।
——–আসলে স্যার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে তাই কিন্তু পরের বার আর কখনও এমন হবে না।
——–দেরি হয়েছে মানে কেন আপনি ছাড়া কি বাসায় আর কেউ নেই, আপনাকে ডাকতে পারেনি–একটু মজা করে
——–আসলে আমার বাসায় তো আমার মা আছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার রুমে একটা বিড়াল আছে সবসময় মেউ মেউ করতে থাকে আর ওটার জন্য আমার আজকে দেরি হয়ে গেছে।
,
,
,
,
মেঘকে ইঙ্গিত করে কথা টা বলল বৃষ্টি। মেঘ সেটা বুঝতে পেরে নাক মুখ শক্ত (আমাকে বিড়াল বলা এর শাস্তি তোমাকে আমি পরে দিব) করে উত্তর দিল,
——–ঠিক আছে পরের বার টাইমলি আসবেন এবার যান নিজের কাজ করেন।
,
,
,
,
বৃষ্টি বুঝতে পারল মেঘ তার কথায় ভালোই জব্দ হয়েছে। তাই কেবিন থেকে বের হয়ে হাসতে হাসতে তৃনার ডেক্সে যায় গিয়ে দেখে তৃনা একদিকে দৃষ্টি তাক করে মুচকি মুচকি হাসছে।তৃনার দৃষ্টিকে ফলো করে তাকাতেই বৃষ্টির চোখ বড় হয়ে যায়।
——–তার মানে তৃনা ওদিকে তাকিয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে, ও তলে তলে এতদূর।
,
,
,
,
,
চলবে………..