নেশাটাই তুমিময় পর্ব -১২

#নেশাটাই_তুমিময়
#আবরার_আহমেদ_শুভ্র (Writer)
#পর্ব – ১২

২৬.

– ‘অনুপু, আমার না একটা জিনিষ মাথায় আসছে না কিছুতেই।’ অনিমার প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালো তন্বী।

– ‘কি জিনিষ? আর আবারও বলছি ঘুড়াই পেচিয়ে না বলে যা বলবি সোজাসুজি বল।’ কাপড় গোছাতে গোছাতে উত্তর দিল অনিমা।

– ‘ইয়ে মানে, আসলেই কি জেলাস ফিল করছো না তুমি? না মানে আমার কিন্তু এটা মনে হচ্ছে লিসা মেয়েটা না রুদ্ধ ভাইয়াকে বেশ পছন্দ করে। তার সাথে ভাইয়াকেও কিন্তু বেশ মানাবে। কি বলো? তবুও আমার না সন্দেহ হচ্ছে রুদ্ধ ভাইয়াকে নিয়ে!’ সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল তন্বী।

অনিমা রাগি চোখে তাকালো তন্বীর দিকে। বেচারি তন্বীও ভ্যাবলাকান্তের ন্যায় দাঁত বের করে হাসি দিলো অনিমার উদ্দ্যেশে। অনিমা রাগে কটমট করতে করতে বলল,

– ‘তাইলে ওনাকে বল না লিসা না বিছা বিচ্ছুটাকে বিয়ে করে এক্কেবারে গলায় ঝুলিয়ে রাখতে। তাহলেই তো সব কিছু চুকে গেল।’

– ‘আ হা, আপু! রাগ করো না। তা ঝুলিয়ে কি করবে শুনি ওকে?’ আবারও প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালো তন্বী। এবার মুখে আরও কঠিন রাগিভাব নিয়ে তাকালো অনিমা।

কিন্তু উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে নিজেই নিজের জ্বিব কাটলো তন্বী। মনে মন বলতে লাগল, ‘ইশশ্ রে, কি বলে ফেললাম এটা! নির্ঘাত শেষ আজ আমি। আল্লাহ গো বাঁচাও।’ বলে চোখ বন্ধ করে দিলো দৌড়। কিন্তু ধপাস করে খেল বারি। আঁখি খুলে দেখলো সামনে রুদ্ধ দাড়িয়ে। প্রাণ ফিরে পেলো যেন। তাকে দেখে রুদ্ধ ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

– ‘কি শালিকপাখি এখানে কি হুম? অবশ্য তোমার তো এখন অহনের রুমে থাকার কথা! তাহলে?’

– ‘ইয়ে মানে, জিজু আসলে আপু তোমার কথা ভাবছিলো তাই আমি সঙ্গ দিচ্ছিলাম এই আর কি।’ বলে অনিমার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে দেখছে কিনা। নাহ্ সে টের পাইনি। তাই আবারও বলে উঠল,

– ‘জিজু, আমি তাহলে যাই কেমন? আর সি ইজ ফিলিংস নাউ জেলাস! না মানে, লিসা আপুর ব্যাপারে।’ বলেই দৌড় দিলো সে।

মুচকি হাসি দিলো রুদ্ধ। আসলেই কি অনিমা জেলাস ফিল করছে লিসার ব্যাপারে! ভাবতে ভাবতে অনিমাদের রুমে প্রবেশ করলো সে।

কাপড় গোছানোতে এতটাই মনোযোগ ছিল যে রুমে কারে উপস্থিতি টের পেলো না অনিমা। হঠাৎ, কারো তপ্ত নিঃশ্বাসে ধ্যান ভাঙ্গলো তার। পিছনে ফিরে দেখতেই রুদ্ধকে চোখে পরল তার। সাথে সাথে ভ্রুকুঞ্চন হলো তার। নেত্রপল্লব পরার আগেই নিজেকে রুদ্ধের বাহুডোরে আবিষ্কার করলো সে। রুদ্ধ অনিমার কানে ফিসফিস করে বলে উঠল,

– ‘মিস অনিমা মেহরুবা! আপনি কি ঠিক আছেন? না মানে? কেউ একজন বলছিলো এখানে পোড়া গন্ধ আসছে!’

রুদ্ধের থেকে জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো অনিমা। অনিমার এমন ভাবটা দেখে হাসি পেলো রুদ্ধের। অনিমা রাগি চোখে তাকিয়ে বলে উঠল,

– ‘আপনি কি এখানে পোড়া গন্ধ নিতে এসেছেন নাকি পোড়া স্থানটা দেখতে এসেছেন?’

