#বর্ষা_বিকেলের_ঢেউ
২.
#WriterঃMousumi_Akter
ভার্সিটির প্রথম দিনে নবিনদের উপর প্রচুর অত্যাচার চলে র্যাগ ডে নামক অত্যাচার।এটা নাকি প্রবীনদের অধিকার নবীনদের উপোর।কথাটা আহিন বলেছিলো মৌ কে।মাত্র একটা দিনের ব্যবধানে হারিয়ে গিয়েছে আহিন মৌ এর জীবন থেকে।ফোনের লক গ্যালারি খুলে আহিনের পিকচার দেখছে মৌ।বার বার আহিনের নাম্বার এ ট্রাই করেই যাচ্ছে।কোনভাবেই আহিনের নাম্বারে ফোন যাচ্ছে না।কাউকে ভালবাসলে একটা সেকেন্ড কথা না বললে মনে হয় কত শত যুগ হয়ে গিয়েছে সেখানে আহিন তার শেষ চিঠিটা দিয়ে চলে গিয়েছে মৌ এক একটা সেকেন্ড যেনো হাজার বছরের মতো পার হচ্ছে।
হঠাত মৌ তাকিয়ে দেখে একটা ছেলেকে কান ধরে উঠবস করাচ্ছে সিনিয়র ভাইয়েরা। এত মানুষের সামনে কান ধরে উঠবস করার মতো লজ্জা এর দুনিয়াতে নেই।এইদিকে মৌ এর এখন একটাই চিন্তা যে কোনো ভাবে লেখাপড়া টা শেষ করতে হবে।বিয়েটা যে কোনো উপায়ে ভাঙতেই হবে।তা না হলে যে আহিনের সাথে আর কোনদিন দেখা হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।এই মুহুর্তে মৌ আল্লাহ আল্লাহ করছে যেনো কোনো র্যাগিং এর স্বীকার না হতে হয়। কারণ মৌ কারো কথার তেমন তোয়াক্কা করে না।কেউ তাকে কান ধরে উঠবস করতে বললেও সে করবে না।আবার সিনিয়র দের কথা না মানলে ঝামেলা হতে পারে।
কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত পোহায়।শাড়ি পড়ে এতিমদের মতো বসে আছে মৌ আর সানজি কলেজ এর কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে।চারদিকে লাল লাল ফুল পড়ে আছে বেশ সুন্দর লাগছে দেখতে।এমন সময় সিনিয়র চারজন ভাইয়া এসে বলে নাম কি তোমাদের।
“মিহি কন্ঠে বললো আমার নাম মৌ”
“ইয়ে বউ। তুমি কার বউ।”
“কথাটা শুনে মারাত্মক রাগ হওয়া সত্ত্বেও কাউকে চিনে না জানেনা তাই চুপ হয়ে আছে মৌ।হয়তো তারা সিনিয়র তাই আরো বেশী চুপ হয়ে আছে।”
“ছেলেটি আবার বলে আচ্ছা বউ এই মুহুর্তে ধরে নাও তুমি আমার বউ।এখন আমার বউ এর কন্ঠে একটা গান শুনতে ইচ্ছা করছে।”
“মৌ অসহায় ভাবে তাকিয়ে বললো ভাইয়া আমি ভালো গান পারি না।”
“ওকে তাহলে নাচ করো।”
“মৌ এতিম এতিম মুখ করে বললো ভাইয়া আমি কিভাবে নাচবো। এসব তো পারি না”
“শোনো আমাদের কথা না শুনলে প্রিন্সিপাল কিন্তু ঘাড় ধরে ভার্সিটি থেকে বের করে দিবে।ফটাফট যেমন পারো ডান্স শুরু করো।”
জরজেট শাড়ি পরে কিভাবে নাচবো মৌ ভেবে পাচ্ছে না।এমনিতে শাড়ি পড়ার অভ্যাস নেই।কারো কথা শুনে কোনো কাজ করার অভ্যাস নেই তার।এমনিতে সামনে বিয়ে এখন আবার ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে দিলে আর কোনো অপশন থাকবে না বিয়ে করে সারাজীবন ওই ঘাড়ত্যাড়ার ঘরের বাসন ই মাজতে হবে।কয়েকগাদা গালি গালাজ মনে মনে করে নাচ শুরু করলো আর ছেলে গুলা ভিডিও করছে।নাচছে সেটা ঠিক আছে কিন্তু উনাদের ভিডিও করাটা মৌ এর মোটেও পছন্দ হচ্ছে না এদিকে শাড়িটাও এলোমেলো হয়ে আছে।
এমন সময় একজন এসে বলে ভাই আরস ভাই আসছে এদিকে।আরস এর নাম শুনতেই ছেলে গুলা যেনো ভয়ে পালালো।এক মিনিট ও আর দাঁড়ালো না। কি আছে এই আরস এর মাঝে।যার নাম শুনতেই বিপদ পালিয়ে যায়।
“সানজি বড় বড় কয়েক টা নিংশ্বাস নিয়ে বলে উফফ বাঁচলাম এই আরস এর উছিলায়।এই অসভ্য ছেলেগুলোর একটা ব্যবস্থা না করলেই নয়।”
“মৌ বলে আপু এই প্রথম আমি কারো কথা চুপ করে শুনলাম। রাগ হচ্ছিলো প্রচুর তবুও চুপ ছিলাম কেনো জানো ওই ঘাড় তেড়ার জন্য।এখন যদি ভার্সিটি থেকে বের করে দেই খুব সমস্যায় পড়ে যাবো।”
“আরে মৌ আমি পিকচার তুলে রেখেছি ছেলেগুলোর। এই কলেজের টপার স্টূডেন্ট আরস কে দেখিয়ে বলবো ছেলেগুলার ব্যবস্থা করতে।আর বলবো আমার এই পুচকি বোনটার সেফটির ব্যবস্থা করতে।”
“আমি কি ওই আরস ভাইয়ার বউ নাকি উনি আমার সেফটির দায়িত্ব নিবেন।”
“ভুলেও অন্য কারো বউ হওয়ার কথা ভাবিস না মৌ।অলরেডি একজনের সাথে এনগেজড তুই।”
“তার আগেই আহিনের সাথে পালিয়ে যাবো আমি।আহিন আসবে আপু ঠিক ই আসবে।আমার বিয়ের আগে ও ঠিক ই আসবে।হিরোর এন্ট্রি টাইমলি হয়।
তবে আপু এই ভার্সিটির আরস এর প্রতি নাকি মেয়েদের অনেক উইকনেস আছে।আর শুনেছি মানুষ হিসাবে অনেক ভালো উনি।তবে প্রচুর মারামারি করেন।কথায় কথায় মানুষের গায়ে হাত তোলার মারাত্মক একটা অভ্যাস উনার আছে।যেই অসভ্যতা করে সেই উধম ক্যালানি খেয়েছে উনার হাতে।মানুষের কাছে উনি বটগাছের ছায়ার মতো।আবার শুনেছি খুব ই হ্যান্ডসাম।
নিজের গফ ছাড়া কারো প্রতি উইকনেস উনার নেই।”
“মৌ উনার গফ ও আছে।মারাত্মক একটা স্যাকা খেলাম রে।নইলে উনাকেই প্রপোজ টা করে ফেলতাম।।”
দুজনে খানিক টা হাসাহাসি করে নিলো।।
ভার্সিটিতে বেশ মানুষের সরাগম।বাইরে থেকেও অনেক মানুষ এসেছে।মানুষের ভীড়ে কার নখের আচড় লেগে বুকে খানিক টা কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়লো।স্লিম শ্যামবর্ণের একটা ছেলে তাকিয়ে আছে মৌ এর দিকে।মৌ এর হাতে একটা চিরকুট দিয়ে বলে এটা আপনাকে একজন দিয়েছে।চিরকুট টা খুলে দেখলো লেখা আছে “মেয়েদের কমন রুমে যাও।ওখানে আয়নার সামনে মলম রাখা আছে আমার হাতে কেটে গিয়েছে তোমার বুক।সরি আমি বুঝতে পারিনি।আর তোমার শাড়ি এমন ভাবে পরে আছো কেনো?মানুষ কিভাবে তাকাচ্ছে তুমি খেয়াল করো নি।আমি জানি তুমি খুব ই ভাল চরিত্রের একটি মেয়ে।কিন্তু খেয়াল করে দেখো পাতলা শাড়ির আবরণে ব্লাউজের বোতাম গুলা ও দেখা যাচ্ছে।পেট,কোমর সব ই দেখা যাচ্ছে।প্লিজ একটু ঠিক করে নাও।মানুষ যদি এভাবে দেখে তোমার জন্য নির্দিষ্ট সেই মানুষ টার তো কষ্ট হবে তাইনা”
বাহ এত সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা মানুষ টা কে?মৌ এর শুভাকাঙ্ক্ষী ছাড়া এত বড় উপকার কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়।
মৌ নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে তার বেহাল অবস্থা।জরজেট শাড়িতে তার শরীরের সব কিছুই বোঝা যাচ্ছে।মৌ সানজির হাত চেপে ধরে বলে সানজি আপু প্লিজ কমন রুমে চলো। সানজি ফিস ফিস করে বলে কি হয়েছে।
–আমার দিকে তাকিয়ে দেখো কি অবস্থা। সবাই বাজে ভাবে দেখছে।
সানজি আর মৌ কমন রুমে গিয়ে অবাক হয়ে যায়।সত্যি একটা মলম রাখা আছে।কে এমন সেই মানুষ টা যে এতটা যত্ন নিয়ে মলম রেখে গিয়েছে।মৌ ওর শাড়িটা সুন্দর ভাবে গায়ে জড়িয়ে সেপটিন লাগিয়ে নিলো।আর সানজি ও সাহায্য করলো।
কমন রুম থেকে বেরিয়ে মৌ বলে,,
–সানজি আপু ওই অসভ্য ছেলে গুলোর জন্য আজ আমার এমন দশা। ওদের টাইট দিতেই হবে।তারজন্য আরস ভাইয়া কে খুজে বের করতে হবে।একমাত্র আরস ভাইয়া পারবে ওই ছেলেদের টাইট দিতে।
–সানজি বলে, একদম ঠিক বলেছিস চল এইবার মিশন আরস। কে এই আরস পুরা ভার্সিটির রাজকুমার।চল এবার তাকে খুজে বিশাল একটা নালিশ দিয়ে আসি।