অনিমার যেন নিজেই নিজের কথায় ফেঁসে গেছে। রুদ্ধ টের পেলো অনিমা রাগে উল্টো কথা বলে দিয়েছে তাই সেও বলে উঠল,

– ‘যদি পোড়া স্থানের মালকিন চাই দেখাতে। আব, আমার কোনো আপত্তি নেই, মিস ফুলপরী।’ বলে চোখটিপ মারলো অনিমাকে।

বেচারি অনিমাও লজ্জা পেলো বেশ। তাকে যে রুদ্ধ এভাবে কথার জালে ফাঁসাবে সেটা সে ভাবতেই পারে নি। বেখেয়ালি চিন্তায় ডুব দিলো সে। ঘোর কাটলো রুদ্ধের উষ্ণ আলিঙ্গনে। আবারও ফিসফিসিয়ে বলে উঠল রুদ্ধ,

– ‘ভীষণ ভালোবাসি তোমায় ফুলপরী! ভীষণ! তুমি ছাড়া এই রুদ্ধ অস্তিত্বহীন।’

অনিমার চোখে দ্বিধা। সেও তো একসময় তুরনকে এমন ভালোবাসতো। ভীষণ ভালোবাসতো সে তুরনকে। প্রচণ্ড বিশ্বাস ছিলো তাদের ভালোবাসার উপর। শেষে তার বিশ্বাসটাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিলো তুরন। বিয়ে করলো তার মায়ের পছন্দের মেয়েকে। এতো ভালোবাসার পরেও কিন্তু কি পেল? একরাশ অপমান আর অবজ্ঞা। চোখ ভিজে এলো তার। সে চাই না রুদ্ধকে অপমানকর কিছু বলতে। তবুও সে মুচকি হেসে বলে উঠল,

– ‘আপনাকে লিসা আপুর সাথে বেশ মানাবে। বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধও করবেন ওনার সাথে। যাকে বলে একদমই পারফেক্ট কাপল।’

অনিমার মুখের লিসার নাম শোনে রুদ্রমূর্তি ধারণ করলো রুদ্ধ। চোখমুখ একদম লাল হয়ে গেছে রাগে। ভয় পেয়ে গেলল অনিমা। এককদম এগিয়ে এসে অনিমার দুইবাহু চেপে ধরে বলে উঠল,

– ‘আমাকে কার সাথে মানাবে সেটা তোমায় বলতে হবে না অনি। আমি জানি আমি কার সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবো! আর কাকে আমার জীবনে পথচলার সাথি বানাবো। গট ইট! এন্ড লাস্টলি, ইউ উইল বি মাইন!’ বলে গট গট করে চলে গেলো সে।

অনিমা রুদ্ধের এমন বিহেভিয়ার হজম করতেই পারছে না। লিসার নাম নিতেই যেন আগুনের রুপ নিলো সে। যেমন সবটাই জালিয়ে ছাই করে দিবে। একধ্যনে তাকিয়ে রইল তার গমন পথে।

২৭.

বিকেলে ছাদের একপ্রান্তে দাড়িয়ে প্রকৃতি বিলাস করছেন ফারদিন শাহরিয়ার। বিচিত্রাপুরের ঘঠনা আবারও মনে গেছে গেলো তার। টানা ২৫টা বছর পেড়িয়ে গেলো আজ! এমনই এক শীতের বিকেল তার জীবনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কয়েকজন তার রঙ্গিন জীবনটাকে নষ্ট করেছিলো। কি লোমহর্ষক ছিলো সেই দিনটা? সেই বিকেলের কথা ভাবলেই যেন পুরো শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে। নির্দোষ হয়েও শাস্তি পেয়েছিলো সে। সাথে অপমান, অপদস্থ, লাঞ্ছনা সবশেষে ত্যাজ্যপুত্রের ট্যাগ। বেড়িয়ে এলো হুহ করা এক দীর্ঘশ্বাস! দূর ঐ আকাশপানে তাকিয়ে আপনমনে বিড়বিড় করে বলে উঠলেন,