–আজ আরস ভাইয়া নাকি ভাষণ দিবেন।সবাই মারাত্মক এক্সসাইটেড।কি আছে এই আরস এর মাঝে। যা থাকবে থাক মৌ আর সানজির উদ্দেশ্য তার কাছে নালিশ দেওয়া।
কয়েকজনের কাছে ওরা জিজ্ঞেস করলো আরস ভাই কোথায়?তারা উত্তর দিলো ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছে।সানজি বললো দেখুন মারাত্মক আকারের প্রয়োজন আরস ভাইয়াকে। প্লিজ একটু ডেকে দিবেন।তখন একটা ছেলে বলে আরস ভাইয়া একটা ছেলেকে উদম ক্যালানি দিচ্ছে এখন ডাকলে উনি বিরক্ত হবেন।মৌ এর বুক কাঁপছে শুনে উনি কেনো মারছেন কাহিনী কি?ছেলেটি বলে একটা মেয়েকে বিরক্ত করেছে কয়েক টা ছেলে তাদের ই মারছে।কথাটা শুনেই মৌ আর সানজি লাফিয়ে ওঠে তাহলে আরস এর থেকে তারা নিশ্চিত সাহায্য পাবে।মৌ ছেলেটিকে বলে ভাইয়া প্লিজ আরস ভাইয়া কে বলুন না আমিও সেইম সমস্যায় পড়েছি।উনি আমায় সাহায্য করলে তবেই আমি এখানে লেখাপড়া করতে পারবো।ছেলেটি বলে আপু আপনি এখানেই অপেক্ষা করুণ ভাইয়াকে বলছি আমি।
মৌ আর সানজি পায়চারি করেই চলেছে যে ছেলেটা যাচ্ছে তাকেই মনে মনে আরস ভাবছে।কোন ছেলেটা আরস হতে পারে মৌ সেই চিন্তায় করছে।
আরস কে নিয়ে ওদের সব চিন্তা ভাবনাতে জল ঢেলে দিলো সুদর্শন এক যুবক।
মৌ আপাদমস্তক তাকিয়ে ভ্যাকাচেকা খেয়ে গেলো।এমন কিছুর জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
পায়ে কালো বুট জুতা পরনে কালো জিন্স, গায়ে এশ কালারের শার্ট হাতা দুইটা গোটানো আছে।হাতে ব্যান্ডের ঘড়ি।ফর্সা গালে খোচা খোচা দাঁড়ি ইয়া লম্বা দেখতে ছেলেটি আর কেউ নেই গতকাল এনগেজমেন্ট হয়ে যাওয়া ছেলেটি।মৌ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুই প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুজে, কপালে নাকে ঘামের ফোঁটা ফোঁটা লেগে আছে।
ছেলেটি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে মৌ এর দিকে
–কি সমস্যা কি বয়ফ্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বুঝি।
–কে বয়ফ্রেন্ড? আর আপনি এখানে কেনো?
–এইযে আমার হবু বউ কে দেখতে এসেছি।আমি অনেক কেয়ারিং তার প্রতি।সে কোথায় যাচ্ছে না যাচ্ছে না যাচ্ছে সে গুলোই দেখছিলাম।এক কথায় তাকে ফলো করছি আমি।
–মৌ বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে।ঠিক তখন ই ছেলেটি বলে।
–এক মিনিট আপনি এতটা বিরক্তি নিয়ে আছেন কেনো?কি এত সময় এগুলাই তো শুনতে চাচ্ছিলেন তাইনা।নিজেকে এতটা গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।আপনাকে ফলো করার মতো কিছুই নেই বুঝলেন।
–তাহলে এখানে কি করছেন?আপনার মতো বুইড়া তো আর স্টুডেন্ট নয়।
—-গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে এসেছি।আমি বুইড়া সিরিয়াসলি।পাগলে কিনা বলে আর ছাগলে কিনা খাই।
–দেখুন আপনি এখান থেকে যান প্লিজ।একজন আসবে আমার তার হেল্প চাই।
–ভ্রু নাচিয়ে হবু বর বলে কে আসবে?
–আরস ভাইয়া।
–আরস কে আপনার বয়ফ্রেন্ড।
–দেখুন বাড়াবাড়ির লিমিট আছে।
ওকে চলুন ক্যান্টিনে বসি আরস আসলে ওখানেই আসবে।আপনাকে ক্লান্ত লাগছে।ঠান্ডা কিছু খেলে ক্লান্তি কমে যাবে।তাছাড়া সাথে আপনার বোন ও আছে।এইদিকে সানজি ও মৌ এর হাত ধরে টিপ মেরে বলে চল।না গেলে বাড়িতে নালিশ দিতে পারে একটা ঝামেলা হবে।
চলবে,,,
(সবাই রেসপন্স করবেন।কেমন লাগলো জানাবেন)