– ‘ঘন কুয়াশা বেয়ে শীতের বিকেল নেমছে ধীরে-পৃথিবীর পরে, এখন এমনই কঠিন বিকেল কাটে হুহু করা নিঃসঙ্গ অবসরে৷ উষ্ণতা যেন হারিয়ে গেছে দূরে-বিসুভিয়াসের আগ্নেয় গহ্বরে। মানুষে মানুষে কি নিশ্ছিদ্র দেয়াল আঁটা বিভেদের প্রহেলিকা, শৈশবে বিকেল ছিল মায়ায় জড়ানো এক তেজস্বী নীহারিকা৷ পৃথিবীর আলো থেকে হারিয়েছে উষ্ণতার প্রদীপ্ত পাদটীকা৷ যারা গেছে দূরে নিয়ে গেছে সবই- উষ্ণতা দিয়েছিল আমারে, প্রাণের গভীরে, তারপর চলে গেছে ঐ চির ঘুমের অন্ধকারে। ব্যথাকাতর দিশাহারা এই চিত্তে ফিরি মিছেমিছি প্রমোদ বিহারে। এই হিমেল বিকেলের শেষে নামে যদি-পাথরের মতো রাত, শঙ্কার আঁধার সাঁতরে পাবো কি খুঁজে অরুণ রাঙা প্রভাত? পাবো কি আর শৈশবের মত উষ্ণতায় ভরা বিকেল বরাত?’
~আবরার আহমেদ শুভ্র।

ফারদিন শাহরিয়ার ধ্যান ভাঙ্গলো কারো উপস্থিতিতে। পাশ ফিরে তাকালেন তিনি। চোখে বিষায়দময় ছাড়া থাকলেও মুখে মুচকি হাসিটা ফুটে তুললেন তিনি।

– ‘রুদ্ধ তুমি কখন এলে? আর অহনও সাথে আছো দেখছি?’

– ‘হা বাবাই, আমরা তো অলওয়েজ একইসাথে থাকি। আর তোমায় এমন বিষণ্ণ দেখাচ্ছে কেন? নিশ্চয় আবারও সেই কথাগুলো ভাবছো তাই না?’

– ‘আংকেল আপনাকে বারবার মানা করা সত্বেও আপনি কি শোধরাবেন না? এবার প্লীজ স্টপ করুন এইসব ভাবনা। আমরা আছি কিসের জন্য? দেখবেন সবকিছুই আগের মতোন হয়ে যাবে।

চোখ মুছলেন তিনি। তার কাছে যেন মনে হয় অহন তার আরেক সন্তান। যে সবটা সময়ই রুদ্ধের পাশে ছায়ার মতোন ছিলো। বর্তমানেও এর ছিটেফোঁটা পরিবর্তন নেই। ঠিক আগের মতোন।

– ‘তোমরা আমার দুই সন্তান। তবুও তোমাদের জন্য বেশ চিন্তা হয় আমার। ভয় হয় বেশ!’ বলে দুজনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন তিনি।

– ‘বাবাই, কাঁদবে না একদম। ইটস্ ইউর লাস্ট ওয়ার্নিং! তোমার মুখে শুধু হাসি মানায়, কান্না নয়! একজন দেশে।প্রতিনিধি যদি এমন ভয় পায়? কিংবা এতোই দূর্বল হয় তাহলে কি মানায়? নো! ওনলি এ স্মাইল ওন ইউর ফেইস!’

– ‘হা আংকেল রুদ্ধের কথায় ঠিক। আর ভয়ের কিছু নেই। আমরা আছি না? সব রহস্য এখন শুধু উন্মোচনের সময় এখন।’

– ‘আমি বিশ্বাস করি সেটা। এও বিশ্বাস করি তোমরা পারবে। কিন্তু একজন বাবাই জানে যখন তার সন্তান কোনো দুঃসাহসিক কাজে যায় তখন তার বুকে ঠিক কি পরিমানে ভয় কাজ করে। তবুও, আমি বলছি তোমরা সব রহস্যভেদ করো। এট এনি কস্ট! আই ওয়ান্ট এভরি ভিলেন কাম ওন মাই ফিট!’

– ‘মাঠে যখন নেমেছি, এতো সহজেও আউট হচ্ছি না আমরা বাবাই! কজ, আমাদের তো ওপেনিং ভালো করতে হবে! না হলে যে মিডল ওর্ডারটা ট্রাইকেল দিতে কষ্ট হবে।’

– ‘আই নো নাই সানস্, তোমরা পারবে। তাহলে কাল রওনা দিচ্ছো বিচিত্রাপুরের উদ্দ্যেশে?’

– ‘হা আংকেল, কাল সকালেই। সবকিছু রেডি তবে আমাদের ভিন্ন হয়ে সেখানে যেতে হবে।’ তারপরে তারা তিনজন তাদের প্লানগুলো শেয়ার করলো। কিন্তু সবকিছু আড়াল থেকে একজনে শোনে নিলো। যা হয়তো রুদ্ধদের জীবনে অনেক বড় আশংকা সৃষ্টি করতে পারে। সে সরাসরি ফোন করে জানিয়ে দিলো তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ।
.
.
.
.
~চলবে ইনশা’আল্লাহ্।

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here